বিষাণ সিংহ বেদী। —ফাইল চিত্র।
নবমী নিশিতে চলে গেলেন দেশের প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনার বিষাণ সিংহ বেদী। তাঁর মসৃণ বোলিং অ্যাকশন দেখে বন্ধু ইন্তিখাব আলমের মন্তব্য ছিল, “এ যে গালিবের কবিতা!” ষাট-সত্তরের দশকে ভারতের স্পিনারদের স্বর্ণযুগের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন বেদী। স্পষ্টবক্তা হওয়ার কারণে মাঠ ও মাঠের বাইরে বিতর্ক তাড়া করে বেড়িয়েছে তাঁকে। ১৪ বলে ২৩ রান দরকার, হাতে আট উইকেট। এমতাবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বী পাক বোলার সরফরাজ় নওয়াজ়ের পর পর চারটে বাউন্সার ডেলিভারি আম্পায়ার ওয়াইড না ডাকায় ক্ষুব্ধ অধিনায়ক বেদী দল তুলে নেন। ঘটনাটি ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বরের, সফরের শেষ এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের। এতে ২-১’এ সিরিজ় জিতে নিতে পাকিস্তানের অসুবিধা হয়নি। পরিণামের পরোয়া না করে প্রতিবাদে অবিচল ছিলেন বেদী। আজকের আইসিসি-র নিয়মানুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির বাউন্সার থেকে দলের খেলোয়াড়দের রক্ষা করার জন্য এক টেস্টের দুই ইনিংস ডিক্লেয়ার করার বিরল নজির রয়েছে তাঁর।
অবসরের পরও তিনি সমান ঠোঁটকাটা। মুথাইয়া মুরলীধরন তাঁর চোখে ছিলেন ‘চাকার’, হরভজন সিংহ-কেও তিনি কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। সচিনকে ঠেকানোর টিপস দিয়েছিলেন সফররত অস্ট্রেলীয় বোলার শেন ওয়ার্ন-কে। ফিরোজ় শাহ কোটলা মাঠে প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি-র মূর্তি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেও দ্বিধা করেননি বেদী।
মাঠ থেকে হোটেলে ফিরে টিভিতে এক জন মুমূর্ষু বালকের জীবন রক্ষার্থে ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের আবেদন দেখে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে গিয়ে রক্তদান করে এসেছিলেন বেদী। পর দিন খবরটা জানাজানি হওয়ায় করাচি মাঠে তিনি পা রাখামাত্র উপস্থিত দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানায়। কলেজে পড়াকালীন এ রাজ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ অধ্যাপক ডি রায়ের ভাষণে এই কথা শুনে ফি বছর ছাত্ররা রোমাঞ্চিত বোধ করত, রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হত। এ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের হল অব ফেম-এ বিষাণ সিংহ বেদীর স্থান পাকা।
সরিৎশেখর দাস, কলকাতা-১২২
কিংবদন্তি
চলে গেলেন কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার বিষাণ সিংহ বেদী। তখনও এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রমরমা শুরু হয়নি। শুরু হয়নি জনপ্রিয় টি২০ ক্রিকেট। টেস্ট এবং সফরকারী দলের সঙ্গে কিছু তিন দিনের ক্রিকেট ম্যাচই ছিল প্রধান আকর্ষণ। বিশ্ব ক্রিকেটে তখন ফাস্ট বোলারদের আধিপত্য। ওই সব ভয়ঙ্কর বোলারের বিরুদ্ধে ব্যাট করা ছিল ভারতীয় ব্যাটারদের কাছে বিভীষিকা!
সেই তুলনায় ভারতের পেস অ্যাটাক ছিল খুবই সাধারণ মানের। তাঁদের উপর অধিনায়কের ভরসা ছিল না। দু’-চার ওভার পেস বোলারদের হাত ঘোরানোর পরই বল দেওয়া হত স্পিনারদের হাতে। তখন ভারতের চার জন বিশ্বমানের স্পিনার ছিলেন। তাঁদের অন্যতম এই বাঁ-হাতি অর্থোডক্স বোলার বিষাণ সিংহ বেদী। বাকি তিন জন ভগবত চন্দ্রশেখর, এরাপল্লি প্রসন্ন এবং বেঙ্কটরাঘবন। এঁদের মধ্যে তিন জন দলে অবশ্যম্ভাবী ছিল। এবং বেদী ছিলেন স্বাভাবিক পছন্দ।
ভারতীয় ক্রিকেটে কপিল দেবের উত্থানে বিশ্ব ক্রিকেটে ভারত এক জন আন্তর্জাতিক মানের পেস বোলার পেয়েছিল। তার আগে পর্যন্ত ভারতের হার-জিত— সবই নির্ভর করত ভারতের চার তারকা স্পিনারের উপর। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৯— দীর্ঘ বারো বছর বেদী দেশের হয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তিনি দেশের হয়ে ৬৭টি টেস্ট ক্রিকেটে ২৬৬টি উইকেট নিয়েছেন। তাঁর অবসর গ্রহণের সময় এটাই ছিল কোনও ভারতীয় বোলারের সর্বাধিক উইকেট শিকার। খেলোয়াড় জীবনে তিনি যেমন দেশের অধিনায়কত্ব করেছেন, তেমনই অবসরের পরে ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন।
তাঁর ক্রিকেট জীবনে বিতর্ক কম হয়নি। বেদী ছিলেন বর্ণময় চরিত্রের অধিকারী। তিনি যেমন কঠোর চরিত্রের মানুষ ছিলেন, তেমনই ছিলেন স্নেহশীল, কখনও ঠোঁটকাটা, কখনও বা শান্ত। বিষাণ সিংহ বেদী তাঁর ক্রিকেট জীবনে নানা সময়ে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। যেমন, ১৯৭৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সফরের চতুর্থ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় বোলারদের একের পর এক ‘বিমার’ বর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং ভারতের দু’জন খেলোয়াড় আহত হলে প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের পাঁচ জন ব্যাট করতে নামতেই পারেননি। ১৯৭৬-১৯৭৭ সালের ইংল্যান্ডের ভারত সফরে ইংল্যান্ডের বোলার জন লিভারের অনৈতিক ভাবে বলে ভেসলিন লাগিয়ে পালিশ করার চেষ্টার বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছিলেন অকুতোভয় বেদী। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই ভারতীয় ক্রিকেটের স্পিনের স্বর্ণযুগের ‘স্পিন চতুর্ভুজ’-এর এক নক্ষত্রের পতন হল।
জয়ন্ত কুমার দেবনাথ, রানাঘাট, নদিয়া
প্রসারের সুযোগ
‘অলিম্পিক্সেও এ বার দেখা যাবে বিরাটদের বিক্রম’ (১৭-১০) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। অবশেষে ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে পুরুষ এবং মহিলাদের টি২০ ক্রিকেটকে অন্তর্ভুক্ত করার বাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসি।
আধুনিক অলিম্পিক্সে ক্রিকেটকে যুক্ত করার ফলে অদূর ভবিষ্যতে ক্রিকেট বিশ্বের সর্বত্র আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, এমনটাই আশা করা যায়। বর্তমানে কয়েকটি দেশে এই খেলা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে আইসিসি এবং বিসিসিআই-এর প্রাক্তন সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া ক্রিকেটকে আরও জনপ্রিয় করার জন্য আন্তরিক ভাবে সচেষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশ এবং ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ছাড়া খুব বেশি দেশে এটি এখনও পর্যন্ত জনপ্ৰিয় হয়নি।
এই অবস্থায় ‘গ্রেটেস্ট শো অন দি আর্থ’ অলিম্পিক্সে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিশ্বের সর্বত্র এর প্রসার হতে পারে অনায়াসে। প্রসঙ্গত, অলিম্পিক্সে এক বারই ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯০০ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অলিম্পিক্সে গ্রেট ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মধ্যে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই খেলায় গ্রেট ব্রিটেন প্রথমে ব্যাট করে ২৬২ রান তোলে। এর জবাবে ফ্রান্স দল মাত্র ১০৪ রান করে আউট হয়ে যায়। অলিম্পিক্সের কোনও পরিসংখ্যানেই এই খেলা ঠিক কত ওভারের হয়েছিল, তার বিশদ তথ্য নেই। এর পরের কোনও অলিম্পিক্সেই আর ক্রিকেট খেলা হয়নি।
আইসিসি ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পক্সে ক্রিকেট খেলাকে অন্তর্ভুক্ত করায় সবচেয়ে খুশি হবেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। ভারতের পুরুষ এবং মহিলা ক্রিকেট দলের পক্ষে দু’টি পদক জয়ের সম্ভাবনাও থাকবে এই ইভেন্টে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
তুষার ভট্টাচাৰ্য, কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ
বয়স্কদের আসন
বাসে, লোকাল ট্রেনে বয়স্কদের জন্য আরও পর্যাপ্ত সংখ্যক বসার জায়গার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন! অধিকাংশ বাসেই মাত্র দু’টি আসন প্রবীণ মানুষদের জন্য বরাদ্দ থাকে। লোকাল ট্রেনে তো বয়স্কদের বসার জায়গার আলাদা কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয় না, দায়সারা গোছের হালকা করে তাঁদের নির্দিষ্ট আসনটির উপর লেখা থাকে, সে লেখা ভাল করে পড়া যায় না! লোকাল ট্রেনের প্রতিটি কামরায় অন্তত চারটি করে আসন বরাদ্দ করা দরকার। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিশ্বজিৎ কর, গড়িয়া, কলকাতা