Surgery

সম্পাদক সমীপেষু: দক্ষিণ যাত্রা ও সমস্যা

এক জন সার্জেন হিসেবে বলি, আমরা জানি জটিলতা সার্জারির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমাদের সবার অস্ত্রোপচারজনিত জটিলতা হয় এবং নাওয়া, খাওয়া, ঘুম আপস করে তা সামলাতেও হয় তখন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:০২
Share:

ছবি: সংগৃহীত

‘‘দক্ষিণপন্থী’ ভিড় কমাতে প্ল্যাকার্ড, বিতর্কে চিকিৎসক’ (১৫-১) প্রতিবেদন বিষয়ে ক’টি কথা বলা প্রয়োজন। ডাক্তার অভিজিৎ চৌধুরীর তরফে রোগীদের দক্ষিণমুখী যাত্রা কমানোর কোনও প্রয়াস প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়নি। অথচ কথায় কথায় শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে যে, এক জন বাঙালি ডাক্তার বাঙালি রোগীদের দক্ষিণ-যাত্রার বিরোধিতা করছেন। এ ব্যাপারে আরও কারও কারও মতামতও সে দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করেছে। আসল সমস্যা অন্যত্র। দক্ষিণে আংশিক চিকিৎসা বা মূল চিকিৎসা সম্পন্ন করে রাজ্যে ফিরে ধোয়ামোছার কাজ বা অস্ত্রোপচারের জটিলতা এখানকার ডাক্তারদের ঘাড়ে চাপানোতেই শুধু আপত্তি।

Advertisement

এক জন সার্জেন হিসেবে বলি, আমরা জানি জটিলতা সার্জারির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমাদের সবার অস্ত্রোপচারজনিত জটিলতা হয় এবং নাওয়া, খাওয়া, ঘুম আপস করে তা সামলাতেও হয় তখন। এর উপর আবার অন্যদেরটাও সামলাতে হলে সেটা কি ন্যায্য হল? কাজ নয়, শুধু কাজের ভুল/গোলমালটুকু যদি বাইরে থেকে সযত্ন ছেঁকে পাঠাই; নিজ নিজ ক্ষেত্রে আমাদের দরদি বন্ধুদের কেমন লাগবে?

অনেকের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত যে, ‘‘নিজের চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে রোগীদের।’’ কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্ত যদি কখনও ভুল প্রমাণিত হয়, তখন উদ্ভূত সমস্যার দায়িত্ব কার?

Advertisement

বোঝা প্রয়োজন, এক বার জটিলতা শুরু হলে অনেক সময়ই সার্জারির শেষ ফল, সার্জেনের সমস্ত চেষ্টা সত্ত্বেও আশানুরূপ হয় না। উপরন্তু দূরে চিকিৎসা করিয়ে এই পর্যায়ে রোগী অর্থনৈতিক ভাবে এবং মানসিক ভাবে বেশ বিপর্যস্ত থাকেন। পদে পদে অসহিষ্ণু অশান্তি তাই এই ধরনের উদ্ধারমূলক চিকিৎসার নিত্যসঙ্গী। আজকের দিনে, যখন কাগজ, টিভি, কনজ়িউমার কোর্ট সবাই লাঠি নিয়ে প্রস্তুত, তখন এই উপরি উৎপাত থেকে বাঁচতে চাওয়া ঠিক কত বড় অন্যায় বলতে পারেন? আবার অধিকাংশ সময় শেষ ফলের যেটুকু খুঁত, তার দায় শেষ চিকিৎসকের প্রাপ্য হলেও, রোগীর মোটামুটি সেরে ওঠার কৃতিত্ব তাঁর পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজনের কাছে অবশ্যই দক্ষিণী প্রথম চিকিৎসকের। আশ্চর্য!

শুধু জটিলতার অনাবশ্যক দায়ভার নয়, ‘ইগোয় নুনের’ ব্যাপারটা একটু অন্য রকমও হতে পারে। ধরুন, এ রাজ্যের অন্যতম সেরা কার্ডিয়াক সার্জেনকে, চেন্নাইতে হওয়া বাইপাস সার্জারির ড্রেসিং পাল্টাতে পাঠানো হল নিয়মিত ভাবে, তাঁকে ফোন করে অনুরোধ করে নয়, রোগীকে বলে দেওয়া হল, যান পাড়ায় ফিরে দু’দিনে এক বার ড্রেসিং করিয়ে নেবেন। ব্যস, বাঙালির কার্ডিয়াক সার্জেন হলেন দক্ষিণের হাউসস্টাফ।

মাঝে মাঝে আর এক উদ্ভট উৎপাত বাংলায় চিকিৎসা করার দোষে সহ্য করতে হয়। কোনও রোগী দক্ষিণে কাউকে দেখিয়ে এলেন, আর তাঁর চিকিৎসার ধারা বাঙালি চিকিৎসকের সঙ্গে মিলল না— ব্যস। দক্ষিণের সেই চিকিৎসক ডিগ্রিতে এবং অভিজ্ঞতায় (মাঝে মাঝে তিনি আবার ভিন্ন স্পেশালিটির) বাঙালি চিকিৎসকটির থেকে কম হলেও, কৈফিয়তের মতো প্রমাণ করতে হবে, ঠিকটা তিনিই বলেছেন। এবং বিচারক এক-পরিবার বা এক-পাড়া অচিকিৎসক মানুষ। এই অবস্থায় পেশার এথিক্স বজায় রেখে দক্ষিণী সহকর্মীর নিন্দে না করে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সংলাপ বিন্যাস, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে দুর্ভাগ্যবশত শেখানো হয় না।

অভিজিৎবাবুর কিন্তু একটা ভুল হয়েছে, তিনি সরকারি চিকিৎসক। সরকার বা কর্পোরেটে কাজ করার অনেক সুবিধা আছে। কিন্তু এই সুবিধা আসে ‘কিছু’র বিনিময়ে। নিজের মতামত প্রকাশের অধিকার সরকারি বা কর্পোরেট ডাক্তারদের সীমাবদ্ধ। সরকারিতে সরকারের, আর কর্পোরেটে মালিকের অসুবিধা হতে পারে— এমন মত প্রকাশ্যে উত্থাপন মহাপাপ। উনি প্ল্যাকার্ডটা নিজের চেম্বারে রাখলেই নিরাপদে থাকতেন। অবশ্য তা হলে আনন্দবাজার ফিরেও দেখত না, এবং সেই দেখাটা ভীষণ জরুরি।

খুব পরিষ্কার করে বোঝা প্রয়োজন, কনসালটেশন চিকিৎসা নয়। ওষুধ, অপারেশন হল চিকিৎসা। রোগী দক্ষিণে কনসালটেশন করেছেন বলে ডা. অভিজিৎ চৌধুরীর বা অন্য কারও রাগ-অভিমান হতে পারে না। অসুবিধা আংশিক চিকিৎসা করিয়ে ফিরে আসা রোগীদের নিয়ে। ভাষাগত অসুবিধার কারণে, দক্ষিণে এঁরা আবার মূল চিকিৎসার সম্ভাব্য ফলাফল এবং জটিলতার ব্যাপারে প্রথমে ভাল বোঝেননি।

সরল করে শেষ করি। রোগীরা অবশ্যই দক্ষিণে যাবেন, পশ্চিমে যাবেন, কিন্তু সম্পূর্ণ চিকিৎসা সেখানেই করানো ন্যায্য। কোনও বাঙালি ডাক্তারের কোনও ক্ষমতা নেই তা আটকানোর, আর তেমন ভাবনা মনে থাকাও অন্যায়। কিন্তু রোগীর যেমন নিজের চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে, ডাক্তারেরও সম্পূর্ণ অধিকার আছে কারও চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার বা না-নেওয়ার সিদ্ধান্তের।

সৃজন মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-১০৭

সম্প্রতি রাজ্যের অত্যন্ত নামী সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক এবং রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক উচ্চতম বিভিন্ন কমিটির কর্মকর্তা, সরকারি হাসপাতালের মধ্যেই যে ভাবে এক শ্রেণির রোগীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তা মেডিক্যাল এথিক্সের পরিপন্থী। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এবং রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে, যাতে সরকারি হাসপাতাল সহ কোথাও কোনও চিকিৎসক রোগী-বাছাইয়ে কোনও বিভেদ না-ঘটাতে পারেন।

কোনও রাজ্য সরকার উন্নত আধুনিক নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা-কেন্দ্র তৈরি করতে না পারলে, সে রাজ্যের মানুষ তো বাইরে কোনও নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সন্ধানে যাবেনই, তাঁদের দোষ কোথায়? সরকারি অতি উচ্চ পদে আসীন এক জন চিকিৎসকের তো সবার আগে দায়িত্ব ছিল: উন্নত পরিকাঠামো-যুক্ত এবং উপযুক্ত পরিবেশ-সম্পন্ন চিকিৎসা-কেন্দ্র তৈরি করতে সরকারকে বাধ্য করা। সে জন্য প্রয়োজনে প্ল্যাকার্ড ধরা। বা আন্দোলন গড়ে তোলা। তা না করে রোগীদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে তিনি গর্হিত কাজ করেছেন।

সজল বিশ্বাস

সাধারণ সম্পাদক

সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম (এসডিএফ)

আবেগতাড়িত

‘রোহিঙ্গারা?’ (২১-১) চিঠি প্রসঙ্গে বলি, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সরকারি ধৰ্ম যেখানে ইসলাম, মায়ানমারের সে-অর্থে কোনও ঘোষিত সরকারি ধর্ম নেই। মায়ানমার খাতায়-কলমে বহুধর্মসমন্বিত এক দেশ, যদিও বেশির ভাগ মানুষ থেরাভেদা বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। পত্রলেখক রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারেন, কিন্তু সিএএ আইনটি যে-যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে, সেই যুক্তি অনুযায়ী, মায়ানমারে বৌদ্ধধর্ম যে হেতু সরকারি ধর্ম নয়, সে হেতু রোহিঙ্গারা ওই দেশের ‘‘ধর্মীয় কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নির্যাতিত’’ নন। সুতরাং যুক্তি মানলে, তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব ধোপে টেকে না। আবার পাকিস্তানে আহমেদিয়ারা অত্যাচারিত হতে পারেন, কিন্তু তাঁরা ইসলাম সম্প্রদায়েরই এক অংশ। যদিও পাকিস্তানের আইন তা বলে না, সেটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই আবেগতাড়িত হয়ে, আহমেদিয়াদের পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের সঙ্গে একই পর্যায়ভুক্ত করা যায় না। ভারত বহিরাগত-জনিত সমস্যার মোকাবিলা নানা সময়ে নানা ভাবে করেছে। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তখনকার প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বন্দরানায়কের এক চুক্তি অনুসারে, ভারত সেই দ্বীপরাষ্ট্রের ৫,২৫,০০ তামিল অধিবাসীকে স্থান দেয়। ১৯৫০ সালে নেপালের সঙ্গে ভারতের এক চুক্তি অনুসারে, নেপালের অধিবাসীরা ভারতে বসতি স্থাপন করতে পারে।

প্রণব ভৌমিক

রামবাঁধ, পশ্চিম বর্ধমান

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement