ধনী কৃষকদের কেন আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হবে না, এই মৌলিক প্রশ্নটি তুলেছেন স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (‘সঙ্কটই তো সংস্কারের সময়’, ১৩-১), যা এক বাক্যে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সরকারি যুক্তি হল, কৃষকরা অন্নদাতা, অর্থাৎ সমাজসেবী। চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, সেনাবাহিনী, শিক্ষক এবং আরও অনেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে দেশসেবা করছেন। কিন্তু তাঁরা তো সবাই আয়করের আওতায় আছেন। বস্তুত, চাকরিজীবীদের টিকি সরকারের হাতে বাঁধা থাকায় বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকা আয়ের ঊর্ধ্বের সব চাকরিজীবীই আয়কর দিতে বাধ্য হন। অনেক সরকারি-বেসরকারি সংস্থার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও আয়কর প্রদান করেন। প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার যে, বাংলার কৃষকদের মতো পঞ্জাব বা হরিয়ানার কৃষকরা নিম্ন আয়ের বা দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন না। ধনী কৃষকদের আয় পাঁচ লক্ষ টাকার চেয়ে অনেক বেশি। তাই তাঁরা কেনই বা আয়কর দেবেন না?
কৃষকদের অবদানের কথা মাথায় রেখে তাঁদের সাধারণ নাগরিকের চেয়ে কিছুটা বেশি ছাড় দেওয়া যেতেই পারে। অর্থাৎ, সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে যেটা পাঁচ লক্ষ টাকা, কৃষকদের ক্ষেত্রে তা সাত বা আট লক্ষ টাকা করা যেতেই পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী, স্বনিযুক্ত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রোমোটার, শিল্পী তাঁদের আয় অনুযায়ী সরকারের প্রাপ্য আয়কর দেন কি? খালি ঘরে বসে সরকারের সমালোচনা করব, প্রতিবাদে ঝান্ডা হাতে রাস্তায় নেমে পড়ব, কিন্তু সরকারের প্রাপ্য কর দেব না, এমনটি করলে চলবে না। সরকারের নিয়মানুসারে, দেশের প্রতিটি নাগরিককেই কর প্রদান করতে হবে। এটা দেশের প্রতি তাঁদের প্রাথমিক দায়বদ্ধতা।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
কত ভর্তুকি
পঞ্জাবের চাষিদের আন্দোলন সমর্থনের আগে দেখা যাক, তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কত ভর্তুকি দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ এবং সারের জন্য মোট ১৩,২৭৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। এ ছাড়া ফুড কর্পোরেশনের (এফসিআই) ন্যূনতম প্রয়োজনীয় মজুতের (যা এখন প্রয়োজনের তিন গুণ) অতিরিক্ত চাল এবং গম ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি) কিনতে হচ্ছে। গম এবং চালের জন্য এফসিআই-এর মোট খরচ প্রতি কুইন্টালে যথাক্রমে ২,৬৮৪ টাকা এবং ৩,৭২৭ টাকা। কিন্তু, ক্রয়মূল্য প্রতি কুইন্টালে যথাক্রমে ২,২২১ টাকা এবং ৩,১৬৩ টাকা। এই অবণ্টিত খাদ্যশস্য মজুত রাখতে যে বাড়তি খরচ হচ্ছে, তাকেও অপ্রত্যক্ষ ভর্তুকিই বলতে হবে।
দেশের মোট গম ও চাল সংগ্রহের ২৬% পঞ্জাব থেকে হয় (যেখানে দেশের মোট উৎপাদনের ১৩% আসে পঞ্জাব থেকে)। এই হারে হিসেব করলে অপ্রত্যক্ষ ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫,৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, পঞ্জাবের চাষিরা বার্ষিক সাবসিডি পান ১৮,৮৭৫ কোটি টাকা। ১০.৯ লক্ষ চাষি পরিবার এই ভর্তুকি পেলে চাষি পরিবার পিছু বার্ষিক ভর্তুকি দাঁড়ায় ১,৭৩,১৬৫ টাকা। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে পঞ্জাবের প্রতি চাষি পরিবারের আয় ছিল ১,০৭,০০০ টাকা। অর্থাৎ, আয়ের থেকে ভর্তুকি, দেশের অন্য অংশের চাষিদের থেকে অনেক বেশি।
এমএসপি বজায় রাখার সওয়াল করছেন পঞ্জাবের চাষিরা। কিন্তু, এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত কৃষিপণ্যের ১০%-এরও কম সংগ্রহ হয়। বাকি বেশির ভাগ কৃষিপণ্য, যেমন ফল, সব্জি বা দুধ বেসরকারি ক্ষেত্রে বিক্রি করা হয়। এই সব পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি দানাশস্যের প্রায় ৩.৫ গুণ। বেসরকারি ক্ষেত্রের শোষণ থাকলে কী করে এই বৃদ্ধি সম্ভব? এমএসপি-র আওতায় এখন আছে মাত্র ২৩টি কৃষিপণ্য। বাকি পণ্যের অনেক বেশি উৎপাদন সত্ত্বেও সেগুলি এমএসপি-র আওতায় নেই। দেশের মোট চাষিদের মাত্র ৬% এমএসপি-র লাভ পায় এবং তাঁদের বেশির ভাগই পঞ্জাবের।
ধান চাষের ক্ষেত্রে অত্যধিক জলের প্রয়োজন। পঞ্জাবের চাষিদের ধান চাষের ফলে জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। পানীয় জলের ক্ষেত্রে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুদ্র চাষিদের ব্যবহৃত অগভীর নলকূপগুলিও শুকিয়ে গিয়েছে। ধনী চাষিরা গভীর নলকূপ খনন করে বাড়তি বিদ্যুতের খরচ সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পাচ্ছেন। একটি রাজ্যের শুধুমাত্র ধনী চাষিদের নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিজেদের ‘মৌরসি পাট্টা’ বজায় রাখার চেষ্টা।
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়, খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
মিথ্যা প্রশংসা
তূর্য বাইনের ‘বিজ্ঞাপনের কারসাজি আর নয়’ (১৪-১) প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা শুনে আসছি, বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা পানীয় সেবন মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর। অথচ, বাজারে এর প্রভাব না কমে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেপথ্যে অবশ্যই বিভিন্ন সেলেব্রিটিদের আকর্ষক বিজ্ঞাপন। অথচ, তাঁরা নিজেরা কখনও ওই সব শর্করাবহুল পানীয় গলাধঃকরণ করেন কি না, সন্দেহ আছে। কিন্তু লক্ষ কোটি টাকার বিনিময়ে তাঁরা পণ্যের গুণমান বিচার না করেই পণ্যের প্রশংসা করেন।
উপভোক্তাদের সুরক্ষার জন্য ২০ জুলাই, ২০২০ সালে ‘সেন্ট্রাল কনজ়িউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ বলবৎ হয়েছে। তার অধীনে ‘সেন্ট্রাল কনজ়িউমার প্রোটেকশন অথরিটি’ স্থাপিত হয়েছে ২৪ জুলাই। এ বার এই আইনটিকে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা উচিত, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত উপভোক্তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিজ্ঞাপক বা ‘এনডোর্সার’-ও সমান ভাবে দায়বদ্ধ থাকবেন।
উজ্জ্বল গুপ্ত , কলকাতা-১৫৭
কাজের বোঝা
সম্প্রতি ‘চোখের আলো’ প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে (“কেন্দ্রীয় প্রকল্প থাকতে কেন ‘চোখের আলো’, উঠছে প্রশ্ন’, ১১-১)। তাতে বলা হয়েছে, আশাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চোখের সমস্যাও দেখতে হবে। গর্ভবতী মা ও শিশুকে পরিষেবা দেওয়াই আশাকর্মীর প্রধান কাজ। কিন্তু তাঁদের কাজের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। করতে হচ্ছে খেলা-মেলায় ডিউটি, ভোট, পরীক্ষা কেন্দ্রে ডিউটি। নির্মল ভারত, নির্মল বাংলা মিশনের জন্য ঝোপঝাড়ে কে কোথায় শৌচকর্ম করছে, তাকে সতর্ক করার কাজটিও করতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করতে হবে কে মদ খায়।
আর এক বিড়ম্বনা হল ‘দিশা’। হাসপাতালে পরিকাঠামো এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিক ছাড়াই হঠাৎ চালু করা হয়েছে রাতদিনের হাসপাতাল ডিউটি। প্রথমত, আশাকর্মীদের কোনও ট্রেনিং নেই। তার উপর সেই কর্মীরা রাতে কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, তার ব্যবস্থা নেই। এক মাস সেই আশাকর্মী তাঁর এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকছেন। নানা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আসছে। অনেক হাসপাতালে রাতে বাইরে থেকে ঘরের সামনে নানা উপদ্রব চলে।
আমরা জানি সংবিধান অনুযায়ী, স্বাস্থ্য যৌথ তালিকার অন্তর্ভুক্ত। অথচ, কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারই জনগণের পরিষেবা দেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করছে না।
ইসমত আরা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক, স্কিম ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া