‘বিধি ও বাম’ (সম্পাদকীয়, ২-৩) প্রসঙ্গে এই পত্র। আব্বাস সিদ্দিকির মতো এক জন ধর্মগুরুকে ব্রিগেডের মঞ্চে তুলে বাম নেতৃত্ব একটি বার্তাই দিতে চেয়েছেন— ক্ষমতায় আসতে গেলে নীতি-আদর্শের চেয়েও মৌলবাদই অধিক গ্রহণযোগ্য, এবং অবশ্যই তা ধর্মীয় মৌলবাদ। আশ্চর্য হয়ে যাই, মাত্র ১০ বছর ক্ষমতায় না থেকেই হতাশাগ্রস্ত? দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের অঙ্গীকার এই ক’বছরেই উধাও?
অতি বড় বামপন্থীও এই অধঃপতনে আহত! বাম নেতারা সাফাই গাইতে বসেছেন, ভোটের রাজনীতিতে নাকি সবই সম্ভব। আসল কথা, ক্ষমতার স্বাদ ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হচ্ছে। একটা ভুলকে আর একটা ভুল দিয়ে আড়াল করতে গেলে ভুলের পাহাড় তৈরি হয়! সেই পাহাড়কে কি অতিক্রম করা সম্ভব? দলের শীর্ষ নেতৃত্বে তো পক্বকেশের সংখ্যা বেশি। বর্ষীয়ান নেতারা এ কোন খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচতে চাইছেন? সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর সমালোচনা যাঁরা এত দিন ধরে করে এলেন, তাঁদের এ সব মানায় কি? মার্ক্স, লেনিনের আদর্শ নিয়ে যাঁরা সমাজমাধ্যম, সংবাদপত্রে লম্বা-চওড়া তাত্ত্বিক আলোচনা করেন, সেই বামপন্থীরা এ বার কী বলবেন? ওরা খারাপ, তাই আমরা খারাপ হলেই বা আপত্তি কিসের— এই তত্ত্বে আস্থা রাখলে বামপন্থার ছদ্ম-পোশাকটা জড়িয়ে লাভ কী? নিজেদের বামপন্থী না বলে এ বার থেকে নিজেদের ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ বলা অভ্যাস করুন নেতারা।
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
ক্ষমতার স্বাদ
সম্পাদকীয় ‘বিধি ও বাম’ (২-৩) প্রসঙ্গে কিছু কথা। রাজনীতিতে ক্ষমতার স্বাদ এক বার যারা পায়, সেই দলের কাছে নীতি-আদর্শ তুচ্ছ হয়ে যায়। ১৯৮৫ সালে কেরলে সিপিএম নেতৃত্ব ইন্ডিয়ান মুসলিম লিগ-এর সঙ্গে জোট ভেঙে দিয়ে বলেছিল, ‘মৌলবাদী’ সংগঠনটির সঙ্গে জোট বাঁধাটা ছিল ঐতিহাসিক ভুল। অর্থাৎ, যখন যেটা সুবিধা, সেই নীতি গ্রহণই সিপিএমের প্রধান লক্ষ্য। পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট-এর সঙ্গে সিপিএমের জোট সেই সুবিধাবাদী নীতিতেই। বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময় যে বাম সমর্থকরা রামের সঙ্গে ভিড়েছিল, এখন বিমানবাবুরা রহিমের সঙ্গে জোট বেঁধে সেই ভোট ফেরাতে চাইছেন। যদিও ওঁরা ভাল ভাবেই জানেন, বামেদের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা নেই। তবুও উদ্দেশ্য ওঁদের একটাই, ভোটের অঙ্কে তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলা। তাতে বিজেপি ক্ষমতা পায় পাক, নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ তো করা যাবে! পরে নাহয় আবার বলে নেওয়া যাবে, আইএসএফ নামক মৌলবাদী দলটিকে জোটে নেওয়াটা ছিল ঐতিহাসিক ভুল।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত
ধাড়সা, হাওড়া
সম্ভাবনা
বামেদের নীতি ও আদর্শের প্রতি অনেকেই শ্রদ্ধাশীল। তাই তাঁদের বিন্দুমাত্র এ দিক-ও দিক হলেই চার দিকে ‘গেল গেল’ রব পড়ে যায়। আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। অর্থাৎ, তারা ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে জোটের শরিক হয়েছে, কোনও ধর্মীয় পতাকার তলে নয়। সমাবেশে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার বদলে তাঁর বক্তব্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী আবেগের প্লাবন লক্ষ করা গেল। দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক ও স্বৈরাচারী বিজেপি এবং তোলাবাজ, দুর্নীতিপরায়ণ তৃণমূলকে শূন্য করে দেওয়ার হুমকি শোনা গেল তাঁর গলায়। আব্বাস রাজনীতির আঙিনায় ফুলের কুঁড়ি মাত্র, তাই তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার সময় বোধ হয় এখনও আসেনি। তিনি তাঁর দলের ‘সেকুলার’ কথাটিকে পূর্ণ মর্যাদা দেবেন, সেটাই আশা করব।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
সাম্প্রদায়িক কে?
‘বিধি ও বাম’ পড়ে পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না। ‘প্রকট সাম্প্রদায়িক সিদ্দিকি’ শব্দগুলি মনে হয় অসাবধানতাবশত লেখা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডের জনজোয়ার অনেকেরই ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ‘সংযুক্ত মোর্চা’-র শক্তি নিয়ে আর কারও সন্দেহ প্রকাশ করার অবকাশ নেই। এটা ঠিক, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট একেবারে ধোয়া তুলসীপাতা নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের যে দু’টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে মিডিয়া বর্তমানে নাচানাচি করছে, তারা কি অসাম্প্রদায়িক? বাংলার একটা বাচ্চা ছেলেও জানে, বিজেপি হিন্দু ভোট আর তৃণমূল মুসলিম ভোটের উপর নির্ভরশীল। তা হলে? মিডিয়া এখন বামেদের সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে। এই জোট আসাদুদ্দিন ওয়েইসির ‘মিম’-এর সঙ্গে হলে বামেদের এই সমালোচনা প্রাপ্য ছিল। কিন্তু তা তাঁরা করেননি। মনে রাখতে হবে, আইএসএফ হিন্দু, তফসিলি জাতি, জনজাতি, অন্যান্য অনগ্ৰসর প্রার্থীদেরও তালিকায় রাখবে। সুতরাং, তাদের উগ্ৰ, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক সংগঠন বলে চিহ্নিত করা ঠিক নয়।
অশোক বসু
বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
মাথাব্যথা কেন
প্রেমাংশু চৌধুরী (‘কার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন’, ৪-৩) বোঝাতে চেয়েছেন, আইএসএফ মুসলিম একটি দল, যে হেতু সেটির প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকি। তাতে ক্ষতিটা কী? না কি তৃণমূল আর বিজেপি এসে বাঙালির মনে মুসলিম-বিদ্বেষের বিষ এমন ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, আইএসএফ-কে সাম্প্রদায়িক মনে হচ্ছে? তৃণমূল আর বিজেপি বাংলার বুকে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করছে, নেতানেত্রীদের কিনছে, তারকাদের দলে ঢোকাচ্ছে। সেই পথে হাঁটেননি সিদ্দিকি। ব্রিগেডের জনসভা থেকে কোনও ধর্মীয় স্লোগান না তুলে কেবল উনি বাংলার প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বললেন, এটাই কি সমস্যা? না কি আইএসএফ-এ জনজাতি, দলিত এবং পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের সংখ্যা বেশি, তাই এত রাগ? আইএসএফ তাদের যে লিফলেট বার করেছে, তার শেষ অনুচ্ছেদে লেখা আছে, “আইএসএফ মূলত গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায়-বিচার, মর্যাদাবোধ, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে।” যে বামফ্রন্ট, তথা সিপিএমকে নিয়ে কেউ মাথাই ঘামাত না গত ১০ বছর, সদস্যসংখ্যা হ্রাস পেয়ে তলানিতে নেমে গিয়েছে বলে যাদের আনন্দ হত, তারাই দেখা যাচ্ছে ব্রিগেডের পর সিপিএমের আদর্শ, নীতি, ৩৪ বছরের ইতিহাস, দর্শন, সব কিছু নিয়েই কাটাছেঁড়া শুরু করে দিয়েছে। কেন এত মাথাব্যথা?
বিতান সানা
বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
ডাঙ্গিকুসুম
ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত ডাঙ্গিকুসুমে চাষবাস তেমন হয় না। এক সময়ে পাথর কেটে গৃহস্থালির নানা জিনিস তৈরি করে প্রায় শ’খানেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। কালচক্রে চাহিদা কমে যায়। তবু এখনও অনেকে পড়ে রয়েছেন জীবিকার টানে।
এখানকার পাথর শিল্পীরা তাঁদের তৈরি জিনিসপত্র নিয়ে প্রতি বছর কলকাতা-সহ নানা জেলার শিল্পমেলায় হাজির হতেন। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও সরকার দিনান্তে হাতে দিত ১২৫ টাকা। তৈরি দ্রব্যের বিক্রীত অর্থ পুরোটাই বাড়ি আনতে পারতেন শিল্পীরা। করোনা পরিস্থিতিতে এ বার কোথাও মেলা হয়নি। জানা গেল, জীবিকার সঙ্কট শুধু নয়, সঙ্কট জীবনেরও। এই কাজ করতে করতে দু’এক জন অসুস্থ, কয়েক জন মারাও গিয়েছেন। পাথরের ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ফুসফুসে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, রোগটার নাম সিলিকোসিস। গ্রামবাসীরা অবশ্য জানেন না, সিলিকোসিস কী। সিলিকোসিস রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা ও পরিবারের আর্থিক সহায়তা করার কথা সরকারের। জানি না, সরকার সে দায়িত্ব গ্রহণ করবে কি না।
সফিয়ার রহমান
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা