বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে পেলে অমর হয়েই থাকবেন! ফাইল চিত্র।
বিশ্বের চোখে পেলে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বা অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হতেই পারেন; কিন্তু আমার অভিধানে পেলে ছিলেন এক সংগ্রামী হৃদয়ের মানুষ, যিনি অত্যন্ত আশাবাদী, অপরাজেয়, উজ্জ্বল দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ছিলেন। তাঁর শৈশবকাল তীব্র দারিদ্রে জর্জরিত ছিল। পেলের পরিবার জানত না তাদের পরবর্তী খাবার ঠিক কোথা থেকে আসবে! তা সত্ত্বেও তাঁর মা পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য মাথাপিছু একটা রুটি, এক টুকরো কলা কোনও ক্রমে জোগাড় করতেন। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও পেলে নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করতেন লক্ষ লক্ষ ব্রাজিলিয়ানদের তুলনায়, কারণ তাঁকে অন্তত কখনও সম্পূর্ণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন যাপন করতে হয়নি!
চরম দারিদ্রের কারণে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে বা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত না হয়ে, পেলে মানসিক সন্তুষ্টিকে সম্বল করে তাঁর ফুটবল সাধনায় অবিচল ছিলেন। সাধে কি তিনি আমৃত্যু জীবন্ত কিংবদন্তি রূপে বিরাজ করেছেন! পার্থিব দেহ ত্যাগ করেও বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে তিনি অমর হয়েই থাকবেন!
শুধুমাত্র কি তিনি সর্বংসহা, সদাহাস্যময় বিনয়ী ও মহৎ ব্যক্তিত্ব! মহান ফুটবলার, কিন্তু মানুষ হিসেবে পেলে তার চেয়েও অধিক উচ্চতা অর্জন করেছিলেন নিজ মানবিক তথা মানসিক শক্তির বলে! বর্তমানের এই ভোগসর্বস্ব সমাজে তাঁর মতো এমন একটি দার্শনিক মন সত্যিই খুঁজে পাওয়া ভার!
কাজল চট্টোপাধ্যায়, সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
হৃদয়ে ফুটবল
এডসন অ্যারান্তেস ডো নাসিমেন্তো। পরিচিত নাম ‘পেলে’। অসাধারণ বল নিয়ন্ত্রণ, দু’পায়েই সমান দক্ষ, অবিশ্বাস্য দুরন্ত গতি, হেড, ডজ, ড্রিবলিং এবং অসামান্য বাই-সাইকেল কিক, স্পটজাম্প সব কিছুর বিরল সমাহার। পেলে এমনই এক ফুটবলার, যাঁর দুই পায়েই জাদু। যাঁকে ফিফা ‘গ্রেটেস্ট’ তকমা দিয়ে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলার বলেছে। ‘অ্যাথলিট অব দ্য সেঞ্চুরি’ বলেছে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি।
ছোটবেলায় জুতো পালিশ করার ফাঁকে ফুটবল-স্বপ্ন। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্বের শীর্ষে উঠেছেন। ১৭ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ মাঠে। ফুটবলের প্রথম মেগাস্টার। তিনি অনেক কিছুতেই প্রথম। প্রথম বিশ্বকাপেই নায়ক, সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক ও ফাইনালে দু’গোল। চতুর্থ তথা শেষ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইটালি ৪-১ গোলে চূর্ণ। পেলেই হলেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। তিনিই একমাত্র ফুটবলার, যিনি প্রথম ও শেষ বিশ্বকাপ দু’টিতে নায়ক। এবং চারটি বিশ্বকাপ খেলে তিন বারের বিজয়ী। ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৩৬৬টি ম্যাচে ১২৮৩টি গোল, বিশ্বকাপের মঞ্চে ১২টি। তাই পেলেই বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। তিনিই ফুটবল সম্রাট। পেলে তাঁর কঠিনতম প্রতিপক্ষের কাছ থেকেও অনেক প্রশংসা কুড়িয়ে তাঁর ফুটবল সীমানার বৃত্তটি পূর্ণ করেছেন।
ফুটবলের দুই মহানক্ষত্র পেলে এবং মারাদোনা পরলোকে। কোনও তুলনা টানা নিরর্থক। আমরা রিক্ত। পেলে তাঁর খেলায় যে মায়াবিভ্রম ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন, সেই সুখস্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকি আমরা। পেলের মৃত্যু নেই। মৃত্যু তাঁর কাছে পরাভূত। তিনি অনন্য, অদ্বিতীয়। তাঁর বলার অধিকার আছে ‘আমি ফুটবলের জন্যেই জন্মেছি’, তিনি তত দিনই বেঁচে থাকবেন, যত দিন ফুটবল থাকবে আমাদের হৃদয় জুড়ে।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
শেষ সম্রাট
