Carbon dioxide

সম্পাদক সমীপেষু: বিকল্প ব্যবস্থা চাই

বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনে কয়লা ও পেট্রল-ডিজ়েলের উপর নির্ভর না করে সৌর, বায়ু ও পরমাণু, সবুজ হাইড্রোজ়েন ইত্যাদি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০২
Share:

গ্লাসগো আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২০৭০ সালে শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রার কথা ঘোষণা করেছেন। আমার মনে হয় ঘোষণাটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানো অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শক্তিক্ষেত্রকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। এ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনে কয়লা ও পেট্রল-ডিজ়েলের উপর নির্ভর না করে সৌর, বায়ু ও পরমাণু, সবুজ হাইড্রোজ়েন ইত্যাদি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। অর্থাৎ, পরিবেশবান্ধব শক্তিক্ষেত্র তৈরি ও প্রচলিত কাঠামো বর্জন করতে হবে। এর জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গবেষণা ও উন্নয়নে বিরাট অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। কয়লাভিত্তিক উৎপাদন ২০৪০ সালের মধ্যে বন্ধ করতে হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল কয়লার উপর। এঁদের জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা না করে এই অবস্থান্তর হওয়া অসম্ভব। চিন, আমেরিকা, জার্মানি ইত্যাদি উন্নততর দেশগুলোকে দূষণরোধে বেশি দায়িত্ব পালন করা উচিত। ভারত তৃতীয় বৃহত্তম দূষণকারী দেশ ঠিকই, কিন্তু নিঃসন্দেহে অন্য দেশগুলোর তুলনায় দরিদ্র। দূষণ নিয়ন্ত্রণে এতটা দায়ভার বহন করা সহজ নয়। ভারত ছাড়া বাকি প্রধান দূষণকারী দেশ যথা চিন, আমেরিকা, জার্মানি ও ব্রাজিলের আরও বেশি দায়িত্ব পালন করা উচিত।

Advertisement

অসীমেশ গোস্বামী, শ্রীরামপুর, হুগলি

সকলের দায়িত্ব

Advertisement

‘কেন্দ্রে থাকবে ন্যায়ের প্রশ্ন’ (২৩-১১) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে ঠিক কথাই বলা হয়েছে। গ্লাসগোয় সদ্যসমাপ্ত জলবায়ু সম্মেলন থেকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির কী লাভ হল! ভারতের লাভ-ক্ষতির খতিয়ানই বা কী বলছে! উদ্বোধনী বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বললেন, ভারত উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে শামিল অগ্রণী উদ্যোগী হিসাবে। আবার এ-ও জানানো হয়েছে, উন্নয়নকামী দেশ হিসাবে ভারত অপেক্ষাকৃত সস্তা খনিজ কয়লা বা জ্বালানি তেল ব্যবহার ছাড়তে পারবে না, অর্থাৎ ‘ফেজ় আউট’ না করে সে কয়লার ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে ‘ফেজ় ডাউন’ করতে চায়। প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১৫% ধারণ করলেও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ হিসাবে শতাংশের বিচারে প্রায় ৬০% কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন গ্যাস যোগ করে বাতাসে। আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, চিন, ভারত— এই দেশগুলির মধ্যে চিন-সহ প্রথম চারটি দেশ শিল্প, কারখানা ও শিল্পোদ্যোগে এগিয়ে। শিল্পবিপ্লব ঘটাতে যে শক্তির প্রয়োজন, তার জোগান আসে মূলত কয়লা বা খনিজ তেল পুড়িয়ে। ফলে কার্বন নিঃসরণ এই পর্যন্ত যা হওয়ার, তার সিংহভাগ করেছে উন্নত দেশগুলো।

অনুন্নত দেশগুলিকে চিরাচরিত শক্তির বিকল্প সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ বা পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে হলে চাই উন্নত প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর জোগান দেওয়া। এই মর্মে ২০১৫ প্যারিস সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো রাজি হয় একটি বড় ভর্তুকি ফান্ড তৈরি করার, যা অনুন্নত দেশগুলিকে অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে সহায় হবে। কেউ একটুও এগোয়নি এই ভর্তুকি ফান্ড তৈরি করতে। তাই রাষ্ট্র কতটুকু নাগরিকদের পাশে দাঁড়াবে বা কী ভাবে সহায়ক হবে জলবায়ু সংরক্ষণে, তার অপেক্ষায় না থেকে প্রতি নাগরিককে যত কম কার্বন নিঃসরণ ঘটানো যায় বা প্লাস্টিক-আবর্জনা থেকে উদ্ভূত মিথেন গ্যাস যাতে বাতাসে কম মেশে, তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভাগ কমাতে প্রচুর বনসৃজনে হাত দিতে হবে। এখনই যা উষ্ণায়নের মাত্রা, তাতেই বরফ গলছে, এ বিশ্ব বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। এই বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে না রাখলে পাহাড়, পর্বত বা আইসল্যান্ডের বরফ গলে সমুদ্র বা নদীর জলস্তর বাড়বে হুহু করে। ফলে উপকূলীয় শহর বা জনপদের সমূহ বিপদ। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হয় দরিদ্র ও প্রান্তিক লোকজন।

সুতরাং, বিশ্ব উষ্ণায়নের মোকাবিলায় প্রতিটি দেশকে দরিদ্রের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। সবাইকে সচেতন হয়ে নিজের প্রাণবায়ুকে দূষণমুক্ত রাখতে চেষ্টা করতে হবে। দূষণমুক্ত পরিবেশই একমাত্র উষ্ণায়ন আটকাতে পারে।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

শুধুই কথা

অবশেষে কথার ঝড় থামল। শেষ হল কপ২৬! অভিধাটি সদ্যসমাপ্ত ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের, যার প্রথমটি হয়েছিল জার্মানিতে, ১৯৯৫ সালে। ১৪ দিন ধরে, ২৫,০০০-এরও বেশি প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিশ্বের তাবড় নেতারা লম্বাচওড়া বক্তব্য রাখলেন। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতিজ্ঞা করলেন যে, ২০৭০-এর মধ্যে ভারতের কার্বন নিঃসরণ নেমে আসবে শূন্যতে!

কৃষি আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে দেশবাসী ভারতের কৃষিমন্ত্রীর নাম জানতেন না। এ দেশে যে এক জন পরিবেশমন্ত্রী আছেন, সেটাও অনেকে জানতে পারলেন গ্লাসগো সম্মেলনের পর। স্কটল্যান্ড থেকে ফিরে ভূপেন্দ্র যাদব জানালেন যে, ভারত এই ‘সফল’ সম্মেলনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রস্তাব ছিল সব দেশ মিলে জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহার শূন্য করবে। ভারত, শেষ মুহূর্তে, তা পাল্টে করে দিল ‘কমিয়ে আনবে’! কত বড় সাফল্য! একেই গ্রেটা থুনবার্গ বলেছে ‘ব্লা ব্লা ব্লা’! ২৬টি সম্মেলন! ফল কী হয়, সেটা বুঝতে একটু দেশে ফেরা যাক।

প্রতি বছরের মতো এ বছরেও দিল্লির দেওয়ালি-পরবর্তী আবহাওয়া ‘অতুলনীয়’। বাতাসে ভাসমান সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে ক্ষতিকারক কণার উপস্থিতি পৌঁছে যায় হু নির্দেশিত নিরাপদ মাত্রার ২২ গুণে! সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না। ঘরের মধ্যেও মাস্ক পরে থাকতে হয়। স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। অফিস কর্মচারীদের ঘর থেকে কাজ করতে বলা হয়। পাইপে জল ছিটিয়ে ধোয়াঁশা কমানোর চেষ্টা চলছে। বছরের পর বছর দিল্লিবাসী এই সৌভাগ্য উপভোগ করছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির তালিকায় এক নম্বরে দিল্লি, তার ধারেকাছে কেউ নেই। কলকাতা আর মুম্বই যথাক্রমে চতুর্থ এবং ষষ্ঠ স্থানে।

অথচ, নিত্যনতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করে চলেছেন মোদী। ডেউচা-পাঁচামির সঞ্চিত কয়লা, যা শুধু ভারতে নয়, এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম, তা নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। পরিবেশ নিয়ে কোনও কথা এঁদের মুখ থেকে শোনা গিয়েছে? কোনও চিন্তা, উদ্যোগ, পদক্ষেপ? গ্লাসগোর কল্পনা আর দিল্লির বাস্তব পাশাপাশি রাখলেই বোঝা যায়, আমরা কতখানি ভাবিত আবহাওয়া-দূষণ নিয়ে।

দেবাশীষ মিত্র, কলকাতা-৭০

শিশুরাই পারবে

‘কেন্দ্রে থাকবে ন্যায়ের প্রশ্ন’ প্রবন্ধটির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বাজার-ঈশ্বরের কাছে নতজানু প্রজন্মের দ্বারা উষ্ণায়ন প্রতিরোধে কোনও বিশদ কর্মকাণ্ড যে শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হবে, তা বিশ্বাস করা শক্ত। বরং আমরা শিশুদের নিয়ে যেতে পারি বৃক্ষের কাছে, নদীর কাছে, প্রকৃতির কাছে। তাদের প্রাথমিক পাঠ্যক্রমে কোনও পুস্তকলব্ধ জ্ঞান নয়, সরাসরি পরিচয়কে আবশ্যক করে। পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের মন তৈরি হয়। এই বয়সের মধ্যে তাদের মনে বসিয়ে দিতে হবে প্রকৃতির অঙ্গচ্ছেদের অর্থ নিজের অঙ্গচ্ছেদ, যাতে গাছ কাটার, জলাশয় বোজানোর উদ্যোগ হলে ওরা বড়দের প্রশ্ন করতে পারে, প্রতিবাদ করতে পারে। আমরা না পারলেও ওরা
ঠিক পারবে।

গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৭৫

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement