‘তাঁর মূল্যায়ন’ (৯-২) শীর্ষক চিঠিতে ‘‘শ্যামাপ্রসাদ ১৯৪১ সালের আগে রাজনীতিতে শামিল হননি’’ বাক্যটি প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা।
কবিশেখর কালিদাস রায় লিখিত ‘শ্যামাপ্রসাদ জীবনী’ পুস্তিকাটি পুনরায় শ্যামাপ্রসাদের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ২০০১ সালে পরিবর্ধিত রূপে প্রকাশ করে শ্যামাপ্রসাদ ফাউন্ডেশন, আশুতোষ মুখার্জি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, কলকাতা। এই বইয়ের (পৃ ৫৪) থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি, ‘‘শ্যামাপ্রসাদের রাজনৈতিক মঞ্চে প্রবেশ ১৯২৯ সালে কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থিপদে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি রূপে বঙ্গীয় আইনসভা।’’ পরের বছর কংগ্রেসের প্রস্তাব অনুযায়ী তিনি পদত্যাগ করেন।
একই বক্তব্য দেখা যায় অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায় লিখিত ‘মহাজীবন শ্যামাপ্রসাদ’ বইটিতে (এনবিটি, ২০১৬)। এ ছাড়াও ১৯৪০ সালে তিনি বাংলার হিন্দু মহাসভার সভাপতি হন।
পত্রলেখক ‘মুসলমান বাঙালি’ সম্পর্কে শ্যামাপ্রসাদের মনোভাব নিয়েও লিখেছেন। একটি ঘটনা উল্লেখ করি। উপরোক্ত প্রথম বইটিতে এর বিশদ বর্ণনা আছে (পৃ ৩৪-৪৬)। যে সময় উপাচার্য ছিলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকায় ‘শ্রী’ অক্ষর এবং পদ্ম-চিহ্ন সংযোজন করলেন শ্যামাপ্রসাদ। স্বভাবতই অ-হিন্দু ছাত্র, অধ্যাপকেরা প্রতিবাদ জানালেন এতটাই যে ১৯৩৭ সালে, ‘‘বিক্ষুব্ধ মুসলমান ছাত্রগণ দলবদ্ধ ভাবে সমাবর্তন বর্জন করেন।
বঙ্গের প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ফজলুল হক এবং আরও পাঁচ জন মুসলমান মন্ত্রীর মধ্যে এক জনও উপস্থিত হন নাই। ভূতপূর্ব শিক্ষামন্ত্রী এবং বর্তমানে বিধানসভার স্পিকার অনুপস্থিত ছিলেন।’’
এই পতাকা বিতর্ক গড়ায় সেই সময়কার আইনসভায়। ৬-৮-১৯৩৭ তারিখে শিক্ষা বিভাগের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট জানায়, পদ্ম ভারতের প্রতীক। বিপুল সমালোচনার মুখে ১২-৩-১৯৩৮ তারিখে সিন্ডিকেট পতাকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।
সম্মিলিত ব্রিটিশ বিরোধিতার সময়ে ছাত্র তথা বিদ্বজ্জনেদের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী এমন পতাকা বিতর্ক শ্যামাপ্রসাদ (উপাচার্য— ১৯৩৪-৩৮) সৃষ্টি করলেন কেন?
সমর দাস
কলকাতা-৪৭
সেতু চাই
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত সাগরদ্বীপ একটি জলবেষ্টিত ভূখণ্ড। বর্তমান সাগরবাসীর আশু প্রয়োজন হল মুড়িগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ। নদীর ভাটার সময় প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস/ ভেসেল পরিষেবা বন্ধ থাকে। হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি হয়। যাঁরা প্রতি দিন কর্মসূত্রে নদী পারাপার করেন, তাঁদের তো অসুবিধে হয় বটেই, চিকিৎসার জন্য যাঁদের কাকদ্বীপ এবং ডায়মন্ড হারবার নিয়ে যেতে হয়, অনেক সময় তাঁদের অবস্থার অবনতি ঘটে।
ওয়াসিম আক্রম
মন্দিরতলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
আদিগঙ্গা
বলা হয়, আদিগঙ্গা বা টলি সাহেবের নালার উপরে মেট্রো রেলের পিলার থাকায়, আদিগঙ্গা পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। এই পিলার কিন্তু টালিগঞ্জ করুণাময়ীর পর থেকে। তাই নালাটির উৎস থেকে আলিপুর, পুটিয়ারি করুণাময়ী পর্যন্ত নিয়মিত পরিষ্কার করা যেতেই পারে, যে-ভাবে অন্য বড় বড় ড্রেন পরিষ্কার করা হয়। গঙ্গার জোয়ার ভাটা কাজে লাগিয়ে পরিষ্কার করা খুব ব্যয়সাধ্য হয়তো নয়। নালাটির দুই ধারে কংক্রিটের দীর্ঘ ড্রেন বসিয়ে দিয়ে, নোংরা জল আদিগঙ্গায় পড়বার আগেই কালেকশন করে নেওয়া যেতে পারে।
একান্তই ভাল কিছু করা না গেলে, পুরো নালাটিকে রাস্তায় পরিণত করা হোক, যেমন ভাবে এক সময়ে আপার আর লোয়ার সার্কুলার রোড তৈরি করা হয়েছিল। তা হলে রাস্তার দু’ধার দিয়ে ড্রেন তৈরি করা যাবে আশপাশ অঞ্চলের ময়লা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কালীঘাট শ্মশানে গঙ্গাজলের একটি বড় চৌবাচ্চা করে দিলেই শ্মশানযাত্রীদের পুণ্যকাজ হয়ে যাবে। ওই অঞ্চলে অপরিশোধিত গঙ্গা জলের আলাদা পাইপও আছে। গঙ্গার জোয়ারে অনেক সময় ভবানীপুর কালীঘাট অঞ্চলে জল জমে যায়, তাও আর হবে না।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৬১
গঙ্গাসাগরে বাস
রাজ্য সরকারি পরিবহণের পরিদর্শক হওয়ার সুবাদে, এ বছর গঙ্গাসাগর মেলার প্রবেশদ্বার লট ৮-এর অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ডে, ১২-১ থেকে ১৭-১ ছ’দিন ডিউটি করার সৌভাগ্য হয়েছিল। মেলা-ফেরত প্রায় সমস্ত তীর্থযাত্রীই লট ৮-এর বাস স্ট্যান্ডে এসে সেখান থেকে বাস ধরে বাবুঘাট বা হাওড়া পৌঁছন। যত তীর্থযাত্রী এই পথে নিজের রাজ্যে ফিরে যান, তার তুলনায় এই অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ডের পরিকাঠামো খুবই সাধারণ। ফেরার পথে যে যেখান থেকে পারেন বাস ধরে নেন, তাই মূল স্ট্যান্ডে বাস ঢোকার আগেই অর্ধেক সিট ভর্তি হয়ে যায়। ভিন্রাজ্যের দলবদ্ধ তীর্থযাত্রী, যাঁরা একসঙ্গে একই বাসে যেতে নিরাপদ বোধ করেন, তাঁরা এক বাসে জায়গা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। বয়স্ক, মহিলা তীর্থযাত্রীরা বাসে ওঠার অসম প্রতিযোগিতায় হেরে, অনেক বাস ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। প্রশাসন যদি বাসে ওঠার গেট পর্যন্ত ব্যারিকেড করে দেয়, সুবিধে হয়।
এই অস্থায়ী বাস স্ট্যান্ডে সরকারি বাসের জন্য পার্কিং যথেষ্ট না থাকায়, খালি বাস হাওড়ায় ফেরত পাঠিয়ে দিতে হয়। অথচ এই বাসগুলি পাৰ্কিং-এ রেখে দিতে পারলে, যাত্রীদের খুব সুবিধে হত। সরকারি বাসের স্টাফদের কথাও ভাবতে হবে, পাঁচ-ছ’ঘণ্টা ডিউটি করে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ফেরত যেতে হয়, ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরেরা খাওয়ারও সময় পান না।
এ বারে স্নানের পর ভিন্রাজ্যে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা দেখে এটা পরিষ্কার, প্রায় সমস্ত তীর্থযাত্রী স্নানের দিন (১৫-১) সারা রাত ও পরের দিন (১৬-১) সকালের মধ্যেই ফিরে যাচ্ছেন। ওই সময় যত বেশি সম্ভব বাস পাঠালে, খুব ভাল হয়। এ বারে ১৬ তারিখ রাতের বাসগুলি কিন্তু ফেরার জন্য যাত্রীর আশায় সারা রাত রাস্তায় অপেক্ষা করে, পর দিন কার্যত খালি অবস্থায় হাওড়া ফেরত গিয়েছে।
আর, স্নানের দিন সারা দিন যদি লট ৮ থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত সরকারি বাস পরিষেবা দেওয়া যায়, তা হলে প্রচুর তীর্থযাত্রী শিয়ালদহ হয়ে নিজ বাসস্থলে ফিরতে পারবেন।
রতিকান্ত ঘোষ
আশুতোষ পল্লি, বারাসত
করণিকের কথা
‘আপসের বদলিও আটকে বহু শিক্ষকের’ (৬-১২) শীর্ষক খবর পড়ে এই চিঠির অবতারণা। বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলিতে কর্মরত করণিকেরাও যে মানুষ, তাঁদেরও বদলির প্রয়োজন আছে, সে কথা সরকার যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখে না। স্বাধীনতার পর থেকে কোনও সরকারই বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার করণিকদের নিয়ে ভাবেনি। অথচ মাধ্যমিক যোগ্যতার চাকরি নিয়ে প্রতিনিয়ত তাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক যোগ্যতার কাজ করে চলেছেন। তাঁদের চণ্ডীপাঠ থেকে জুতো সেলাই সবই করতে হয়। কোনও কর্মতালিকা নেই। বর্তমান সরকারের আমলে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, শিক্ষাশ্রী ইত্যাদি নানা ছাত্রছাত্রী কল্যাণমুখী প্রকল্প-সহ সমস্ত ধরনের অনলাইন সংক্রান্ত কাজ অধিকাংশ বিদ্যালয়ের করণিকেরা অত্যন্ত দক্ষতা, নিষ্ঠা এবং গুরুত্ব-সহ করে চলেছেন। বিনিময়ে মিলছে সরকারের অবহেলা (বর্তমান ‘রোপা’তেও কোনও বাড়তি অর্থনৈতিক সুবিধা নেই) আর বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার প্রধানদের হুমকি আর অপমান। কোনও শিক্ষক সংগঠন, সংবাদমাধ্যম, বুদ্ধিজীবীরাও করণিকদের কথা বলেনি, ভাবেনি। শিক্ষক সংগঠনগুলি নিজেদের দল ভারী করে শুধু তাদের দাবি আদায় করে নিয়েছে।
পার্থ প্রদীপ মণ্ডল
কলকাতা-১২৫
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।