পৃথিবী ছেড়ে পরলোকে যাত্রা করলেন ও রেই! এই নামেই তো তাঁকে ডাকে ব্রাজিল। সারা বিশ্বের কাছে তিনি ফুটবল সম্রাট, কখনও ব্ল্যাক পার্ল। আর আট থেকে আশির কাছে তিনি পেলে— এডসন অ্যারান্তেস ডো নাসিমেন্তো। ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন পেলে। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই করেছেন, কিডনি ও হার্টের সমস্যাকে ড্রিবল করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন যথাসাধ্য। অবশেষে ফুটবল সম্রাট চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনার কাছে। আর জীবনের শেষে তিনটি বিশ্বকাপ, হাজারখানেক গোলের গর্ব আর ঠোঁটের কোনায় মায়াবী হাসিটা নিয়ে তবেই এই দুনিয়ার ফুটবল মাঠ ছাড়লেন পেলে। তিনি আর নেই, এই কথাটাই বেদনাদায়ক সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমীর কাছে। ফুটবল হয়ে পড়ল এক অর্থে সম্রাটহীন।
কাতার বিশ্বকাপের শেষের দিকটা জুড়ে এমন এক আশঙ্কা ছিলই। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল, তখনই মারণ কর্কটরোগে প্রবল কাবু হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। কেমোথেরাপি কাজ করছিল না। শেষ পর্যন্ত ২৯ ডিসেম্বর গোটা পৃথিবীকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট। চলে গেলেন এক চিরঘুমের দেশে।
কেউ কেউ তাঁকে দিয়েগো মারাদোনার প্রতিদ্বন্দ্বী বলে থাকেন। কিন্তু অনেকের মতেই পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ‘কমপ্লিট’ ফুটবলার ছিলেন পেলে। তাঁর মতো বাইসাইকেল কিক, সাইড ভলি করার দক্ষতা অনেক কম খেলোয়াড়ের তখনও ছিল, আজও যে অনেকের মধ্যে আছে, তা-ও নয়। তিনি এ ক্ষেত্রে অনন্য। ব্রাজিলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জয় তাঁর কীর্তি। পৃথিবীতে আর কারও এই নজির নেই।
পেলের অনন্য নজিরের মধ্যে আছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে ১২টি গোল। এই ভাবেই ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি গোল আছে তাঁর। স্যান্টোসের হয়ে গোল করেছেন ৬৪৩টি। এ ছাড়াও আমেরিকার কসমস ক্লাবের জার্সিতে ১০৭ ম্যাচে ৬৪টি গোল আছে তাঁর দখলে। তাঁর অনন্য ফুটবল দক্ষতা ও কৃতিত্বের জন্য সমস্ত সাংবাদিকের মতে গত শতকের সেরা ফুটবলার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ভারত এই কিংবদন্তির ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হয়নি। জীবদ্দশায় দু’বার তিনি কলকাতায় এসেছেন— প্রথম বার খেলোয়াড় হিসাবে আর দ্বিতীয় বার দর্শকাসন গ্রহণ করে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। কলকাতা শহরে পেলে এসেছিলেন ১৯৭৭ সালে মোহনবাগান ক্লাবের বিরুদ্ধে একটি খেলায় যোগ দিতে, কসমস ক্লাবের হয়ে। আজও হয়তো অনেক মানুষ সেই খেলাকে মনের মণিকোঠায় বাঁধিয়ে রেখেছেন। মোহনবাগানের অধিনায়ক ছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। শ্যাম থাপা, সুধীর কর্মকার, মহম্মদ হাবিব, মহম্মদ আকবর, গৌতম সরকারের মতো নক্ষত্র সমন্বিত ও প্রদীপ কুমার (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কোচের তত্ত্বাবধানে সেই ম্যাচে দুর্দান্ত পর্যায়ে খেলা হয়েছিল। ইডেনে সে দিন ২-২ গোলে ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে ভারত যে ফুটবল বিশ্বে এক ঘুমন্ত দৈত্য, তা আরও এক বার প্রতিভাত হল। সেই দলের সঙ্গে ফুটবল সম্রাট সহাস্যে ড্রেসিংরুমে ছবিতে এক ফ্রেমে বন্দি হয়েছিলেন।
এর পরে ফুটবল সম্রাট কলকাতায় এসেছিলেন ফের ৩৮ বছর পরে ২০১৫ সালের অক্টোবরে। যুবভারতীতে আইএসএল-এর দর্শক হিসেবে। পেলে তাঁর জীবনটাকে বরাবরই এক নম্বরেই রেখে দিয়েছেন। আশির দশক থেকে তাঁর সঙ্গে মারাদোনার তুলনা টানা হয়েছে। কে বড়? পেলে সর্বদাই নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন। কেন আপনি বড়? জবাবে পেলে বলতেন, মাঠের মধ্যে শুধু এক নম্বর হলে চলবে না। যদি তুমি আদর্শ হয়ে থাকতে চাও, তা হলে তোমাকে মাঠের বাইরেও এক নম্বর হতে হবে। মারাদোনা এক সময়ে মাঠের বাইরে বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু পেলের ক্ষেত্রে এমনটা কখনওই দেখা যায়নি।
শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০
বাংলাও থাক
আমাদের রাজ্যে যে বিদ্যুতের বিল গ্রাহকরা পান, তা পুরোটাই ইংরেজিতে। শুধু তা-ই নয়, এত বিস্তারিত ভাবে তা লেখা থাকে, অনেকের পক্ষেই বুঝতে অসুবিধা হয়। অথচ, এখানে প্রায় সব গ্রাহকই বাঙালি। অনুরোধ, বিদ্যুৎ বিলে ইংরেজির সঙ্গে যেন বাংলা ভাষাও অবশ্যই থাকে।
ফিরোজ আলি কাঞ্চন, গলসি, পূর্ব বর্ধমান