বিশ্বজিৎ রায়ের নিবন্ধ (‘সন্ন্যাসীর স্বপ্ন’, রবিবাসরীয়, ২২-১১) প্রসঙ্গে বলতে চাই, বিবেকানন্দের রচনার অসম্পূর্ণ পাঠ, বিবেকানন্দ-মানসের গভীরে ডুব দেওয়ার অক্ষমতা, তাঁর জীবনচর্চার প্রতি বিমুখ থাকা— এইগুলি আজ রাজনীতির কারবারিদের মস্ত হাতিয়ার। নিজের লক্ষ্যপূরণে কেউ ‘হিন্দু’ বিবেকানন্দের মূর্তিতে কালি মাখায়, কেউ আবার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেই দায় সারে। তাঁর জীবনকে অবহেলা করে, শিক্ষাকে উপেক্ষা করে। অকল্যাণ ডেকে আনে মানুষের জীবনে, হিন্দু-মুসলমানে বিভাজিত হয় সমাজ জীবন। ধর্মের ঝনঝনানির আড়ালে থাকে ভোটের রসায়ন। ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’— এই নীতিতেই চালিত হয় রাজনীতি। মন্দির-মসজিদ বা আলিগড়-দিল্লি, সব বিভাজনই শেষ বিচারে মনুষ্যত্বের অবমাননা করে, তাকে অস্বীকার করে। ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে ক্ষমতা পাওয়ার রাজনীতি করে। বিবেকানন্দের জীবনসীমা চল্লিশ বছরও স্পর্শ করতে পারেনি। নিজ ধর্মের ‘ব্যভিচার’ তিনি মানেননি, নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন সন্ন্যাসীদের কাজ— দুর্ভিক্ষ-মহামারিতে সন্ন্যাসীরা দরিদ্র মানুষের সেবা করবেন, আবার দরিদ্র মানুষের শিক্ষার ব্যবস্থাও তাঁরা করবেন। এমন এক জন আধুনিক মানুষকে আমরা আর কবে বুঝব, কবে কাজে লাগাব!
বিপ্লব গুহরায়
কান্দি, মুর্শিদাবাদ
পরিবর্তন
বিশ্বজিৎ রায়ের নিবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য, রবীন্দ্রনাথের মতো দীর্ঘায়ু হলে বিবেকানন্দকে আমরা হিন্দু ধর্মের সংস্কারক হিসেবে নয়, এক জন হিন্দু-বিদ্বেষী মানুষ হিসেবে পেতাম। রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্মের ব্যভিচার দেখার আরও অবকাশ পেতেন বিবেকানন্দ, যা তাঁর মনের পরিবর্তনের সহায়ক হত। এখানে মুসলিম বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অত্যাচার, ব্যভিচার নিয়ে একটি শব্দও লেখক খরচ করেননি। অথচ, বিবেকানন্দ এই বিষয়ে পূর্ণ মাত্রায় সচেতন ছিলেন। এই অর্থে প্রতিটি ধর্মসম্প্রদায় সাম্প্রদায়িক। শুধু হিন্দু ধর্মের দোষ দেখলে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়। বিবেকানন্দকে রাজনীতির চোখে দেখলে এই ভুল হতে বাধ্য। দৈনিক কাগজে আজ ‘রাজনীতি’ ও ‘ধর্ম’ সমার্থক শব্দ। কিন্তু ধর্ম ব্যবসায়ী ও আধ্যাত্মিক পুরুষ কি এক? যে আলোর সন্ধানে বিবেকানন্দ অগ্রপথিক, অকুতোভয়ে যিনি বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাঁদেরই দোষ ধরিয়ে দিচ্ছেন, তিনি তো দিক নির্দেশ করতেই এসেছেন, যাতে ভ্রান্তরা নিজেদের শুধরে নেন। তাঁর মত পাল্টানোর প্রসঙ্গ এখানে অবতারণা করা অবান্তর মনে হয়।
দেব কুমার নাগ
কলকাতা-৮
সবার উপরে
‘সন্ন্যাসীর স্বপ্ন’ নিবন্ধের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। দু’একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ দাবি করেন যে, তাঁদের হিন্দুত্ববাদ নাকি বিবেকানন্দের আদর্শ ও দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটা শুধু অসত্য নয়, অমার্জনীয় অপরাধ। জাতীয়তাবাদের জন্মলগ্ন থেকেই বিবেকানন্দের চিন্তা ও দর্শন ভারতীয় জনসমাজকে প্রভাবিত করেছিল। স্বামী বিবেকানন্দের কাছে জাতি ও ধর্মের সীমা অতিক্রম করে উদার বিশ্বজনীনতা ও মানবিকতার শিক্ষা লাভ করেছিলেন দেশের মানুষ। মুচি, মেথর, চণ্ডাল থেকে শুরু করে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে ভাই বলে গ্রহণ, ‘যত্র জীব তত্র শিব’— এই আদর্শ প্রচারের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ যে মানুষের কথা বলেছেন, সে মানুষকে কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায় না।
রতন চক্রবর্তী
উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
বিস্মৃত
রোজ়ালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের ১০০ বছর উপলক্ষে (‘শতবর্ষে ডার্ক লেডি’, এষণা, ২৫-১১) প্রকাশিত প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। ডিএনএ-র গঠন আবিষ্কারের জন্মস্থান হিসেবে তো নথিভুক্ত রয়েছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির নাম। জন র্যান্ডেলের তত্ত্বাবধানে কিংস কলেজে ১৯৫০ থেকে চলছিল ডিএনএ-র গঠন নিয়ে গবেষণা। মরিস উইলকিন্সের গবেষণাগারে ছাত্র হিসেবে রেমন্ড গসলিং কাজ শুরু করেন। শুরু করেন এক্স-রে ডিফ্র্যাকশন ও ক্রিস্টালোগ্রাফির কাজ। সেই সময় উইলকিন্সের গবেষণাগারে আসেন রোজ়ালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন। ছাত্র হিসেবে গসলিং ১৯৫২ সালে ডিএনএ ক্রিস্টালোগ্রাফি করে ফটো তোলেন, যা বিখ্যাত প্লেট নম্বর ৫১ হিসেবে, যার সাহায্য নিয়েই ওয়াটসন ও ক্রিকের নির্ভুল ডিএনএ-র গঠন আবিষ্কার। মরণোত্তর নোবেল প্রাইজ় দেওয়া হয় না, তাই ১৯৬২-র নোবেল পুরস্কারে বাদ যায় রোজ়ালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের নাম। পেলেন তিন জন। ওয়াটসন, ক্রিক ও উইলকিন্স। ফ্রাঙ্কলিনের অবদানকে সে সময় বিজ্ঞানমহল স্বীকৃতি দেয়নি। লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হতে হয় তাঁকে। কিন্তু ল্যাবের ছাত্র এবং প্লেট নম্বর ৫১-এর মূল কারিগর গসলিং-এর কৃতিত্বও আজ বিস্মৃত। বর্তমান প্রবন্ধেও প্লেট নম্বর ৫১-র সমস্ত কৃতিত্ব রোজ়ালিন্ডকেই দেওয়া হয়েছে, যা তুলে দেয় একটি পুরনো বিতর্ক— গবেষণার কৃতিত্ব কি শুধুই মূল গবেষকের? তবে কি গসলিং-এর নিজের গবেষণা, প্রাপ্ত ফলের উপর অধিকার থাকবে না, শুধু সহ-গবেষক ও ছাত্র বলেই? এই বৈষম্য নিয়ে বিজ্ঞানের ইতিহাস নিশ্চুপ।
ডিএনএ আবিষ্কারের কৃতিত্ব আলোচনা চারটি নাম জুড়েই— ওয়াটসন, ক্রিক, উইলকিন্স আর বঞ্চিত রোজ়ালিন্ড। অথচ ১৯৫৩-র এপ্রিলে প্রকাশিত তিনটি পেপারের সহ-গবেষকের নাম, অবদান অনুচ্চারিত থেকেছে। আলেক স্টক, গসলিং, হারবার্ট উইলসনের মতো ছাত্র ও সহ-গবেষকদের নাম আলোচনায় আনার প্রয়োজন মনে করে না বিজ্ঞানমহল। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের পরতে পরতে জমে আছে এই চুপকথা।
সুমন প্রতিহার
সুকুমার সেনগুপ্ত কলেজ, কেশপুর
ব্যক্তিগত
খবরে প্রকাশ, ভিন্ন ধর্মে বিবাহে আদালতের আপত্তি নেই (‘বিয়েতে ধর্ম নয়, মানুষই সত্য...’, ২৫-১১)। বিবাহ নাগরিকের অধিকার, তাতে হস্তক্ষেপ করা মানে নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এক হিন্দু-মুসলিম বিবাহ মামলার রায় দিতে গিয়ে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের এমন বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য। বিবাহ করতে গিয়ে কেউ যদি ধর্মান্তরিত হন, সেখানেও আদালত বা অন্য কারও হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা ভালবেসে ও স্বেচ্ছায় যদি বিবাহ করেন বা করতে চান, সেখানে কার কী বলার আছে? আদালত ও রাষ্ট্রও এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না, কারণ তা হবে নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবন ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
অন্তহীন
“যদি মরে যাই/ ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই;/ যে-ফুলের নেই কোনো ফল/ যে ফুলের গন্ধই সম্বল।”— এ রকমই শান্ত, সমাহিত তাঁর কবিতা। কবি অরুণকুমার সরকার। বাংলা আত্মগত কবিতা বা লিরিকের নতুন এক ধরন তাঁর কবিতায় দেখা যায়। “এনেছ আবার এ-কোন ভোরের কুয়াশা।/ যৌবন যায়। যৌবনবেদনা যে/ যায় না। সহসা ব্যাকুল বিকেলে বাজে/ মূলে মূলে কার বাসনাকরুণ দুরাশা।” কবিতা-প্রেমীদের মুখে মুখে, কফিঘর বা কলেজ-ব্যালকনিতে এক সময় এ সমস্ত অনুভূতিমালা শোনা যেত। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “মানুষের প্রতি যে অন্তহীন ভালবাসা তাঁর চিত্তে তিনি বহন করতেন, মূলত তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে তাঁর কবিতা।” জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে তাঁকে কি আমরা ভুলেই থাকব?
শমিত মণ্ডল
কল্যাণী, নদিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।