Ramlila

সম্পাদক সমীপেষু: সম্প্রীতির রামলীলা

মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার আখেরিগঞ্জ এলাকায় আমার বড় হয়ে ওঠা। সেখানে বাবুপাড়ায় এক কালীমন্দিরে শারদীয় উৎসব শেষ হলে এক মাস ধরে রামলীলার আসর বসত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ০০:২৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

তাজুদ্দিন আহ্‌মেদ-এর নিবন্ধ (‘ছেড়েছিলেন রাজগৃহ, রাজত্বও’, ৭-৮) পড়ে আমারও ছোটবেলার স্মৃতি মনে এল। মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার আখেরিগঞ্জ এলাকায় আমার বড় হয়ে ওঠা। সেখানে বাবুপাড়ায় এক কালীমন্দিরে শারদীয় উৎসব শেষ হলে এক মাস ধরে রামলীলার আসর বসত। দলমত, জাতিধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার প্রায় সবার জন্য বিনোদনের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠত ওই আসর। রাম-লক্ষ্মণের ভ্রাতৃত্ববোধ, ১৪ বছরের বনবাস, সোনার হরিণ, লক্ষণের গণ্ডি, সীতার অপহরণ, অগ্নিপরীক্ষা, বানরসেনা, কাঠবেড়ালির সহযোগিতা, লঙ্কাকাণ্ড, রাবণবধ ইত্যাদি দেখে অজান্তেই আমাদের কিশোরবেলার নায়ক হয়ে উঠেছিলেন রাম। রামকে নিয়ে যে এত ধরনের ভেদাভেদ হতে পারে, তা কারও মনেও আসেনি। আমরা, মানে নিমাই, নিখিল, প্রশান্ত, মানিকদা, খুকু, মিঠু, জাব্বার, আবু তাহির, বিউটি, নওসাদ— পাশাপাশি বসে রামলীলার আসর উপভোগ করতাম, ভিড় সামলাতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা নিতাম।

Advertisement

এখন হলে হয়তো অপরিণত মনের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি হয়ে যেত। আমাদের আখেরিগঞ্জ ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পীঠস্থান। ১৯৮৮-৮৯ সালে পদ্মানদীর ভাঙনে আখেরিগঞ্জ নামক জনপদ বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু আজও সেখানকার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির মনোভাব বিলুপ্ত হয়নি।

আমির উল হক, কলকাতা-১০১

Advertisement

এক ও অভিন্ন

তাজুদ্দিন আহ্‌মেদ যথার্থ উপলব্ধি করেছেন যে, এই রাম হচ্ছেন প্রত্যেক মানুষের হৃদিস্থিত মানবাত্মা বা চৈতন্যময় পুরুষ। রামায়ণে এঁকে রাম বলা হয়েছে। কোরানে ইনি মহম্মদ, বাইবেলে জিশু, ত্রিপিটকে বুদ্ধ। আবার বাউলদের কাছে ইনিই ‘মনের মানুষ’। এই মানবাত্মাকে নানা ভাষায়, নানা নামে বর্ণনা করা হয়েছে।

নাম ও উপস্থাপনার এই বৈচিত্র কেন? প্রথমত, এই মানবাত্মা অনাদি এবং অনন্ত। সীমাবদ্ধ ভাষা ও ভাবের মধ্য দিয়ে তাঁকে ব্যক্ত করতে গেলে কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা এসে যায়। দ্বিতীয়ত, এই অনন্ত রূপকে সামগ্রিক ভাবে বর্ণনা করার উপায় নেই। তাই কোনও না কোনও দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করতে হয়। সেখানেই কোথাও তিনি রাম, কোথাও জিশু, মহম্মদ, বুদ্ধ। ধর্ম তো এক। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম, বা বাউলদের ধর্ম আলাদা নয়; এক সর্বজনীন মহাধর্মের দেশ-কাল-পাত্র-দৃষ্টিকোণ ভেদে নানা উপস্থাপনামাত্র। তাই ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ, দ্বন্দ্ব, কোলাহল— সবই অজ্ঞানতাপ্রসূত এবং অর্থহীন। যিনি এক জনকে অনুভব করেছেন, তিনি সবাইকেই বুঝেছেন। যিনি এক জনকেও অনুভব করেননি, তিনি কাউকেই বোঝেননি। সেখানেই দ্বন্দ্ব। কারণ, ধর্ম পাণ্ডিত্য বা বিবাদের বিষয় নয়, অনুভবের বিষয়।

অমিতবরণ দেওয়ানজি, কলকাতা-৩২

রাজনীতি

তাজুদ্দিন আহ্‌মেদ প্রশ্ন করেছেন, ‘‘তিনি (রামচন্দ্র) কি রাজনীতির হিসেব নিয়ে ব্যস্ত হয়েছেন কখনও?’’ হয়েছেন বইকি! বানররাজ বালীকে হত্যা করার জন্য তাঁরই ভাই সুগ্রীবকে দোসর করে নেওয়া কি রাজনীতি নয়? গুহক জাতিতে চণ্ডাল বলে তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করেননি তিনি। ব্রাহ্মণের অকালমৃত পুত্রকে বাঁচাতে শূদ্র জাতির শম্বুকের শিরশ্ছেদ করেছেন স্বয়ং রামচন্দ্র। বর্ণাশ্রমকে শক্তিশালী করাই ছিল তখনকার দিনের রাজনীতি! সর্বোপরি, ‘পুরুষোত্তম’ রামচন্দ্র নিছক প্রজানুরঞ্জনের জন্য সহধর্মিনী সীতাকে অগ্নিপরীক্ষায় পাঠাতে দ্বিধাবোধ করেননি। প্রজানুরঞ্জন কি প্রকারান্তরে রাজনীতি নয়?

চন্দ্রপ্রকাশ সরকার, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

বিরোধীর হাল

চিরদিন ধর্মনিরপেক্ষ বলে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সুনাম ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের অনুশাসন মানতেন না নেহরুজি। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়। তবুও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি থেকে দল সরে আসেনি। ২০১৯-এর নির্বাচনের আগে হঠাৎ রাহুল গাঁধী আবিষ্কার করেন, তিনি শিবভক্ত। নির্বাচনে অবশ্য তার জন্য সুবিধে হয়নি।

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ আন্দোলন, আর আদালতে মামলা চলাকালীন কংগ্রেস সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে। আদালতের রায় হিন্দুদের পক্ষে গেলে দল নরম হিন্দুত্বের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। অযোধ্যায় ‘ভূমিপূজন’ শুরু হলে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেন, অযোধ্যায় ভূমিপূজা জাতীয় সংহতি, সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের প্রতীক।

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস ১১টা রুপোর ইট পাঠিয়েছে অযোধ্যায়। কমল নাথ টুইটারে গেরুয়া বসন পরিহিত, হনুমান চালিশা পাঠরত নিজের ছবি দিয়েছেন। খবর পাওয়া যাচ্ছে, নানা রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেসের লোকেরাও ভূমিপূজাকে সমর্থনই করছে। দেশের প্রধান বিরোধী দলের এই নৈতিক অধঃপতন খুবই বেদনাদায়ক।

দীপংকর মুখোপাধ্যায়, বিষ্টুপুর, জামশেদপুর

দায়িত্বহীন

জীবনের অন্তিম প্রান্তে এসে জানলাম, প্রাণরক্ষার হাসপাতালের চেয়ে ধর্মরক্ষার মন্দিরই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সৌজন্যে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (‘হাসপাতাল নয়, মন্দির চান দিলীপ’, ৯-৮)! দু’টি কথা বলতে ইচ্ছা হয়— ১) দেশে মেডিক্যাল কলেজগুলিকে মন্দিরে রূপান্তরিত করা হোক এবং সেখানে পূজা-অর্চনা ও পৌরোহিত্যের পাঠ দেওয়া হোক। ২) দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা তুলে ‘মন্দির ব্যবস্থা’ চালু হোক। মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়বে, কর্মে গতি আসবে, দেশ সমৃদ্ধ হবে।

মার্চ মাসে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইউরোপ, আমেরিকার তুলনায় এ দেশে চিকিৎসা পরিষেবার ঘাটতি ও নিম্নমানের কথা স্বীকার করেছিলেন। পরবর্তী কয়েক মাসে চিকিৎসায় মানুষের দুর্দশা ও হয়রানির কথা কারও অজানা নয়। আমরা এই ক’মাসে বহু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে হারিয়েছি। অসুস্থ মানুষকে ছোটাছুটি করতে হয় হাসপাতালে একটা শয্যার জন্য। ১৩০ কোটির দেশে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দিতে কতগুলি হাসপাতাল ও শয্যার দরকার, তা দিলীপ ঘোষরা বিলক্ষণ জানেন। তবু শুধুমাত্র সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক অভিসন্ধি চরিতার্থের জন্য এমন অবৈজ্ঞানিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য তিনি কী ভাবে করেন, ভেবে অবাক হই!

কুমার শেখর সেনগুপ্ত,কোন্নগর, হুগলি

রাষ্ট্র ও ধর্ম

প্রেমাংশু চৌধুরীর নিবন্ধ (‘এ বার কি দাঁড়ি পড়বে’, ৬-৮) প্রসঙ্গে বলতে চাই, যেখানে রাষ্ট্র আর ধৰ্মকে আমরা আলাদা রাখতে পারিনি, যেখানে রাষ্ট্রের জন্ম কিংবা বিভাজন হয় ধৰ্মকে কেন্দ্র করে, সেখানে ‘ধৰ্ম’ নামক বস্তুটি যে অতীব সংবেদনশীল এবং সক্রিয়, তা ক্ষমতাশীলদের বুঝতে বাকি নেই। আগেও ছিল না, স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও নেই। তাই এখনও নাগরিককে তার ধর্ম রাষ্ট্রের কাছে ঘোষণা করতে হয়, যেমন ঘোষণা করতে হয় তার জাতগত অবস্থান। সুতরাং, ধর্মকে সম্পূর্ণ ভাবে সরিয়ে রাখবে যে রাজনীতি, তার স্বপ্ন ভবিষ্যতের জন্যই রয়ে যায়।

প্রসেনজিৎ সরকার, ফ্লরিডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement