Maidul Islam Midya

সম্পাদক সমীপেষু: এই তবে বদল?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে, প্রতিবাদ করাটা গণতন্ত্রে মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৫২
Share:

‘নবান্ন অভিযানে আহতের মৃত্যু’ (১৬-২) যে কোনও শুভচেতনা-সম্পন্ন মানুষকে লজ্জা দেবে। বাঁকুড়ার বাম যুবকর্মী মইদুল ইসলাম মিদ্যা (৩১) যে ভাবে মিছিলে পুলিশের লাঠির ঘায়ে লুটিয়ে পড়েন এবং পরে নার্সিংহোমে মারা যান, তা বর্তমান সরকারের চরম বর্বরতার নজির হয়ে থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে, প্রতিবাদ করাটা গণতন্ত্রে মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। তা হলে তাঁর পুলিশ কী করে এত অমানবিক হয়ে উঠল? তাদের লাঠির আঘাতে একটি তরতাজা যুবককে অকালে চলে যেতে হল কেন? ২০১৩ সালে আর এক বাম ছাত্র, সুদীপ্ত গুপ্তের (২২) মৃত্যু হয় পুলিশি হেফাজতে, যার বিচার আজও হয়নি।

Advertisement

বাম জমানার বর্বরতার নজিরও কম ছিল না। মরিচঝাঁপি, আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের পুড়িয়ে মারা, নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিচালনার মতো বহু ঘটনা এই বাংলা এখনও ভোলেনি। মানুষ এর পরিবর্তন চেয়ে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বদলা নয়, বদল চাই’। আজকের প্রশাসনের এই নৃশংসতা ও রাজনৈতিক খুন কি সে সব দিনের ‘বদল’-এর প্রতিচ্ছবি? মনে হচ্ছে, বামেরা প্রশাসনিক ঔদ্ধত্য যেখানে শেষ করেছিল, বর্তমান সরকার সেখান থেকে তাকে নতুন ভাবে অনুকরণ করছে।

শাসক দলের অনেক নেতা ও মন্ত্রীরা বলেছেন যে, বামেদের নবান্ন অভিযান নাকি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ছিল না। রাস্তা বন্ধ করে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুড়েছেন আন্দোলনকারীরা। গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ কখনও সহিংস হতে পারে না, এ বিষয়ে আমি একমত। কিন্তু যে দিন শান্তিপূর্ণ কৃষক আন্দোলনের নামে দিল্লিতে লালকেল্লা দখল করে ভাঙচুর চালানো হয়, রাস্তাঘাট বন্ধ করে পুলিশের উপর ইটবৃষ্টি হয়, সে দিন তো তৃণমূল নেতারাই একে মহৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তবে আজ কেন বামেদের অভিযানকে তাঁরা অগণতান্ত্রিক বলছেন?

Advertisement

মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১

আর বাঁচবনি

পুলিশের নির্মম অত্যাচারে বাঁকুড়ার কোতুলপুরের টোটোচালক ডিওয়াইএফআই কর্মী মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যুতে তীব্র ধিক্কার জানাই। এই তরুণরা তো চোর-জোচ্চোর, গুন্ডা নন। কর্মসংস্থানের দাবিতে তাঁরা গণ-আন্দোলন করছিলেন। তাঁদের চার পাশে ব্যারিকেড করে চক্রব্যূহে ফেলে জলকামান, টিয়ার গ্যাস, লাঠিপেটা করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো হল কেন? পুলিশের এই বর্বরোচিত কাজের নিন্দা জানানোর জন্য কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয়।

আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড পুলিশি অত্যাচারে মৃত্যুর সময় বলেছিলেন, “আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না।” ঠিক একই ভাবে সহযোদ্ধারা যখন তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন, মইদুলের করুণ আর্তনাদ শোনা গেল, “আমি আর বাঁচবনি।” জর্জের মৃত্যুতে আমেরিকায় তীব্র প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছিল। পুলিশের উপরও আক্রমণ হয়েছিল। অথচ, এই ক্ষেত্রে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা চুপ! ২০১৩ সালে ছাত্র আন্দোলনে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যু হয় পুলিশি হেফাজতে। আবার মইদুলদের সঙ্গে আন্দোলনরত মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বিড়ি শ্রমিক দীপক পাঁজার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আশঙ্কা হয়, কোনও খারাপ পরিণতি হয়নি তো?

এই সমস্ত শ্রমজীবী মানুষের অপরাধ কী ছিল? তাঁরা একটু ভাল ভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন। তাঁদের বাঁচাটাই শেষ করে দিল অত্যাচারী শাসকের পুলিশ! অথচ, কারণে-অকারণে আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর শাসনকালে এই তরুণ খুনের রাজনীতি মেনে নেওয়া যায় না।

শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

্যাফ কেন?

সরকারের কাছে কাজ চাইতে গিয়ে খুন হয়ে গেলেন নিরীহ নাগরিক মইদুল ইসলাম মিদ্যা। আন্দোলনকারীদের হাতে কোনও হাতিয়ার ছিল না, তবু এমন নিষ্ঠুর প্রহার! গণতন্ত্রে ভাবা যায় না। টিভির বিভিন্ন চ্যানেল দেখে যা মনে হয়েছে, জংলা ছাপ দেওয়া পোশাক-পরা র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র‌্যাফ) এই নিষ্ঠুর কাজটি করেছে। এই রকম একটা নিরীহ মিছিলে র‌্যাফ আনল কে? বড় বড় লাঠি নিয়ে মিছিলকারীদের লাঠিপেটা করে শুইয়ে দিচ্ছে, গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে লাঠি চার্জ হচ্ছে— এই রকম নির্দেশই ছিল কি উচ্চমহল থেকে? এদের শাস্তি হোক। ধিক্কার জানাই এই হত্যাকাণ্ডের।

সঞ্জয় চৌধুরী, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

পদ্ধতি

‘নবান্ন অভিযানে আহতের মৃত্যু’ শীর্ষক সংবাদে দেখলাম, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বামপন্থীদের এই আন্দোলনকে তিনি ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ বলে মনে করেন না। তা হলে ক্ষমতায় আসার আগে তৃণমূলের বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনা কি গণতান্ত্রিক উপায়ে হয়েছিল?

পার্থসারথী মণ্ডল, কৃষ্ণনগর, নদিয়া

যূপকাষ্ঠে

মইদুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে হইচই থিতিয়ে যাবে। ভোটে একটা বিষয় হবে নিশ্চয়ই মইদুলের এই মৃত্যু। কিন্তু তার পর? তাঁর পরিবার, সন্তানদের দায়িত্ব কে নেবে? আগেও যাঁরা রাজনৈতিক কারণে বলিপ্রদত্ত হয়েছিলেন, কেউ কি জানে তাঁদের পরিবার কেমন আছে! সব দল বোধ হয় লাশ খোঁজে। কারণ, রাজনীতিতে জীবিত মানুষের চেয়ে মৃত মানুষের মূল্য বেশি। নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের মৃতদেহ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। বিজেপিও গড়গড় করে বলে দেয় তাদের কত জন কর্মী শাসক দলের হাতে খুন হয়েছেন! গণতন্ত্রের উৎসবে কি নরবলি বাধ্যতামূলক?

শক্তিব্রত ভট্টাচার্য, কলকাতা-৮৪

জীবনের দাম

‘একটি প্রাণের মূল্য’ (১৭-২) এবং ‘অরক্ষিত’ (১৮-২) শীর্ষক সম্পাদকীয় দু’টি জরুরি। মানুষের অপমৃত্যু কি শাসকের লজ্জা নয়? ১৯৯৩-র ২১ জুলাই পুলিশের গুলিতে ১৩ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু অত্যন্ত পীড়াদায়ক। ২৮ বছর পরও একই ঘটনা অব্যাহত। তা হলে কিসের পরিবর্তন? রাজ্যে এত শ্রমিকের সুরক্ষাহীনতার কারণে মৃত্যু হচ্ছে কেন, তার উত্তর আছে? প্রত্যেক নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া সরকারের কর্তব্য। আসন্ন নির্বাচনে জীবনের দাম ও সুরক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মৃতের পরিবারকে চাকরি বা আর্থিক সাহায্য রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার বিষয় হওয়া উচিত, গর্বের নয়।

সুমন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫

দেরি হল

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বার আসরে নেমেছে ‘ডিম ভাত’ নিয়ে (ভাত-ডাল, সব্জি-ডিম)। এক প্লেট ৫ টাকা। কিন্তু এত দেরি করে কেন? লকডাউনে প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। শ্রমিকরা প্রাপ্য বেতন না পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। ছোট-বড় অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন অনেক নাগরিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাধারণ মানুষের জন্য অতি অল্প মূল্যে খাবারের আয়োজন করেছিলেন। বামপন্থীদের দলীয় উদ্যোগে যাদবপুরের শ্রমিক ক্যান্টিনের কথা সবাই জানি। এখন অনেকেই চাকরিতে ফিরে গিয়েছেন। ব্যবসাও খুলেছে। তবে এখন কেন?

শবরী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৩

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement