west bengal

সম্পাদক সমীপেষু: বাঙালি কোথায়?

দুই, গত প্রায় ৪০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে নতুন শিল্প আসেনি। বর্তমান সরকারের আমলে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন কি হয়েছে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৪২
Share:

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন আসন্ন, বাড়ছে ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী দলের প্রতিশ্রুতির সংখ্যা। এর মধ্যে কিছু প্রশ্ন মনে জাগে। এই বাংলায় সরকারি স্তরে বাংলা ভাষা কি যোগ্য মর্যাদা পায়? ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সরকারি ফর্ম, বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞপ্তিতে স্থানীয় ভাষারই প্রাধান্য। পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম। এমনকি ‘স্বাস্থ্যসাথী’র ফর্মও ইংরেজিতে। খাস কলকাতায় এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে একটা বাংলা সাইনবোর্ড চোখে পড়বে না। বামফ্রন্ট ৩৪ বছরের রাজত্বে বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য তেমন কিছু করেনি। কিন্তু গত ১০ বছরেই বা কী হয়েছে, কিছু পুরস্কার বিতরণ, বিবৃতি ছাড়া?

Advertisement

দুই, গত প্রায় ৪০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে নতুন শিল্প আসেনি। বর্তমান সরকারের আমলে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন কি হয়েছে? শিল্পের উপযুক্ত পরিবেশ কোথায়? বিভিন্ন দলের মারামারি, হঠাৎ পথ অবরোধ, জুলুমবাজি নিত্য দিনের ঘটনা। কলকাতা ও তার আশপাশে যে সামান্য কিছু কাজ তৈরি হয়েছে, সেখানে বাংলার কর্মী কত শতাংশ? দিন কয়েক আগে একটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বহিরাগত’ প্রসঙ্গে তাঁর সরকারে বিভিন্ন অবাঙালি অফিসারদের দৃষ্টান্ত দেন। তাঁরা প্রত্যেকেই উপযুক্ত, সন্দেহ নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের যুবকযুবতীরা কেন্দ্রীয় চাকরিতে কেন ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে, তার কারণ খুঁজে বার করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? প্রতি বছর কোটি কোটি সরকারি টাকা বিভিন্ন ক্লাব ও পুজো কমিটিকে দেওয়া হয়। অথচ, এই টাকার কিছু অংশ খরচ করে যদি আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ কোচিং-এর ব্যবস্থা করা হত, তা হলে সর্বভারতীয় চাকরিতে পশ্চিমবঙ্গবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি হত।

আইএসএল ফুটবল চলছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রচুর তরুণ প্রতিভা চোখে পড়ে। ফুটবল বাংলার জনপ্রিয় খেলা হলেও এই প্রতিযোগিতায় উঠতি বাঙালি প্রতিভা চোখে পড়ছে না। ক্লাবে এত সরকারি অনুদানের পরও, কোনও খেলাতেই আমরা কি এগিয়েছি?

Advertisement

শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায়, আন্ধেরি, মুম্বই

শব্দসৈনিক

সম্প্রতি আমার এক বন্ধু শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে একটি সংখ্যা প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গেই আমার আর এক পরিচিত মানুষ আমাকে প্রশ্ন করলেন— আচ্ছা এত কবি থাকতে শঙ্খবাবুকে নিয়ে এত মাতামাতি কেন? আমি কিছু ক্ষণ নিরুত্তর থেকে জানিয়েছিলাম, আসলে তিনি নিজে কিছুই হতে চাননি। শুধু দু’হাত ভরে স্বর্ণশস্য ছড়িয়ে এসেছেন। আমি-র আবরণ ত্যাগ করে আমরা-তে এসে চাদর বিছিয়েছেন। কোনও দিন অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। রাষ্ট্রের সঙ্গেও না। ব্যক্তিগত মোহ তাঁর কাছে গুরুত্ব পায়নি। রবীন্দ্র-ভাবধারা রক্ষায় তিনিই তো অতন্দ্র প্রহরী। আমরা যারা তাঁর ভাবাদর্শে পথ চলতে শিখেছি, তাদের তরফে তাঁর এই পশ্চিমে হেলে-আসা বয়সে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

জয় গোস্বামীর লেখা “দেশকালের ‘আগ্নেয় জীবন’” (৩০-১) মনে করিয়ে দিল সেই শব্দসৈনিককে, যিনি বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে দিয়ে এই জরা দেহে আজও অগ্রপথিক। আজ তিনি নব্বই ছুঁলেন।

গৌতম সাহা, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

ইংরেজিতে প্রশ্ন

সম্প্রতি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে সুপারভাইজ়ার পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়ে গেল। এই পরীক্ষার ন্যূনতম যোগ্যতা মাধ্যমিক উত্তীর্ণ, এবং অঙ্গনওয়াড়ি হিসেবে ১০ বছর সেবা প্রদান। প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এই পরীক্ষা দিয়েছেন। অথচ, রাজ্য সরকারের চাকরি হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বাংলার কোনও চিহ্ন নেই, শুধু ইংরেজিতেই গোটা প্রশ্নপত্র। সাধারণ বিষয়ের (তৃতীয় পত্র) ও অঙ্কের (চতুর্থ পত্র) প্রশ্ন পুরোপুরি ইংরেজিতে হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই অনেক পরীক্ষার্থীরই প্রশ্ন বুঝতে অসুবিধে হয়েছে। সাদামাটা গ্রামের মহিলারা সবাই কি ইংরেজি বোঝেন? তাঁদের কর্মক্ষেত্র যেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রাম, ছোট শহর, এবং পরীক্ষার যোগ্যতা যেখানে দশম শ্রেণি পাশ (অঙ্গনওয়াড়ি থেকে সুপারভাইজ়ার পদে প্রোমোশন), সেখানে ইংরেজির পাশাপাশি কেন বাংলাতেও সেই প্রশ্ন থাকবে না? একে এই অতিমারি আবহে শুধু কলকাতায় পরীক্ষাকেন্দ্র করাতে সুদূর গ্রামের অনেকে যেতে পারেননি। যাঁরা যেতে পেরেছেন অনেক কষ্ট করে, তাঁদের প্রতি বৈষম্যের ছোঁয়া থেকে গেল। অনেক ভাল পরীক্ষার্থী এবং কর্মী ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ার জন্য পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। বাংলার মানুষের চাকরির পরীক্ষায় বাংলা থাকুক, এইটুকুই আবেদন।

অরুন্ধতী পাল, বীরভূম

আরও দাবি

‘উত্তরণের দাবিপত্র’ (১-২) জনকল্যাণ থেকে জগৎকল্যাণের এক সার্বিক দিকনির্দেশ। বিগত বছরের অতিমারি-জনিত পরিস্থিতি আমাদের গতানুগতিক চিন্তাধারার বাইরে অন্য রকম ভাবতে শেখাল। এরই প্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচনে উঠে আসুক আরও কিছু দাবি, যা এই করোনা কালের অভিজ্ঞতালব্ধ।

যেমন, খাদ্য নিরাপত্তার গ্যারান্টি। গণবণ্টন ব্যবস্থাকে প্রসারিত করে ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ ধারণার বাস্তবায়ন হোক। অনলাইন কাজ ও পঠনপাঠনের সুবিধার্থে জোরালো নেটওয়ার্ক সংযোগ দিক সরকার, নির্ধারিত হারে। সুলভ মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করা হোক। ফুটপাতবাসী ও ভবঘুরেদের জন্য নির্দিষ্ট আবাসস্থল নির্মাণকে প্রাধান্য দেওয়া হোক। গ্রামীণ মেধার উৎকর্ষ সাধনে প্রতি জেলায় স্থাপিত হোক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিকেন্দ্র। প্রতিমা নিরঞ্জন ও ছটপুজোর জন্য বিকল্প জলাশয়ের ভাবনাটিও গুরুত্ব পাক সমান ভাবে।

গঙ্গাধর প্রামাণিক, কলকাতা-১৫৯

চাই রুচি

‘উত্তরণের দাবিপত্র’ নিবন্ধটি অনবদ্য। একটি ছোট্ট সংযোজন, দেশকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্যে প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতা যেন সুশিক্ষিত হন ও উপযুক্ত বাক্যের মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। তাঁরা যেন দেশের সংবিধান এবং মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, রুচিশীল ভাষা প্রয়োগ করেন। এবং নিজের আচরণের ব্যাপারে সজাগ থাকেন।

সুব্রত সেন গুপ্ত, কলকাতা-১০৪

ইচ্ছেমতো?

‘চাকরি প্রাক্তন মাওবাদীদের, ক্ষতিগ্রস্তদেরও’ (২৯-১) শীর্ষক খবরের প্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা। রাজ্যে যখন বেকারের সংখ্যা এক কোটি ছুঁতে চলেছে, তখন দুর্নীতির জন্য একের পর এক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গ্রুপ ডি পদের বিজ্ঞাপন বেরোলে পিএইচ ডি প্রাপ্ত বেকারদেরও আবেদন করতে দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের অস্থায়ী কর্মীরা কাজের স্থায়ীকরণের জন্য আন্দোলনে নামলে তাঁদের পুলিশের লাঠির ঘা খেতে হচ্ছে, এমনকি জেলবন্দিও হতে হচ্ছে।

এমতাবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জাগ্রত বাংলা’ নামে ৪১১ জন মাওবাদী, ৫৯৭ জন কামতাপুরী, এবং এদের হামলায় আক্রান্ত ও নিহত ৩৬ জনকে ডেকে এনে সরকারি কাজে ( হোমগার্ড) নিয়োগপত্র দিয়ে দিলেন কী করে? একটা গণতান্ত্রিক সরকারের এমন ভূমিকা কতটা যুক্তিযুক্ত, বুঝে উঠতে পারছি না।

প্রায়শই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে লক্ষ করা যায়, ‘আমি করে দিলাম, আমি দিয়ে দিলাম।’ একটি রাজ্য পরিচালনা কি কারও ইচ্ছের উপর চলতে পারে? যেখানে রাজ্যে এত বেকার, সেখানে ডেকে এনে সরকারি চাকরি দেওয়া কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

মলয় মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১১০

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement