uttamkumar

সম্পাদক সমীপেষু: ঢাকা পড়ল গুণগুলো

বাঙালি মননে উত্তমকুমার ছিলেন ঘরের ছেলের বেশে স্বপ্নের রাজপুত্র। আর এতেই ঢাকা পড়েছিল তাঁর অভিনয়ের বিভিন্ন খামতি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৪:২৭
Share:

‘বহুমুখী’ উত্তমকুমারকে নিয়ে এণাক্ষী রায় মিত্রের প্রবন্ধ ‘তাঁর বৈশিষ্ট্যের ভাষান্তর হয় না’ (২৪-৭) কথাটির সঙ্গে সহমত পোষণ করা গেল না। বরং, যে কোনও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের নির্দিষ্ট কোনও ভাষা নেই, তা নির্দিষ্ট নিয়মে স্বাভাবিক ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায়। উত্তমকুমারের অভিনয় দক্ষতা ছিল বলেই তিনি আমাদের কাছে মহানায়ক হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই, সম্পূর্ণ অভিনেতা বলতে যা বোঝায়, উত্তমকুমার তা ছিলেন না। লেখিকা উত্তমকুমারের বাংলা উচ্চারণে দাঁত চেপে, ইচ্ছাকৃত ইংরেজি টানে বা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের বিকৃতির প্রয়োগ নিয়ে যা বলতে চেয়েছেন, সেটাই মহানায়কের অভিনয়ে প্রধান ত্রুটি, উচ্চারণে জড়তা।

Advertisement

বাঙালি মননে উত্তমকুমার ছিলেন ঘরের ছেলের বেশে স্বপ্নের রাজপুত্র। আর এতেই ঢাকা পড়েছিল তাঁর অভিনয়ের বিভিন্ন খামতি। কোনও অভিনেতার ব্যর্থতা কখনও তাঁর অভিনয়ের উৎকর্ষ হতে পারে না, বরং উৎকর্ষ থাকলেই সব জায়গাতে সফল হওয়া যায়, তার প্রমাণ, শর্মিলা, রাখী, জয়া, বিশ্বজিৎ, মিঠুন প্রমুখ।

আসলে প্রবন্ধে উত্তমকুমারের খামতিগুলোই বেশি প্রকট করে ফেলেছেন লেখিকা। ঢাকা পড়েছে সেই গুণগুলো, যাতে প্রায় একার কাঁধেই তিনি বহন করেছেন সেই সময়ের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে। তাই নায়ক চলচ্চিত্রে নায়করূপী উত্তমকুমারকে দেখেও অবাঙালি মহিলা ও শিখ যুবকের নিরুত্তাপ আচরণ বুঝিয়ে দেয়, এই মহানায়ক শুধু বাংলারই এবং আরও স্পষ্ট ভাবে বললে বাঙালির। এই মহানায়ক পরিচয়েই তিনি লালিত হন আবহমানকাল, এটাই আমাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।

Advertisement

অশোক দাশ

রিষড়া, হুগলি

দ্রৌপদীহীন

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়ল মহাশ্বেতা দেবীর ছোট গল্প ‘দ্রৌপদী’! সৌজন্যে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল! গল্পটি ১৯৯৯ সাল থেকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্রৌপদী-র বদলে মহাশ্বেতা দেবীর অন্য কোনও গল্পও নেওয়া হয়নি, যা নিন্দনীয়, এবং দুর্ভাগ্যজনক। আরও অভিযোগ, বাদ পড়েছেন দু’জন দলিত লেখিকাও। যদিও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অন্তত ১৪ জন সদস্য এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ওভারসাইট কমিটি খেয়ালখুশি মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা স্ট্যান্ডিং কমিটি বা অন্য কোনও কমিটির সঙ্গে আলোচনা করছে না বা করেনি। কমিটিতে কোনও বিশেষজ্ঞও নেই। আজকের যুগে বাস করেও সরকার জাতপাতকে প্রাধান্য দিচ্ছে! যদিও নির্বাচনের সময় নেতারা অন্য কথা বলেন। অর্থাৎ, দ্বিচারিতা, মিথ্যাচার, ও স্বৈরাচারিতা, যা মেনে নেওয়া যায় না। ছাত্রছাত্রীদের এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ জানানো উচিত এবং প্রয়োজনে আদালতে যাওয়া উচিত।

মহাশ্বেতা দেবী শুধু এক জন স্বনামধন্য লেখিকা নন, অ্যাকাডেমি-সহ বহু পুরস্কারে ভূষিত। তিনি শবর ও দলিতদের নিয়ে আন্দোলনও করেছেন। সুতরাং, তাঁর গল্পকে পাঠ্যক্রম থেকে ছেঁটে ফেলার আগে কাউন্সিলের দশ বার ভাবা উচিত ছিল, এই বিষয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল। বোঝাই যাচ্ছে, কাউন্সিল উপরমহলের নির্দেশ অনুযায়ী এ সব নিন্দনীয় কাজ করছে। অর্থাৎ, বিজেপি তথা মোদীজির সরকার যে দলিতদের স্বার্থ দেখতে রাজি নয়, তা প্রমাণিত। পরিশেষে, ‘দ্রৌপদী’ গল্পে, উর্দিপরা তকমাধারী প্রশ্ন করেছিলেন, সাঁওতাল মেয়ের নাম দোপ্‌দি ক্যান? সেনানায়কের কাছে দ্রৌপদী দুর্বোধ্য, গল্পের শেষে আছেও তা-ই। সুতরাং, সেনানায়ক না বুঝুন, ছাত্রছাত্রীরা যদি বুঝে যান দ্রৌপদী কে? তা হলে তো মহা বিপদ! অতএব দাও ছেঁটে ফেলে দ্রৌপদীকে, হন না তিনি কোনও সম্মাননীয় লেখক ও সমাজের বিশিষ্ট জন, তথা অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত মহাশ্বেতা দেবী বা তাঁর সমতুল্য কেউ!

পঙ্কজ সেনগুপ্ত

কোন্নগর, হুগলি

ধানের স্মৃতি

‘দেশি ধান অমৃত সমান’ (১৪-৮) শীর্ষক প্রবন্ধ ছেলেবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। আমার বাবা পেশায় এক জন কৃষক ছিলেন। আমাদের বেশ কয়েক বিঘা ডাঙা ও বিল জমি ছিল। বিলে কালো রঙের এক ধরনের ধান হত, আমরা তাকে ক্যারশাল বলতাম। এই ধান হাঁটু বা ঊরু-সমান জলে কেটে আঁটি বাঁধা হত। তার পর ডিঙিতে বা কলার ভেলায় করে ডাঙায় আনা হত। আঁটিগুলি রোদে শুকিয়ে উঠোনে বিছিয়ে গরু দিয়ে মাড়াই করা হত। এই ধান থেকে পাতিলেবুর পাতা ও নুন সহযোগে ঢেঁকিতে চিঁড়ে তৈরি হত। এ ছাড়া ডাঙা জমিতে লাঠিশাল, গাম্ভীর, শালকেলে, উড়ি প্রভৃতি ধানের চাষ হত। তখন বীজধান জমিতে বোনা হত। ধান উঠতে ৫-৬ মাস সময় লাগত। ধান ওঠার পর বাছাই ধানের শিষ আলাদা করে সেগুলি মাড়াই করা হত বীজধানের জন্য। এই বীজধান ভাল করে শুকিয়ে বস্তা বোঝাই করে বাঁশের মাচার উপর যত্ন করে তুলে রাখা হত।

দেশি ধানের ফলন কম হলেও ঢেঁকিতে ছাঁটা এই চালের স্বাদ ও খাদ্যগুণ ছিল অনেক বেশি। দেশি ধানের পান্তাভাত অতি সুস্বাদু। গরম ভাতের মাড় ফেলে দেওয়া হত না। অনেকে তৃপ্তি করে খেতেন। পৌষপার্বণে দেশি চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি হত নানা ধরনের পিঠেপুলি। ঝোলা গুড় সহযোগে সাঁঝের পিঠে, অথবা হাঁড়িতে রাখা জাল দেওয়া খেজুর রসের মধ্যে ডোবানো গরম সাঁঝের পিঠে হত রসালো ও তুলতুলে। তখন গ্ৰামবাংলায় ঘরে ঘরে ‘নবান্ন’ পালিত হত। পড়শিরা নিমন্ত্রিত হতেন এই অনুষ্ঠানে।

দেশি ধানের চাষ লোপ পেতে থাকে আশির দশকের শুরু থেকেই। চাষ শুরু হয় উচ্চফলনশীল হাইব্রিড ধানের। উচ্চফলনশীল ধানচাষের ক্ষেত্রে বীজতলা তৈরি করে সেখান থেকে চারাগাছ তৈরি করে জমিতে রোপণ করা হয়। এই উচ্চফলনশীল ধানচাষের কারণে বিপুল জনসংখ্যার দেশ ভারতে খাদ্যসমস্যা মিটেছে, কিন্তু বাঙালি হারিয়ে ফেলেছে তাদের একান্ত নিজস্ব খাদ্যশস্য। আশার কথা, দেশি ধানের ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে।

হারান চন্দ্র মণ্ডল

কলকাতা-১২৩

ডাকঘরের কাজ

‘বহুমুখী’( ১৬-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা। ডাকঘরে মোবাইলের রিচার্জ, বিদ্যুতের বিল, পাসপোর্ট, প্যানকার্ড-সহ নানাবিধ পরিষেবা পেলে মানুষ উপকৃত হবেন। কিন্তু স্বল্প সঞ্চয়, আমানত ও আর্থিক লেনদেন, সরকারি পেনশন প্রদান ইত্যাদি বিষয় তো উঠে যায়নি। এটাও তো ডাকঘরের নিজের কাজের মধ্যেই পড়ে। সরকারি ডাকঘর বিশাল আর্থিক নিরাপত্তা দেয় আমানতকারীদের, যা ক্রমশ দুর্লভ হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে।

চিঠির গুরুত্ব কমে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু পার্সেলের গুরুত্ব বেড়েছে। রানার, পোস্টম্যানের বদলে এক ঝাঁক যুবক প্রতি দিন দরজায় দরজায় ঘুরে নানা রকমের জিনিস পৌঁছে দিচ্ছেন। এই পার্সেল ডেলিভারিও তো ডাকঘরের কাজ ছিল। বিদেশে সরকারি ডাক পরিষেবা আজও পার্সেল পৌঁছে দেয়। সুতরাং, ডাকঘর নিজের কাজকেই আরও উন্নত করে পরিষেবা দিতে পারে।

শুভ্রাংশু কুমার রায়

চন্দননগর, হুগলি

‘বহুমুখী’ উত্তমকুমারকে নিয়ে এণাক্ষী রায় মিত্রের প্রবন্ধ ‘তাঁর বৈশিষ্ট্যের ভাষান্তর হয় না’ (২৪-৭) কথাটির সঙ্গে সহমত পোষণ করা গেল না। বরং, যে কোনও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের নির্দিষ্ট কোনও ভাষা নেই, তা নির্দিষ্ট নিয়মে স্বাভাবিক ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায়। উত্তমকুমারের অভিনয় দক্ষতা ছিল বলেই তিনি আমাদের কাছে মহানায়ক হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই, সম্পূর্ণ অভিনেতা বলতে যা বোঝায়, উত্তমকুমার তা ছিলেন না। লেখিকা উত্তমকুমারের বাংলা উচ্চারণে দাঁত চেপে, ইচ্ছাকৃত ইংরেজি টানে বা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের বিকৃতির প্রয়োগ নিয়ে যা বলতে চেয়েছেন, সেটাই মহানায়কের অভিনয়ে প্রধান ত্রুটি, উচ্চারণে জড়তা।

বাঙালি মননে উত্তমকুমার ছিলেন ঘরের ছেলের বেশে স্বপ্নের রাজপুত্র। আর এতেই ঢাকা পড়েছিল তাঁর অভিনয়ের বিভিন্ন খামতি। কোনও অভিনেতার ব্যর্থতা কখনও তাঁর অভিনয়ের উৎকর্ষ হতে পারে না, বরং উৎকর্ষ থাকলেই সব জায়গাতে সফল হওয়া যায়, তার প্রমাণ, শর্মিলা, রাখী, জয়া, বিশ্বজিৎ, মিঠুন প্রমুখ।

আসলে প্রবন্ধে উত্তমকুমারের খামতিগুলোই বেশি প্রকট করে ফেলেছেন লেখিকা। ঢাকা পড়েছে সেই গুণগুলো, যাতে প্রায় একার কাঁধেই তিনি বহন করেছেন সেই সময়ের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে। তাই নায়ক চলচ্চিত্রে নায়করূপী উত্তমকুমারকে দেখেও অবাঙালি মহিলা ও শিখ যুবকের নিরুত্তাপ আচরণ বুঝিয়ে দেয়, এই মহানায়ক শুধু বাংলারই এবং আরও স্পষ্ট ভাবে বললে বাঙালির। এই মহানায়ক পরিচয়েই তিনি লালিত হন আবহমানকাল, এটাই আমাদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।

অশোক দাশ

রিষড়া, হুগলি

দ্রৌপদীহীন

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়ল মহাশ্বেতা দেবীর ছোট গল্প ‘দ্রৌপদী’! সৌজন্যে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল! গল্পটি ১৯৯৯ সাল থেকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্রৌপদী-র বদলে মহাশ্বেতা দেবীর অন্য কোনও গল্পও নেওয়া হয়নি, যা নিন্দনীয়, এবং দুর্ভাগ্যজনক। আরও অভিযোগ, বাদ পড়েছেন দু’জন দলিত লেখিকাও। যদিও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অন্তত ১৪ জন সদস্য এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ওভারসাইট কমিটি খেয়ালখুশি মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা স্ট্যান্ডিং কমিটি বা অন্য কোনও কমিটির সঙ্গে আলোচনা করছে না বা করেনি। কমিটিতে কোনও বিশেষজ্ঞও নেই। আজকের যুগে বাস করেও সরকার জাতপাতকে প্রাধান্য দিচ্ছে! যদিও নির্বাচনের সময় নেতারা অন্য কথা বলেন। অর্থাৎ, দ্বিচারিতা, মিথ্যাচার, ও স্বৈরাচারিতা, যা মেনে নেওয়া যায় না। ছাত্রছাত্রীদের এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ জানানো উচিত এবং প্রয়োজনে আদালতে যাওয়া উচিত।

মহাশ্বেতা দেবী শুধু এক জন স্বনামধন্য লেখিকা নন, অ্যাকাডেমি-সহ বহু পুরস্কারে ভূষিত। তিনি শবর ও দলিতদের নিয়ে আন্দোলনও করেছেন। সুতরাং, তাঁর গল্পকে পাঠ্যক্রম থেকে ছেঁটে ফেলার আগে কাউন্সিলের দশ বার ভাবা উচিত ছিল, এই বিষয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল। বোঝাই যাচ্ছে, কাউন্সিল উপরমহলের নির্দেশ অনুযায়ী এ সব নিন্দনীয় কাজ করছে। অর্থাৎ, বিজেপি তথা মোদীজির সরকার যে দলিতদের স্বার্থ দেখতে রাজি নয়, তা প্রমাণিত। পরিশেষে, ‘দ্রৌপদী’ গল্পে, উর্দিপরা তকমাধারী প্রশ্ন করেছিলেন, সাঁওতাল মেয়ের নাম দোপ্‌দি ক্যান? সেনানায়কের কাছে দ্রৌপদী দুর্বোধ্য, গল্পের শেষে আছেও তা-ই। সুতরাং, সেনানায়ক না বুঝুন, ছাত্রছাত্রীরা যদি বুঝে যান দ্রৌপদী কে? তা হলে তো মহা বিপদ! অতএব দাও ছেঁটে ফেলে দ্রৌপদীকে, হন না তিনি কোনও সম্মাননীয় লেখক ও সমাজের বিশিষ্ট জন, তথা অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত মহাশ্বেতা দেবী বা তাঁর সমতুল্য কেউ!

পঙ্কজ সেনগুপ্ত

কোন্নগর, হুগলি

ধানের স্মৃতি

‘দেশি ধান অমৃত সমান’ (১৪-৮) শীর্ষক প্রবন্ধ ছেলেবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। আমার বাবা পেশায় এক জন কৃষক ছিলেন। আমাদের বেশ কয়েক বিঘা ডাঙা ও বিল জমি ছিল। বিলে কালো রঙের এক ধরনের ধান হত, আমরা তাকে ক্যারশাল বলতাম। এই ধান হাঁটু বা ঊরু-সমান জলে কেটে আঁটি বাঁধা হত। তার পর ডিঙিতে বা কলার ভেলায় করে ডাঙায় আনা হত। আঁটিগুলি রোদে শুকিয়ে উঠোনে বিছিয়ে গরু দিয়ে মাড়াই করা হত। এই ধান থেকে পাতিলেবুর পাতা ও নুন সহযোগে ঢেঁকিতে চিঁড়ে তৈরি হত। এ ছাড়া ডাঙা জমিতে লাঠিশাল, গাম্ভীর, শালকেলে, উড়ি প্রভৃতি ধানের চাষ হত। তখন বীজধান জমিতে বোনা হত। ধান উঠতে ৫-৬ মাস সময় লাগত। ধান ওঠার পর বাছাই ধানের শিষ আলাদা করে সেগুলি মাড়াই করা হত বীজধানের জন্য। এই বীজধান ভাল করে শুকিয়ে বস্তা বোঝাই করে বাঁশের মাচার উপর যত্ন করে তুলে রাখা হত।

দেশি ধানের ফলন কম হলেও ঢেঁকিতে ছাঁটা এই চালের স্বাদ ও খাদ্যগুণ ছিল অনেক বেশি। দেশি ধানের পান্তাভাত অতি সুস্বাদু। গরম ভাতের মাড় ফেলে দেওয়া হত না। অনেকে তৃপ্তি করে খেতেন। পৌষপার্বণে দেশি চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি হত নানা ধরনের পিঠেপুলি। ঝোলা গুড় সহযোগে সাঁঝের পিঠে, অথবা হাঁড়িতে রাখা জাল দেওয়া খেজুর রসের মধ্যে ডোবানো গরম সাঁঝের পিঠে হত রসালো ও তুলতুলে। তখন গ্ৰামবাংলায় ঘরে ঘরে ‘নবান্ন’ পালিত হত। পড়শিরা নিমন্ত্রিত হতেন এই অনুষ্ঠানে।

দেশি ধানের চাষ লোপ পেতে থাকে আশির দশকের শুরু থেকেই। চাষ শুরু হয় উচ্চফলনশীল হাইব্রিড ধানের। উচ্চফলনশীল ধানচাষের ক্ষেত্রে বীজতলা তৈরি করে সেখান থেকে চারাগাছ তৈরি করে জমিতে রোপণ করা হয়। এই উচ্চফলনশীল ধানচাষের কারণে বিপুল জনসংখ্যার দেশ ভারতে খাদ্যসমস্যা মিটেছে, কিন্তু বাঙালি হারিয়ে ফেলেছে তাদের একান্ত নিজস্ব খাদ্যশস্য। আশার কথা, দেশি ধানের ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে।

হারান চন্দ্র মণ্ডল

কলকাতা-১২৩

ডাকঘরের কাজ

‘বহুমুখী’( ১৬-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা। ডাকঘরে মোবাইলের রিচার্জ, বিদ্যুতের বিল, পাসপোর্ট, প্যানকার্ড-সহ নানাবিধ পরিষেবা পেলে মানুষ উপকৃত হবেন। কিন্তু স্বল্প সঞ্চয়, আমানত ও আর্থিক লেনদেন, সরকারি পেনশন প্রদান ইত্যাদি বিষয় তো উঠে যায়নি। এটাও তো ডাকঘরের নিজের কাজের মধ্যেই পড়ে। সরকারি ডাকঘর বিশাল আর্থিক নিরাপত্তা দেয় আমানতকারীদের, যা ক্রমশ দুর্লভ হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে।

চিঠির গুরুত্ব কমে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু পার্সেলের গুরুত্ব বেড়েছে। রানার, পোস্টম্যানের বদলে এক ঝাঁক যুবক প্রতি দিন দরজায় দরজায় ঘুরে নানা রকমের জিনিস পৌঁছে দিচ্ছেন। এই পার্সেল ডেলিভারিও তো ডাকঘরের কাজ ছিল। বিদেশে সরকারি ডাক পরিষেবা আজও পার্সেল পৌঁছে দেয়। সুতরাং, ডাকঘর নিজের কাজকেই আরও উন্নত করে পরিষেবা দিতে পারে।

শুভ্রাংশু কুমার রায়

চন্দননগর, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement