cooperative

সম্পাদক সমীপেষু: ভরসা সমবায়

সমবায় পদ্ধতিতে উদ্যোগকে সফল করতে হলে সরকারকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রতি দিনের জৈব বর্জ্য সংগ্রহ, সার উৎপাদন, প্যাকেটজাত করা ও বিপণন ব্যবস্থা, সবই সমবায়ের মাধ্যমে করা যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৫৮
Share:

কৃষিকাজে সহায়ক জৈবসার উৎপাদন কৃষিসহায়ক শিল্প হিসেবে শহর-সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকায় শুরু করা যেতে পারে। কাঁচামাল সংগ্রহ, সার উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের সব ব্যবস্থাই সমবায় পদ্ধতিতে করতে হবে। সমবায়ে আগ্রহী স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের নিয়ে প্রারম্ভিক পর্যায়ের কাজ শুরু করতে হবে। আর বোঝাতে হবে চাষিদের, যাঁরা এই উদ্যোগকে সফল করতে পারেন। বর্তমানে কৃষিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। কৃষিবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, রাসায়নিক সারের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে দিয়ে বাড়াতে হবে জৈবসার ও জৈব কীটনাশকের ব্যবহার। কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে তা শুরুও হয়েছে। তবে ব্যাপক ভাবে এখনও প্রচার হয়নি। অনতিবিলম্বে জৈব সারের ব্যবহার না বাড়ালে আগামী দিনে ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

Advertisement

প্রতি দিনের জৈব বর্জ্য সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজে লাগানো হলে এক দিকে যেমন পরিবেশ দূষণ কমবে, অপর দিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সমবায় পদ্ধতিতে এই উদ্যোগকে সফল করতে হলে সরকারকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রতি দিনের জৈব বর্জ্য (কাঁচামাল) সংগ্রহ, সার উৎপাদন, প্যাকেটজাত করা ও বিপণন ব্যবস্থা, সবই সমবায়ের মাধ্যমে করা যায়। যাঁরা নিজেরা কিছু করতে আগ্রহী, তাঁরা পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পে এগোতে পারেন।

বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়, গোলকুঁয়াচক, পশ্চিম মেদিনীপুর

Advertisement

প্লাস্টিকের দাপট

কত দিন আগে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “আমরা আরম্ভ করি শেষ করি না”। ভারত সরকার ১ জুলাই থেকে সিঙ্গল ইউজ় প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করেছে। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১২০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ হতে চলেছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক পতাকা, আইসক্রিম স্টিক, থার্মোকলের প্লেট, কাপ, সব কিছু নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে। পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা এর কম ঘনত্বের প্লাস্টিক বিক্রি করবেন, তাঁদের ৫০০ টাকা জরিমানা হবে। যাঁরা ব্যবহার করবেন, জরিমানা হবে তাঁদেরও। আমজনতা কিছু দিন এটা নিয়ে আলোচনা করেছিল। আমাদের গ্রামের দিকে প্রায় সবাই বাজারে ব্যাগ হাতে যেতে অভ্যস্ত। তাই খুব একটা অসুবিধে হয়নি। শহরাঞ্চলে একটু ভয় ভয় ভাব দেখেছিলাম। পরিবেশ দফতর দু’দিন আড়মোড়া ভেঙেছিল। কলকাতায় ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায়ও হয়েছে। কিন্তু তার পর আবার একই অবস্থা।

আসলে ব্যাপারটার গুরুত্ব আমরা এখনও উপলব্ধি করতে পারিনি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপুঞ্জে বলেছিলেন ২০২২-এর মধ্যে ভারতে ‘সিঙ্গল ইউজ় প্লাস্টিক’ ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। যার জন্যে রাষ্ট্রপুঞ্জ তাঁকে ২০১৮ সালে ‘চ্যাম্পিয়ন অব আর্থ’ পুরস্কার প্রদান করেছিল। অন্যান্য রাজ্য কিন্তু আমাদের থেকে অনেকটা এগিয়ে। বিহারে সরকারি যে কোনও অনুষ্ঠানে প্লাস্টিক বোতল, থার্মোকলের প্লেট ব্যবহার নিষেধ হয়ে গিয়েছে। শুধু পটনাতেই এক দিনে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার ৩৫ লক্ষ কাপড়ের ব্যাগ ছাত্রদের মধ্যে বিতরণ করেছে। প্রায় ৮০০ প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরির ছোট ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। ওখানে প্রথম বারে ৫০০০, দ্বিতীয় বারে ১০ হাজার ও তার পরে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। ওড়িশা সরকারও প্রচারে নেমেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রধান দফতরে প্লাস্টিক ঢোকা একেবারে নিষেধ। সেখানে ৫০ হাজার মাটির কুঁজোর অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তামিলনাড়ুর হোটেলে খাবার-দাবার কেনার সময়ে নিজস্ব পাত্র নিয়ে গেলে ৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

তবে শুধু আইন দিয়ে হবে না। দরকার মানুষের সচেতনতা। আমরা অনেকেই জানি না, সমুদ্রে প্রায় ৭০০ প্রাণী অবলুপ্ত হওয়ার পথে শুধুমাত্র প্লাস্টিকের জন্যে। আমাদের নদিয়া জেলায় মেয়েদের স্কুলে যেমন ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা শেখানোর জন্যে ‘পিঙ্ক ফ্ল্যাগ ক্লাব’ তৈরি হয়েছে, তেমনই আবার বিভিন্ন স্কুলে পরিবেশ সচেতনতার জন্যে পরিবেশ-ক্লাব তৈরি হয়েছে। স্কুলের ছেলেমেয়েরা মাসে এক দিন করে মানুষকে সচেতন করার জন্যে পথে নামছে। এ রকম সারা বাংলা জুড়ে পরিবেশ সচেতনতার প্রচারে ঝড় তুলতে পারলে, তবেই আমরা এ বিশ্বকে শিশুদের বাসযোগ্য করে যেতে পারব।

রণজিৎ মুখোপাধ্যায়, মুড়াগাছা, নদিয়া

মুখ ঢেকে যায়

সম্প্রতি ভুবনেশ্বর গিয়েছিলাম কাজে। স্থানীয় সংবাদপত্রে পড়লাম, ভুবনেশ্বর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি) নিয়ম জারি করেছে যে, গাছে, বিদ্যুতের খুঁটিতে অথবা দেওয়ালে কোনও বিজ্ঞাপন লাগানো যাবে না। হোর্ডিং, ব্যানার, সাইনবোর্ড, সব নিষিদ্ধ। এমনকি, কোনও দোকান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের শো-রুম বা দফতরের দিকনির্দেশও গাছ বা খুঁটির গায়ে লাগাতে পারবে না। শহরের সৌন্দর্যায়নের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএমসি। স্যানিটারি ইনস্পেক্টরদের দিয়ে অবৈধ বিজ্ঞাপন চিহ্নিত করা হচ্ছে, এবং সেগুলি ক্রমে সরিয়ে ফেলা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যাঁরা অবৈধ বিজ্ঞাপন দেবেন তাঁদের জরিমানা হবে, বার বার এমন অপরাধ করলে লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে। বিএমসি কমিশনার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বিজ্ঞাপন থেকে টাকা তোলার চাইতে শহরের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা অনেক বেশি জরুরি।

কথাগুলো পড়ে চমৎকৃত হলাম। কলকাতা পুরসভা কি কখনও এমন ঘোষণা করতে পারবে? গত বছর খবরে পড়েছিলাম, বিজ্ঞাপন থেকে আয় বাড়াতে ব্যস্ত এলাকায় পুরসভা বেশি দর হাঁকবে বিজ্ঞাপনের। আর ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি’ পদার্থে বিজ্ঞাপন দিলে কর ছাড় দেবে। তাতে কি প্লাস্টিক, ফ্লেক্স-এর ব্যবহার একটুও কমেছে? রাস্তায় বেরোলে তো সে কথা মনে হয় না। কলকাতার গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, দেওয়ালকে বিজ্ঞাপনমুক্ত করার সাহস কি পুরসভার রয়েছে? অনেক বার ঘোষণা হয়েছে, দৃশ্যদূষণ কমাতে পুরসভা বিজ্ঞাপনের সংখ্যা কমাবে, কিন্তু কাজের বেলা কলকাতার রাস্তায় বেরোলেই বোঝা যায়, যত বৈধ বিজ্ঞাপন, তার অন্তত তিন-চার গুণ অবৈধ ব্যানার ঝুলছে। যার অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের। পুরসভা জরিমানা করছে অবৈধ বিজ্ঞাপনদাতাকে, এমন ঘটনা চোখে পড়েনি। বহু ক্ষেত্রে পুরপিতা, পুরমাতারাই নিজেদের ছবি সম্বলিত ব্যানার লাগিয়েছেন গাছে, খুঁটিতে, এমনকি রাস্তার ডিভাইডারে, যা দৃষ্টিপথে বাধা সৃষ্টি করে, উড়ে এসে দুর্ঘটনাও ঘটাতে পারে। শহরকে সুরক্ষিত ও সুন্দর করার কোনও দায়ই কি কলকাতা পুরসভার নেই?

অনন্ত দাশ, কলকাতা-৬৮

ধুলোর ঝড়

মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নয়ডায় বেআইনি ভাবে নির্মিত ‌টুইন টাওয়ার ধূলিসাৎ করা হল। যে বা যাঁরা নির্মাণ করেছিলেন, তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়ায় দেশবাসী আনন্দিত। কিন্তু টাওয়ার দু’টি নিশ্চয়ই রাতারাতি তৈরি হয়নি। যে সরকারি কর্মকর্তারা বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করা থেকে সমস্ত রকম দুর্নীতির মধ্য দিয়ে অট্টালিকা দু’টি তৈরি করাতে সরাসরি সাহায্য করেছেন, তাঁদের শাস্তি হবে না কেন? আরও তদন্ত করে দেখা হোক, এই বেআইনি নির্মাণে স্থানীয় রাজনীতিকদের সমর্থন কতটা ছিল। তাঁরাও যেন রেহাই না পান। দ্বিতীয়ত, এত বড় টাওয়ার ভাঙায় যে ধূলিঝড় টিভির পর্দায় দেখলাম, তা অবাক করে। বিশেষত শিশু ও যাঁদের ‘সিওপিডি’ নামক ফুসফুসের রোগ আছে, এই ধুলো তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। তবে যে ভাবে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার জয় এসেছে, তাতে কলকাতার মানুষও বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস পাবেন।

সংগ্ৰাম অগস্তি, কলকাতা-৬০

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement