বর্ষীয়ান সাহিত্যিক মণিশংকর মুখোপাধ্যায়ের (শংকর) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্তি বঙ্গ সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে সুসংবাদ। তবে তাঁর অনুরাগীরা মনে করেন, এই পুরস্কার তাঁর অনেক আগেই প্রাপ্য ছিল। বহু বছর আগেই তো ‘কত অজানারে’ দিয়ে তাঁর পথ চলা শুরু। ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাসের জনপ্রিয়তা তাঁকে পাঠক সমাজের চোখের মণি করে তোলে। তাঁর দু’টি উপন্যাস, ‘সীমাবদ্ধ’ এবং ‘জন-অরণ্য’ চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে সত্যজিতের হাতে। এই দু’টি উপন্যাস এবং ‘আশা আকাঙ্ক্ষা’ নিয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর ট্রিলজি, স্বর্গ মর্ত পাতাল।
আমরা যারা সত্তর-আশির দশকে বড় হয়েছি, নিজের চোখেই দেখেছি এই ট্রিলজির তুমুল জনপ্রিয়তা। একের পর এক সংস্করণ নিঃশেষিত হয়েছে। তাঁর উপন্যাসের পটভূমিকাও খুবই বিস্তৃত। ট্রিলজির নায়কেরা এক জন সাধারণ বেকার ও কর্মপ্রার্থী, এক জন খুব সফল অফিসার আর শেষ জন প্রযুক্তিবিদ। প্রত্যেকটি চরিত্রের গভীরতা আমাদের প্রভাবিত করে। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ‘আশা আকাঙ্ক্ষা’, যার নায়ক কমলেশ রায়চৌধুরী এক জন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদ। এ ছাড়া ‘নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ ও ‘এক যে ছিল দেশ’ উপন্যাস দু’টির কেন্দ্রেও রয়েছেন বিজ্ঞানসেবীরা। ‘এক যে ছিল দেশ’ চলচ্চিত্রায়িত করেছেন তপন সিংহ। খুবই মনোগ্রাহী ছবিটি।
কিশোর সাহিত্যে শংকরের প্রথম পদার্পণ শারদীয়া আনন্দমেলা-তে ‘পিকলুর কলকাতাভ্রমণ’ নামক অণু-উপন্যাসটি দিয়ে। চমৎকার লেখাটি, সঙ্গে সমীর সরকারের আঁকা অনবদ্য ছবিগুলি লেখাটিকে আরও আকর্ষক করে তুলেছিল। পরে আবার এই লেখাটির নাম পাল্টে হয় ‘খারাপ লোকের খপ্পরে’। এর সঙ্গে আরও দু’টি লেখা নিয়ে এক ব্যাগ শংকর নামে প্রকাশিত হয়। আবার তুমুল জনপ্রিয়তা। জন্মদিন, উপনয়ন, পরীক্ষার ভাল ফলপ্রাপ্তিতে উপহার হিসেবে এই ‘ব্যাগ’ ছিল অনন্য। সেখানেও সংস্করণের পর সংস্করণ।
তাঁর ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাসটির এ বার ৬০ বছর পূর্তি। উপন্যাসটি ইংরেজি ভাষায় রূপান্তরিত হয়েও জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ রেখেছে।
ভাস্কর বসু, আর আর নগর, বেঙ্গালুরু
অসঙ্গতি
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ‘ছাত্রদল’ গোষ্ঠী আমার মা, সুকুমারী ভট্টাচার্য সম্পর্কে একটি ওয়েবিনার-এর আয়োজন করে। আমাকে অনুরোধ করা হয়, সেখানে কিছু বলতে। মা চাইতেন না প্রিয়জনেরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রকাশ্য সভায় আলোচনা করেন। ওঁর কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কেও বলার যোগ্যতা আমার নেই, কারণ আমার এবং মায়ের কাজের ক্ষেত্র পৃথক ছিল। তাই আমি সবিনয়ে আমার অপারগতা জানিয়ে দিই। কিন্তু আশঙ্কা করেছিলাম, বক্তারা ভুল বলতে পারেন। তাই বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছিলাম, সবার বলা হয়ে গেলে আমায় একটু সময় দিতে। দেখা গেল, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি এবং অরূপ বসুর বলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরই পরিচালক আলোচনার পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে দিলেন। ফলে ভুল সংশোধনের সুযোগ আমি পেলাম না।
ছাত্রদল-কে এই চিঠির মাধ্যমে জানাই, ওই আলোচনায় অনেক ভুল বলা হয়েছে। ওই ত্রুটিসমেত গোটা ওয়েবিনারটি ইউটিউবে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ‘কলকাতার কড়চা’-র সংবাদটিতেও (‘শতবর্ষে সুকুমারী’, ৮-৩) প্রকাশিত হয়েছে ওই ত্রুটি। কাজেই, অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপ্রিয় কিছু কথা বলতে হচ্ছে।
