frauds

সম্পাদক সমীপেষু: সুরক্ষা দেবে কে

বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র প্রচার যে ভাবে করা হচ্ছে, তাতে সবাইকে শামিল হতে হচ্ছে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৪:৫৮
Share:

প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ নিরীহ মানুষ। প্রতীকী ছবি।

তূর্য বাইনের লেখা ‘জালিয়াতির ফাঁদ পাতা ভুবনে’ (১-৩) পড়ে শিউরে উঠতে হয়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র প্রচার যে ভাবে করা হচ্ছে, তাতে সবাইকে শামিল হতে হচ্ছে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতারণাও বেড়ে চলেছে। প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ নিরীহ মানুষ। নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে প্রতারকরা, আর নিত্যনতুন পদ্ধতিতে প্রতারিত হচ্ছি আমরা। এই প্রসঙ্গে আমার কিছু প্রশ্ন আছে।

Advertisement

প্রথমত, আমরা প্রায় প্রতি দিনই নানা রকম ফোন পাই বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যাঙ্কের নাম করে। সেই ফোন আসে কোথা থেকে? আমাদের নম্বর তারা জানতে পারছে কোথা থেকে? শুনেছিলাম এই ফোন নম্বর প্রচুর দামে বিক্রি হয়। এই বিক্রি তা হলে কি ফোন কোম্পানি থেকে হয়? প্রশাসনিক বা সরকারি স্তরে এর কী ব্যবস্থা করা হয়?

দ্বিতীয়ত, এই প্রবন্ধ থেকে জানতে পারলাম, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে আবেদন করার সময় যে নথির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি এই সব জালিয়াতিতে সাহায্য করে থাকতে পারে। তা হলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আর এই নিরাপত্তা রক্ষার ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা কী?

Advertisement

তৃতীয়ত, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় কোনও ব্যক্তিকে ব্যাঙ্কে উপস্থিত হতে হয়‌। তদুপরি প্রমাণ কার্ডে স্বাক্ষর থাকে। তা হলে প্রবন্ধে উল্লিখিত ব্যবসায়ীর টাকা খোয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের নথির স্বাক্ষর মেলানো হল না কেন? আধার, ভোটার কিংবা প্যান কার্ডে ছবি থাকে। উপস্থিত ব্যক্তি আর অ্যাকাউন্ট খোলা ব্যক্তি এক হল না কেন— এই অনুসন্ধান করা উচিত ছিল ব্যাঙ্ক কর্মীর।

আশা করি, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার এই ব্যাপারে নজর দিয়ে আমাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে এবং এই চক্রের অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে। সবশেষে, প্রতিবেদকের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করি যে, সবচেয়ে বেশি জরুরি নাগরিকের আত্মসচেতনতা।

তমাল মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি, হুগলি

ঐক্যের বার্তা

জ়াদ মাহ্‌মুদ ও অমিতাভ গুপ্তের লেখা ‘বিকল্প রাজনীতির সন্ধানে’ (১-৩) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ১৪৬ দিনব্যাপী রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা জাতীয় রাজনীতিতে বিভাজনের বিরুদ্ধে ঐক্যের বার্তা দিয়ে শেষ হল। এই যাত্রা বর্তমান ভারতের সময়ের দাবি। অতীতে আমরা অনেক হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীর রথযাত্রা ও তার ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখেছি। ভারত জোড়ো যাত্রা ঠিক তার বিপরীত। যে ভাবে নানা ভাষা নানা মতের দেশে এক ভাষা এক দেশ এক নেতার আদর্শকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, মানুষের সুস্থ চিন্তা ও মনকে বিপথে চালিত করা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বেকারদের কাজের দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে এই যাত্রা যত এগিয়েছে, ততই শাসকের চিন্তার কারণ হয়েছে। সেই কারণে দেশের বেশির ভাগ মিডিয়া মূল বিষয় নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে রাহুল গান্ধীর টি-শার্ট নিয়ে বেশি আলোচনা করেছে। সমাজমাধ্যমের দৌলতে এই ভারত জোড়ো যাত্রা যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রবন্ধে সঠিক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই জনপ্রিয়তাকে ব্যালট বক্সের সাফল্যে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা। আগামী দিনে এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে, বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত করে কংগ্রেস কতটা সফল হবে, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু এই ভারত জোড়ো যাত্রা অস্বাস্থ্যকর বিভাজনমূলক রাজনীতির বিপরীতে নিঃসন্দেহে একটা বিকল্প রাজনীতির সন্ধান দিয়ে গেল।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

