আটলান্টিকের পাড়ে উরুগুয়ের রাজধানী।
প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী দেশ উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিয়ো। একটি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মসূত্রে সেপ্টেম্বর থেকে আমি এখানে বসবাস করছি। আটলান্টিক সমুদ্র সৈকত বেষ্টিত শান্ত-স্নিগ্ধ নিরাপদ এই শহরটি দক্ষিণ আমেরিকার সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত। এখন থেকে খুব সহজেই আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং পেরু যাওয়া যায়। এই মনোরম শহরটিতে সমস্ত উরুগুয়ের অর্ধেক মানুষ বসবাস করেন। এখানকার প্রধান আকর্ষণ সমুদ্রসৈকতে অবস্থিত ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রশস্ত রাজপথ। যা ‘রাম্বলা’ নামে পরিচিত। রাম্বলার একপাশে দূষণহীন নীলাভ আকাশ। অন্য পাশে চোখধাঁধানো সমুদ্র সৈকত। এখানকার লোকজন মূলত স্প্যানিশ এবং এনারা খুবই সহায়ক, উদার ও পরিশ্রমী। রাম্বলায় সারাদিন স্থানীয় লোকজনকে হাঁটাচলা, জগিং, সাইক্লিং, রোলার স্কেটিং, স্কেট বোর্ডিং বা কখনও তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে পানীয় হাতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করতে দেখা যায়।
সমস্ত বিশ্ব থেকে করোনা সংক্রমণের খবর এলেও, উরুগুয়েতে তখনও করোনার করাল গ্রাস এসে পৌঁছায়নি। সমস্ত কিছু স্বাভাবিকই ছিল। হঠাৎ ছন্দপতন ঘটল ১৩ মার্চ। প্রথম দিনে এল চারটে সংক্রমণের খবর। সঙ্গে শুরু হয়ে গেল সমস্ত দোকান, সুপার মার্কেটে খাবার সংগ্রহ করার ভিড়। এই চারজনের মধ্যে একজন আবার একটি বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিল। পরে সেই বিয়ে বাড়ি থেকে আরও ৪৪ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। একে একে স্কুল, কলেজ, অফিস সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে গেল। স্তব্ধ হয়ে গেল সমস্ত রকমের জনসমাবেশ। কিছু সুপার মার্কেট, খাবারের দোকান এবং ওষুধের দোকান ছাড়া সমস্ত কিছুই বন্ধ হয়ে গেল। আমাদেরও শুরু হয়ে গেল ওয়ার্ক ফ্রম হোম।
মন্টেভিডিয়ো উরুগুয়ের একমাত্র বিমানবন্দর হওয়ার জন্য দেশের মোট সংক্রমনের বেশিরভাগটাই এই শহরের মধ্যে দেখা দিল। হটাৎ করে প্রাণবন্ত প্রানোচ্ছল শহরটাকে কেউ যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষে ভর্তি থাকা সমুদ্র সৈকতগুলো শুধু বালি আর বালি । মানুষের নাম গন্ধ নেই। এতদিনের চেনা শহরটাকে অচেনা লাগতে শুরু করল । ইতিমধ্যে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ভারত থেকে লকডাউনের খবর এলো। আমার স্ত্রী, সন্তান, মা এবং আমার সমস্ত আত্মীয়রা কলকাতায় আছে। আমার বোন ও তার স্বামী সূত্রে আমেরিকার শিয়াটেলে আছে । ওদের জন্য চিন্তা হতে শুরু করল। বিশেষ করে আমার মা এবং স্ত্রীর মা এবং বাবার বয়স বেশি হওয়ার জন্য মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা শুরু হল। ভিডিয়ো কলে ওদেরকে যতটা সম্ভব আশ্বাস দেওয়া শুরু করলাম।
আরও পড়ুন: চিন-পালানো পুঁজি ধরতে নামছে ভারত, জমিও তৈরি, কিন্তু পারবে তো?
আরও পড়ুন: যুক্তি না মানলে কোনও মঙ্গলময়ের ক্ষমতা নেই এই অন্ধকার দূর করার
লকডাউনে জনহীন মন্টেভিডিয়োর রাম্বলা।
অন্যান্য দেশের মতো এখানে অত কঠোরভাবে লকডাউন করা হয়নি। এখানে সমস্ত যানবাহন এখনো চালু আছে, তবে যাত্রীসংখ্যা সংখ্যা খুবই কম। খুব প্রয়োজন ছাড়া এখন বাড়ির বাইরে প্রায় কেউই বেরোয় না। এখানে সুপারমার্কে প্রতিদিনই যথাযথ পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের কখনোই কোনরকম খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি হয়নি। এখানকার সচেতন মানুষজন সবসময় মাস্ক পড়ে দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তাঘাটে চলাচল করেন। তাই এই শহরের জনসংখ্যা ৩৫ লক্ষ হলেও এই দেশে মোট সংক্রমণের সংখ্যা এখনো ৭০০-র নীচেই আছে। তবে আমরা আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আবার পুরনো পৃথিবীকে দেখতে পাবো। দেশে ফিরে সন্তানের হাত ধরে নতুন পৃথিবীর সূর্যোদয় দেখব।
তন্ময় কান্তি ঘোষ, মন্টেভিডিয়ো, উরুগুয়ে
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে)