ছবি: সংগৃহীত
নির্মলা সীতারামন বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, গঙ্গাকে দূষণমুক্ত ও পুনরুজ্জীবিত করতে বাজেটে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১২৭ শতাংশ বৃদ্ধি। ২০১৯-২০’তে বরাদ্দ ৭৫০ কোটি টাকা ঘোষণা হলেও, বাস্তবে রিভাইজ়ড এস্টিমেটে তা কমে দাঁড়ায় ২০১৮-১৯’এ বরাদ্দ ৬৮৭ কোটির থেকেও কম। অন্য দিকে ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮’তে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ২৫০০ কোটি ও ২৩০০ কোটি। দেখা যাচ্ছে, গঙ্গার দূষণের মাত্রা যতই বাড়ছে, বাজেটে বরাদ্দ ততই কমে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পরিবেশ বিজ্ঞানী, আইআইটি, নদী বিশেষজ্ঞ, সবার পরামর্শ উপেক্ষা করেই চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
নন্দগোপাল পাত্র
সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
নগেন্দ্রপ্রসাদ
‘সামনে এলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ’ (আনন্দ প্লাস, ৫-২) শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘উনি জমিদার বাড়ির ছেলে ছিলেন।’’ নগেন্দ্রপ্রসাদ জমিদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেননি, তবে তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগৎ আলোকিত করা একটি বিখ্যাত পরিবারের সন্তান। তাঁর জ্যাঠামশায় হলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অভিন্নহৃদয় বন্ধু প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ, বহরমপুর কলেজের অধ্যক্ষ, প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক, প্রেসিডেন্সি বিভাগের কলেজ সমূহের পরিদর্শক প্রভৃতি পদ তিনি অলঙ্কৃত করেও ব্রিটিশ সরকারের কাছে কোনও দিন মাথা নত করেননি। যখনই মতবিরোধ হয়েছে, পদত্যাগ করেছেন। সরকারই বরং বাধ্য হয়ে বিদ্যাসাগরের মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়ে ফিরিয়ে এনেছে। বাংলা ভাষায় গাণিতিক পরিভাষার তিনি জনক। নিজে বাংলায় পাটিগণিত ও বীজগণিত রচনা করে পথ দেখিয়েছিলেন। জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর পাণ্ডিত্য এবং সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে তাঁর গবেষণা পাশ্চাত্যের পণ্ডিতদেরও বিস্মিত করেছিল। মহাভারত অনুবাদে তিনি কালীপ্রসন্ন সিংহকে ও প্রথম বাংলা অভিধান রচনায় তারানাথ তর্কবাচস্পতিকে সাহায্য করেন। স্বগ্রাম হুগলি জেলার রাধানগরে ‘অ্যাংলো-স্যাংস্ক্রিট সেমিনারি’ নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে প্রিয় বন্ধু কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি প্রধান শিক্ষক করে নিয়ে যান। এই স্থানেই বর্তমানে কলেজ চলছে।
নগেন্দ্রপ্রসাদের এক দাদা ড. দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন, আর এক দাদা ডা. সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী বিশ্ব-বিশ্রুত শল্যবিদ, এক ভ্রাতুষ্পুত্র বিজয় (বেরী) সর্বাধিকারী খ্যাতনামা ক্রীড়া-ভাষ্যকার। এ ছাড়া আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই পরিবারকে আলোকিত করেছেন।
নগেন্দ্রপ্রসাদের পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার রাধানগরে, যা রাজা রামমোহন রায়ের জন্মস্থান। বর্ধমান জেলায় নয়।
প্রশান্ত কুমার রায়
কলকাতা-৫৭
তাঁকে ভুলেছে
নগেন্দ্রপ্রসাদকে বাঙালি ভুলেছে, কারণ ২০১৯ সালে তাঁর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আইএফএ কোনও অনুষ্ঠান করেনি। ১৯৮৪ সালে সল্টলেক স্টেডিয়ামের নামকরণের আগে আলোচনায় ছিল তিনটি নাম: গোষ্ঠ পাল, পঙ্কজ গুপ্ত ও নগেন্দ্রপ্রসাদ। কিন্তু তৎকালীন রাজ্য সরকার এঁদের কাউকে যোগ্য মনে করেনি। নগেন্দ্রপ্রসাদ ফুটবল ছাড়া ক্রিকেট, রাগবি, রোয়িং প্রভৃতি খেলায় পারদর্শী ছিলেন। ১৮৯২-তে নগেন্দ্রপ্রসাদের নেতৃত্বে শোভাবাজার ক্লাব ব্রিটিশ দল ইস্ট সারে-কে ট্রেডস কাপে হারিয়েছিল। ১৮৯৩-তে আইএফএ-র প্রথম ভারতীয় দল ছিল শোভাবাজার ক্লাব।
তড়িৎ সরকার
কলকাতা-৬১
একটি প্রশ্ন
কোনও হিন্দু পরিবার পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে আশ্রয় নিয়ে নাগরিকত্ব অর্জনের পর, যদি ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়, সেই পরিবারকে দেশ ত্যাগ করতে হবে?
চন্দন সেনগুপ্ত
কলকাতা-৭৫
আরও প্রশ্ন
১) ধর্মীয় নিপীড়ন ছাড়াও অর্থনৈতিক, জাতিগত উচ্চ-নীচ বিভেদ বা সামাজিক নিরাপত্তার অভাববোধ ইত্যাদি কারণে যদি নির্দিষ্ট ছ’টি সম্প্রদায়ের কেউ আসেন এ দেশে, তা হলে তাঁর কী হবে?
২) সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থাকা সত্ত্বেও যদি ধরেও নিই অসংখ্য অবৈধ প্রবেশকারী এ দেশে এসেছেন, তা হলে এই আইনের দ্বারা এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান/বাহিনীর কাজকর্মের ফাঁক-ফোকরগুলো কী ভাবে বন্ধ হবে?
৩) ‘অবৈধ প্রবেশকারী’দের চিহ্নিত করার পর তাঁদের নিয়ে কী করা হবে? কারণ প্রতিবেশী কোনও দেশের সঙ্গেই তো বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়নি। সুতরাং বন্দি ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ কী?
৪) যে সমস্ত অ-মুসলমান ব্যক্তিকে শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে এবং ছ’বছর পর এই দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বিবেচিত হবে, এই অন্তর্বর্তী ছ’বছর সময়ে তাঁরা কোন কোন নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবেন?
৫) ভারতে অবৈধ প্রবেশকারীদের বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন তো আগে থেকেই আছে, তা হলে নতুন করে এই আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজন পড়ল কেন?
৬) বলা হচ্ছে, এর ফলে প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা বহু মানুষ নাগরিকত্ব পাবেন। প্রশ্ন, এই সমস্ত মানুষ নাগরিকত্বের কোন কোন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন?
আমি বহু মানুষকে জানি, যাঁরা অন্য দেশ থেকে এসে, এখানে সরকারি চাকরি করছেন, জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনেছেন, ভোট দিচ্ছেন, ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টও খুলেছেন। তা হলে নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার ফলে তাঁরা এমন কী কী সুবিধা পাবেন, যা আগে পেতেন না?
৭) এক জন বৈধ নাগরিকই ভোটার কার্ডের মাধ্যমে ভোট দিতে এবং আধার কার্ডের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এখন, এই দু’টি কার্ড থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি ‘অবৈধ প্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত হন, তা হলে তার দায় নির্বাচন কমিশন ও ভারত সরকারের উপরেও নিশ্চয় বর্তায়।
এ রকম অসংখ্য ‘অবৈধ’ ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা করা হবে?
৮) প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, স্থানান্তরকরণ ইত্যাদি কারণে যদি কারও কাগজপত্র নষ্ট হয় বা একেবারে হারিয়ে যায়, তাঁরা তখন কী ভাবে নিজেদের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করবেন?
প্রকাশ দাস
চন্দননগর, হুগলি
প্রকৃত ব্রাহ্মণ
‘‘ন’টি গুণ’’ (৮-২) শীর্ষক পত্রে ব্রাহ্মণত্বের যে-সব গুণের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তার বাস্তব প্রতিফলনের একটি ঘটনা জানাই।
বহরমপুর বালিকা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী-আবাসের আবাসিকেরা, তাদের ইতু পুজোর উপবাস ভঙ্গের প্রাক্কালে, তৎকালীন অধ্যক্ষা প্রীতি গুপ্তের শরণাপন্ন হয়। তারা এক ব্রাহ্মণকে ভোজন করাবে, তাই একটি নাম সুপারিশ করে দিতে হবে। প্রীতিদেবী যে নামটি সুপারিশ করেন, তা হল, রেজাউল করিম। সাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের মূর্ত প্রতীক করিম সাহেব ছিলেন ওই মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক। প্রীতিদেবী বলেন, তিনিই তাঁর দেখা শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ। ছাত্রীদের কাছে ব্রাহ্মণত্বের ব্যাখ্যা দেওয়ার পর, তারাও সানন্দে ওই প্রস্তাবে সহমত পোষণ করে।
প্রদীপনারায়ণ রায়
শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