৫ অগস্ট রামমন্দিরের শিলান্যাস করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিনটিকে স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে তুলনা করলেন। রামমন্দির নির্মাণ আন্দোলনকে তুলনা করলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে। এই তুলনা শুধু অনৈতিহাসিক নয়, মিথ্যাও বটে। স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশবাসী যে বলিদান দিয়েছিলেন, তার লক্ষ্য ছিল জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ভারতবাসীর বিদেশি শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি। সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক দিক থেকে সবার জন্য একটি সুখী সমাজ। রামমন্দির আন্দোলনের সামনে এমন কোনও লক্ষ্য ছিল কি? বরং স্বাধীনতা আন্দোলন দেশবাসীকে যে এক সূত্রে আবদ্ধ করেছিল, মন্দির নির্মাণ আন্দোলন বাবরি মসজিদকে ভেঙে সেই সংহতির উপর আঘাত হেনেছে। ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জানেন, এই দুই আন্দোলনের কোনও তুলনা চলে না। তবুও তিনি তুলনা করলেন, কারণ স্বাধীনতা আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কোনও ভূমিকা ছিল না। বরং তারা ব্রিটিশদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছিল। সেই কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেতেই রামমন্দির আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করা, এবং সেখানে তাদের ভূমিকাটি ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী ভুলে যাচ্ছেন, ইতিহাসকে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইচ্ছেমতো নির্মাণ করা যায় না।
সমর মিত্র, কলকাতা-১৩
ভারতের আত্মা
ভারতে প্রায় ১৫০ বছর ধরে হিন্দু সমাজ যে আন্দোলন করে আসছিল, অবশেষে তা পূর্ণতা পেল। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ শুরু হল। দীর্ঘ এই আন্দোলনের সুফল হিন্দু সমাজ পাবে। কিন্তু আজ আর আমরা অশোক সিংহলের মতো লড়াকু হিন্দুত্ববাদী সৈনিককে পাব না, যিনি রাম জন্মভূমি ফিরে পাওয়ার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন। কলকাতার দুই ভাই রাম কোঠারি ও শরৎ কোঠারির আত্মত্যাগও দেশবাসী ভুলে যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিপূজন অনুষ্ঠানের সূচনাকে বাম-সহ অন্য কয়েকটি দল কটাক্ষ করেছে। তাদের মনে রাখতে হবে, পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের মন্দির তৈরি হবে— এটা কোনও ধর্মীয় বিষয় নয়, রাষ্ট্রগৌরবের বিষয়। ভারতের পুনরুত্থানের অস্ত্র হিসেবে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, মহাপুরুষদের পূজা চালাতে হবে— ‘‘দেশে শ্রীরামচন্দ্র ও মহাবীরের পূজা চালিয়ে দে দিকি।’’ বিশ্বের প্রায় সমস্ত ভাষায় শ্রীরামচন্দ্রের মহিমাগান লিপিবদ্ধ হয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে শ্রীরামকথা শ্রবণ ও পূজন করছে। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়, যেখানে মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার একেবারে উপরে শ্রীরামচন্দ্র, মাতা সীতা ও লক্ষ্মণের চিত্র অঙ্কিত আছে। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় শ্রীরামচন্দ্রই ভারতের আত্মা, এবং রামমন্দির নির্মাণে সমাজে স্থায়ী সদ্ভাব নির্মিত হবে। দেশের প্রগতি দ্রুত হবে। ভারতে রামরাজ্যের কল্পনা বাস্তবায়িত হবে।
তরুণ কুমার পণ্ডিত, কাঞ্চনতার, মালদহ
আর শিক্ষা?
৫ অগস্ট যখন সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী রামের বিগ্রহের সামনে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করছেন, সেই একই দিনে এই কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল ছোট্ট একটা খবর ‘জেএনইউ-কে ঋণ’ (পৃ ৬, ৫-৮)। শিক্ষা মন্ত্রকের উচ্চশিক্ষা তহবিল থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৪৫৫.০২ কোটি টাকা ঋণ পেল জেএনইউ। ঋণের টাকা দিয়ে নতুন ভবন, হস্টেল, গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করবে দেশের অন্যতম এই বিশ্ববিদ্যালয়। টাকা যখন ঋণ হিসেবে পাওয়া যায়, তখন সেটা শোধ করতে হয় সুদ-সহ। যদিও এ ক্ষেত্রে কী ভাবে শোধ করতে হবে, তার উল্লেখ নেই। কিন্তু ঋণমাত্রেই শোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকে, অনুদানের ক্ষেত্রে যা থাকে না। খরচের হিসেব দিলেই চলে।
একটি অলাভজনক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারণত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। সেখানে ঋণের বোঝা চাপালে প্রতিষ্ঠানটি আয় বাড়ানোর রাস্তা খুঁজতে থাকে। তার পরোক্ষ প্রভাব ছাত্রছাত্রীদের ওপর এসে পড়ে। এটাই বোধ হয় নতুন ভারতবর্ষ, যেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মূর্তি ইত্যাদি গড়তে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা, গবেষণায় অনুদানের বদলে ঋণ দেয়।
শুভেন্দু দত্ত, কলকাতা-১০১
‘জ্যায়’-ধ্বনি
রামনবমীতে মা-ঠাকুমাদের ঘরের মধ্যে ব্রত উদ্যাপন করতে দেখেছি। কিন্তু কপালে গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে, গেরুয়া বসন পরে, অস্ত্র হাতে রাস্তায় এ ভাবে বাইক মিছিল দেখিনি। এ যেন রামের নামে এক অঘোষিত হুঙ্কার। বিজেপি আসার আগে কি হিন্দুরা অত্যাচারিত ছিল না? উচ্চবর্ণ হিন্দুর দ্বারা নিম্নবর্ণরা অত্যাচারিত হয়েছে। আজও হচ্ছে। গোবলয়ে দলিত হত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বুদ্ধদেবকে নতুন একটা ধর্ম সৃষ্টি করতে হত না, যদি না হিন্দু ব্রাহ্মণরা অত্যাচারী হত। ভারতে হাজার হাজার মন্দির, হাজারও দেবতা। একমাত্র রামচন্দ্রই কেন আদর্শ হবে, বুঝলাম না। যিনি নিজের স্ত্রীকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বাধ্য করেছিলেন। বেদজ্ঞান লাভ করার অপরাধে এক শূদ্র ঋষিকে হত্যা পর্যন্ত করেছিলেন।
এই রামচন্দ্র কোনও দিন বাঙালির আদর্শ ছিলেন না। বাঙালির আদর্শ তো চৈতন্যদেব। যিনি জাতপাতের বেড়া ছিন্ন করে সারা বাংলাকে প্রেমের জোয়ারে ভাসিয়েছিলেন। ভালবাসা আর সহনশীলতাই ছিল বাঙালির আবেগ। এখন সেই বাঙালি ‘জয় শ্রীরাম’ কথাটাও বাংলায় বলছে না। বলছে ‘জ্যায় শ্রীরাম’। আমরা কি তবে ছিন্নমূল হচ্ছি?
আমাদের সংস্কৃতি সৌভ্রাতৃত্ববোধের সংস্কৃতি। সেই শিক্ষা বিবেকানন্দ আমাদের দিয়েছেন। ‘‘দরিদ্র অজ্ঞ মুচি মেথর আমার ভাই’’— এই শিক্ষা, এই সংস্কৃতিই বাঙালির। ‘‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’’— এই আমাদের আবেগ। আমরা কোনও সাম্প্রদায়িক বিভেদের সংস্কৃতি বহন করি না। সর্বধর্ম ও সংস্কৃতির সহনশীলতাই বাঙালির তথা ভারতের দর্শন চিন্তার মূল ভিত্তি। কোনও শক্তি এই সাম্প্রদায়িক ঐক্যকে বিনষ্ট করতে পারবে না।
সূর্যকান্ত চক্রবর্তী, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
দায় কার?
৫ অগস্টের আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত ৫২,৫০৯। মোট আক্রান্ত প্রায় ২০ লক্ষের কাছাকাছি। ঠিক সেই মুহূর্তে আয়োজিত হল এই ভূমিপুজো। শুধু অযোধ্যা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অকাল দীপাবলি পালিত হল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে সকলকে বাড়িতে থাকতে বলছেন, শারীরিক দূরত্বের কথা বলছেন, মাস্ক পরতে বলছেন। অথচ তিনি নিজেই শারীরিক দূরত্বের বিধি লঙ্ঘন করলেন। তা ছাড়া দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যখন বৈঠক করেছিলেন, তখন তাঁরও উচিত ছিল নিভৃতবাসে থাকা। কিন্তু তিনি সে বিধি লঙ্ঘন করলেন। ওখান থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তার দায় কার?
মোহাম্মদ আবু সাঈদ, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
কালো অধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গে ৫ অগস্ট ছিল সম্পূর্ণ লকডাউন, কিন্তু সকাল থেকেই চার দিকে মাইক, পতাকার রমরমা। তা হলে লকডাউন করা হয়েছিল কাদের জন্য? সারা বিশ্ব দেখল গণতন্ত্রের এক কালো অধ্যায়। ভারতের ভাবমূর্তি অন্যান্য দেশও বুঝতে পারল।
আবু হানিফ মোহাম্মদ এহতেশামুদ্দিন, ফুরফুরা, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।