আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু।
‘বিজ্ঞান সাধকদের শহরে হচ্ছে চার দিনের উৎসব’ (২-১১) শীর্ষক খবরে বলা হয়েছে, “গাছেরও প্রাণ আছে, তা-ও বলেছিলেন সেই জগদীশচন্দ্র বসুই।’’
জগদীশচন্দ্র লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন, কিন্তু শরীর সায় না দেওয়াতে সে পড়া ছাড়তে হয়। তার পর কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজ থেকে বিএ (প্রকৃতি বিজ্ঞান ট্রাইপস) এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এসসি পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার (জীববিদ্যা বা উদ্ভিদবিদ্যা নয়) অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এ সময় তাঁর প্রধান বৈজ্ঞানিক-নেশা ছিল ‘ফোটোগ্রাফি’ আর ‘শব্দগ্রহণ’, গবেষণালব্ধ ফলাফল লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হতে থাকে। ফলস্বরূপ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ১৮৯৬ সালে ডি এসসি দেয়। কাজে কাজেই জীববিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা বা উদ্ভিদবিদ্যা— কোনওটাতেই তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি’ ছিল না।
১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা কংগ্রেসে তাঁর উপস্থাপিত গবেষণাপত্রের নাম ছিল 'On the Similarity of Responses in Inorganic and Living Matter'। তাঁর লেখা কিছু বই: 'Response in the Living and Non-Living', 'Researches on Irritability of Plants', 'Physiology of the Ascent of Sap', 'The Nervous Mechanism of Plants', 'Motor mechanism of plants', 'Growth and tropic movements of plants'।
ছোট কথায়, গাছের উপর তাঁর সফল গবেষণা ছিল: প্রাণী এবং কিছু অজৈব পদার্থের মতো গাছের কোষ-কলাও নানা বাহ্যিক প্রভাবকের (প্রাকৃতিক: যেমন তাপ, আলো, শব্দ, এমনকি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি; কৃত্রিম: যেমন বৈদ্যুতিক, তাপীয় বা যান্ত্রিক) প্রভাবে প্রায় একই রকম ভাবে সাড়া দিতে সক্ষম, আর প্রাণীদের মতো তারাও জীবনচক্র ও প্রজননতন্ত্রের অধিকারী।
“গাছেরও প্রাণ আছে”—গবেষণালব্ধ এমন কোনও ফলাফল তিনি কখনও কোথাও প্রকাশ করেননি। ব্যাপারটা আমাদের কোথাও (বৈজ্ঞানিক ভাবে) বোঝার ভুল, কিংবা অধিক পরিমাণে বাঙালি-আবেগের ফল।
কল্লোল সরকার
রথতলা (পশ্চিম), উত্তর ২৪ পরগনা
পাশ-ফেল
‘কাহার পরীক্ষা’ (৫-১১) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের প্রেক্ষিতে এ চিঠি। শেক্সপিয়রের ‘দ্য টেম্পেস্ট’ নাটকে গঞ্জালো স্বর্ণযুগে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। অমর্ত্য সেনও এক বার বলেছিলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই শুনছেন যে শান্তিনিকেতনের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অতীত-বিলাসিতার প্রতিনিধি-বর্গ সে-যুগে যেমন, এ-যুগেও তেমনই উপস্থিত। স্কুলে পাশ-ফেল ব্যবস্থার উৎপাটনের ফলেই শিক্ষাব্যবস্থার সাড়ে-সর্বনাশ হয়েছে বলে তাঁদের দৃঢ় প্রত্যয়। মূলত সেই বিপুল জনমতের চাপেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ফিরে আসার পথে। অন্তত,পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে। অভিভাবক ও শিক্ষকমণ্ডলীর সিংহভাগ মনে করেন এই জাঁতাকলেই শিক্ষাব্যবস্থার অধোগতি রুখে দেওয়া যাবে। কিন্তু এই একরৈখিক সরলীকৃত ভাবনার বিপরীতেও কিছু ভাবনা আছে।
তথাকথিত ‘নো ডিটেনশন’ পদ্ধতিতে এ রাজ্যে যে ব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান, তাতে কিন্তু শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীর চোদ্দো বছর বয়স পর্যন্ত তাকে চাপমুক্ত পরিবেশে স্কুল কাঠামোর মধ্যে থাকতে দেওয়া হয় মাত্র।
কিন্তু এ কথা স্মর্তব্য, কোনও ছাত্রকে তার প্রথম বোর্ড সার্টিফিকেট পেতে হলে অর্থাৎ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে, তাকে নবম শ্রেণি, দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা এবং বোর্ড গৃহীত মাধ্যমিক পরীক্ষা— এই ত্রিবিধ পরীক্ষাতেই যথাক্রমে পাশ করতে হয়। এখানে ঐতিহ্যের প্রতিনিধিরা বলবেন, যে ছেলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছুই শিখল না, সে নবম দশমের পাঠ্যসূচি কী ভাবে আত্তীকরণ করবে। যদি শিক্ষাবিজ্ঞানের উপর ভরসা রাখতে হয়, তা হলে বিজ্ঞাপনী ভাষায় বলতে হয়, ইচ্ছা জাগতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। একটি শিশুকে যদি আট বছর প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যানিকেতনের সুসঙ্গে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়, যে কোনও শিক্ষাবর্ষেই তার শিক্ষাগ্রহণের ও আত্তীকরণের ক্ষমতার ত্বরণ আসতেই পারে। যদি তা না-ও আসে, আট বছরের সময়ানুবর্তিতা নিয়মানুবর্তিতা সহপাঠ্যক্রমিক চর্চা ও সামগ্রিক যাপনে তার অন্তরের গঠন উন্নত হয় নিঃসন্দেহে। কে বলতে পারে, স্কুল কবাডি দলের প্রতিনিধিত্ব করে সে খুঁজে পাবে না তার ভবিষ্যৎ জীবিকার হদিস। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কোনও ছাত্রীর পরিবেশিত নৃত্যের প্রশংসাও ভবিষ্যতের নৃত্য-স্কুলের পথে তাকে এগিয়ে দিতে পারে। অন্য দিকে, পঞ্চম বা প্রথম শ্রেণিতে পাঠরত অবস্থায়, যখন একটি প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী তার শহুরে শিক্ষকের উচ্চারণটাও বোঝে না, সেই সময়ে তাকে ‘ফেল’ দেগে দেওয়ার পক্ষে যাঁরা, তাঁরা কি শিশুটির শিশু-শ্রমিকের তকমা পাওয়া সুনিশ্চিত করছেন না? বিরাট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ফেল করিয়ে তাদের স্কুলছুট করার মধ্যে শিক্ষা-প্রগতি আছে?
পাশ-ফেল প্রথম শ্রেণি থেকেই ফিরিয়ে আনতে উন্মুখ সনাতনপন্থীরা বর্তমান ফর্মেটিভ সামেটিভ বিন্যাস, পিকক মডেল, কিছুটা রূপায়িত করতে তৎপর হয়েছেন কি? রেমিডিয়াল ক্লাস কি সব স্কুলে যথাযথ হয়? প্রশ্ন থেকে যায়।
আরও একটা জনপ্রিয় অভিযোগ, পাশ-ফেল না থাকলে, পড়াশোনাতে বা পরীক্ষায় ছাত্র প্রণোদনা পাবে না। কিন্তু টিউশনে পাশ-ফেল না থাকা সত্ত্বেও, সেখানে ছাত্রদের নম্বরের পারস্পরিক তুলনাই তো তাদের মোটিভেশন হয়ে দাঁড়ায়।
যদি সরকারের তরফ থেকে প্রতি ব্লকে একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল করা হয় এবং সেখানে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়, তবে আন্তর্জাতিক ভাষাকে সন্তানের শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যম করতে চাওয়া অভিভাবকবৃন্দের, পরিকাঠামোহীন অন্য বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে চলে যাওয়া অনেকটাই রোখা যাবে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে নবম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীদের সায়েন্স বা আর্টস এই দুই ভাগের সুযোগ থাকার কথা ভাবা যেতে পারে, অন্য অনেক বোর্ডে যা হয়। তা হলে খুব দুর্বল ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের অযথা ‘সূচক’, ‘লগারিদম’ বা উপপাদ্য বীজগণিতের জাঁতাকলে পড়া গিনিপিগ মনে করবে না। জীবনমুখী কিছু তথ্য ও হাতে-কলমে কিছু শিক্ষা যদি স্কুল থেকেই তারা পেয়ে যায় (‘উৎকর্ষ অভিযান’ শিরোনামে কতিপয় স্কুলে এ রকম কিছু শিক্ষাদান চালু হয়েছে ইতিমধ্যে) তা হলে তাদের পেশা-প্রবেশেও তা সহায়ক হবে।
শোভন সেন
সাঁতরাগাছি, হাওড়া
দেবদূত
ঝড়বৃষ্টির সন্ধ্যায় ল্যান্সডাউন-রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে দাঁড়িয়ে ভিজছিলাম। কোনও যানবাহন পাওয়ার উপায় নেই। আমার বয়স ৭৮। তার ওপর দুটো হাঁটু বাদ গিয়েছে। দিশাহারা অবস্থা। হঠাৎ এক জন স্কুটার আরোহী এসে আহ্বান জানালেন স্কুটারে উঠে পড়ার। একটু দ্বিধা হলেও, উঠেই পড়লাম। আমার গন্তব্য জানতে চাইলেন। জানালাম, কাছাকাছি কোথাও নামালেই চলবে। আমার গন্তব্যের কাছাকাছি অটোতে উঠিয়ে দিলেন। তখনও প্রবল বর্ষণ চলছে। মনে হল উনি দেবদূত। দুঃখ এই যে তাঁকে ধন্যবাদ জানাবার সুযোগ পেলাম না।
রাণু চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-১৯
কুইন মাদার
‘লন্ডন ডায়েরি’ (১০-১১) বিভাগের ‘ফেরা’ পরিচ্ছেদে লেখা হয়েছে, হেলেনা বনহ্যাম কার্টার, পিটার মর্গ্যানের পরিচালনায় ‘দ্য কুইন’ ছবিতে ‘কুইন মাদার’ হয়েছিলেন। ‘কুইন মাদার’-এর অভিনয় করেছিলেন সিলভিয়া সিম্স। আর ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন স্টিফেন ফ্রেয়ার্স।
সুমন চক্রবর্তী
হাওড়া