“ব্রিগেডের ডাকে সিপিএমের ‘টুম্পা’” (২১-২) সংবাদটির পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। সিপিএম ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডের জনসভায় মাঠ ভরাতে একটি চটুল গানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছে। তাতে দোষটা কোথায়? ‘টুম্পা সোনা, ব্রিগেডে চল না’ প্যারডি কি অপসংস্কৃতির মধ্যে পড়ছে? এতে এত হইচই, বিতর্কের কী আছে? এক ডাকে মাঠ ভরানোর মতো নেতা আর কোথায়? সুভাষ চক্রবর্তী নেই। শমীক লাহিড়ি, গৌতম দেব, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ আর সে জায়গায় নেই। অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছাড়া অন্য যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও মানুষের মনে উন্মাদনা জাগানোর মতো নন। তাই দলের আজ এই করুণ দশা। নির্বাচনে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চিরশত্রু কংগ্রেসের হাত ধরেছে। মান-সম্মান, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সদ্যোজাত আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট গড়তে চলেছে।
কোথায় গেল গণনাট্যের ‘ঢেউ উঠছে, কারা টুটছে’, কিংবা ‘শহিদের খুনে রাঙা পথে দেখো, হায়নার আনাগোনা’-র মতো রক্ত গরম করা গণসঙ্গীত? আজ সব অতীত। আজ ব্রিগেড ভরাতে গিয়ে সমাজমাধ্যমে ‘টুম্পা সোনা’-র শরণাপন্ন হতে হয়েছে। গণসঙ্গীতের বিকল্প হিসেবে তা উপস্থাপনা করে চলেছে দল। এতে দোষের কিছু না থাকলেও, কমিউনিস্ট দলের কাছে বড্ড বেমানান, দেউলিয়াপনার পরিচায়ক।
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
আপেক্ষিক
এক শ্রেণির মানুষ মনে করেন, জনপ্রিয়তা পেলেই তা অপসংস্কৃতি। কিছু দিন আগে মনীষীর জন্মদিনে চিত্রতারকার যোগদান, বা তারও আগে হোপ ’৮৬ নিয়েও কম কথা ওঠেনি। একই শিল্পীর গানকে কেউ বলেছেন অপসংস্কৃতি, কেউ প্রশংসা করেছেন। এক জনের যা মনে হয় গ্রহণীয়, অন্যের কাছে সেটাই বর্জনীয়। সাধারণ মানুষের কাছে গুরুগম্ভীর বিষয়ের ভাষণ-প্রবচন বিরক্তিকর মনে হতে পারে। তাই অপেক্ষাকৃত হালকা বিষয়ের মিশ্রণ বিষয়টি একঘেয়ে করে তোলার হাত থেকে বাঁচায়।
এক শ্রেণি মনে করেন, মানুষ যা চাইছে, তা আসলে প্রবৃত্তির বশে। তা দিলে সমাজ উচ্ছন্নে যাবে। বরং, মানুষের যা চাওয়া উচিত, তা-ই পরিবেশিত হওয়া ভাল। শ্লীল-অশ্লীল, উচিত-অনুচিত বিচার— সবই আপেক্ষিক আর তাৎক্ষণিক। লোক টানার জন্য আজকাল বিচিত্র বিজ্ঞাপন ব্যবহৃত হচ্ছে। শপিং মলের সামনে ক্লাউনের কেরামতি যেমন। উদ্দেশ্য মন্দ নয়, পন্থাও সৎ। আপত্তি কোথায়? নতুন যৌবনের দূত চঞ্চল আর অদ্ভুতই হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে শ্রদ্ধা বাসর, বিয়ের আসর, রাজনৈতিক সভা— নানা উপলক্ষে নানা ধরনের গানের চল আছে। আজকের দিনে সংস্কৃতির খোলা হাওয়াও পরিবর্তনের সঙ্গে থাকুক।
রঘুনাথ প্রামাণিক, কালীনগর, হাওড়া
আস্থার সঙ্কট
সুস্থ সংস্কৃতি নির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা কোনও অংশে কম নয়। কিন্তু এখন সময় বদলেছে, এসেছে ‘ডিজে সংস্কৃতি’। ‘খেলা হবে’-র মতো শব্দবন্ধকে ডিজে গানের তালে প্রয়োগ করে অদ্ভুত সব চটুল নাচের শব্দঝঙ্কার তৈরি হচ্ছে। বিরোধী, শাসক— কোনও দলই এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। আবার কেউ ‘টুম্পা সোনা’-র মতো চটুল ডিজে গানের প্যারডি করে বিপক্ষ দলকে আক্রমণ করে নিজেদের প্রচার করছে। সমর্থকদের মধ্যে প্রবল উন্মাদনা তৈরি হচ্ছে, যেন এটা বিনোদন। রাজনীতির মধ্যে অনেকটাই আবেগ রয়েছে। এই আবেগ ধরতে পারলে নেতাদের লাভ।
প্রশ্ন উঠতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলো কেন এই ডিজে সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে? কারণটা একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে। তাঁরা ধরে নিয়েছেন, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি মানুষ বিশ্বাস করছে না। তাই এমন কিছু করতে হবে, যাতে মানুষ মেতে ওঠে। কিছু দিন ধরে দেখছি, কোনও নেতা বা অভিনেতা আলটপকা একটা কথা বলে দিলেন। তার পর মিডিয়া, সমাজমাধ্যমে তা ভাইরাল হয়ে উঠছে। সেটা অবশ্যই কোনও অশ্লীল, যুক্তিহীন কথা হতে হবে। তবেই না চমক! সেই ‘নেগেটিভ পাবলিসিটি’-কে হাতিয়ার করে তাঁরা মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেন। এই নকশাতেই ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধ বা ‘টুম্পা সোনা’ গানকে ডিজে বক্সের মাধ্যমে প্রচার করতে হচ্ছে। এই পথ রাজনৈতিক দীনতার পরিচয়।
সরোজ মণ্ডল, তালডাংরা, বাঁকুড়া
বেমানান
‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘খেলা হবে’ স্লোগান দু’টি রাজ্য রাজনীতিতে অনেক আগেই ভাইরাল হয়েছে। তাতে নতুন মাত্রা দিল ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারে বামেদের ‘টুম্পা সোনা’ গানটির প্যারডি। যা সিপিএমের মতো আদর্শবান রাজনৈতিক দলের পক্ষে বড্ডই বেমানান। গত কয়েক বছর ধরে বিজেপির রাজ্যনেতাদের মুখে অকথা, কুকথা শুনে রাজ্যবাসী বিরক্ত। অনুরূপে, বিরোধী দলের প্রতি তৃণমূল নেতাদের ‘তুই-তোকারি’-ও রাজ্যবাসীর মনে গভীর বেদনার সঞ্চার করেছে। সেই দিক থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন বামেরা। কিন্তু ব্রিগেডের প্রচারে ‘টুম্পা সোনা’ গানটির শব্দ ব্যবহার করে বামেরা বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরাও অপসংস্কৃতিতে কম যান না।
সেক ইমরান, গোলকুঁয়াচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
অভিব্যক্তি
অতীতে সিপিএম নেতা বিনয় কোঙার কিংবা অনিল বসুর বক্তৃতা কর্মী-সমর্থকদের হাততালি কুড়োলেও, ভদ্রলোক মহলে তার প্রবল সমালোচনা গড়ে উঠেছিল। জ্যোতিবাবুর আমলে ঊষা উত্থুপের গান নিয়েও বিতর্কের ঝড় ছিল। আরও দু’-একটি ঘটনা স্মরণ করা যায়। ‘গতর’ শব্দ ব্যবহারের জন্য কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় পার্টি নেতৃত্বের কোপে পড়েন। সমরেশ বসুর বিবর উপন্যাসকে অশ্লীল বলেছিলেন সে দিনের তাবড় কমিউনিস্ট নেতারা। পরে আমরা জেনেছি, বিবর একটি ক্লাসিক উপন্যাস।
রাহুল পালের রচনায় এবং নীলাব্জ নিয়োগীর কণ্ঠ ও যন্ত্রানুষঙ্গে পরিবেশিত গান প্রসঙ্গে আসা যাক। প্যারডিটি একটি চটুল গানের সুরে এবং আদলে নির্মিত। গানে ‘মাল’, ‘ভোগে যাবে’ ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার রক্ষণশীল ভদ্রলোক সমাজ বরদাস্ত করবে না, বলা বাহুল্য। স্ল্যাং যে বাংলা ভাষার সম্পদ, তা রক্ষণশীলদের কে বোঝাবে? আর প্রাকৃতজনের ভাষা মার্জিত না হলেও তাতে প্রাণের অভিব্যক্তিই ফুটে ওঠে! ‘আনকালচার্ড’ জনসমাজের কাছে পৌঁছতে হলে তাদের ভাষাকেই অবলম্বন করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সত্য অনুধাবন করেছিলেন। অ-সংস্কৃতিমানদের ভাষা ব্যবহার করেই তিনি জনপ্রিয়তা অর্জনে সফল হন। মার্ক্সবাদীদের তা রুচিতে বাধে। তবে সিপিএম-এর রক্ষণশীল নেতারা ‘টুম্পা সোনা’-র প্যারডি নিয়ে এ বার কোনও আপত্তি তোলেননি। দেরিতে হলেও বাম নেতাদের কি তবে বোধোদয় ঘটেছে?
শিবাশিস দত্ত, কলকাতা-৮৪
সুশান্ত
গত বছর ১৪ জুন মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে তরুণ বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তার পর কেটে গিয়েছে আট মাসেরও বেশি। কিন্তু আত্মহত্যা না খুন, সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। বিহার বিধানসভা ভোটের আবহে রাজপুত ভোট টানার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিল তৎকালীন শাসক-বিরোধী উভয় শিবির। সিবিআই, এনসিবি, ইডি, তদন্তে নেমেছিল। কিন্তু ভোট মিটতেই রাজনৈতিক নেতা থেকে সংবাদমাধ্যম— সুশান্ত নিয়ে সকলে নীরব।
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা