family

সম্পাদক সমীপেষু: কে আমার আপনজন

ইংরেজ চিন্তাবিদ এবং প্রবন্ধকার বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর একটি লেখায় (‘ইন প্রেজ় অব আইডলনেস’) বলেছিলেন যে, বিশ্বে বড্ড বেশি কাজ হয়, এবং এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে অপরিসীম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৫:০০
Share:

আমাদের আপনজনের পরিসরটা ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে— বাবা-মা আর সহোদর ভাই-বোন। জেঠা-জেঠিমা, কাকা-কাকিমা এবং জেঠতুতো, খুড়তুতো ভাইবোনদের আমরা ‘আত্মীয়’ হিসেবে দেখি, আপনজনের তালিকায় ঠাঁই দিই না। এমনকি দাদু-ঠাকুমার কাছ থেকেও দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা, অর্থাৎ বাবা-মায়ের ছেলেমেয়েরা যে বাড়িতে বাস করছি, সেই বাড়িতেই এক দিন পিসিমারা ছিলেন, বাড়ির ইট-কাঠের গায়ে তাঁদের স্পর্শ লেগে আছে। আমরা তা জানিই না। তাঁদের আমরা দূর-সম্পর্কিত আত্মীয় হিসেবে জানি।

Advertisement

বিয়ের পর মেয়েদের যখন নিজের সংসার হয়ে যায়, তখন স্বামী, সন্তান নিয়ে তার আপনজনের গণ্ডি তৈরি হয়ে যায়। স্বামীর পরিবারের বাকি সদস্যরা আপনজনের তালিকায় ঠাঁই পায় না। ভাই-বোনের মধ্যেও দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় অনেক সময়। তবে মেয়েরা বেশির ভাগই বাবা-মাকে আপনজনের তালিকায় ঠাঁই দেয়। ছেলেরা বিয়ের পর সংসারী হলে বাবা-মায়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে ক্রমশ। সন্তানদের কর্মসূত্রেও বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। ছোট ছেলেমেয়েদের এখন পড়াশোনার চাপ বেশি। তার সঙ্গে নাচ, গান, খেলাধুলো ইত্যাদি অনেক বিষয় আয়ত্ত করতে হয়। তাই পুজোর সময় ক’দিন এই চাপ থেকে অব্যাহতি দিতে বাবা-মা ছেলেমেয়েদের ঠাকুমা-দাদুর কাছে নয়, কাকা-জেঠা বা মাসি-পিসির কাছে নয়, পাহাড় কিংবা সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যায়।

আজকাল টিভি সিরিয়ালগুলোয় একান্নবর্তী পরিবার দেখাচ্ছে। চলচ্চিত্র শিক্ষার মাধ্যম বলে জেনেছি। দেখা যাক, টিভি আমাদের সমাজে আবার আপনজনের পরিসরটা বড় করে দিতে পারে কি না।

Advertisement

তপতী মুখোপাধ্যায়, শিবপুর, হাওড়া

অবসরের মাহাত্ম্য

কাজ করার মাহাত্ম্য কতখানি, ছেলেবেলা থেকেই আমাদের মাথার মধ্যে তা গজাল মেরে গুঁজে দেওয়া হয়। প্রতি মুহূর্ত পরিশ্রম না করলে আমরা কেউ মানুষ হিসেবেই গণ্য হব না। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কর্মশালা, এটা আমরা খুব কম বয়সেই জেনে যাই। কাঁচা বয়েসেই আমরা প্রবেশ করি ইঁদুর দৌড়ে। কাজ করার বিকল্প নিশ্চয়ই নেই। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে সুখ, শান্তির ক্ষেত্রে আলসেমিরও কোনও বিকল্প নেই। এই বিষয়টাই আধুনিক মানবসভ্যতা অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষা করে গিয়েছে, এবং যাচ্ছে। তার কুফলের প্রমাণ চার দিকে ছড়ানো।

ইংরেজ চিন্তাবিদ এবং প্রবন্ধকার বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর একটি লেখায় (‘ইন প্রেজ় অব আইডলনেস’) বলেছিলেন যে, বিশ্বে বড্ড বেশি কাজ হয়, এবং এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে অপরিসীম। রাসেলের তত্ত্বটি হল, কিছু মানুষ বেশি কাজের চাপে ধুঁকছেন প্রতিনিয়ত, অন্য দিকে আর একটি বৃহৎ দলকে বেকারত্বের হতাশা গ্রাস করছে। পরের দলটির কাছে রয়েছে অন্তহীন অবসর, কিন্তু তাঁদের কাছে তা উপভোগ করার মতো সামর্থ্য নেই। রাসেলের মতে এই সমস্যার সমাধান হল, কর্মীদের আট ঘণ্টার কর্মদিবসকে ছোট করে চার ঘণ্টায় নামিয়ে আনা, এবং কর্মরত মানুষের সংখ্যা বাড়ানো। এর ফলে কাজ এবং অবসর দুইয়েরই সমবণ্টন সম্ভব হবে। রাসেল মনে করতেন, এর ফলে পৃথিবীতে সামগ্রিক ভাবে আনন্দ ও সমৃদ্ধি দুই-ই বাড়বে।

রাসেলের এই প্রবন্ধ সঙ্কলনটি ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয়। আমরা এখন ২০২১ সালে দাঁড়িয়ে। এক চলমান অতিমারির মাঝখানে। কিন্তু এক দিকে অতিরিক্ত কাজ, অন্য দিকে কর্মহীনতা, এই সমস্যা মুছে যায়নি। বরং ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর ফলে কাজ করার সময় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, কাজ চলে গিয়েছে বহু মানুষের, যাঁরা টিকে গিয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই কাজের সময় বেড়েছে এবং মাইনে কমেছে।

অর্থাৎ, রাসেল যে সমস্যার কথা বলেছিলেন, তা বেড়েছে বই কমেনি। আমাদের সময় মাত্রাতিরিক্ত কাজই যেন একটি মহামারির রূপ নিয়েছে। ২০১৪-তে ‘গ্যালাপ’ সংস্থার এক সমীক্ষা বলছে, আধুনিক যুগে আমরা কাজ করে আমাদের জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটিয়ে দিই। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আমরা কাজ থেকে পালাতেও পারি না। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। কাজের সময় এবং অবসরের সময়ের মাঝের সীমারেখা ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে। এবং মানুষ গড়ে বেশি বছর বয়স অবধি কাজ করছেন। বিশেষ করে ‘হোয়াইট কলার’ কর্মীরা, অর্থাৎ যাঁরা অফিসে বসে কাজ করেন। ২০১৮ সালে দ্য ইকনমিস্ট পত্রিকার করা এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, উন্নত দেশগুলিতে ৬৫-৬৯ বছর বয়েসের মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশ কর্মরত।

এ দিকে বেশি ক্ষণ আর বেশি কাজ করার উল্টো ফল হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। অবসাদ থেকে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন বহু মানুষ। বেশ কিছু দেশ এবং বহুজাতিক সংস্থা সপ্তাহে চার দিন কাজ করার নিয়ম চালু করেছে। এতে কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে, উন্নত হয়েছে কর্মক্ষমতা। মানুষ কর্মযোগী। তার ফলেই আমাদের সভ্যতা এই উচ্চতায় পৌঁছেছে। কিন্তু কাজের সঙ্গে ‘অহেতুক’ কাজের পার্থক্য নিশ্চয়ই বোঝার চেষ্টা করতে পারি। তার সঙ্গে পারি অবসর সময় যাপনের গুরুত্বকে অপরাধবোধ ছাড়া দেখতে।

শৌর্য চৌধুরী, কলকাতা-৭৫

অমানবিক

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “মানুষের মরণে আমি তত দুঃখ বা আঘাত পাই না। কেন না মানুষ মরণশীল। আঘাত পাই মনুষ্যত্বের মরণ দেখিলে।” “শ্মশানে ‘ওরা’ ঢুকেছে কেন, ক্ষোভ বিজেপির” (২০-৪) শীর্ষক সংবাদ পাঠ করে আমি বাক্‌রুদ্ধ । এক জন স্বেচ্ছাসেবী, তিনি যে ধর্মেরই হন না কেন, মানুষের পারলৌকিক ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতেই পারেন। যাঁরা বিক্ষোভ দেখালেন, তাঁরা জানেন না মৃতদেহের কোনও জাত নেই? বিজেপিতে অনেক পণ্ডিত নেতা আছেন, যাঁরা এই সত্যিটা জেনেও চুপ করে থাকেন রাজনৈতিক কারণে। এ দেশে এখন মানবসভ্যতার থেকে রাজনীতির দম্ভকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। স্বামী বিবেকানন্দের মতো আর কি কেউ এ দেশে জন্মাবেন না, যিনি অন্য জাতের হাত থেকে তামাক খেয়ে বলবেন, দেখি কেমন করে জাত যায়?

কমল চৌধুরী, কলকাতা-১৪০

প্রয়াণ

সম্প্রতি করোনাভাইরাসে প্রাণ হারালেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। ভারত ও বাংলাদেশ, দুই দেশেই তিনি জনপ্রিয়। পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম ছবিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অভিনয় দক্ষতা ছিল অসাধারণ। বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ছিলেন সে দেশের সাংসদও। ষাটের দশকে তিনি সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন। তাঁর প্রয়াণের সংবাদ ভারাক্রান্ত করেছে বাঙালির হৃদয়কে।

শিবব্রত গুহ, কলকাতা-৭৮

একশো কোটি

একশো টাকা রোজগার করতে যে দিনমজুরের হাড়-পাঁজরে রাজরোগ থাবা বসায়, যাঁর স্ত্রী ছ’-সাত বাড়ি কাজ করে টাকা ঘরে আনে, শুধু আকাশপথে নেতাদের যাতায়াতের খরচের বহর দেখেই হয়তো তাঁর মাথায় খুন চেপে যায় (‘আকাশ পথে ভোট প্রচারেই ১০০ কোটি,’ ২১-৪)। খেলাই বটে! কিন্তু যাঁরা আকাশপথে রাজ্য চষে ফেলছেন, তাঁরা কখনও হিসেব করেছেন, “তার ভগ্নাংশেও কত জনকে নিখরচায় টিকা দেওয়া যেত, কিংবা বাড়ানো যেত কতগুলি কোভিডশয্যা?” হায় মূর্খ বঙ্গবাসী, এতেও টনক নড়ে না?

ধ্রুবজ্যোতি বাগচি, কলকাতা-১২৫

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement