‘শাড়িতেই নারী চ্যালেঞ্জ’ চলছিল। হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবীকে। তিনি আলুথালু শাড়ির বাঙালিনিকে দিয়েছিলেন পারিপাট্য— সায়া-ব্লাউজ, জ্যাকেট-সেমিজ, কুঁচির ধারণা। শুধু এটুকুই?
১৮৬৪ সালের নভেম্বরে ঠাকুরবাড়ির মেজো বৌ পাড়ি দিলেন বম্বে। সত্যেন্দ্রনাথ সস্ত্রীক উঠলেন মানেকজি করসেদজি নামক পার্সির বাড়িতে। মানেকজির বিলেতফেরত মেয়েদের থেকে জ্ঞানদা শিখলেন শাড়ি পরার নতুন ধরন। বিলেতি গাউন আর জবড়জং ‘ওরিয়েন্টাল’ পোশাক ছেড়ে পার্সিদের কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরার ধরনটি আপন করলেন। তবে ওঁদের ডান কাঁধের আঁচলটি বাঙালিয়ানা বজায় রেখে বাঁ কাঁধেই রাখলেন। কলকাতায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শেখালেন কায়দাটি। ১৮৪৯-এ তৈরি হয়েছে বেথুন স্কুল। ১৮৫৬-য় প্রবর্তিত হয়েছে বিধবা বিবাহ আইন। অথচ, বাঙালি নারী তখনও পর্দানশিন। আলোকপ্রাপ্ত ঠাকুরবাড়ির মেয়েরাও কুটুমবাড়ি যেতেন ঘেরাটোপে মোড়া পাল্কি চড়ে। জ্ঞানদাকেও ঘেরাটোপে মুড়েই বম্বের জাহাজে তুলে দেয় ঠাকুর পরিবার।
কিন্তু আলোকবর্তিকা জ্ঞানদানন্দিনীর জীবন-ইতিহাসে লুকিয়েছিল ছক ভাঙার চকমকি। বাবা অভয়াচরণ মুখোপাধ্যায়ের যশোরের বাড়ির পাঠশালায় আসত মুসলমান পড়ুয়ারাও। ছ’-সাত বছরের মেয়েকে তিনি তাদের দলে পাঠাতেন, তালপাতায় চলত হস্তাক্ষর চর্চা। লোকলজ্জার ভয়ে রাতের অন্ধকারে লেখাপড়া করতেন জ্ঞানদার মা।
১৮৫৯ সালে পাল্কি এসে দাঁড়াল ঠাকুরবাড়ির উঠোনে। ছোট্ট বৌকে কোলে তুলে নিয়ে গেলেন সারদা দেবী। তাতে কী? রাজযোটক যে। ছকভাঙা গল্প নিজেই জানিয়েছেন জ্ঞানদানন্দিনী। সত্যেন্দ্রনাথের ইচ্ছে স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন বাল্যবন্ধু মনোমোহন ঘোষের। অন্দরে অনাত্মীয় পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। “তাই ওঁরা দু’জনে পরামর্শ করে একদিন বেশি রাত্রে সমান তালে পা ফেলে বাড়ির ভিতরে এলেন। তারপর উনি মনোমোহনকে মশারির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে শুয়ে পড়লেন। আমরা দুজনেই জড়সড় হয়ে বসে রইলুম;… কিছুক্ষণ পরে তেমনি সমান তালে পা ফেলে উনি তাঁকে বাইরে পার করে দিয়ে এলেন।’’
পারমিতা মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৯৪
প্রকাশ্যে আসুক
‘রাজনৈতিক দান গোপনই থাক: তথ্য কমিশন’ (২৩-১২) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। সংবাদে জানলাম, তথ্য কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বলছেন, “জনস্বার্থের বিষয় এখানে জড়িয়ে নেই”, তাই দাতা ও গ্রহীতার গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই হয়তো সুরেশ চন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কেন টাকার উৎস জানার অধিকার থাকবে না? হয়তো এর উৎস বড় বড় পুঁজিপতির কালো টাকা। ক্ষমতায় এলে এই পুঁজিপতিরাই সরকার তথা দলকে তাঁদের ইচ্ছামতো পরিচালনা করার সুযোগ পান। এই জন্যই কি রাজনৈতিক দান গোপন থাকা উচিত? আমরা জানি, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে অনেক বিষয়কে তথ্য জানার অধিকারের বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলকে অর্থ দান করলে, তার উৎস কেন গোপন থাকবে? নির্বাচন করার জন্য প্রতিটা দলের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এখন তো তার প্রতিযোগিতাই চলছে! নির্বাচন দফতরের বেঁধে দেওয়া খরচের সীমা কাগজপত্রেই থাকে। তা মানা হচ্ছে কি না, তা আর তদন্ত করে দেখা হয় না। সুতরাং প্রতিটা রাজনৈতিক দানেরই দাতা এবং গ্রহীতা প্রকাশ্যে আসা উচিত। তাতে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড যেমন স্বচ্ছ হবে, তেমনই শক্তিশালী হবে আমাদের গণতন্ত্রও।
বাঁধন চক্রবর্তী, উত্তর গাঁধীগ্রাম, ত্রিপুরা
প্রশ্নে ভয়
‘অনাবশ্যক?’ (সম্পাদকীয়, ২৫-১২) প্রসঙ্গে এই চিঠি। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন বন্ধ হওয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হল। কোভিড অতিমারির অজুহাতে আর কোনও দেশ এমন করছে বলে শুনিনি। গত কয়েক সপ্তাহে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। দেশের জনমত কৃষকের পাশে দাঁড়ালেও কেন্দ্র আন্দোলন দমন করতে বদ্ধপরিকর। সংসদের বিরোধীদের প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে না পারার ভয়েই কি সরকার পিছু হটল? এত বড় একটা অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিরোধী আন্দোলন আরও জোরালো হওয়া জরুরি।
শামসুল আলম, নেওয়ার্ক, ক্যালিফর্নিয়া
এত ছুটি?
‘ছুটির তালিকা’ (২৩-১২) শীর্ষক সংবাদটিতে জানতে পারলাম, রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে পঞ্চানন বর্মা, হরিচাঁদ ঠাকুর ও বিরসা মুণ্ডার জন্মদিনে আগামী বছর থেকে স্কুলে ছুটি থাকবে। এঁদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এঁরা কেউ সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য কাজ করেননি। এঁদের অবদান নির্দিষ্ট একটা সম্প্রদায়ের জন্য। এঁদের জন্মদিনে ছুটি দিলে মাস্টারদা সূর্য সেন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শ্রীঅরবিন্দ, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ বরেণ্য বাঙালির জন্মদিনে কেন ছুটি থাকবে না? স্বাধীনতা যুদ্ধে ও বাংলা সাহিত্যে এঁদের অবদান অনস্বীকার্য। ছুটি দিয়ে কি কোনও মনীষাকে যথার্থ সম্মান জানানো যায়? শ্রদ্ধা জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায়, তাঁদের আদর্শ মেনে পথ চলা। স্কুল খোলা রেখে মনীষীদের স্মরণসভার আয়োজন করলে ছাত্রছাত্রীরা মনীষীদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
বঞ্চিত
‘দুয়ারে সরকার’-এ ‘মানবিক’ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী মাসিক হাজার টাকা ভাতা পান। এত দিন তিন-চার মাস অন্তর ব্যাঙ্কে অনুদান জমা হয়েছে। মার্চ থেকে দাসপুর ২ ব্লকের প্রাপকরা এই প্রকল্পের টাকা পাননি। কষ্টে আছেন। দ্রুত টাকা পাঠাতে অনুরোধ জানাই।
স্বপন কুমার মণ্ডল, সোনাখালি,পশ্চিম মেদিনীপুর
অজুহাত
কোন প্রকল্প ভাল, কেন্দ্রের পিএম-কিসান না রাজ্যের কৃষকবন্ধু, তা নিয়ে দড়ি টানাটানি হচ্ছে (‘ধারে-ভারে কে এগিয়ে, দ্বন্দ্ব চলছেই’, ২৬-১২)। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, রাজ্য সরকারের ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে ৪৭ লক্ষ কৃষক উপকৃত। অতঃপর তাঁর বক্তব্য, ছ’হাজার টাকা করে দিয়ে বিজেপি প্রচার চাইছে। ভোট কিনতে চাইছে। ধরে নিলাম বিজেপি প্রচার চাইছে, তৃণমূল প্রচার চায় না। লক্ষ্য যখন কৃষক-সহায়তা, টাকা কে দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে, তা গৌণ। কেন্দ্রীয় প্রকল্প তাই বর্জনীয়— এমন অভিপ্রেত হতে পারে না। বিশেষত, যেখানে এই রাজ্যের ঘাড়ে বিশাল ঋণের বোঝা। দ্রুত কেন্দ্রের পিএম-কিসান নিধি প্রকল্পও চালু হোক।
তপন কুমার দাস, নোনাচন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
কেবলই কুৎসা
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘হাসছেন বটে, কিন্তু সাবধান’ (২৫-১২) নিবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। এখনকার রাজনীতির বড়-মেজো-ছোট কারবারিরা যে অলীক রঙ্গে মেতেছেন, তা অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও, আশ্চর্যের নয়। বেশিরভাগ নেতার উত্থানের প্রেক্ষাপট, তাঁদের সঙ্গীদের ক্রিয়াকলাপ এবং ক্ষমতালাভের উদ্দেশ্যে তাঁদের নির্বাচিত পথ দেখার পর এমনটিই প্রত্যাশা তৈরি হয়। তাই তো আজকের রাজনীতি ‘ক্ষুদ্রতা ও তুচ্ছতার আখড়ায় পরিণত’।
ভোগবাদী মানসিকতায় ‘যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ’ দর্শন মানুষকে আপ্লুত করেছে। আজ কী হবে, কথাটা অনেককে এতটাই পীড়িত করে যে, দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা তাঁরা ভাবতে পারেন না। “ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারে কিন্তু তার বিকল্প নয়”: সুন্দর ভাবনা। কিন্তু এই কথা বুঝতে তো রাজনীতির অঙ্গনে তেমন মানুষের প্রবেশ প্রয়োজন। যার জন্য চাই বিকল্প ভাবনা। তা যদি না হয় তা হলে চণ্ডীমণ্ডপের গালগল্প এবং পারস্পরিক কুৎসা, গালিগালাজেই এই জীবন অতিবাহিত করব আমরা।
সুকুমার বারিক, কলকাতা-২৯