ছবি: সংগহীত
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানোর জন্য প্রাথমিক সতর্কতা অবলম্বনও আমাদের পক্ষে কঠিন। জনপরিবহণের ভিড়ে অন্যের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলা প্রায় অসম্ভব। যত্রতত্র থুতু ফেলা, পানের বা গুটখার পিক ফেলা, নাক ঝাড়া— এ সব আমরা সর্ব ক্ষণ করছি। গাঁধীজি বলেছিলেন, ‘‘আমরা ভারতীয়েরা যদি সবাই মিলে একসঙ্গে থুতু ফেলি, তা হলে এত বড় পুকুর তৈরি হবে যে তাতে তিন লক্ষ ইংরেজকে ডুবিয়ে মারা যাবে।’’ এখন আমরা আরও বড় পুকুর তৈরি করার সামর্থ্য অর্জন করেছি।
সৈকত রুদ্র
সোদপুর
অনুমতি কেন?
বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে তখন আমি একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। এক দিন আমাদের ইতিহাস শিক্ষক ছুটির পর আমাকে নিয়ে গেলেন বেলুড় বাজারের কাছের বস্তিতে। স্যরকে দেখেই কিছু ছোট ছেলেমেয়ে জড়ো হয়ে একটা ঝুপড়ির দালানে গোল হয়ে বসে পড়ল। স্যর ওদের শরীর-স্বাস্থ্য, খেলাধুলোর খবর নিতে শুরু করলেন। তার পর খেলার ছলেই ওদের বইগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে দু’একটা বিষয় পড়িয়ে দিলেন। আমি স্যরকে দেখে অবাক হচ্ছিলাম। যদ্দুর জানি, ওঁর বাড়ি সেই চন্দননগর। সারা দিন বিদ্যামন্দিরে পাঠদানের পরিশ্রমের পর কী ভাবে এত উৎসাহ পান উনি?
২০০৭ সালে আমি নিজেও বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হলাম। প্রতি দিন স্কুল ছুটির পর চলে যেতে লাগলাম স্থানীয় একটা ইটভাটায়। সেখানে সারা দিনের কায়িক শ্রমের পর বিকেলে খেলার সময় শিশুশ্রমিকদের। সেই সময়েই ওদের সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে তুললাম। ওদের নিজের নাম লেখা, অ-আ-ক-খ শেখাতে লাগলাম। এক দিন ল্যাপটপ নিয়ে গিয়ে ‘গুগাবাবা’ দেখালাম। আমাকে ওরা ‘মাস্টর’ বলে ডাকতে লাগল। ওদের বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলে, ওদের স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলে ভর্তি করালাম। বিদ্যালয়ে জানাজানি হতে, বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা বললেন, আমরাও এ ধরনের কাজে যুক্ত হতে চাই। সবাই মিলে গড়ে তুললাম একটি সংগঠন। শিশুদের জন্য বিনামূল্যের স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবির, দুঃস্থ, অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা, বই-খাতা-পেন-পেন্সিল, শীতের কম্বল-সোয়েটার কিনে দেওয়া: এই হল কর্মসূচি। ধীরে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হল আমাদের বেশ কিছু নতুন ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী।
২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল শিক্ষা দফতরের এক নোটিসে লেখা হল, “কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা শিক্ষাকর্মী, তাঁর ‘অ্যাপয়েন্টিং অথরিটি’-র অনুমতিসাপেক্ষে, বিদ্যালয়ে তাঁর কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, যে কোনও সামাজিক বা সেবামূলক সাম্মানিক কাজে নিযুক্ত হতে পারবেন।” আজ ভেবে মনে হয়, আপাত সদর্থক এই বাক্যটির মধ্যে একটি ভয়ানক ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে। সেটি হল, এখন থেকে কোনও সামাজিক কাজ করতে গেলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির লিখিত অনুমতি লাগবে।
প্রশ্ন হল, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি যে সর্বদাই কোনও শিক্ষকের বিদ্যালয়-বহির্ভূত সামাজিক কার্যকলাপকে ভাল চোখে দেখবেন, তা নাও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যেকার বৈরিতাও কাজ করতে পারে। তা ছাড়া ম্যানেজিং কমিটি অনেক সময়েই বিশেষ রাজনৈতিক দলের ধামাধরা কিছু লোকের দ্বারা পরিচালিত হয়। সামাজিক কাজ করা শিক্ষক অন্য রাজনৈতিক মতাদর্শের হলে, অনুমতি পাওয়া দুষ্কর।
সমাধান কী? এক জন শিক্ষককে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকতে হবে ক্যানসার আক্রান্ত ছাত্রীটির জন্য আর্থিক সাহায্য সংগ্রহের আগে? ছুটির পর রেলবস্তিতে বিনামূল্যের কোচিং সেন্টারে পড়ানোর জন্যেও পরিচালন সমিতির লিখিত অনুমতির অপেক্ষায় থাকতে হবে?
