ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কোনও কিছু শেখার জন্য যে ধৈর্য দরকার, তার অভাব লক্ষ করা যায়। ফাইল চিত্র।
সুকান্ত চৌধুরীর ‘শিক্ষা চুরির মামলা’ (১৬-১) লেখাটি যথার্থই প্রণিধানযোগ্য। অনেক আড়ম্বরের নীচে চাপা পড়ে আছে শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত গুণগুলিকে বিকশিত করে। কিন্তু এখন তার অবকাশ নেই। শুধুমাত্র সিলেবাস শেষ করলেই কি সব শেখানো হয়ে যায়? সেগুলো আত্মস্থ করানোর জন্য তো সময় চাই। করোনা-পরবর্তী কালে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কোনও কিছু শেখার জন্য যে ধৈর্য দরকার, তার অভাব লক্ষ করা যায়। আর এখন ‘অবজেকটিভ’ আর ‘মাল্টিপল চয়েস’ প্রশ্নের উত্তর দিলেই তো পাশ নম্বর পাওয়া যায়। বেশি জানার দরকারটা কি?
অথচ, কয়েক বছর আগেও স্কুলের মেয়েরা ম্যাকবেথ নাটকে অভিনয় করেছে। যখন ওয়ার্কশপ করিয়েছি, তখন ধৈর্য ধরে শেক্সপিয়র ও তাঁর যুগের কথা শুনেছে। মঞ্চে তাদের সুললিত কণ্ঠে ইংরেজি উচ্চারণ প্রমাণ করে, আদর্শ পরিবেশে বাংলা মিডিয়ামও পারে। রক্তকরবী-র ওয়ার্কশপে তারা জেনেছে রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভাবনা, যার প্রতিফলন স্টেজে তাদের দাপুটে অভিনয়। এখন মনে হয়, এগুলো যেন সুদূর অতীত। অথচ, সারল্যে পরিপূর্ণ মুখগুলো দেখে মনে হয় এরা পারবে, অবশ্যই পারবে। সাধারণের লেখাপড়া এতখানি তুচ্ছ হতে পারে না। মহাত্মা গান্ধী সাধারণ জনগণকে এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সকলের মধ্যে জাগ্রত করেছিলেন আত্মমর্যাদাবোধ।
অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু কিছু দিন আগে পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্কুলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লক্ষ করেন, গ্রামবাংলার ছেলেমেয়েরা তাঁর ‘গেম থিয়োরি’, যা তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের পড়ান, তা সুন্দর বুঝতে পারছে। সততার সঙ্গে শিক্ষা চুরি রোধ করাই গণতন্ত্রে আমাদের কর্তব্য।
সিক্তা দাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
শিশুর আহার
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘চার মাসের পুষ্টিযোগ’ (১৭-১) পড়লাম। সরকার কত অমানবিক হলে মিড-ডে মিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এতটা গুরুত্বহীন ভাবতে পারে। একটা থালায় ভাতের সঙ্গে খানিকটা হলুদ ডাল আর একটু তরকারি, কিংবা মাঝেমধ্যে একটা ডিম সেদ্ধ, এইটুকু দিয়েই চলছে বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য নির্ধারিত প্রকল্প। দীর্ঘ দিন চোখ বুজে থাকার পর শিশুদের জন্য সরকারি বরাদ্দ যদিও বা কিছুটা বাড়ল, শোনা গেল এই বৃদ্ধি নাকি মাত্র চার মাসের জন্য। এর কারণ হিসাবে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, তহবিলের অভাব। প্রশ্ন, অভাবটা অর্থের, না কি সদিচ্ছার! সরকারি তহবিলের টাকায় কার অগ্রাধিকার থাকতে পারে, সেই ধারণাটাই এই সরকারের নেই। অকারণ দান-খয়রাতিতে অপব্যয় না করলে শুধু শিশুদের পুষ্টিবর্ধক খাবারের ব্যবস্থাই নয়, অনেক ইতিবাচক কাজ করা যেত। অথচ, সরকার শিশুদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়াকে গুরুত্ব না দিয়ে মেলা, খেলা, উৎসবে টাকা খরচে বদ্ধপরিকর। লেখক যথার্থই লিখেছেন, শাসক দলের চক্ষুলজ্জা আজ অন্তর্হিত। তাঁর এই বক্তব্যকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেই বলি, এই রাজ্যের শাসকরা নিজেদের শোধরাবেন না। ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে তাঁরা আজ বিবেকবোধও হারিয়েছেন। তাঁদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করার দায় নাগরিকদের।
সমীরকুমার ঘোষ, কলকাতা-৬৫
সাময়িক সদিচ্ছা
সরকার চার মাসের জন্য মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়িয়েছে। খুব ভাল খবর, কিন্তু বৃদ্ধির পরিমাণ কত? বৃদ্ধির পরিমাণ সপ্তাহে মাত্র ২০ টাকা, অর্থাৎ রবিবার বাদে ছ’দিনের জন্য এই অতিরিক্ত বরাদ্দ! দৈনিক বরাদ্দ বৃদ্ধি ৩ টাকা ৩৩ পয়সা!প্রচার হচ্ছে এই অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে মিড-ডে মিলে এ বার থেকে প্রোটিন-সমৃদ্ধ মাংস ও ডিম দেওয়া হবে, যা সরকারের বিরাট কৃতিত্ব হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। বর্তমান বাজারদরে এই টাকায় মাংস তো দূরের কথা, প্রতি দিন একটা করে ডিম দেওয়াও সম্ভব কি? তবু ভাল, কিছুটা হলেও বরাদ্দ বেড়েছে। প্রতি দিন না হলেও সপ্তাহে তিন-চার দিন তো বাচ্চাগুলো প্রোটিনযুক্ত খাবার পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই বৃদ্ধি শুধুমাত্র চার মাসের জন্য কেন? কেন তিন মাস বা এক বছরের জন্য নয়? চার মাস পর স্কুলের শিশুদের কি এই অতিরিক্ত প্রোটিনের প্রয়োজন থাকবে না? অতিরিক্ত বরাদ্দের সময়টা কিন্তু সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। তা হলে কি সরকারের এই সাময়িক সদিচ্ছার পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে? ভোটের আগে সব রাজ্যেই দেখা যায় ক্ষমতাশীল দলের নতুন নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করতে। এই সময়ে অনেক সাময়িক সদিচ্ছার বহরও দেখা যায়। মিড-ডে মিলের এই সাময়িক বরাদ্দ বৃদ্ধি তারই অঙ্গ নয় তো? ভোটের বাজারে অনেক খেলাই চলে! তবু উন্নতি সব সময়েই স্বাগত। মিড-ডে মিলের এই বরাদ্দ বৃদ্ধিতে আরও খুশি হব যদি এই বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিমাণ বাড়ে এবং তা স্থায়ী বৃদ্ধিতে রূপান্তরিত হয়।
তপনকুমার সরকার, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
টিউশন কেন?
‘সরকারি স্কুলে ভর্তি-হার ভাল, চিন্তা শেখার বহরেই’ (১৯-১) শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রকাশিত সমীক্ষা চমকে দেওয়ার মতো। প্রাথমিকেই ৭৪ শতাংশ প্রাইভেট টিউশনের সঙ্গে যুক্ত! সেকেন্ডারি, হায়ার সেকেন্ডারিতে যে এই হার একশো শতাংশের কাছে পৌঁছে যাবে, তা সহজেই অনুমেয়। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অন্য রাজ্যের তুলনায় প্রাথমিকে সবচেয়ে বেশি সরকারি স্কুলে ভর্তি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে, প্রাইভেট টিউশন পড়ার হারও বেশি এখানেই। তার মানে কি এই নয়, সরকারি স্কুলে ভর্তির সঙ্গে প্রাইভেট টিউশনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক? সরকারি স্কুলের প্রতি অভিভাবকদের আস্থাহীনতাই কি পড়ুয়াদের প্রাইভেট টিউশনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? কারণ হিসাবে স্কুলগুলির শিক্ষকের কম সংখ্যা দেখাচ্ছে সমীক্ষায়। কিন্তু অন্য কারণ নেই? স্কুলের সব স্তরে ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট টিউশনের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতার অন্যতম কারণ, শিক্ষকদেরই একটি বড় অংশ প্রাইভেট টিউশন পড়ান। সেখানে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের স্কুলের প্রতি আস্থা কী ভাবে থাকবে?
সুজিত রায়, বগুলা, নদিয়া
পাকা বাড়ি
গ্রামীণ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। বলা হচ্ছে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে এই যোজনার আওতায়। পাকা বাড়ি কাকে বলে? যে ঘরের ছাদ কংক্রিটের সেটাই পাকা ঘর। উপরে টিন শেড আর দেওয়াল ইটের হলে সেটা আধা-পাকা ঘর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দ মাত্র ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। একটি পরিবারের জন্য দু’টি ঘরের ইটের দেওয়াল ও আর উপরে টিন শেড কি এই টাকায় দেওয়া সম্ভব? আজ থেকে ৭-৮ বছর আগেও ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। এখনও তা-ই। ইট, সিমেন্ট, বালি, পাথর, টিন, রড-সহ গৃহ নির্মাণের যাবতীয় উপকরণের দাম বেড়েছে। যে গরিব মানুষ এই টাকা পাবেন, তিনিও পাকা ঘর করতে পারবেন না। তা ছাড়া শহরের আবাস যোজনায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু গ্রামে এর তিন ভাগের এক ভাগ। শহর থেকে উপকরণ আনতে বেশি ভাড়া দিতে হয় গ্রামবাসীকে। তাই গ্রামেই বরাদ্দ বেশি করা উচিত।
আব্দুল জলিল সরকার, হলদিবাড়ি, কোচবিহার