Local Train

সম্পাদক সমীপেষু: এ বার তো চলুক

একটা ঘোষণা করতে হবে সরকারকে যে, তার পরও যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হন, তখন চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ০০:২৭
Share:

প্রতীকী চিত্র।

যখন করোনা নিয়েই বাঁচতে হবে, আর যখন সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে কোনও চিকিৎসাই পাবেন না, সর্বোপরি যখন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সব কিছুই চালু হয়ে গেল, তখন লোকাল ট্রেন চালু করতে বাধা কোথায়? সরকার একটা অর্ডিন্যান্স জারি করুক এই বলে যে, যাঁরা করোনা মোকাবিলায় সরকারি বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ ভাবে মেনে স্টেশনে আসবেন, পরীক্ষার পর ছাড়পত্র পেলে তবেই ট্রেনে উঠতে পারবেন। এবং ট্রেনে নিজ দায়িত্বে শারীরিক দূরত্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে চলবেন। সবটাই সিসিটিভি-র আওতায় থাকবে, সেই জন্য প্রতিটি স্টেশনে এবং প্রতিটি ট্রেনের প্রত্যেক কামরায় থাকতে হবে সিসিটিভি। আর একটা ঘোষণা করতে হবে সরকারকে যে, তার পরও যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হন, তখন চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের।

Advertisement

কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে কেউ যদি জোর করে ট্রেনে ওঠেন, তবে সেই ব্যক্তিকে তৎক্ষণাৎ মোটা অঙ্কের জরিমানা করতে হবে। রেলের বেতনভোগী রেল পুলিশ, টিকিট পরীক্ষক, রেল সুরক্ষাবাহিনী ইত্যাদি সব কিছুই পর্যাপ্ত থাকায় করোনা বিধি বলবৎ করতে কোনও অসুবিধে হবে না। তবে অবশ্যই কোভিড গাইডলাইন মেনে আপাতত ১২ কামরার লোকাল ট্রেনের মোট আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশ যাত্রীকে ই-টিকিটের মাধ্যমে সংরক্ষিত আসনে বসাতে হবে, ঠিক মেট্রোরেলের যাত্রী নিয়ন্ত্রণের মতো করে। এবং অযথা অশান্তি এড়াতে বিকল্প পদ্ধতিতে ট্রেনগুলিকে ‘গ্যালপিং সিস্টেমে’ চালাতে হবে। তবেই এই টানাটানির সময় সব দিক বজায় রেখে দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ মানুষের রুটি-রোজগারে হয়তো একটু সুরাহা হবে।

দিলীপ চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

নবদ্বীপ, নদিয়া

উৎসবের উপহার

প্রায় সাত মাস হয়ে গেল শহরতলি ও মফস‌্সলের জীবনযাত্রার ‘লাইফ লাইন’ লোকাল ট্রেন বন্ধ। বাস, অটো, ফেরি-সহ নানা পরিষেবা পুরোপুরি না হলেও চালু হয়ে গিয়েছে। করোনা পরিস্থিতির স্বাভাবিক নিয়মকানুন মেনে চালু হয়েছে মেট্রো পরিষেবাও। শুধু এখনও বন্ধ রয়েছে আমজনতার বেঁচে থাকার রসদ জোগানোর মূল মাধ্যম লোকাল ট্রেন। আইটি-র সামান্য কিছু অফিস (যেখানে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু) ছাড়া সমস্ত বেসরকারি অফিস, কারখানা পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানও খুলে গিয়েছে ধীরে ধীরে। সিনেমা হল, থিয়েটার, পার্ক-সহ সমস্ত বিনোদন ক্ষেত্রও খুলছে এক-এক করে। বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

কলকারখানা ও অফিসকাছারিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ কী ভাবে প্রত্যন্ত মফস‌্সল থেকে কাজে যোগ দিচ্ছেন, তা প্রশাসন-সহ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা সবই দেখছেন। যাতায়াতের জন্য তিন গুণ, চার গুণ টাকা ব্যয় করছেন চাকরি টিকিয়ে রাখতে। মরিয়া হয়ে বাদুড়ঝোলা অবস্থায় দীর্ঘ সময় বাসে ঝুলে ঝুলে যাত্রীরা যখন কর্মস্থলে যান, তখন সামাজিক দূরত্ব, করোনার নানাবিধ নিয়মকানুন শুধু খাতায়-কলমেই লেখা থাকে। সাধারণ যাত্রীরা দম নিয়ে শুধু বলেন ‘‘করোনায় মরার চেয়ে, না খেতে পেয়ে মরা আরও বেশি কষ্টের, তাই পরিবার পরিজনের মুখ চেয়ে এই কষ্ট মেনে নেওয়া ছাড়া আর গত্যন্তর থাকে না।’’

লোকাল ট্রেন চালু হলে শুধু এই কষ্টই লাঘব হবে না, সাশ্রয় হবে অর্থের, বাঁচবে অনেকটা সময়, স্বাভাবিক হবে জনজীবন। গ্রাম ও মফস‌্সলে উৎপাদিত আনাজ ও নানা ধরনের পণ্যের জোগানে বাজারে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দামও অনেকটা কমবে, চাষিও তাঁর ন্যায্যমূল্য পাবেন। স্টেশন-সংলগ্ন অটো ও টোটোওয়ালারাও নতুন জীবন পাবেন। সর্বোপরি জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে। তাই করোনার নিয়মনীতি মেনে, যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে লোকাল ট্রেন অবিলম্বে চালানো উচিত। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ, আর দেরি নয়, মফস্সল ও শহরতলির লাইফলাইন সচল করে উৎসবের উপহার দিন আমজনতাকে।

রাধারমণ গঙ্গোপাধ্যায়

বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

বিশৃঙ্খল

কলকাতা ও শহরতলিতে স্পেশাল ইএমইউ লোকালে জোর করে ওঠা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। খবর হচ্ছে। বেশির ভাগ ঝামেলার খবরই শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার। যাঁরা নিয়মিত এখন স্পেশাল ট্রেনে যান, তাঁদের সংক্রমণের ভয়, আর এক শ্রেণির মানুষের কর্মস্থলে দেরি হওয়ার ভয় এবং তার চেয়েও বেশি যাতায়াতের খরচ বেড়ে যাওয়ার ভয়। দু’পক্ষই নিরুপায়। আরও বেশি অসহায় বোধ হয় রেল। তাঁদের তো শ্যাম রাখি, না কুল রাখি অবস্থা। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিরুপায় মানুষগুলির উপর লাঠি চালাতে হচ্ছে। যাঁদের উপর লাঠি চলছে, যাঁরা মূলত অবরোধ করছেন, এমনিতে তাঁদের খুব অল্প সংখ্যকই আমাদের পাশে বসেন, বেশির ভাগই বসেন ট্রেনের মেঝেতে। ভুল করে সিটে বসে পড়লে বাবুরা হয় স্পষ্ট করে বলেন, নয়তো এমন মুখভঙ্গি করেন, যাতে বোঝা যায় তাঁরা সিটে না বসলেই ভাল হয়।

অথচ এই শ্রেণির যাতায়াতের কথা ভেবেই কিন্তু ট্রেনে যাতায়াতের খরচ এ দেশে মাত্রাতিরিক্ত কম। এই সত্যটাই স্পষ্ট হচ্ছে লোকাল ট্রেনে জোর করে উঠতে যাওয়ার খবরে। আমার সীমিত অভিজ্ঞতা থেকে কলকাতার লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের তিন ভাগে ভাগ করতে পারি— শিয়ালদহ মেন লাইনের যাত্রী, বনগাঁ লাইনের যাত্রী এবং শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার যাত্রী। মেন লাইনের যাত্রীরা সাধারণত লাইন করে উঠবেন (পারলে), লাইন করে দাঁড়াবেন, এবং লাইন করে নামবেন— এমন ভাবেই যাতায়াত করে অভ্যস্ত। দক্ষিণ শাখায় যে প্রচণ্ড ভিড় হয়, তাতে এই শৃঙ্খলা বজায় রাখা যাত্রীদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাঁদের মাথায় একটাই কথা ঘোরে— উঠতে হবে এবং নামতে হবে, যে করেই হোক। এখন ট্রেনে উঠতে না পেরে বেশির ভাগ অবরোধের খবর এই দক্ষিণ শাখা থেকেই আসছে। তবে আমার বিশ্বাস, শুধুমাত্র এক দিকে এই সমস্যা আটকে থাকবে না। বরং যত দিন যাবে, দিকে দিকে এই সমস্যা ছড়িয়ে পড়বে। পেট বড় বালাই। শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদ অনেক পরে আসে। কথায় বলে, ভুঁড়ি ঠান্ডা তো মুড়ি ঠান্ডা।

শঙ্খমণি গোস্বামী

কলকাতা-১২২

লোকাল নয় কেন

বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন সব কিছুকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তখন মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদে লোকাল ট্রেন চালানোর দাবিতে সরব হয়েছেন বনগাঁ শাখা, মেন শাখা-সহ অন্যান্য শাখার নিত্যযাত্রীরা। তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রচার করে চলেছেন। তাঁরা আরও দাবি জানাচ্ছেন, রুটিরুজির টানে যে ভাবে বাসে কিংবা অন্য গাড়িতে ঠাসাঠাসি ভিড়ে মানুষ কর্মস্থলে যাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে লোকাল ট্রেন চললে অনেক সুস্থ ভাবে যাতায়াত করতে পারবেন। বর্তমানে বহু মানুষ সাইকেল কিংবা মোটর সাইকেল চেপে অফিস যাচ্ছেন আর অনেকেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাত-পা ভেঙে ঘরে বসে আছেন। এই সমস্ত যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেশির ভাগ মানুষ এই মুহূর্তে পুরো বেতন পাচ্ছেন না, কেউ কেউ দু’মাসে এক বার বেতন পাচ্ছেন, অনেককেই অর্ধেক বেতন দিয়ে কোনও মতে সংসার চালাতে হচ্ছে। এ ছাড়া ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ, কারও বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতেই নাভিশ্বাস উঠছে। এর পর প্রতি দিন বাসভাড়া কিংবা মোটর সাইকেলের জন্য তেল কিনতে গিয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছেন তাঁরা। তাই প্রত্যেকের দাবি, যে ভাবে মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে, সেই ভাবেই উপযুক্ত নিয়মবিধি মেনে, প্রয়োজনে বেশি সংখ্যক ট্রেন দিয়ে যদি লোকাল চালু করা যায়, তবেই তাঁরা বাঁচতে পারবেন।

প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement