লোকাল ট্রেনে শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হলে প্রায় পনেরো শতাংশ জায়গা হারাতে হবে। ফাইল চিত্র।
ভারতের সবচেয়ে বড় গণপরিবহণ হল ভারতীয় রেল। ১৯০৯ সালে এক বাঙালি অখিল চন্দ্র সেনের ভারতীয় রেলকে লেখা কড়া চিঠির প্রেক্ষিতে ট্রেনে প্রথম শৌচাগার সংযোজন করা হয়। চিঠিটা এখনও রেলের সংগ্রহশালায় রাখা আছে। আশ্চর্যজনক ভাবে আজকের দিনেও আমাদের এমন ট্রেনে ভ্রমণ করতে হচ্ছে, যেখানে কোনও শৌচাগার নেই। লোকাল ট্রেনের কথা বলছি। আগে বলা হত, লোকাল ট্রেন মানে সংক্ষিপ্ত যাত্রা, যা সাধারণত ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শেষ হয়। তাই, শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা হয় না। তা ছাড়া, লোকাল ট্রেনে শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হলে প্রায় পনেরো শতাংশ জায়গা হারাতে হবে, যেখানে অন্তত ৪০ জন যাত্রীর জায়গা হয়।
কিন্তু হাওড়া থেকে খড়্গপুর বা শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর কিংবা শিয়ালদহ থেকে কাকদ্বীপ— সবই প্রায় ১০০ কিলোমিটারের উপর দূরত্ব। যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এই সময়ে কোনও শিশু বা প্রবীণের প্রকৃতির ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকা কি সম্ভব? শিয়ালদহ স্টেশন থেকে প্রতি দিন অন্তত সত্তর হাজারেরও বেশি প্রবীণ যাত্রী যাতায়াত করেন। তা ছাড়া ভারতে এখন ডায়াবিটিস রোগীর সংখ্যা আট কোটি এবং এই রাজ্যেও সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। এই সব রোগীর পক্ষে এই ধরনের যাত্রা শুধু ভয়াবহই নয়, কিডনির ক্ষতি হওয়ার পক্ষেও আদর্শ। বাচ্চাদের কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম। অথচ, এই বিষয়ে ডেলি প্যাসেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন রেলকে বহু বার ডেপুটেশন দিয়েছে। টিকিট কাটার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় রেল সময়-সারণি অনুযায়ী নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে ন্যূনতম আরাম দিয়ে যাত্রীকে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারও করছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। ট্রেন যাত্রার সময়ে কোনও যাত্রী যদি শৌচাগারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তবে তার দায় কে নেবে?
২০১০ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, লোকাল ট্রেনে শৌচাগার করার ব্যাপারে রেল দফতর চিন্তাভাবনা করছে। জানি না, আজও কেন সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করা যায়নি। এখন তো গ্রিন টয়লেট, বায়ো টয়লেটের মতো অনেক উন্নততর টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। লোকাল ট্রেনের সব ক’টি কামরাতে শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে অসুবিধা থাকলে, কিছু নির্দিষ্ট কামরাতেও তো এই ব্যবস্থা করা যায়। এই ব্যাপারে রেল দফতর যদি চিন্তাভাবনা শুরু করে, তবে আমাদের মতো প্রবীণ নাগরিকদের রেলযাত্রা কিঞ্চিৎ আরামদায়ক হয়।
সুনির্মল রায়, হালিশহর, উত্তর ২৪ পরগনা
ফাঁকা প্রতিশ্রুতি
সম্পাদকীয় ‘কথাসুখসাগর’ (২১-১২) সম্পর্কে দু’-এক কথা বলতে চাই। ভারতবর্ষ আজও সেই ছেলেদের খুঁজছে, যাঁরা দেশের জন্য নীরবে কাজ করবেন। সেই ছেলেরা হবেন দেশের জনপ্রতিনিধি। দেশের জনগণ ও দেশের উন্নয়নের জন্য যাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন সমাজের প্রভাবশালীরা অতি সহজেই নেতা হয়ে যান। কিন্তু নেতা হওয়ার জন্য যে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা, আচার-আচরণ, সততা, নৈতিক মূল্যবোধ থাকা প্রয়োজন, সেগুলি আজকাল তেমন গুরুত্ব পায় না। তবে এখনকার অনেক নেতাই ভাল বাগ্মী ও অন্তঃসারশূন্য কথা কী ভাবে গুছিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায়, সে ব্যাপারে বিশেষ দক্ষ। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বাক্পটুতা সর্বজনবিদিত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ও পরে তিনি যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার এক শতাংশও কার্যকর হলে দেশ অনেকটা এগিয়ে যেত।
সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হিসাবে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফুটবল খেলায় অনামী দেশ কাতার বিশ্ববাসীর আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। অন্যান্য দেশের মতো ভারতও ফুটবল উন্মাদনায় মেতেছিল। দেশের মানুষের ফুটবল নিয়ে এই মাতামাতির সদ্ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, ভারতও আয়োজন করবে বিশ্বকাপ ফুটবল। তাঁর এই আশ্বাসবাণী কেবলই যে কথার কথা, সে বিষয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই।
সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে, যে শাসক যত একাধিপত্যকামী কর্তৃত্ববাদী, তিনি ততই কথামালা ও বিপুল আয়োজনের প্রতিশ্রুতিমালার প্রয়াসী। হয়তো এটা বর্তমান শাসকশ্রেণির আসল চরিত্র। ভাবতে অবাক লাগে, লাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, এমনকি এশিয়ার ছোট দেশগুলি যখন খেলাধুলোর বিশ্বাঙ্গনে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে, তখন ভারত আজও ফুটবলে হামাগুড়ি দিচ্ছে। এটা ভারতের কোটি কোটি মানুষের কাছে লজ্জার। ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ নয়, ভারত বিশ্বকাপে ফুটবল-খেলিয়ে দেশ হয়ে উঠুক, সমস্ত ভারতবাসী এটাই চায়।
হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
দুর্ঘটনাপ্রবণ
উলুবেড়িয়া পুরসভার মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। পুর এলাকার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত জাতীয় সড়কে জোড়াকলতলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টপ। এখানে জগৎপুর গ্রামে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, একটি সরকার পোষিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিদ্যালয়, একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষিকা-সহ জগৎপুর গ্ৰামের কয়েক হাজার বাসিন্দাকে নিত্যদিনের প্রয়োজনে জাতীয় সড়ক পারাপার করতে হয়। আর এই রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে জোড়াকলতলাতেই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অন্তত জনাপনেরো মানুষ। বহু মানুষ আহতও হয়েছেন। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন নির্বিকার। হাওড়া জেলার সরকার পোষিত একমাত্র দৃষ্টিহীন ও শ্রবণশক্তিহীন শিশুদের বিদ্যালয় এখানেই অবস্থিত। এই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন এতটাই উদাসীন যে, আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়।
অতি সম্প্রতি এই স্থানে এক সঙ্গে দুর্ঘটনায় মা ও মেয়ের মৃত্যু হলে জাতীয় সড়কে গার্ড রেল দেওয়া হয় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। এটা কি কোনও স্থায়ী সমাধান? কেন এখানে সার্ভিস রোড নেই? ওভারব্রিজ অথবা পাবলিক আন্ডারপাস হল না? আর কত মৃত্যু হলে প্রশাসন সচেতন হবে?
অজয় দাস, বৃন্দাবনপুর, হাওড়া
বাস পরিষেবা
নিউ টাউনের মধ্যে সাপুরজির ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসন সবচেয়ে বড়। করোনার আগে পর্ণশ্রী ও নিউ টাউনের সাপুরজির মধ্যে যাতায়াতের জন্য সরকারি বাস এস৪ এ অনেকগুলি চালু ছিল। বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি, এই রুটে একটিও বাস নেই। ফলে আমার মতো বহু মানুষকে পর্ণশ্রী থেকে সাপুরজি— এই দীর্ঘ পথ যাতায়াত করতে কম করে দু’-তিন বার বাস পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, দ্রুত আগের মতো এই রুটে বাস চালু করা হোক।
অমরনাথ করণ, কলকাতা-৬০
নিত্যযাত্রীর স্বার্থে
হাওড়া জেলার আমতা-২ নং ব্লকের অন্তর্গত খালনা একটি বর্ধিষ্ণু গ্ৰাম। এখানকার বহু মানুষ হাওড়া-কলকাতায় কাজ করেন। তাই নিত্যযাত্রীও প্রচুর। অথচ, খালনা থেকে হাওড়া বা কলকাতার সরাসরি কোনও বাস যোগাযোগ নেই। পাশের গ্ৰাম জয়পুরের মানুষেরও জীবন-জীবিকা হাওড়া-কলকাতা নির্ভর। জনসাধারণের স্বার্থে খালনা দক্ষিণ পাড়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে জয়পুর মোড় হয়ে হাওড়া ও ধর্মতলা পর্যন্ত বাস চালু হোক।
নির্মাল্য রায় , আমতা, হাওড়া