দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের নিবন্ধ ‘ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র হয় না’ (২৬-৩) প্রসঙ্গে এই পত্র। স্বতন্ত্র বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী উদ্যাপন হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বহু নাগরিকের মনে হয়তো উঁকি দিয়ে যাচ্ছে সেই স্মৃতি, যা শিরায় শিরায় আজও বইয়ে দেয় আতঙ্কের স্রোত! খান সেনাদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করে রাতারাতি ভিটেমাটি ছেড়ে, সব হারিয়ে এক দল সংসারী মানুষ বর্ডার পেরিয়েছিলেন ‘উদ্বাস্তু’ নাম নিয়ে। কেউ ধুবুলিয়া, কেউ রানাঘাট, তো কারও ঠিকানা শুধুই রেল স্টেশন। আজও প্রবীণ-প্রবীণার কণ্ঠে বাজে সব হারানোর তীব্র হা-হুতাশ। রাষ্ট্রনায়কদের কী লাভ হয়েছিল, নিঃসম্বল মানুষগুলির সেই গূঢ় তত্ত্ব বোধগম্য হয়নি। নিজ তাগিদে তাঁরা ভারত রাষ্ট্রের আংশিক সহায়তায় বেঁচে থাকার রসদটুকু অর্জন করতে পেরেছিলেন মাত্র। আজ তাঁরা ফের বিষাদগ্রস্ত! তবে কি নিজভূমে তাঁরা আবার পরবাসী হতে চলেছেন?
পিএল ক্যাম্পের অসহনীয় দিনগুলোর দগদগে ঘায়ের উপর কি বিষফোড়া হতে চলেছে ডিটেনশন ক্যাম্প! উপযুক্ত নথি দাখিল করলেই সে নাগরিক— যে আক্রান্ত পরিবার অত্যাচারের হাত থেকে প্রাণটুকু বাঁচাতে স্থাবর অস্থাবর সব কিছু হারাল, তার কাছে কী প্রমাণপত্র থাকবে? সিএএ, এনআরসি এক জন নাগরিককে অনায়াসেই পরিণত করতে পারে বে-নাগরিকে! হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে, কাঁটাতারের
এ পারে বসবাসরত মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ! তড়িঘড়ি অনেকেই কাজ ভুলে নথিপত্র জোগাড় করতে ব্যস্ত। রাষ্ট্রনায়কদের কাছে প্রত্যাশিত নিরাপত্তাটুকুও যেন হারিয়েছেন তাঁরা। কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের আধিপত্য কায়েম হলে রাষ্ট্রব্যবস্থা যে স্থবির হয়ে পড়ে, এই সারসত্য সাধারণ নাগরিক বুঝলেও রাষ্ট্রনায়কেরা বোঝেন কি? পরিস্থিতি কেমন হতে যাচ্ছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবুও প্রভাব খাটিয়ে নাগরিকত্বের ছাড়পত্র আদায়ে সক্ষম নাগরিকদের সুচেতনা জাগ্রত না হলে ভোটদাতা হওয়া সত্ত্বেও বে-নাগরিক হওয়ার উদ্বেগ দূর হবে না কিছুতেই।
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
ধর্মই ভিত্তি
ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র হয় না, লিখেছেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। প্রশ্ন হল, ধর্ম দিয়ে কী হয় না? রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনা, দুটোই হয়। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনগোষ্ঠী, শাসক ও সার্বভৌমত্ব— এই চারটি উপাদান রাষ্ট্র গঠনের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু এগুলির মধ্যে ক’টা ছিল প্যালেস্টাইনের? তবুও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী মনে করতেন, তাঁরা একই দেশের মানুষ। তাঁদের ধর্ম ছিল ইসলাম। সমধর্ম এখানে সমমর্মিতা আর মানসিক ঐক্য গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে দাঁড়ায়। এটাই ছিল তাঁদের রাষ্ট্রগঠনের প্রধান চালিকাশক্তি। যিনি যেখানেই থাকুন, একে অপরের মধ্যে একটা স্বদেশচেতনার ধারণা তলে তলে তাঁদের বেঁধে রেখেছিল। কোনও নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমা ছাড়াই ইয়াসের আরাফতের নেতৃত্বে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি পায় রাষ্ট্র হিসেবে (১৯৮৮)।
পাকিস্তান গঠিতই হয় ধর্মের ভিত্তিতে। এক শ্রেণির রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার আপাত কারণ উন্নয়নের বৈষম্য হলেও, ধর্ম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পৃথিবীতে ইসলাম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা কম নয়। আজকের বাংলাদেশ ভাষাকে কেন্দ্র করে লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীন হলেও, পরে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেয়।
দেশে দেশে রাষ্ট্রীয় জীবনে মসজিদ, গির্জা, মঠ বা মন্দিরে প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব প্রচ্ছন্ন ভাবে হলেও রয়ে গিয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা যায়, ধর্মনিরপেক্ষ দেশের রাষ্ট্রনেতারা কপালে সিঁদুর লাগিয়ে নারকেল ভেঙে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজের বা প্রকল্পের শুভ সূচনা করছেন। ব্যক্তিগত ধর্মাচরণ প্রকাশ্যে করে থাকেন খুবই সঙ্কোচহীন ভাবে। ধর্মের যে রূপ আজ দেখা যায়, তা এক দিনে হয়ে ওঠেনি। সুসংবদ্ধ, গ্রথিত ও বিবর্তিত হতে অনেক সময় লেগেছে। সমাজ-রাষ্ট্রের গঠন ও চালনার ক্ষেত্রে নানা যুগে ধর্ম কী ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তা ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদানে বিধৃত হয়ে আছে। এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ দেশেও রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা লাভের উচ্চাশায় ধর্মকে সুকৌশলে ব্যবহার করে থাকে।
রঘুনাথ প্রামাণিক
কালীনগর, হাওড়া
মজার খেলা
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ‘ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র হয় না’ নিবন্ধে বলা হয়েছে, “সাম্প্রতিক কালে ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে যে বাজার গরম হয়ে রয়েছে, তার কারণ অবশ্য দু’দেশের বাস্তবিক সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে তেমন খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর উৎস দেশভাগের ঐতিহাসিক জ্বালা-যন্ত্রণার মধ্যে নিহিত থাকলেও সেই ক্ষতকে খুঁচিয়ে তোলার রাজনৈতিক নকশাটি খুবই সমকালীন।” এবং সেই সূত্রে ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের কথা বলেছেন।
রাষ্ট্রের কাজ হল ভৌগোলিক সীমানার ভিতর বসবাস করা সমস্ত সম্পদের সুরক্ষা প্রদান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মানবসম্পদ। অর্থাৎ, নাগরিকের সুরক্ষা। রাষ্ট্র যখন নাগরিক ঠিক করে দিতে শুরু করে, তখন ব্যাপারটা দাঁড়ায়, দারোয়ান ঠিক করছে তার রক্ষা করা দ্বারের অন্দরে কে কে থাকতে পারবে! কী মজার তাই না!
এই ‘মজার খেলা’ শুরু হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে; যখন রাষ্ট্র ঠিক করে, অনেক হয়েছে স্বাধীনতা। এ বার নাগরিকের ঘাড় ধরে মিলিয়ে দেখা হবে, সে সত্যি নাগরিক তো? শুরু হল সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের উদ্যোগ। নাগরিকের প্রকৃতিদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক অধিকারে, পরিচিতিতে রাষ্ট্রীয় নজরদারি, নাক গলানো। ভোটার পরিচয়পত্রের লেজ ধরে এসেছে প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ডিজিটাল রেশন কার্ড, এনআরসি, এনপিআর— কতটা অক্সিজেন বাতাস থেকে টানতে পারব, এর পরে হয়তো তা-ও নির্ধারণ করবে রাষ্ট্র!
অরিজিৎ কুমার
শ্রীরামপুর, হুগলি
এক মন
‘ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র হয় না’ অত্যন্ত মনোগ্রাহী। ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রগঠনের প্রবক্তারা আজ ভারত শাসন করছেন। বুঝতে পারছি না, ভারতের মতো বহু ভাষাভাষীর দেশ এবং গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোয় কী করে এঁরা ধর্মীয় রাষ্ট্র করার কসরত করছেন? সবাই মিলেমিশে থাকব, সুখে থাকব, সৌভ্রাতৃত্বের এমন ছবি সকলেই কামনা করেন। জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়ালে ‘এক মন এক দেশ’— এই আদর্শ কখনও বাস্তবায়িত হয় না।
নরেন্দ্র দত্তগুপ্ত
পূর্ব বর্ধমান
গৃহশ্রমিক
করোনা অতিমারির পরে গৃহশ্রমিকদের অবস্থা আগের থেকেও খারাপ হয়েছে। যাঁরা ৫-৬টা বাড়িতে কাজ করতেন লকডাউনের আগে, তাঁরা এখন হয়তো ২-৩টি বাড়িতে কাজ পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার অন্য পেশাতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। এ ছাড়াও গৃহশ্রমিকদের চুরির অপবাদ দেওয়া, যৌন নির্যাতন, বাড়তি কাজ করিয়ে টাকা না দেওয়া, ছোটখাটো কারণে ছাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি চলতেই থাকে। সরকার থেকেও গৃহশ্রমিকদের জন্য কোনও সুবিধের কথা ভাবা হয়নি, এবং তাঁরা এখনও শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। ভোটের সময়ে সব দল বলে তাঁদের জন্য কিছু করবে, কিন্তু ভোট চলে গেলে ভুলে যায়। এ বার নির্বাচনে যে সরকারই আসুক, তাদের কাছে আশা রাখছি আমাদের দাবি যেন পূরণ হয়। আমাদের দাবি, ন্যূনতম মজুরি, যে সমস্ত গৃহশ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা যোজনার অন্তর্ভুক্ত নন, তাঁদের পেনশনের ব্যবস্থা, মাতৃত্ব আইন অনুসারে মাতৃত্বকালীন সুবিধা, এবং মাসে চার দিন ছুটি।
পূর্ণিমা রাম
সদস্য, সেওয়া ইউনিয়ন
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের নিবন্ধ ‘ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র হয় না’ (২৬-৩) প্রসঙ্গে এই পত্র। স্বতন্ত্র বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী উদ্যাপন হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বহু নাগরিকের মনে হয়তো উঁকি দিয়ে যাচ্ছে সেই স্মৃতি, যা শিরায় শিরায় আজও বইয়ে দেয় আতঙ্কের স্রোত! খান সেনাদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করে রাতারাতি ভিটেমাটি ছেড়ে, সব হারিয়ে এক দল সংসারী মানুষ বর্ডার পেরিয়েছিলেন ‘উদ্বাস্তু’ নাম নিয়ে। কেউ ধুবুলিয়া, কেউ রানাঘাট, তো কারও ঠিকানা শুধুই রেল স্টেশন। আজও প্রবীণ-প্রবীণার কণ্ঠে বাজে সব হারানোর তীব্র হা-হুতাশ। রাষ্ট্রনায়কদের কী লাভ হয়েছিল, নিঃসম্বল মানুষগুলির সেই গূঢ় তত্ত্ব বোধগম্য হয়নি। নিজ তাগিদে তাঁরা ভারত রাষ্ট্রের আংশিক সহায়তায় বেঁচে থাকার রসদটুকু অর্জন করতে পেরেছিলেন মাত্র। আজ তাঁরা ফের বিষাদগ্রস্ত! তবে কি নিজভূমে তাঁরা আবার পরবাসী হতে চলেছেন?
পিএল ক্যাম্পের অসহনীয় দিনগুলোর দগদগে ঘায়ের উপর কি বিষফোড়া হতে চলেছে ডিটেনশন ক্যাম্প! উপযুক্ত নথি দাখিল করলেই সে নাগরিক— যে আক্রান্ত পরিবার অত্যাচারের হাত থেকে প্রাণটুকু বাঁচাতে স্থাবর অস্থাবর সব কিছু হারাল, তার কাছে কী প্রমাণপত্র থাকবে? সিএএ, এনআরসি এক জন নাগরিককে অনায়াসেই পরিণত করতে পারে বে-নাগরিকে! হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে, কাঁটাতারের
এ পারে বসবাসরত মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ! তড়িঘড়ি অনেকেই কাজ ভুলে নথিপত্র জোগাড় করতে ব্যস্ত। রাষ্ট্রনায়কদের কাছে প্রত্যাশিত নিরাপত্তাটুকুও যেন হারিয়েছেন তাঁরা। কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের আধিপত্য কায়েম হলে রাষ্ট্রব্যবস্থা যে স্থবির হয়ে পড়ে, এই সারসত্য সাধারণ নাগরিক বুঝলেও রাষ্ট্রনায়কেরা বোঝেন কি? পরিস্থিতি কেমন হতে যাচ্ছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবুও প্রভাব খাটিয়ে নাগরিকত্বের ছাড়পত্র আদায়ে সক্ষম নাগরিকদের সুচেতনা জাগ্রত না হলে ভোটদাতা হওয়া সত্ত্বেও বে-নাগরিক হওয়ার উদ্বেগ দূর হবে না কিছুতেই।
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
ধর্মই ভিত্তি
ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র হয় না, লিখেছেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। প্রশ্ন হল, ধর্ম দিয়ে কী হয় না? রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনা, দুটোই হয়। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনগোষ্ঠী, শাসক ও সার্বভৌমত্ব— এই চারটি উপাদান রাষ্ট্র গঠনের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু এগুলির মধ্যে ক’টা ছিল প্যালেস্টাইনের? তবুও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী মনে করতেন, তাঁরা একই দেশের মানুষ। তাঁদের ধর্ম ছিল ইসলাম। সমধর্ম এখানে সমমর্মিতা আর মানসিক ঐক্য গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে দাঁড়ায়। এটাই ছিল তাঁদের রাষ্ট্রগঠনের প্রধান চালিকাশক্তি। যিনি যেখানেই থাকুন, একে অপরের মধ্যে একটা স্বদেশচেতনার ধারণা তলে তলে তাঁদের বেঁধে রেখেছিল। কোনও নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমা ছাড়াই ইয়াসের আরাফতের নেতৃত্বে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি পায় রাষ্ট্র হিসেবে (১৯৮৮)।
পাকিস্তান গঠিতই হয় ধর্মের ভিত্তিতে। এক শ্রেণির রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার আপাত কারণ উন্নয়নের বৈষম্য হলেও, ধর্ম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পৃথিবীতে ইসলাম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা কম নয়। আজকের বাংলাদেশ ভাষাকে কেন্দ্র করে লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীন হলেও, পরে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেয়।
দেশে দেশে রাষ্ট্রীয় জীবনে মসজিদ, গির্জা, মঠ বা মন্দিরে প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব প্রচ্ছন্ন ভাবে হলেও রয়ে গিয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা যায়, ধর্মনিরপেক্ষ দেশের রাষ্ট্রনেতারা কপালে সিঁদুর লাগিয়ে নারকেল ভেঙে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজের বা প্রকল্পের শুভ সূচনা করছেন। ব্যক্তিগত ধর্মাচরণ প্রকাশ্যে করে থাকেন খুবই সঙ্কোচহীন ভাবে। ধর্মের যে রূপ আজ দেখা যায়, তা এক দিনে হয়ে ওঠেনি। সুসংবদ্ধ, গ্রথিত ও বিবর্তিত হতে অনেক সময় লেগেছে। সমাজ-রাষ্ট্রের গঠন ও চালনার ক্ষেত্রে নানা যুগে ধর্ম কী ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তা ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদানে বিধৃত হয়ে আছে। এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ দেশেও রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা লাভের উচ্চাশায় ধর্মকে সুকৌশলে ব্যবহার করে থাকে।
রঘুনাথ প্রামাণিক
কালীনগর, হাওড়া
মজার খেলা
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ‘ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র হয় না’ নিবন্ধে বলা হয়েছে, “সাম্প্রতিক কালে ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে যে বাজার গরম হয়ে রয়েছে, তার কারণ অবশ্য দু’দেশের বাস্তবিক সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে তেমন খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর উৎস দেশভাগের ঐতিহাসিক জ্বালা-যন্ত্রণার মধ্যে নিহিত থাকলেও সেই ক্ষতকে খুঁচিয়ে তোলার রাজনৈতিক নকশাটি খুবই সমকালীন।” এবং সেই সূত্রে ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের কথা বলেছেন।
রাষ্ট্রের কাজ হল ভৌগোলিক সীমানার ভিতর বসবাস করা সমস্ত সম্পদের সুরক্ষা প্রদান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মানবসম্পদ। অর্থাৎ, নাগরিকের সুরক্ষা। রাষ্ট্র যখন নাগরিক ঠিক করে দিতে শুরু করে, তখন ব্যাপারটা দাঁড়ায়, দারোয়ান ঠিক করছে তার রক্ষা করা দ্বারের অন্দরে কে কে থাকতে পারবে! কী মজার তাই না!
এই ‘মজার খেলা’ শুরু হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে; যখন রাষ্ট্র ঠিক করে, অনেক হয়েছে স্বাধীনতা। এ বার নাগরিকের ঘাড় ধরে মিলিয়ে দেখা হবে, সে সত্যি নাগরিক তো? শুরু হল সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের উদ্যোগ। নাগরিকের প্রকৃতিদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক অধিকারে, পরিচিতিতে রাষ্ট্রীয় নজরদারি, নাক গলানো। ভোটার পরিচয়পত্রের লেজ ধরে এসেছে প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ডিজিটাল রেশন কার্ড, এনআরসি, এনপিআর— কতটা অক্সিজেন বাতাস থেকে টানতে পারব, এর পরে হয়তো তা-ও নির্ধারণ করবে রাষ্ট্র!
অরিজিৎ কুমার
শ্রীরামপুর, হুগলি
এক মন
‘ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র হয় না’ অত্যন্ত মনোগ্রাহী। ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রগঠনের প্রবক্তারা আজ ভারত শাসন করছেন। বুঝতে পারছি না, ভারতের মতো বহু ভাষাভাষীর দেশ এবং গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোয় কী করে এঁরা ধর্মীয় রাষ্ট্র করার কসরত করছেন? সবাই মিলেমিশে থাকব, সুখে থাকব, সৌভ্রাতৃত্বের এমন ছবি সকলেই কামনা করেন। জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়ালে ‘এক মন এক দেশ’— এই আদর্শ কখনও বাস্তবায়িত হয় না।
নরেন্দ্র দত্তগুপ্ত
পূর্ব বর্ধমান
গৃহশ্রমিক
করোনা অতিমারির পরে গৃহশ্রমিকদের অবস্থা আগের থেকেও খারাপ হয়েছে। যাঁরা ৫-৬টা বাড়িতে কাজ করতেন লকডাউনের আগে, তাঁরা এখন হয়তো ২-৩টি বাড়িতে কাজ পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার অন্য পেশাতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। এ ছাড়াও গৃহশ্রমিকদের চুরির অপবাদ দেওয়া, যৌন নির্যাতন, বাড়তি কাজ করিয়ে টাকা না দেওয়া, ছোটখাটো কারণে ছাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি চলতেই থাকে। সরকার থেকেও গৃহশ্রমিকদের জন্য কোনও সুবিধের কথা ভাবা হয়নি, এবং তাঁরা এখনও শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। ভোটের সময়ে সব দল বলে তাঁদের জন্য কিছু করবে, কিন্তু ভোট চলে গেলে ভুলে যায়। এ বার নির্বাচনে যে সরকারই আসুক, তাদের কাছে আশা রাখছি আমাদের দাবি যেন পূরণ হয়। আমাদের দাবি, ন্যূনতম মজুরি, যে সমস্ত গৃহশ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা যোজনার অন্তর্ভুক্ত নন, তাঁদের পেনশনের ব্যবস্থা, মাতৃত্ব আইন অনুসারে মাতৃত্বকালীন সুবিধা, এবং মাসে চার দিন ছুটি।
পূর্ণিমা রাম
সদস্য, সেওয়া ইউনিয়ন