করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষ যখন নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রবল সংশয়ে দিন কাটাচ্ছেন, সেই সময় বজ্রপাত থেকে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি অন্যান্য জেলার মতো হুগলি জেলার গোঘাট, খানাকুল, পোলবা, সিঙ্গুর, তারকেশ্বর, হরিপাল প্রভৃতি এলাকায় বজ্রপাতের কারণে বহু নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন— বন্যা, খরা, সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়া, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে মেঘের জলকণাগুলি তড়িৎ-গ্রস্ত হয়, এ ছাড়া মেঘগুলির পারস্পরিক ঘর্ষণেও তাদের মধ্যে তড়িতাধান বা ইলেকট্রিক চার্জের সৃষ্টি হয়। যখন আধান বা চার্জের পার্থক্য খুব বেশি হয়, তখন বিপরীত আধানে থাকা দু’টি মেঘের মধ্যে, অথবা মেঘ ও পৃথিবীপৃষ্ঠের মধ্যে তড়িৎ মোক্ষণ বা ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ডিসচার্জ ঘটে। এতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। তখনই আমরা বিদ্যুতের ঝলক দেখি। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বায়ু প্রসারিত হয়ে প্রচণ্ড শব্দ হয়। এই দুইয়ে মিলে সৃষ্টি হয় বজ্রপাত।
বজ্রপাতের সময় কী করা উচিত, সেই সম্পর্কে রাজ্য সরকার প্রচার শুরু করেছে। বিশেষ করে যাঁরা বাড়ির বাইরে কাজ করেন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি থাকে। উঁচু স্থান বা উঁচু গাছ, ইলেকট্রিক পোস্ট, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি বস্তুর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। বহুতল বাড়ি এবং অন্যান্য উঁচু নির্মাণে বজ্রপাত-বিরোধী ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া দরকার। বজ্রপাত হলে অবশ্যই বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু স্থানে থাকলে, তাড়াতাড়ি সেখান থেকে নিরাপদ জায়গায় নেমে আসতে হবে। সার্বিক সচেতনতা এবং সাবধানতাই বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়।
তাপস দাস
সিঙ্গুর, হুগলি
বিদ্যুৎ বিভ্রাট
বেশ কিছু দিন ধরে চুয়াপুর কলোনি পাড়াতে প্রত্যেক দিন বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে এলাকার মানুষ, বিশেষত স্কুলপড়ুয়াদের খুবই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এই বিষয়ে বহরমপুর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইকে বহু বার বলা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।
অপূর্ব্ব কুমার রায় চৌধুরী
মুর্শিদাবাদ
শংসাপত্র চাই
রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমি। গত ৭ মে আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পুরসভার অফিসে অতি কষ্টে যোগাযোগ করা গেলেও মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার মতো কোনও আধিকারিককে পাওয়া যাচ্ছে না। এই শংসাপত্র একটি অতি প্রয়োজনীয় নথি। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ওই নথি আমাদের মতো মানুষদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন।
অসীম কুমার বসু
কলকাতা-৮৪
অনলাইনে হোক
এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অবশেষে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা এ বছর মাধ্যমিক দিত, তারা নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার পরে আর কোনও পরীক্ষায় বসতে পারেনি। কিন্তু যাদের উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল, তারা মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে একাদশ শ্রেিণর হাফইয়ার্লি এবং একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার অন্তত অর্ধেকটা দিতে পেরেছিল। ফলে তাদের মূল্যায়ন কী ভাবে হবে, তা নির্ধারণ করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের নাজেহাল অবস্থা।
আমরা এখনও জানি না, আগামী বছরও আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব কি না। সে ক্ষেত্রে, আগামী বছরের জন্য এখন থেকেই ব্যবস্থা করা উচিত। ২০২২ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। স্বাভাবিক ক্লাসের সময় ধরলে ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এত দিনে স্কুলের প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন করা হয়ে যায় এবং তারা দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করে। তা যখন হচ্ছে না, তখন রাজ্য সরকারের উচিত আগামী বছরের পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তাদেরও কিছু বেসরকারি এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় বোর্ডের স্কুলগুলির মতো অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া।
ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য
চুঁচুড়া, হুগলি
ট্যাবের টাকা
“‘পরিকল্পনার অভাবে’ জলে গেল ট্যাবের ৯৫ কোটি টাকা” (১২-৬) শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে কয়েকটি তথ্য বিভ্রান্তিকর ভাবে পরিবেশিত হয়েছে, যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তাই কিছু তথ্য দেওয়া হল। ১) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আমরা দ্বাদশ শ্রেণির ৮.৫ লক্ষ পড়ুয়ার হাতে ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য ১০,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি, যাতে তারা অনলাইনে লেখাপড়া চালাতে পারে। এই ট্যাব তাদের উচ্চশিক্ষায়ও কাজে লাগবে।
২) এই উদ্যোগটির অন্যতম উদ্দেশ্য হল, ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ মুছে দেওয়া। ছাত্রছাত্রীদের কাছে জ্ঞানচর্চার অত্যাধুনিক হাতিয়ার পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে। এর ফলে, প্রান্তিক অথবা বিত্তহীন শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। ৩) বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দ্বারা প্রস্তুত ৯টি বিষয়ে ১১০টি অডিয়ো-ভিস্যুয়াল শিখন উপকরণ বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরের নিজস্ব ওয়েবসাইট ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টাল-এ আপলোড করা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাস (ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা দানের পর) থেকে এখনও পর্যন্ত ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টাল-এ ১.৫২ কোটি পর্যবেক্ষণ হয়েছে। এ ছাড়াও, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ তাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের মডেল প্রশ্নোত্তর, বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য শাখার প্রায় সব মূল বিষয়ের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য উপকরণ আপলোড করেছে। ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টাল ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জালিক মাধ্যমে পঠন উপকরণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই ট্যাব বা স্মার্টফোনের সাহায্যে তারা অন্যান্য আন্তর্জালিক মাধ্যমেও লেখাপড়া চালাতে পারবে। প্রকল্পটির সদর্থক দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে একপেশে প্রতিবেদনটি বিভ্রান্তিকর।
শুভ্র চক্রবর্তী
রাজ্য প্রকল্প অধিকর্তা, পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশন
প্রতিবেদকের উত্তর: ‘পরিকল্পনার অভাবে জলে গেল ট্যাবের ৯৫ কোটি টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি (কলকাতা, পৃ ৯, ১২-৬) এই বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতির কথা ভেবে লেখা হয়েছে। বলা হয়েছে, অনলাইন ক্লাস না হওয়ায় এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না হওয়ায় ওই ট্যাব চলতি বছর পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য কাজে এল না। ভবিষ্যতে ওই পরীক্ষার্থীদের ট্যাব কী কাজে আসবে, তা আলোচ্য বিষয় ছিল না। লেখা হয়েছে, শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, ট্যাবের টাকা পাওয়ার পরে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খুলে যায় ১২ ফেব্রুয়ারি। অনেক স্কুলেই অফলাইনে পড়া শুরু হয়। প্রতিবেদনে এক শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য ছিল, “ট্যাবের টাকা দিল সরকার। কিন্তু অনলাইন ক্লাস করার জন্য স্কুলগুলোকে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়নি। কিছু স্কুল নিজের উদ্যোগে অনলাইন ক্লাস নিয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি না থাকায় বহু স্কুল সেই ক্লাস শুরু করেনি।” তবে ভবিষ্যতে ওই ট্যাব যে কাজে আসবে, প্রতিবেদনে সেই ইঙ্গিতও আছে। এক ছাত্রের বাবা বলেছেন, “ছেলের পরীক্ষার প্রস্তুতি বা অনলাইন ক্লাসে, কোনও কাজেই ট্যাব লাগল না। অনলাইনে উচ্চ মাধ্যমিক হলে তবু কাজে আসত। তবে পরবর্তী উচ্চ শিক্ষায় নিশ্চয় কাজে আসবে।” প্রতিবেদনটিকে তাই একপেশে বা বিভ্রান্তিকর বলা যায় না।