Darshan Solanki

অন্ত্যজের বিড়ম্বনা

তিন মাস আগে ভর্তি হওয়া ছাত্রটি একটি সিমেস্টার দিয়ে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিল কেন? মৃত্যুর কারণ নিয়ে অনুসন্ধান চলছে, চলতেই থাকবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৩ ০৫:৫২
Share:

হস্টেলের সাত তলার ঘর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল দর্শন। প্রতীকী ছবি।

নরেন্দ্রনাথ আইচের ‘দলিত, তাই ওরা আত্মঘাতী?’ (৬-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটি সময়োপযোগী এবং তথ্যবহুল। আসলে আমাদের দেশে এই ঐতিহ্য বহু কাল ধরেই চলে আসছে— রামায়ণের শম্বুক, মহাভারতের একলব্য থেকে এ কালের চুনী কোটাল, রোহিত ভেমুলা ও বম্বে আইআইটি-র ১৮ বছরের ছাত্র দর্শন সোলাঙ্কির আত্মহত্যা। হস্টেলের সাত তলার ঘর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল দর্শন। পরিবারসূত্রে জানানো হয়েছে, জাতিগত বৈষম্যের শিকার হয়েছে তাঁদের সন্তান। যদিও আইআইটি-র অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্ট বলছে, পরীক্ষায় খারাপ ফলের জন্য সে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। লক্ষণীয়, কমিটির এগারো জন সদস্যের মধ্যে সাত জনই অধ্যাপক। এঁদের কাছে পরীক্ষার ফলই গুরুত্ব পায়, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।

Advertisement

প্রশ্ন, তিন মাস আগে ভর্তি হওয়া ছাত্রটি একটি সিমেস্টার দিয়ে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিল কেন? মৃত্যুর কারণ নিয়ে অনুসন্ধান চলছে, চলতেই থাকবে। তবে মৃত্যুর আগের মাসে বাড়ি ফিরে সে জানিয়েছিল, বন্ধুদের মতে অন্ত্যজ হওয়ায় এমন প্রতিষ্ঠানে অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে সে। ফলে, নানা ভাবে বার বার সহপাঠীদের বিদ্রুপ ও অপমানের শিকার হতে হয় তাকে।

ইতিহাস বলছে, শাসক রামচন্দ্রের হাতে শম্বুক নিহত হলেও একলব্য, চুনী কোটাল, রোহিত ভেমুলা থেকে দর্শন সোলাঙ্কিদের গুরু বা শিক্ষক কর্তৃক অপমান, অপবাদ আর বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। আসলে যুগে যুগে শাসকেরও একটা গোপন অভিসন্ধি কাজ করে। আমাদের চোখের আড়ালে এমন কত দর্শন সোলাঙ্কিই হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই আত্মহত্যার চলমান ইতিহাস এখানেই থেমে নেই। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এই জাতপাত, হিংসা-বিদ্বেষ আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েও এখনও অনেকে মানবিক হতে পারেননি। যার কারণে, আমেরিকাতেও সাদা চামড়ার পুলিশ জর্জ ফ্লয়েডকে বিনা দোষে নির্মম ভাবে হত্যা করে। প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন, শিক্ষক নিয়োগে যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন জনজাতি আবেদনকারী থাকলেও নেওয়া হয় না ‘অযোগ্য’ দোহাই দিয়ে। সবেতেই এই বৈষম্য বিরাজমান।

Advertisement

আসলে রাষ্ট্রকে (শাসক) ভাবতে হবে যে, দেশের সমস্ত মানুষকে শিক্ষার আঙিনায় আনতে না পারলে মানবসম্পদ গড়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ, সমাজের নিচু তলার মানুষগুলোকে শিক্ষার আলোয় আনতে পারলে তবেই জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাওয়া সম্ভব।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

সর্পাঘাতে মৃত্যু

‘ম্যালেরিয়ার থেকেও চারগুণ বেশি সর্পদংশনে মৃতের সংখ্যা, তবু উপেক্ষিত’ (১-৪) শীর্ষক সংবাদ এবং ‘অবহেলিত ব্যাধি’ (৫-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি।

১৯১৬ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অরক্ষণীয়া উপন্যাসে আছে— “বাছা! পল্লীগ্রামে সাপের কামড়ে আর কত লোক মরে, মরে যা তা ঐ ম্যালোয়ারীতে।” কী পরিহাস! এই গল্প প্রকাশের একশো সাত বছর পরে ম্যালেরিয়ার থেকেও চার গুণ বেশি মৃত্যু হয় সর্পদংশনে!

সংবাদে বলা হয়েছে, এই রাজ্যে গত বছর জলাতঙ্কে মৃত্যু হয়েছিল ২০ জনের, কিন্তু সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা ২৪১। এই প্রসঙ্গে জানাতে চাই, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর মাস— এই ছ’মাসে শুধু হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার অন্তর্গত খানাকুল ও গোঘাট অঞ্চলের আশপাশের গ্রামসমূহে সর্পদষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন ১৯ জন।

জানা গিয়েছে, সর্পাঘাতে মৃত্যু নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্পাঘাত প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খসড়া নির্দেশিকা তৈরি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু এই নির্দেশিকা প্রশাসনের লাল ফিতের বাঁধন ছিঁড়ে কত কাল পরে গ্রামবাসীদের কাছে পৌঁছবে, সে-ও এক গবেষণার বিষয়। এ দিকে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে— সর্পদংশন প্রতিরোধ করা কঠিন কাজ। বিশেষত, খেতে কাজের সময় বা বন্যাদুর্গত এলাকায় সর্পদংশন অতি সাধারণ ঘটনা।

প্রসঙ্গত, সর্পাঘাত প্রতিরোধের জন্য এখনই স্থানীয় ভাবে সারের বস্তা দিয়ে তৈরি হাঁটু পর্যন্ত লম্বা আট ভাঁজের জুতো ব্যবহারের জন্য খেত-খামারে কর্মরত চাষিদের উৎসাহিত করা যেতে পারে। কারণ, কামারপুকুরের শিবু দাস তাঁর চাষিদের উপহার দিয়েছিলেন এই জুতো। বেশ কাজে লেগেছে এটি। এর প্রধান কারণ, গামবুট পরে জল-কাদা ভরা জমিতে কাজ করা যায় না। কিন্তু এই জুতো পরে বর্ষাকালে ধানজমিতে সহজেই কাজ করতে পারবেন চাষিরা।

প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি

অবৈধ অবরোধ

পশ্চিমবঙ্গবাসী যে বিষয়টার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচিত, সেটা হল রেল অবরোধ। যে কোনও দাবিদাওয়া আদায়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই রেল অবরোধ। কোনও সামাজিক সমস্যা হোক, কিংবা রাজনৈতিক সমস্যা, তার সবটা প্রতিফলিত হয় রেলের উপরে। তার সঙ্গে গত কয়েক বছর যোগ হয়েছে বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের দীর্ঘ ক্ষণ রেল ও রাস্তা অবরোধ, যা বেশ কিছু দিন স্থায়ী হচ্ছে। তাঁদের দাবির প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি রেখেই বলছি, এটা কোনও দাবি আদায়ের রাস্তা হতে পারে না। কিছু দিন আগে হাওড়া থেকে পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ রেল লাইনে বসে তাঁরা অবরোধ করছেন, জাতীয় সড়ক অবরোধ করছেন। এটা দিনের পর দিন চলতে পারে না। কেন্দ্র, রাজ্য— কারও তরফ থেকেই এই অবরোধ তোলার কোনও প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। প্রশাসনকে পঙ্গু করে রেখে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মদতে এই ধরনের অব্যবস্থা চলে, সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। বাংলার কত মরণাপন্ন রোগী মুম্বইয়ে চিকিৎসার জন্য যান, তাঁরা যেতে পারেননি, কত মানুষ চাকরির জন্য যান, যেতে পারেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশাসন নির্বিকার থেকেছে।

পশ্চিমবঙ্গে এক দিকে রাজ্য সরকার বলছে জঙ্গলমহল হাসছে। তা হলে এত বিক্ষোভ হচ্ছে কোথা থেকে? কাদের মদতে? ২০১৮ সালে জঙ্গলমহলে ১৬ ঘণ্টা রেল অবরোধ হয়, ২০২২-এ প্রায় ৫ দিন রেল অবরোধ হয়। আর এ বছর প্রায় ৪ দিন রেল অবরোধ হয়েছে। রেলওয়ে অ্যাক্ট ১৯৮৯-এর অধীনে রেললাইনে এই প্রকার অবরোধ শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার জন্য ২ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ কোথায়? একই ভাবে জাতীয় সড়কের উপর অনৈতিক জমায়েত, অবরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ ক্ষেত্রে জেলাশাসকদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া আছে শান্তিপূর্ণ ভাবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য।

যাঁরা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন তাঁরা নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তার পরেও এই অবস্থার কোনও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। এর থেকেই বোঝা যায়, এখন দেশে আইনব্যবস্থার অবস্থান ঠিক কোথায়। এই বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি।

চন্দ্র মোহন নন্দী, কলকাতা-৭৮

বিঘ্নিত পরিষেবা

আমার একটি প্রথম সারির বেসরকারি টেলিকম সংস্থার ফোন ও ওয়াইফাই আছে। কিন্তু গত দু’মাস যাবৎ ঠিকমতো নেট কানেকশন পাচ্ছি না। বিশেষত, বিকেল থেকে একদম পাচ্ছি না। যখনই হেল্পলাইনে ফোন করি, তখন একই কথা বলা হয় যে, “আমরা জানি নেট স্লো চলার জন্য আপনার অসুবিধা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই পরিষেবা ঠিক হয়ে যাবে।” অন্য টেলিকম সংস্থাগুলির ক্ষেত্রেও অবস্থা খুব আলাদা নয়। চার্জের পুরো টাকা দেওয়া সত্ত্বেও গ্রাহককে এমন পরিষেবা দেওয়া হবে কেন?

প্রভাকর মজুমদার, দক্ষিণ বারাসত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement