Letters To The Editor

সম্পাদক সমীপেষু: নাটক ও প্রবীণেরা

পাকিস্তানের বিশিষ্ট থিয়েটারকর্মী মাদিহা গওহর প্রতিষ্ঠিত ‘আজোকা’র জন্য নিয়মিত নাটক লেখা শুরু করেন, পরে মাদিহার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০০:০১
Share:

২৭ মার্চ, বিশ্ব নাট্য দিবস। প্রত্যেক বছর পৃথিবীর নানা দেশের কোনও না কোনও নাট্যব্যক্তিত্ব এই দিনটিতে তাঁর থিয়েটার-সংক্রান্ত ভাবনা ব্যক্ত করেন মানুষের সামনে। পাকিস্তানের প্রথম সারির নাটককারদের অন্যতম এবং বিখ্যাত ‘আজোকা থিয়েটার’-এর নাটককার শাহিদ নাদীম ২০২০-র বিশ্ব নাট্য দিবসের বাণীকার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৪৭ সনে কাশ্মীরে জন্মগ্রহণ করেন। উদ্বাস্তু হয়ে পাকিস্তানের লাহৌরে চলে যান, যখন তাঁর বয়স মাত্র এক। যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তখন নাটক লেখা শুরু করেন, তার পর লন্ডনে থাকাকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট থিয়েটারকর্মী মাদিহা গওহর প্রতিষ্ঠিত ‘আজোকা’র জন্য নিয়মিত নাটক লেখা শুরু করেন, পরে মাদিহার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। নাদীম ইতিমধ্যে পঞ্জাবি ও উর্দু ভাষায় মৌলিক নাটক এবং ব্রেখটের নাটক অনুবাদ সমেত কমবেশি ৫০টির মতন নাটক লিখেছেন।

Advertisement

২০১৯ সনে থিয়েটার ডে ইউনেস্কো-র মহাপরিচালক ইরিনা বোভোকা বলেছিলেন, ‘‘সংস্কৃতির বহুমুখিতারই একটি প্রকাশ হল নাটক। মানুষের আবেগ, শক্তি ও অসহায়ত্বের প্রতিচ্ছবি থাকে নাটকে।’’ জাঁ ককতো-কে দিয়ে ১৯৬২-তে প্রথম বাণী শুরু হয় বিশ্ব নাট্য দিবসের। তার পর আর্থার মিলার, লরেন্স অলিভিয়ের, পিটার ব্রুক, আয়নেস্কো, গিরিশ কারনাড, দারিও ফো, আরও অনেক অসামান্য নাট্যবক্তিত্বের বাণী আমরা শুনেছি ও সমৃদ্ধ হয়েছি।

২০১৪ সনে দক্ষিণ আফ্রিকার মঞ্চ পরিচালক ব্রেট বেইলি থিয়েটার ডে মেসেজে বলেছিলেন, "We gather to weep and to remember; to laugh and to contemplate; to learn and to affirm and to imagine."

Advertisement

শুনে আমার হঠাৎ মনে হয়েছিল, থিয়েটার যদি আমার চার পাশের প্রবীণ নাগরিকদের একটা জায়গা দিতে পারে, তা হলে কেমন হয় ? যে প্রবীণ নাগরিকেরা নচিকেতার সেই গানের বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধবৃদ্ধাদের মতো অসহায়, নিঃসঙ্গ, দুর্বল, তাঁরা যদি থিয়েটারে আসেন, সবাই মিলে এক জায়গায় বসেন, পরিচিত-অপরিচিত-স্বল্প পরিচিত নিঃসঙ্গ মানুষদের নিয়ে যদি আমরা সারা বছর ধরে নাট্যচর্চায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারি? প্রায় ৩৩-৩৪ বছর গ্রামের নাট্যচর্চার সঙ্গে নানা ভাবে বড় হয়ে উঠতে উঠতে, এত দিনে আমার এই কথাটি মনে হল। বহু নাট্যদলই তো এখন মিনিস্ট্রির অনুদান পান। তাঁরা করতে পারেন না সেই সব অসহায়, নিঃসঙ্গ মানব-মানবীদের জন্য এমন একটি কাজ, যাতে তাঁরা তাঁদের বাকি নির্বাক জীবনটাকে আনন্দময় করে রাখতে পারেন থিয়েটার চর্চার মধ্য দিয়ে ? দরকার নেই তাঁদের দিয়ে মহৎ মহৎ থিয়েটার তৈরি করার, দরকার নেই তাঁদের দিয়ে দিনের পর দিন ‘শো’ করার (যদিও সেটা হলে মন্দ হয় না)। একমাত্র থিয়েটারই পারে অনেক অসহায় মানুষকে এক জায়গায় জড়ো করে একটা প্রাণপূর্ণ পরিবেশ তাঁদের এই প্রবীণ বয়সেও ফিরিয়ে দিতে।

জার্মানিতে নাটক একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম। বিভিন্ন বয়সি মানুষের জন্য এখানে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাট্য সংগঠন। প্রৌঢ় বা বৃদ্ধদের জন্যও জার্মানিতে নাটকের দল আছে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর, ঘরে একাকী বসে না থেকে, সে দেশে নাটকের দলে যোগ দেন অনেকেই। এ দেশেও আমরা শুরু করতে পারি। যে যেখানে যতটুকু শক্তি নিয়েই আছি, নিজের বাড়ির প্রবীণ-প্রবীণাদের নিয়েই শুরু হোক।

কল্যাণময় দাস, কোচবিহার

মানুষের দায়িত্ব

‘বন্ধ হচ্ছে না বাজার, আশ্বাস দিলেন মমতা’ (২০-৩) সংবাদ পড়লাম। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি মজুত করতে শুরু করে দিয়েছে। কিছু কিছু মানুষের কেনার বহর দেখে মনে হচ্ছে, এরা সব পাইকারি ব্যবসাদার। এ ভাবে বাজারের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে, কৃত্রিম ভাবে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক তৈরি করে এক শ্রেণির ফড়ে বা ব্যবসায়ী মুনাফা লোটে বলে সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ ছিল। এখন কিন্তু ঠিক উল্টোটা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমে ডাক্তারবাবুরা বা প্রশাসনের কর্তাকর্ত্রীরা যতই বলুন ‘আতঙ্কিত হবেন না’, সাধারণ মানুষ খুব আতঙ্কিত। প্রশাসন তো সাধ্যমতো চেষ্টা করছে, সাধারণ মানুষকেও তো সহযোগিতা করতে হবে।

অঞ্জন কুমার শেঠ, কলকাতা-১৩৬

একটি আবেদন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বহু পরিবারের কর্তা-কর্ত্রীরা তাঁদের গৃহ-পরিচারিকাদের কাজে আসতে বারণ করছেন। কত দিন এই কর্মবিরতি চলবে, তা বোঝা মুশকিল। এ ক্ষেত্রে অনুপস্থিতির দিনগুলিতে যাতে ওই পরিচারিকাদের পারিশ্রমিক কাটা না যায় এবং অনুপস্থিতির কারণে যাতে কাজ চলে না যায়, সেটা সংশ্লিষ্ট গৃহকর্তা-কর্ত্রীদের দেখতে আবেদন করব। এ ব্যাপারে সরকারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।

জয়শ্রী চক্রবর্তী, সম্পাদিকা, সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটি

জনতা কারফিউ

মোদী যে ‘জনতা কারফিউ’ ঘোষণা করলেন, তা কেন? যে সব প্রতিক্রিয়া উঠে এল বিভিন্ন সামাজিক ও গণমাধ্যমে, সেগুলো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। করোনা-সংক্রমণ ছড়ানো শুরুর সময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের ভারত সফর ঘিরে এনআরসি ও সিএএ বিরোধী আন্দোলনের হিংসাত্মক চেহারা বদল, হিন্দুত্ববাদীদের পাল্টা প্রদর্শন, গুলি চালনা ও প্রাণহানি। তার পরও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শাহিন বাগ-পার্কসার্কাসে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের ধর্না অবস্থান কিন্তু জারি। এমনকি বিশ্ব জুড়ে করোনা মহামারি ভয়াবহ রূপ ধারণ করলেও তাঁরা অবস্থানে অনড়। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সেকুলার শক্তিগুলোর চোখে তাই কৌশলে আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা।

বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই ঘোষণার প্রাসঙ্গিকতা কতটা? বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। অর্থাৎ যে কোনও রকমের সমাবেশ ও জমায়েত না করার কথা যেমন বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত স্তরে করমর্দন, আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি থেকেও আপাতত বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এই সব বিধিনিষেধ কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে? চিন ইতিমধ্যেই প্রাথমিক সাফল্যটুকু পেয়েছে। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, চিনের এই সাফল্যের কারণ, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনজীবনের উপর প্রত্যক্ষ সরকারি নিয়ন্ত্রণ। অন্য দিকে ইটালি, শুরুতে এই গাইডলাইন বিশেষ আমল না দেওয়ার মাশুল গুনছে। আমাদের দেশে মহামারি যদি এক বার ছড়ানোর সুযোগ পায়, তা হলে কিন্তু দেড়-দু’কোটি মানুষ সহজেই মারা পড়বে।

তাই, মোদীর সব কাজের পিছনে একটা জনবিরোধী চক্রান্ত না খুঁজে, বরং তাঁর এই ‘জনতা কারফিউ’কে মারণ-ব্যাধি থামানোর একটা সৎ প্রয়াস বলেই দেখা ভাল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই আমাদের সকলের কর্তব্য হওয়া উচিত।

সুব্রত কুমার পাল, আনন্দপল্লি, নদিয়া

কেন বাতিল

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্রুত ব্যাপ্তি রোধ করার অজুহাতে, রেল চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু যাত্রী, বিশেষ করে বরিষ্ঠ নাগরিকগণ, সুদীর্ঘ কাল যে কনসেশন বা ছাড় পেয়ে আসছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তা সাময়িক ভাবে বাতিল করে দিলেন। এও সেই রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার মতো ব্যাপার নয় তো?

দেবরঞ্জন তরফদার, ব্যারাকপুর

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement