পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেখার আনন্দ
পঙ্কজ সাহার ‘পায়ে পায়ে পঁয়তাল্লিশ’ (রবিবাসরীয়, ৯-৮) লেখাটি পড়ে অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান পেলাম। এই প্রসঙ্গে সমসাময়িক একটি ঘটনার কথা মনে পড়ল। সদ্য তখন গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। সালটা ১৯৭৪। লোকমুখে প্রায়ই শুনতাম, এ বার রেডিয়োর স্থান নিতে চলেছে টিভি।
অবশেষে ৯ অগস্ট, ১৯৭৫ সালে শুরু হল কলকাতা টেলিভিশনের পথ চলা। ওই সময় আমাদের অঞ্চলে হাতেগোনা কয়েকটা বাড়িতে টিভি এসেছিল। বাকি সবার ঘরে ছিল রেডিয়ো। আস্তে আস্তে অনেকের বাড়িতেই টিভি আসতে শুরু করে। এমনই একটি বাড়িতে, যত দূর মনে পড়ে শনিবার বিকেলে, গিয়েছিলাম উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের ছবি দেখব বলে। দেখলাম, ওঁদের বাড়ির নীচে অসংখ্য জুতো। অর্থাৎ, আগেভাগে অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন। তখনকার দিনে যাঁদের বাড়িতে টিভি ছিল, তাঁরা পরিচিতদের টিভি দেখতে আপ্যায়ন করতেন, যা এখনকার দিনে ভাবাই যায় না। যা-ই হোক, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দরজা ঠেলা দিতেই ভিতর থেকে এক জন বললেন ‘নো ভ্যাকেন্সি।’ দরজার কাছ পর্যন্ত লোক বসে আছে। অগত্যা বিফল মনোরথ হয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
আশির দশকের মাঝামাঝি সেই শখ পূর্ণ করি বাড়িতে টিভি নিয়ে এসে। পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেখার আনন্দে মনে পড়ল সে দিন টিভি দেখতে না পাওয়ার দুঃখ।
উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি
স্মৃতির দূরদর্শন
দূরদর্শনের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন ঘটনাসমৃদ্ধ চার দশকের স্মৃতি রোমন্থনের জন্য পঙ্কজ সাহাকে ধন্যবাদ। তবে কিছু কিছু ব্যাপারে সংশয় জাগে।
যেমন, ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় ৯ অগস্ট রাধা ফিল্ম স্টুডিয়ো থেকে রেকর্ডিং করা কলকাতা টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি দু’ঘণ্টার নয়, পঞ্চাশ মিনিটের ছিল বলে মনে হয়। যে অনুষ্ঠানের প্রথম ঘোষিকা ছিলেন শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের যুগলবন্দিতে এক অন্য মাত্রা পেয়েছিল।
চৈতালি দাশগুপ্ত, শাশ্বতী গুহঠাকুরতা, অভিজিৎ দাশগুপ্ত, ভবেশ দাশের মতো নক্ষত্র ঘোষক-ঘোষিকা, সাংবাদিক-প্রযোজক দূরদর্শনের পর্দায় বিরাজ করলেও পঙ্কজবাবুর ভারিক্কি কণ্ঠে ‘দর্শকদের দরবারে’ অনুষ্ঠান অসামান্য লাগত। এবং দূরদর্শনের অনুষ্ঠানে ওঁর ‘নববর্ষের বৈঠক’ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা দেখার জন্য টেলিভিশনের সামনে উদ্গ্রীব হয়ে বসে থাকতাম। উৎপল বসু, অশোক বিশ্বনাথন, কুণাল সরকার ও রত্নাবলী ভট্টাচাৰ্যের উপস্থাপনায় ‘ইয়ুথ টাইম’ অনুষ্ঠানটিও জনপ্রিয় ছিল। তা ছাড়া ইংরেজি সংবাদপাঠে অধ্যাপক এন বিশ্বনাথন এবং লীনা সেন যেমন খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন, তেমনই বাংলা সংবাদ পাঠক-পাঠিকা হিসেবে তরুণ চক্রবর্তী, দেবরাজ রায় এবং ছন্দা সেন আজও দর্শকের মনে উজ্জ্বল।
সারা বাংলায় নাটক ও অভিনয় প্রসারের জন্য বাংলার নাট্যব্যক্তিত্ব অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজন ভট্টাচার্য, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, উদয়শঙ্কর প্রভৃতিদের নিয়ে মুখোমুখি ঘরোয়া আড্ডার আসর বসত। ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ এবং বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে আলোচনার আসর বিশেষ আকর্ষক ছিল। দূরদর্শনের পর্দায় প্রথম বিখ্যাত অভিনেতা রবি ঘোষের নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘টেনিদা’ সিরিয়ালটি দেখানো হয়েছিল। অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদারের আত্মপ্রকাশ দূরদর্শনের পর্দায়, জোছন দস্তিদারের ‘তেরো পার্বণ’ সিরিয়ালে, যাতে খেয়ালী দস্তিদারেরও অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল বলে মনে হয়।
১৯৭৭ সালে কসমস ক্লাবের হয়ে ফুটবলসম্রাট পেলে-র সঙ্গে মোহনবাগানের খেলার সরাসরি সম্প্রচার, নেলসন ম্যান্ডেলার অভ্যর্থনার সম্প্রচার, এবং নোবেলজয়ী মাদার টেরিজ়ার দূরদর্শনে উপস্থিতির সম্প্রচারগুলি আজও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে।
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
বাদ গেলেন এঁরা
আমি ১৯৮৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ফিল্মস ডিভিশন, কলকাতার ডিরেক্টর ছিলাম। আমার অফিস ছিল দূরদর্শন ভবনের ছ’তলায়। পঙ্কজবাবুর স্মৃতিচারণ খুব ভাল লাগল, কিন্তু কয়েকজনের নাম, যাঁদের ঘোষণা-সঞ্চালনায় টিভির মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই শাশ্বতী গুহঠাকুরতা, চৈতালি দাশগুপ্তের উল্লেখ না করলেই নয়। বিশিষ্ট প্রযোজক অভিজিৎ দাশগুপ্তের অবদানও খুবই মূল্যবান।
যাঁদের কর্মনিষ্ঠা ছাড়া দূরদর্শন আজ এই জায়গায় আসতে পারত না, তাঁদের কয়েকজন হলেন— জগন্নাথ বসু, উপেন তরফদার, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কল্যাণ ঘোষ, তপন রায় প্রধান, বিভাস পাল, স্নেহাশিস সুর ও বীরেন সাহা। পঙ্কজবাবুর প্রতিবেদনে এঁদের নামগুলির উল্লেখ থাকলে ভাল হত।
কে জি দাশ, কলকাতা-১০৭
উপেক্ষিত
‘‘ইউটিউব থেকে শুরু করে বিভিন্ন মিউজ়িক অ্যাপে গানের ক্রেডিট লাইনে হামেশাই লিরিসিস্টের নাম বাদ পড়ে’’ (‘প্রতিবাদ গীতিকারদের’, আনন্দ প্লাস, ১-৮) — এটা গীতিকারদের নিয়তি। ভজন, দোঁহা, লোকগীতি, পল্লিগীতি, ভক্তিগীতি, মুরশিদি, মারফতি, কাওয়ালি, কবিগান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, মইষাল, গজল, বাউল, তরজার কত লেখকের নাম হারিয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার গীতিকারদের মধ্যে মুখে মুখে প্রবাদে পরিণত হয়েছে মীরা, কবীর, লালন, গালিব, রামপ্রসাদ, অ্যান্টনি, ভোলা প্রমুখের নাম।
এই গীতিকারদের সৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণ, গানের কথায় মানবিক আবেদন, স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ। অতীতে প্রবাদপ্রতিম গীতিকাররা স্বয়ং গান বাঁধতেন, সুর দিতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একা, কখনও দোহার ও কয়েক জন বাদক নিয়ে উপস্থাপন করতেন। রাজসভা, দেবালয়, মেলা, আসর থেকে তাঁদের নাম প্রচার করতেন শ্রোতা-দর্শকরাই। আধুনিক শ্রোতারা নায়ক-নায়িকার মুখে গায়ক-গায়িকার গান শোনেন। বাকিরা নেপথ্যে। স্বীকৃতি, রয়্যালটির দাবিও নেপথ্যেই থেকে যায়।
নজরুল ইসলাম গীতিকার হিসেবে ছিলেন সবচেয়ে বেহিসেবি। কমল দাশগুপ্তের ক্ষেত্রেও এই উদাসীনতা দেখা যায়। একমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতিকার হিসেবে ছিলেন সুসংহত। দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্তের গান তুলনায় অনেক কম হলেও, তাঁরা গীতিকার হিসেবে ‘ক্রেডিট লাইন’-এর কথা ভেবেছেন কি না জানা নেই। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, মোহিনী চৌধুরী, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব রায়, মুকুল দত্ত, শৈলেন রায়, ভাস্কর বসু, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার প্রমুখ বাংলা গানের গীতিকার।
হিন্দি গানে হসরত জয়পুরী, শৈলেন্দ্র, মজরুহ সুলতানপুরী, কাইফি আজমি, সাহির লুধিয়ানভি, অশোক ভূপালী, ইন্দিবর, নীরজ, গুলজ়ার, আনন্দ বক্সি প্রমুখ স্বনামধন্য। এঁরা চিরকাল ‘গীতিকার’-ই রয়ে গেলেন। অথচ এঁরা তো প্রথমে কবি। তবে এঁদের কবিতা লেখা হয়েছে চলচ্চিত্রের দৃশ্যে গানের সুরমাফিক। আজ গানের জগতে গীতিকবিতা লিখেই শেষ হয় না। তাতে ছন্দ, মাত্রা, উচ্চারণ, লয়, তাল ইত্যাদিতে নানা পরিবর্তন করা হয়। অত্যাধুনিক জগতে অ্যারেঞ্জার, কম্পোজ়ারের চাপ বেড়েছে। ফলে গীতিকাররা আরও কোণঠাসা হচ্ছেন।
তবে শুধুমাত্র গীতিকারই যে উপেক্ষিত, তা নয়। আগেকার দিনে গানে গায়ক-গায়িকার নামই ঘোষণা করা হত। তবলাবাদক, সারেঙ্গিবাদক, খোল-মৃদঙ্গবাদকের নাম উহ্য থেকে যেত। সলিল চৌধুরী, রাহুল দেব বর্মন প্রমুখের গ্রুপে খ্যাতনামা বাদকদের নাম প্রচার পায় না। গীতিকাররা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন কি?
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।