অরূপ বসুর বক্তব্যে নানা অসঙ্গতি রয়েছে। সবটুকুর উল্লেখ না করে কড়চায় প্রকাশিত অংশটুকুর কথাই এখানে বলছি। অরূপবাবু যা বলেছিলেন, এবং আনন্দবাজার-এ প্রকাশিত খবরের প্রথম লাইনেই যা লেখা হয়েছে তা সর্বৈব ভুল। ওই অনুষ্ঠানে বলা হয়েছিল, সত্যজিৎ রায় মা’কে আগেই চিনতেন এবং পথের পাঁচালী ছবিতে সর্বজয়া চরিত্রে অভিনয় করার জন্য মা’কে আগেই অনুরোধ করেছিলেন। মা রাজি না হওয়ায়, পরে করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনোনীত করা হয়। প্রকৃত ঘটনা হল, সত্যজিৎ রায়কে মা কখনওই চিনতেন না। অনেক পরে আমার বাবার স্মৃতিরক্ষার্থে বক্তৃতায় এক বার সত্যজিৎবাবু বলতে আসেন ইউরোপীয় ছবি নিয়ে। সেখানেই মায়ের সঙ্গে ওঁর প্রথম পরিচয় আমার এবং অনেকের সামনে। সেখানেই শেষ। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বার ঠাট্টা করে মা’কে বলেছিলেন, “সুকুমারী তুমি কি ওঁর সঙ্গে কাজ করতে চাও নাকি! তা হলে মানিককে বলব।” এই ঠাট্টাটি মায়ের এতই মজার লেগেছিল যে, উনি সেটা গল্প করতেন। পথের পাঁচালী ছবির সর্বজয়া চরিত্রের নির্বাচনের কাহিনি এত জন এত জায়গায় লিখে রেখে গিয়েছেন যে, একটু বই নেড়েচেড়ে দেখলেই ওই ভুলটি এড়ানো যেত। সেটা না করে এই অসঙ্গত, চমকপ্রদ কথাগুলি অরূপবাবুর বলা উচিত হয়নি তো বটেই, আনন্দবাজার পত্রিকা-রও যাচাই না করে ছাপা ঠিক হয়নি। এতে শ্রদ্ধেয় করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিথ্যাবাদী বলা হয়।
এই ভুলটি কেন হল? অরূপ বসু মা’কে অল্পই চিনতেন। মায়ের তখন ৯০-এর মতো বয়স। দীর্ঘ দিন অসুস্থ। মন আশ্চর্য সজীব থাকলেও, স্মৃতিশক্তি মাঝেমাঝে ঝাপসা। যাঁরা ‘ওরাল হিস্টোরিয়ান’, মুখের কথার ভিত্তিতে কাজ করেন, তাঁরা অন্য জায়গা থেকেও শোনা কথা যাচাই করেন। অরূপ বসুরও তা-ই করা উচিত ছিল। এই ধরনের ভুল আমিও করতে দেখেছি মাকে। ধরিয়ে দিতাম, উনি লজ্জা পেয়ে চুপ করে যেতেন।
মা দীর্ঘ দিন নিষ্ঠাভরে অধ্যাপনা করেছেন। সংস্কৃত কাব্য, প্রাচীন হিন্দু সমাজ ও সেখানে নারীর অবস্থান, এমনকি সাম্প্রতিক রাজনীতি ও সমাজ নিয়েও লিখেছেন, ইংরেজিতে এবং বাংলায়। সেই সব কাজ নিয়ে কথা বলাটাই কি শোভন হত না? অন্তত মা তা-ই বিশ্বাস করতেন। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মায়ের অধ্যাপক, দীর্ঘ দিনের নিকট প্রতিবেশী। মা অনেক বিষয় নিয়ে গল্প করতেন ওঁর সঙ্গে, এবং বাড়ির লোকের সঙ্গে। সুনীতিবাবু মারা যাওয়ার পর মা ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই শোকাহত অবস্থাতেও তিনি একটি ছোট বই লেখেন। তাতে সুনীতিবাবুর জীবন নিয়ে এমন কিছু তথ্য ছিল, যা তাঁর কাজকে বুঝতে সাহায্য করে। বাকিটা তাঁর জ্ঞানচর্চার রীতিনীতি নিয়ে আলোচনা। সেই বইটিতে মায়ের ভাষা শান্ত ও সংযত, কোনও ভাবোচ্ছ্বাস বা গদগদ ভাব নেই। ব্যক্তিগত সখ্য নিয়ে একেবারে কিছুই নেই। আমার অনুরোধ, মাকে নিয়ে যদি আর কখনও কোনও আলোচনা হয়, তা হলে ওই বইটিকেই আদর্শ করা হোক।
তনিকা সরকার, নয়াদিল্লি
র্যাম্পের অভাব
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পায়ে চোটের জন্য আগামী কিছু দিন হুইলচেয়ারে বসেই নির্বাচনী প্রচার করবেন। তাঁর যাতায়াতের সুবিধার্থে বিভিন্ন জায়গায় র্যাম্প বানানো হবে। আইন থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৫ লক্ষ প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের জন্য আজও অধিকাংশ সরকারি ভবনে র্যাম্প তৈরি হল না। এতে বয়স্কদেরও সুবিধা হয়। আশা করি, মুখ্যমন্ত্রী এ বার হুইলচেয়ার-বন্দি মানুষদের কষ্ট উপলব্ধি করে দ্রুত সরকারি ভবনগুলিতে র্যাম্প তৈরির উদ্যোগ করবেন।
অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
ক্ষতিপূরণ
‘জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারকে ১৯৬ কোটি’ (১৪-৩) সংবাদটি ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের জয় ঘোষণা করে। ফ্লয়েডের আর্ত চিৎকার, ‘আই কান্ট ব্রিদ’, নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। ভারতে সরকার অধিগৃহীত জমিতে নিজেদের ফলানো ফসল নষ্ট না করতে চাওয়ায় সন্তানের সামনেই মধ্যপ্রদেশে পুলিশের হাতে প্রহৃত দলিত দম্পতির আত্মহত্যার চেষ্টা, কিংবা উচ্চবর্ণ মালিকের মোটরবাইক ছুঁয়ে দেখার জন্য বেঙ্গালুরুর দলিত যুবকের গণপিটুনি— দেখিয়ে দিচ্ছে এ দেশের পরিস্থিতি। চুনি কোটালদের জন্য এ দেশে আজও জায়গা আছে কি?
তন্ময় মণ্ডল, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা