বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর, প্রতিবেদন ও চিঠি পড়ে জানা যায়, এই কম্পিউটারের যুগে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের পর পেনশন পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকের আবার বছরের পর বছর কেটে গেলেও পেনশন মেলে না। সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে এ ব্যাপারে কোনও সদুত্তর থাকে না। তাদের অজুহাত, পেনশন মঞ্জুরের বিলম্বের প্রধান কারণ সার্ভিস রেকর্ড বা কাগজপত্রের ত্রুটি। প্রশ্ন জাগে, কম্পিউটারের জমানায় সার্ভিস রেকর্ড বা পেনশনের কাগজপত্রে ত্রুটি থাকে কী ভাবে? আর ত্রুটি থাকলে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধিত হয় না কেন? কাদের গাফিলতিতে এই ত্রুটি বা বিলম্ব? সরকার তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই বা করে না কেন?
বর্তমানে এ দেশে রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা ও আরও অনেক সরকারি সংস্থায় অবসর গ্রহণের পরের মাস থেকেই নিয়মমাফিক পেনশন চালু হয়ে যায়। কোথাও কোনও সমস্যা সাধারণত হয় না। কারণ, অবসর গ্রহণের ছ’মাস আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বিভাগ পেনশন চালু করার কাজে হাত দেয়। ব্যতিক্রম শুধুমাত্র এই রাজ্যের সরকারি দফতর। আর সবাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনায়াসে পেনশন চালু করে দিতে পারলেও এরা পারে না। প্রসঙ্গত, গত শতাব্দীর সত্তর বা আশির দশকে যখন কম্পিউটার আসেনি, সে সময় পেনশনের দুর্ভোগ কমাতে ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রভিশনাল পেনশন চালু করার নিয়ম ছিল। এই প্রভিশনাল পেনশন মোট পেনশনের ৯০ শতাংশ ছিল। এবং চালু হত অবসর নেওয়ার ঠিক পরের মাস থেকেই। পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে সঠিক পেনশনও চালু হয়ে যেত। পেনশনের দুর্ভোগ কমাতে রাজ্য সরকারও এমন প্রভিশনাল পেনশন চালু করতে পারে।
ভাবতে অবাক লাগে, আজ থেকে তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে রাজ্য সরকারের দফতরে পেনশন চালু করার কাজে যে ধরনের সমস্যা ছিল, আজও তা অপরিবর্তিত, যে রাজনৈতিক দলের হাতেই শাসন থাকুক না কেন। এর পিছনে প্রধান কারণ, সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কাজে অবহেলা ও বেপরোয়া ভাব। বিভাগীয় প্রধানের ফলো-আপ তথা নজরদারির অভাবও থাকে। তবে বর্তমানে এই রাজ্যেই বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থায় (রাজ্য সরকার বাদে) ঠিক সময়ে পেনশন চালু না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মী ও আধিকারিকদের শো-কজ় করা হয়, গাফিলতির জন্য শাস্তিরও ব্যবস্থা আছে। রাজ্য সরকারি দফতরে এ সবের বালাই নেই, আর সে কারণেই পেনশন মঞ্জুরিতে এত বিলম্ব, এমন অবহেলা।
রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না করলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে না। অবসর গ্রহণকারীদের নিজের হকের পেনশনের জন্য আর কত দিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে, কে জানে।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
তুলনা কেন
মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ-কে কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার বলে আদালত যে মন্তব্য করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সম্পাদকীয়-তে (‘বাঘের পিঠে সওয়ার’, ২৫-৫)। বলা হয়েছে, কেবলমাত্র চার শতাংশ সরকারি কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির অধিকার স্বীকার করলে বেসরকারি ক্ষেত্রে ৯৬ শতাংশ কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধিও মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করা উচিত। একেবারে ঠিক কথা। বেসরকারি ক্ষেত্রে যাঁরা কর্মরত, তাঁদের না আছে বেতনের স্থিরতা, না আছে চাকরির নিরাপত্তা। চুক্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেচ্ছাচার ও অনৈতিকতা সর্বত্র। ১৯৯১ সালে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, দৈনিক ২৭০০ ক্যালরি শক্তিসম্পন্ন খাবারের কথা বিবেচনা করে ন্যূনতম মাসিক বেতন নির্ধারিত হওয়া উচিত। সেই অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সপ্তম বেতন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী তা দাঁড়িয়েছিল মাসিক ১৮০০০ টাকা। এখন ছ’-সাত বছর পরে এই হিসাব যে ২৫০০০ টাকার কম হবে না, তা সহজেই অনুমেয়। এর পর শ্রম দফতরের তত্ত্বাবধানে এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছিল, তারাও কিছু সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এদের সুপারিশ মানতে সরকার আদৌ আগ্রহী নয়।
মূল বেতনের সঙ্গে ডিএ যোগ হলে যদি বেতন বৃদ্ধি হয়, তা হলে ডিএ ছাঁটাই হলে তাকে বেতনের সঙ্কোচন অবশ্যই বলা যেতে পারে। বেতন বৃদ্ধি করতে সরকার অপারগ, কারণ আর্থিক সঙ্কট। সরকারের আর্থিক সঙ্কট যদি আরও তীব্র হয়, তখন কর্মচারীদের আরও বেতন সঙ্কোচনকেই স্বাগত জানাতে হবে কি? যদি চার শতাংশ কর্মচারী আইনি লড়াই করে তাঁদের অধিকার আদায় করে নিতে পারেন, তা হলে সেটা অবশ্যই তাঁদের জয়। তা হলে আর ৪ শতাংশ এবং ৯৬ শতাংশের মধ্যে তুলনা টেনে আনা কেন?
অলোক কুমার নাথ, হাওড়া
নতুন রাজনীতি
ডিএ মামলার রায় পাঁচ বার কর্মচারীদের পক্ষে গিয়েছে। উচ্চ আদালত স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (স্যাট)-এর রায় বহাল রেখেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের কর্মচারীদের ডিএ ৩৪ শতাংশ। অন্য রাজ্যের মধ্যে বিহার দিচ্ছে ২৮ শতাংশ, ওড়িশা ৩১ শতাংশ, কেরল ৩৬ শতাংশ, ঋণগ্রস্ত পঞ্জাবও দিচ্ছে ২৮ শতাংশ। সেখানে রাজ্যের কর্মচারীদের ডিএ মাত্র ৩ শতাংশ। রাজ্যের তরফে স্যাটে, উচ্চ আদালতে বলা হয়েছিল, রাজ্যের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী-সহ অনেক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রাজ্যে চলছে, এই অবস্থায় রাজ্যের পক্ষে কর্মচারীদের ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। স্যাট, উচ্চ আদালত রাজ্যের এই বক্তব্যকে মান্যতা দেয়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও রাজ্যের তরফে ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার কোনও বক্তব্য সামনে আসছে না। শোনা যাচ্ছে, রাজ্য শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবে। ২০১১-য় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বর্তমান সরকার কর্মচারীদের ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে সঙ্কোচনের পথে হাঁটতে থাকে, শেষে তাদের ডিএ পাওয়ার অধিকারকেও অস্বীকার করে। একটা সময় জুট মিলের কর্মচারীদেরও ডিএ ছিল, গ্র্যাচুইটি ছিল। এখন প্রশ্ন হল, কর্মীদের ডিএ না দিয়ে সেই অর্থ দিয়ে যদি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করা যায়, তা হলে সব রাজ্যই তো বাংলার পথ অনুসরণ করতে পারে। আর শুধু রাজ্য কেন, কেন্দ্রও এই পথ অনুসরণ করতে পারে। আর যখন বাংলায় জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করে ক্ষমতাসীন দল তৃতীয় বারের জন্য বিপুল জনাদেশ পেয়ে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে, তখন অন্যদের সেই পথ অনুসরণ করার অসুবিধা থাকার কথা নয়।
এক দিকে বেসরকারিকরণ হচ্ছে, অন্য দিকে স্থায়ী সরকারি পদপূরণ কমছে। চুক্তিতে নিয়োগ বাড়ছে, আর সেই নিয়োগে ডিএ ও অন্যান্য সব সুযোগ সুবিধা থেকেই বঞ্চিত করা হচ্ছে সরকারি কর্মীদের। বেতন দেওয়া হচ্ছে স্থায়ী কর্মীর অর্ধেক বা তারও কম। ক্ষমতায় টিকে থাকার এ আর এক নতুন রাজনীতি। এই নতুন খেলা জনগণকে কোথায় পৌঁছে দেবে, তা সময়ই বলবে।
অসিত কুমার রায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
পেনশন নেই
এয়ার ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কর্মী। ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি অবসর নিই। আমাদের পেনশন খুব সামান্য। তবু পাচ্ছিলাম। তবে ২০১৫-র জুন থেকে ব্যাঙ্কে পেনশন আসা বন্ধ হয়ে যায়। এয়ার ইন্ডিয়ার কলকাতা অফিস কারণ হিসেবে জানায় যে, পেনশনের সহায়ক নথিপত্র ঠিকমতো জমা দেওয়া হয়নি। আমাদের পেনশন এয়ার ইন্ডিয়া এবং এলআইসি যুক্ত ভাবে দেয়। তার পর দু’বার সমস্ত নথিপত্র জমা দিই। এয়ার ইন্ডিয়ার দিল্লি পেনশন সেল-এ বহু বার ফোন করি। তা ছাড়া, আমার কাছে এলআইসি পেনশন সার্টিফিকেট পেপার থাকা সত্ত্বেও কেন পেনশনের টাকা পাচ্ছি না, তা বুঝতে পারছি না।
রতন কুমার সোম, শ্রীরামপুর, হুগলি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।