সুমন ভট্টাচার্য
মধ্যমগ্রাম বাজার, উত্তর ২৪ পরগনা
কেদারনাথ
‘অকালপ্রয়াত’ (কলকাতার কড়চা, ১৭-২) পড়ে জানলাম, ময়মনসিংহের কেদারনাথ মজুমদারের জন্মসার্ধশতবর্ষ পালিত হচ্ছে। ‘সাহিত্যিক সন্ন্যাসী’ কেদারনাথ বাংলা সাহিত্যের জগতে অবহেলিত। স্বশিক্ষিত মানুষটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করেও জ্ঞানচর্চায় নিরলস ছিলেন, ডাকযোগে দেশ-বিদেশ থেকে বই কিনে আনতেন, প্রায় ১৫ বছর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশ করেছেন ‘সৌরভ’ নামে উচ্চমানের পত্রিকা, লোকগীতি ও পুরাতত্ত্ব চর্চায় উৎসাহিত করেছেন চন্দ্রকুমার দে প্রমুখকে। এ ভাবেই সংগৃহীত হয় ঈশাখাঁর গীত, তোতামিঞার গীত, নারায়ণদেবের ভণিতাযুক্ত পদ্মাপুরাণ, দ্বিজ বংশীদাসের মূল পদ্মাপুরাণ, রামেশ্বরনন্দীর মহাভারত প্রভৃতি। কেদারনাথের ‘বাঙ্গালা সাময়িক সাহিত্য’ একটি অসাধারণ গ্রন্থ। দু’টি খণ্ডে বিভক্ত গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে তিনি সাময়িক সাহিত্যের প্রচারকাল, উৎপত্তি, দেশে দেশে তার বিকাশ ও বিস্তার, মিশনারি যুগের বাংলা মুদ্রিত গ্রন্থ, কোম্পানির আমলে শিক্ষার অবস্থা, বাংলায় ইংরেজি সংবাদপত্রের সংগ্রাম, সাহিত্য প্রচারে রাজবিধি, সে-কালের ডাকব্যবস্থা প্রভৃতি আলোচনা করেছেন। দ্বিতীয় খণ্ডে দিগদর্শন, সংবাদ প্রভাকর, তত্ত্ববোধিনী প্রভৃতি ৪০টি সাময়িক পত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। কেদারনাথের আর এক অসামান্য কীর্তি ‘রামায়ণের সমাজ’। এই রামোন্মাদনার যুগে বইটি খুবই প্রাসঙ্গিক। আজ থেকে ১০০ বছর আগে কেদারনাথ রামায়ণ বিচারে যে চিন্তার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষা করেছেন, দেখে আশ্চর্য হতে হয়। উনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন: স্বয়ংবরপ্রথা ও লিঙ্গপূজা বিদেশের আমদানি, লিপিযুগের পূর্বে রামায়ণ রচিত, রামায়ণের উত্তরকাণ্ড বাল্মীকির রচনা নয়, রামায়ণে প্রচুর আর্ষ প্রয়োগ ও প্রক্ষিপ্ত রচনা আছে।
দিলীপ মজুমদার
কলকাতা-৬০
জনগণনা
‘কলকাতার কড়চা’য় ‘প্রয়াণ’ (১৭-২) শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘‘ভারতে জনগণনা শুরু হয় ১৯৭২ সালে।’’ তথ্যটি ঠিক নয়। অবিভক্ত ভারতে প্রথম জনগণনা হয়েছিল ১৮৭২ সালে, ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মেয়ো-র আমলে। তবে প্রথম পূর্ণাঙ্গ জনগণনা হয়েছিল ১৮৮১ সালে, লর্ড রিপনের সময়ে। সেই থেকে প্রতি ১০ বছর অন্তর এ দেশে ‘আদমশুমারি’ হয়। এ পর্যন্ত মোট ১৫ বার জনগণনা হয়েছে, স্বাধীন ভারতে ৭ বার।
সজলকান্তি ঘোষ
কলকাতা-১৪৪
প্রযত্নের প্রশ্নে
‘‘প্রযত্ন’ ছুটি’ (১০-২) শীর্ষক পত্রের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ছুটি মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষের অংশ হওয়ার দৌলতে, প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র বিদ্যালয়ের শিক্ষককে, পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ‘প্রযত্ন’ ছুটি (সিসিএল) দিতেই হবে: এমন কোনও লিখিত নির্দেশ নেই। বরঞ্চ মাধ্যমিক/ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন কোনও ছুটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া নেওয়া যাবে না— এই মর্মে নির্দেশ মাধ্যমিক/ উচ্চ মাধ্যমিক পরিচালনকারী কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর জারি করেন। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনার ভার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর, ছুটি না-মঞ্জুর হতেই পারে, কারণ ‘‘লিভ ইজ় নট আ ম্যাটার অব রাইট’’। তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর, প্রযত্ন ছুটি কমপক্ষে ১৫ দিন নেওয়া যায়।
সর্বশেষে বলি, প্রযত্ন ছুটি না দিলে শিক্ষার্থীর মধ্যে বিকৃত আচরণ বেশি করে দেখা দেবে: এই আশঙ্কা অতি সরলীকরণ হয়ে গেল। সিসিএল চালু হওয়ার আগে শিক্ষাঙ্গন বিকৃত আচরণে পরিপূর্ণ ছিল, এখন তা দূরীভূত: এ কথা বলা যায় কি? শ্রেণিকক্ষে মদ্যপানের দৃশ্য ছেলেবেলায় দেখিনি বা শুনিনি, এখন আকছার শোনা যায় এবং দেখা যায়।
শোভনাভ ভট্টাচার্য
প্রধান শিক্ষক, আক্রমপুর হাইস্কুল, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।