মেধার বিচার

‘সিভিক থেকে পুলিশ, কথা উঠতেই প্রশ্ন বিরোধীদের’ (২৮-২) খবরটি চিন্তায় ফেলেছে। রাজ্য হোক বা কেন্দ্র, প্রতিটির ক্ষেত্রে একটি ঘোষিত নিয়োগ নীতি আছে, যার মধ্যে দিয়েই সব রকমের নিয়োগ হয় সরকারি দফতরে, সে পিয়ন থেকে দফতরের অধিকর্তা, এমনকি সচিব-মুখ্যসচিব অবধি। এ সব যাঁরা করে গেছেন, তাঁরা সরকারি কাজে বুদ্ধিবেত্তার সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতারও পরীক্ষা পর্যায়টি রেখেছেন। উক্ত খবরটি পড়ে মনে হল, সরকারি উদ্যোগে যাঁদের সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে ভোটকেন্দ্রিক নিয়োগ হয়েছিল, যার বেশির ভাগটা প্রতি শাসক দল নিজের দলের অনুগামীদের দিয়েই ভরায়, তাঁদের কী ভাবে পুলিশের চাকরিতে বহাল করা যায় বা উন্নীত করা যায়, তার পথ বার করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সামনে ভোটের দামামা বেজেছে, তাই এটি একটি উদ্যোগ সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাতে রাখার, জনান্তিকে এ সব আলোচনা চলছে। পুলিশের কনস্টেবল পদটি তার মতো করে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদেরও বিবেক, উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগে। এ সব কিছুর জন্য পুলিশি নিয়োগ ব্যবস্থা যেমন নির্দিষ্ট আছে পুলিশ বাহিনীর স্বার্থে, ততটাই জনগণের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে।

তবে যাঁরা এত দিন সরকারি কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদেরও পদোন্নতির প্রয়োজন। এটিও একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্য দিয়ে হয়ে এসেছে, সে ভাবেই হোক। নইলে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নিয়োগ-আয়োগগুলি প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব থাকবে না। পাইয়ে না দিয়ে যোগ্যদের পদোন্নতি হোক বা মেধা যাচাই হোক, শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিয়ে ওঁরা আসুন, এতে প্রশাসনিক কাঠামো যেমন মজবুত হবে, তেমনই নিয়োগ-শৃঙ্খলা বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। দলীয় ক্যাডার নিয়োগের যে সহজ সস্তা পথ রাজনৈতিক দলগুলো নেয়, তা আদতে রাজ্য বা কেন্দ্রের প্রশাসনিক পরিকাঠামোকে দুর্বল করে দেয়। মেধাবী কত ছেলেমেয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থী হয়ে যোগ্যতার মাপকাঠি পেরিয়ে বছর দুয়েক ধরে কলকাতার পথে বসে দিনরাত এক করছেন, মার খাচ্ছেন পুলিশ ও ভাগ্যের, তাঁদের দিকে না তাকিয়ে, তাঁদের মেধার যথোচিত মর্যাদা না দিয়ে সিভিক থেকে পুলিশে উন্নতি, কেমন যেন শোনায়! দেশটাকে মেধা দিয়ে চালালে সত্যিকারের উন্নয়ন আসবে, নইলে উন্নয়ন পথেই দাঁড়িয়ে পড়বে, এগোবে না। প্রশাসনিক শুভবুদ্ধির উদয় হোক, একটা ধারাবাহিক নিয়োগ পদ্ধতির দরজা নিয়মিত খুলে যাক শিক্ষিত মেধাবী যুবক-যুবতীর সামনে।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

স্বপ্নভঙ্গ

এ বারও হল না স্বপ্নপূরণ। কাটল না দীর্ঘ ৩৩ বছরের খরা। রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে ঘরের মাঠে সৌরাষ্ট্রের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করল বাংলা ক্রিকেট দল। গোটা মরসুমে ভাল খেলেও তীরে এসে ডুবল ‘লক্ষ্মী-মনোজ’ তরী। বছর তিনেক আগে ২০১৯-২০ মরসুমের রঞ্জি ফাইনালে এই সৌরাষ্ট্রের কাছে হেরেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল মনোজ, অনুষ্টুপ, শাহবাজদের। প্রতিশোধ নেওয়া তো দূর অস্ত্, এ বারও ইডেনে ঘটল সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। ফাইনালে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগের ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে বাংলাকে। তিন দশকের অপেক্ষার সলিলসমাধি হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন দিনে। বলা বাহুল্য, বার বার ওপেনিং কম্বিনেশন নিয়ে কাটাছেঁড়া করাটা যেমন টিমের ভারসাম্য নষ্ট করেছে, ঠিক তেমনই প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। তবে বাংলার যে দুই লড়াকু সৈনিকের কথা উল্লেখ না করলেই নয়, তাঁরা হলেন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি এবং সিনিয়র ব্যাটার অনুষ্টুপ মজুমদার। কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসেও বাংলাকে রঞ্জি জেতানোর যে তাগিদটা তাঁরা দেখিয়েছেন, তা দীর্ঘ দিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁদের মতো তাগিদটা বাকিরা দেখাতে পারলে হয়তো আজকের দিনটা দেখতে হত না!

সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement