সম্পাদক সমীপেষু: তিনি এক জন কবিও

১৯৭৭ সালে সদ্য-ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকারের প্রধান শরিক সিপিএমের ছাত্রশাখা এসএফআই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে মোটেই পছন্দ করত না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:২৭
Share:

‘সুনীল-আলোয় নতুন নাম ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের’ (২৮-৭) শীর্ষক সংবাদ বহু স্মৃতি ও একটি অমোঘ প্রশ্ন জাগিয়ে তুলল।

Advertisement

১৯৭৭ সালে সদ্য-ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকারের প্রধান শরিক সিপিএমের ছাত্রশাখা এসএফআই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে মোটেই পছন্দ করত না। তখন ‘দেশ’ পত্রিকায় কোনও নবীন ছাত্রের কবিতা প্রকাশিত হলে, ছাত্রনেতারা রাখালদার ক্যান্টিনে বসে তাকে সাহিত্যের মার্ক্সীয় পাঠ দিয়ে ‘বুর্জোয়া’ সাহিত্যের স্বরূপ বোঝাতে তৎপর হতেন। এমনকি, ১৯৮৩ সালে ‘সেই সময়’ উপন্যাসের জন্য সুনীল সরকারি বঙ্কিম পুরস্কার পাওয়ার পরেই তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগটি ফরওয়ার্ড ব্লকের দায়িত্ব থেকে সিপিএমের অধিকারে চলে যায়। কেননা, সুনীল তখন সিপিএমের দৃষ্টিতে ‘জনবিরোধী’ লেখক।

যদিও, পরবর্তী কালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সুবাদে ক্ষমতাসীন সিপিএমের সঙ্গে সুনীলের সম্পর্ক সাবলীল হয়ে যায়। আরও পরে, সরকারি ‘কবিতা উৎসব’ থেকে ‘শিশু-কিশোর আকাদেমি’র প্রধানও হয়েছিলেন তিনি। নন্দীগ্রাম পর্বে সুনীল প্রত্যক্ষ ভাবে বুদ্ধদেবের পক্ষে স্থিত ছিলেন। কৃষকহত্যার বিরুদ্ধে সংবাদপত্রের রচনায় তথাকথিত মানবিক বেদনাবোধ জানালেও, মুখ্যমন্ত্রীর বিজন-অশ্রুপাতই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল তাঁর কাছে।

Advertisement

তার পর, বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় এল, তখন স্বভাবতই সুনীল পদত্যাগ করলেন সরকারি পদ থেকে। যদিও, স্বাভাবিক ভাবেই সুনীলের অন্তিম যাত্রায় শামিল হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তত দিনে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে।

সংবাদে জানা গেল, সুনীলের বাসস্থান ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের নামকরণ হবে, ‘কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সরণি’। স্বভাবতই, সুনীলের ব্যক্তিগত বিরোধিতা মনে রাখেনি শাসক দল ও সরকার। এই সিদ্ধান্তের সৌজন্য প্রশংসনীয়।

খটকা কেবল একটিই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নামের আগে ‘কথাসাহিত্যিক’ অভিধাটি অনেকটাই খণ্ডিত। কেননা, সুনীল কেবল কথাসাহিত্যিকই নন, তিনি বাংলা ভাষার বিশিষ্ট কবি ও অনুবাদকও। কবিতাপত্রিকা ‘কৃত্তিবাস’ থেকে ‘দেশ’ পত্রিকার কবিতা-সম্পাদকও ছিলেন তিনি। পাঁচ খণ্ডে তাঁর কবিতাসংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে। সে কারণে সুনীলের পরিচয়বাহী কোনও বিশেষণই বোধ হয় বাহুল্যমাত্র।

গৌতম ঘোষদস্তিদার, কলকাতা-১১৮

শিশু-শ্রমিক স্কুল

রাজ্য সরকার প্রাথমিক শিক্ষক, শিশু-শিক্ষা কেন্দ্র এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের সহায়ক-সহায়িকাদের মাইনে, ভাতা বৃদ্ধি করল। খুব আনন্দের খবর। কিন্তু চরম দুঃখের বিষয়, এই রাজ্যেই শিশু-শ্রমিক বিদ্যালয়গুলি গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ। প্রায় ৯১৮টি স্কুলের সহায়ক-সহায়িকারা এবং তাঁদের পরিবার অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় শিশু-শ্রম প্রকল্পের (N.C.L.P.) অধীন ওই বিদ্যালয়গুলি ২০১৫ সাল থেকে বন্ধ। দিল্লি থেকে কোনও টাকা (Fund) আসছে না। মুর্শিদাবাদ জেলায় বিড়ি-শ্রমিক অধ্যুষিত জঙ্গিপুর মহকুমায় ১৪০টি স্কুল চালু ছিল। সহায়ক-সহায়িকা মাত্র চার হাজার টাকা ভাতা পেতেন অনিয়মিত ভাবে। এই যৎসামান্য ভাতায় আধপেটা খেয়ে দিন কাটত পরিবারগুলোর। এই সামান্য টাকাও পাঁচ বছর থেকে বন্ধ। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাছে প্রার্থনা, বিদ্যালয়গুলো খুব তাড়াতাড়ি চালু করা হোক। বয়স্ক শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভাতা বাড়িয়ে ন্যূনতম ১২ হাজার টাকা করা হোক।
সৌমিত্র সিংহ রায়, মিঠিপুর, মুর্শিদাবাদ

অজানা কথা

নির্মল বসুর ‘এমএ পাশ, পেটের দায়ে পালিশ করেন জুতো’ (২৯-৭) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই লেখা। সুভাষ দাসের জীবন যুদ্ধের কিছু কথা বহু মানুষ জানলেন। তবে অজানা থেকে গেল আরও অনেক কিছু। যাঁরা ওঁর প্রতি ‘নেহাত সহানুভূতি কুড়ানোর ধান্দা’, ‘দুর্বল ছাত্র তাই কিছু পায়নি’, ‘অন্য কাজের অযোগ্য’ ইত্যাদি অভিযোগ ছুড়ছেন আর যোগ্য নাগরিক সেজে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন, তাঁরা সুভাষের জীবনযন্ত্রণার প্রকৃত কারণ আদৌ জানেন না।
সুভাষ অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষ। সে তো সুন্দরবন এলাকার অনেক মানুষই তাই। সমস্যা এখানে নয়। সমস্যা হল, উনি মুচি পরিবারের। সামাজিক যে ঘৃণা, অবজ্ঞা, অবমাননা ওঁদের সব ভাই-বোনদের ও তার আগে ওঁর বাবা-মা, জেঠু-জেঠিমাদের সইতে হয়েছে, তা নিদারুণ। অর্থনৈতিক দুর্বলতার পাশাপাশি সামাজিক ঘৃণাই ওঁদের সমাজের মূলস্রোত থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কাজেই শুধু আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধা পেলেই ক’দিনে ওঁরা অন্যদের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন না, যত দিন না ওই সামাজিক অবমাননা থেকে মুক্তি পেয়ে হীনম্মন্যতা কাটাতে পারবেন। তাই যাঁরা ওঁর কাছ থেকে নামী স্কুল-কলেজের কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের মতো ভাল রেজ়াল্ট আশা করছেন, তাঁরা আমাদের সমাজব্যবস্থার সমস্যার গভীরে আদৌ পৌঁছতে পারছেন না।
‘সভ্য সমাজ’ কখনও অনুভব করতে পারবে না, এক অসহায় বাবা কী ভাবে নিজের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য নদীতে ভেসে যাওয়া মৃত গরু-ছাগল হিংস্র শকুনের মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে তার ছাল ছাড়িয়ে ঘরে ফিরতেন বছরের পর বছর। অন্য কাজ? এঁদের কেউ নিতেই চায়নি। কেউ বিশ্বাস করত না এঁদের। মাঠে সাপের কামড়ে গরু মারা গেলেও দোষ হত মুচির। কাজেকর্মে কারও বাড়িতে গেলে খেজুর-পাতার চাটাইটুকুও কেউ এগিয়ে দিত না।
তবু সুভাষ হারেননি। ওঁর ছোট ভাই নদীতে মাছ ধরতেন, মেজো ভাই বিয়ে বাড়ির ব্যান্ডপার্টিতে মেয়ে সেজে নাচ করতেন। ব্যান্ডপার্টিতে মূলত কাহার ও মুচি সম্প্রদায়ের লোকেরাই থাকতেন। অনুষ্ঠানবাড়িতে এঁদের থাকার ঘর দেওয়া তো দূরের কথা, উঠোনে থাকলেও মোড়লরা আপত্তি করতেন। তাই গোয়ালঘর ঝাঁট দিয়ে বিচুলি কিংবা বস্তা বিছিয়ে রাতের শোয়ার ব্যবস্থা হত। এই রকম আরও কত কথা আছে অজানা। আসলে সুভাষ বা এই ধরনের মানুষদের জীবনের অনেক কথাই নাগরিকদের অগোচরে থেকে যায়।

শিবব্রত মণ্ডল, পারঘুমটী, উত্তর ২৪ পরগনা

বকুনি বারণ?

শহরের কোনও এক আবাসনের একটি ঘটনা দু’দিন ধরে পত্রিকায় ছাপা হল। ক্ষুদ্র ঘটনাটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ? ‘নীতি-পুলিশি’র অভিযোগে আমরা বয়স্ক নাগরিকরা ত্রস্ত। কন্যা, কন্যাসমাদের মৌখিক শাসনের অধিকারটুকুও সমাজ এত দ্রুত বিনা নোটিসে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে, আবার তার প্রয়োগে শাস্তিরও ব্যবস্থা করে রেখেছে— এ খবর আমার এবং আরও অনেক বয়স্ক নাগরিকের মতো, আবাসন প্রেসিডেন্টেরও বোধ হয় জানা ছিল না। এমনিতেই সমাজ আজ ধর্ম, জাত, খাদ্যাভ্যাস, রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে বহুধাবিভক্ত। বয়স, লিঙ্গের ভিত্তিতে তাকে আরও টুকরো হতে দেওয়া বোধ হয় অসমীচীন হবে। বয়স্কদের অবমাননা, পুলিশ-কোর্ট-কাছারিগত হয়রানির বিষয় না-হয় উহ্যই থাকুক।

সুবীর দাশগুপ্ত,কলকাতা-৭৫

দুটো ঘটনা

‘পৌরুষের ঔদ্ধত্য’ (২৯-৭) চিঠিটি দুটো ঘটনা মনে করাল। প্রথমটি কয়েক বছর আগে তাপস পালের সেই কুখ্যাত ভাষণ। মনে আছে, জঘন্য ভাষণ শুনে শ্রোতৃবৃন্দ উল্লাসে হইহই করে উঠেছিল। দ্বিতীয় ঘটনা সাম্প্রতিক। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য, শিক্ষিকাদের নারীরোগ বিষয়ে। এখানেও হেসে উঠলেন কিছু শ্রোতা, যাঁদের প্রায় সবাই শিক্ষক। এর পর নিশ্চয় বলে দিতে হবে না কোন বিষ আমরা বহন করে চলেছি।

বিপ্লব ঘোষ,কলকাতা-৮

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement