Satyendra Nath Bose

ঈশ্বর মিল লেন

১৯৬৫ সাল। কলেজ শেষ করে কলকাতার এক ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগ দিয়েছি। এক দিন এক কাজে বেরিয়ে হেদুয়ার কাছে ঈশ্বর মিল লেনের এক বাড়িতে কড়া নাড়তে দরজা খুলে গেল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০৩
Share:

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু।

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবন তথ্যনিষ্ঠ ভাবে তুলে ধরতে গিয়ে পথিক গুহ (‘বিজ্ঞানে এক একলব্য’, পত্রিকা, ২২-৮) প্রশ্ন করেছেন, মানুষটা কেমন ছিলেন? আমার তরুণ জীবনের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল।

Advertisement

১৯৬৫ সাল। কলেজ শেষ করে কলকাতার এক ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগ দিয়েছি। এক দিন এক কাজে বেরিয়ে হেদুয়ার কাছে ঈশ্বর মিল লেনের এক বাড়িতে কড়া নাড়তে দরজা খুলে গেল। বয়স্ক এক জন, লুঙ্গি পরা, খালি গা, কাঁচাপাকা অবিন্যস্ত চুল, চোখে মোটা কাচের চশমা। ভিজ়িটিং কার্ড এগিয়ে দিয়ে যাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই তাঁর নাম (সম্ভবত রমেন বসু) বলতে বৃদ্ধ বললেন, ও আমার ছেলে, এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। তত ক্ষণে চিনে ফেলেছি, ইনিই বিশ্ববরেণ্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু! স্যুট-টাই পরা কেতাদুরস্ত আমি ঢিপ করে প্রণাম করে বললাম, স্যর, আপনাকে আমাদের কলেজে দেখেছি। শোনামাত্র বললেন, ভেতরে এসো। সোফায় বসিয়ে প্রশ্ন করলেন, কোন কলেজ তোমার? কলেজের নাম বলাতে কলেজের পরিবেশ, অধ্যক্ষের প্রশংসা করলেন। কথা চলাকালীন সামনে হাজির হল একটি প্লেটে দুটো সন্দেশ, এক গ্লাস জল। আমার তখন বুক দুরুদুরু, উনি যদি বিজ্ঞানের কোনও জটিল প্রশ্ন আমাকে ধরে বসেন? তা করেননি, বরং সন্দেশের প্লেট হাতে তুলে দিলেন।

আমি তখন ভাবছি, কত তাড়াতাড়ি উঠে পড়া যায়। তাড়াহুড়োয় গলায় সন্দেশ আটকে যাওয়ায় জলের গ্লাসটাও হাতে দিলেন। জল খেয়ে বললাম, আমি তা হলে যাদবপুর যাই। বিদ্যুদ্বেগে রাস্তায় নেমে পিছন ফিরে দেখলাম, উনি তখনও দরজায় দাঁড়িয়ে।

Advertisement

রমাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য

কলকাতা-২৬

বিজ্ঞান শিক্ষক

গত কয়েক দশকে সার্ন-এ পদার্থের মূল কণার অস্তিত্ব সন্ধানে বৈজ্ঞানিক তৎপরতার কারণে বারে বারে বিভিন্ন মাধ্যমে উচ্চারিত হয়েছে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামাঙ্কিত ‘বোসন’ কণার কথা। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পদার্থের পঞ্চম দশা তৈরির চেষ্টার ঘটনায় ফের খবরের শিরোনামে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট।

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথকে নিয়ে বহু আলোচনা হলেও শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথকে নিয়ে তেমন তথ্য মেলে না। যা মেলে তা হল, ছাত্রদের টুকরো টুকরো স্মৃতিচারণ, বা কিছু ঐতিহাসিক দলিলের ভিত্তিতে অনুমান। যেমন, তাঁর ছাত্র জ্যোতির্ময় ঘোষের কথায়, কোনও নোটস ছাড়াই সম্পূর্ণ স্মৃতি থেকে সদ্য প্রকাশিত যে কোনও গবেষণাপত্রের ব্যাখ্যা সমীকরণ-সহ বিদ্যুৎগতিতে বোর্ডে লিখে ফেলতেন তিনি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটি পড়ানোর খ্যাতি শুনেই ১৯২১ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যেন্দ্রনাথকে নিয়োগ করেন প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ফিলিপস হার্টগ। এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্স থেকে প্রকাশিত এস এন বোস, দ্য ম্যান অ্যান্ড হিজ় ওয়ার্কস-এ উল্লেখ রয়েছে, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে সায়েন্স কলেজে পদার্থবিদ্যা পড়ানোর দায়িত্ব দেন। জার্মান বিজ্ঞানীদের গুরুত্বপূর্ণ ও সাম্প্রতিকতম গবেষণার কথা ছাত্রদের জানাতে সত্যেন্দ্রনাথ নিজে জার্মান শিখতে শুরু করেন। শুধু তা-ই নয়, জার্মান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের অনুমতিও আনিয়েছিলেন জার্মানি থেকে। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের সবচেয়ে আধুনিক শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার এই আগ্রহ, শিক্ষকের এমন কর্তব্যপরায়ণতা আজ বিরল।

রক্তিম পাল

হাওড়া

শিক্ষার সঙ্কট

সম্প্রতি মুম্বই ও দিল্লির আইআইটি-র প্রধানরা বলেছেন, তাঁরা জেইই, নিট প্রবেশিকা পরীক্ষা সমর্থন করেন। আমাদের রাজ্যে (তথা দেশে) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া এবং বিদ্যায়তন চালু করার ব্যাপারে দোলাচল এখনও চলছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, নানা কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিভাগীয় অফিস, পর্যায়ক্রমে চালু করা হচ্ছে। বিদ্যায়তনগুলিও পর্যায়ক্রমে শুরু করা যায় না কি? সম্প্রতি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, করোনা থেকে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে ছাত্রছাত্রীদের, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে এত দিন শিক্ষাব্যবস্থাকে অচল করে রাখলে।

ভারতে এত দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল-কলেজ কেন বন্ধ থাকল, ছাত্রছাত্রীদের সামূহিক ক্ষতি কতটা হল, সে সম্পর্কে কিন্তু শিক্ষকরা নীরব থেকেছেন। স্কুল-কলেজে, বিশেষ করে যেগুলি সরকারি অনুদানে চলে, অনলাইন পাঠদানের ব্যবস্থা খুব সীমিত ভাবেই চালু থেকেছে। সম্প্রতি বাড়িতে করার মতো পড়াশোনার কিছু কাজ ছাত্রছাত্রীদের জমা দিতে বলা হয়েছে বিদ্যালয়ে। আবার যে সব বেসরকারি স্কুল-কলেজ সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত নয়, তার অনেকগুলিতে অনলাইন পড়াশোনা বেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে হচ্ছে।

অর্থনীতির তত্ত্ব বলছে, ব্যতিক্রমী কোনও বড় খরচের ক্ষেত্রে (যেমন, রাস্তা তৈরি, বৃহৎ শিল্প, রেল প্রভৃতির পত্তন) সরকারের প্রাথমিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে সরকারি অনুদান অনেক ক্ষেত্রে ‘ইনএফিশিয়েন্ট’ হয়ে পড়ে, অর্থাৎ কার্যকারিতা হারায়। আমাদের স্কুল ও উচ্চশিক্ষার অনেকখানি অংশ এখনও সরকারি অনুদানে চলে। সেই কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর মান বা পরিমাণের সঙ্গে বেতন পাওয়ার প্রায়শই সম্বন্ধ থাকে না। বিদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে দ্রুত পড়াশোনা চালু করেছে, তাতে ব্যক্তিগত মালিকানার ভূমিকা রয়েছে। এ দেশে দেখা যাচ্ছে, বিদ্যালয়গুলিতে বার্ষিক পরীক্ষা এবং নতুন বছরে ছাত্রভর্তির ব্যবস্থায় খুব বিলম্ব নেই। কিন্তু এগুলির কোনও স্পষ্ট রূপরেখা হাতে নেই। সকলেই উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। পড়ুয়ারা দীর্ঘ দিন বাড়িতে থাকায় পড়াশোনার থেকে ছেদও লম্বা হচ্ছে। তাই তাড়াতাড়ি ছোট ছোট পদক্ষেপে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা একান্ত দরকার।

স্বামী ত্যাগরূপানন্দ

রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, মালদহ

ভারত-চিত্ত

জয়া মিত্রের ‘রবীন্দ্রনাথের উপরই দখলদারি!’ (২৯-৮) প্রসঙ্গে বলতে চাই, রবীন্দ্রনাথ কখনওই রাজনীতি-বিমুখ থাকতে পারেননি। মাঝে মাঝেই তিনি রাজনৈতিক আলোচনা বা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। আবার ব্যক্তিস্বার্থের উদগ্র রূপ দেখে সরেও এসেছেন। শিক্ষা সংস্কার-সমস্যাকে সবার উপরে স্থান দিতে গিয়েই তাঁর ‘বিশ্বভারতী’র চিন্তাভাবনা। সারা জীবন তিনি যে দখলদারির রাজনীতির বিরোধিতা করেছেন, সেই দখলদারি রাজনীতিই আজ তাঁকে গ্রাস করতে বসেছে। তিনি স্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছিলেন, “সমস্ত পৃথিবীকে বাদ দিয়া যাহারা ভারতকে একান্ত করিয়া দেখে তাহারা ভারতকে সত্য করিয়া দেখে না। তেমনি যাহারা কেবল এক অংশকেই ভারতের সমগ্রতা হইতে খণ্ডিত করিয়া দেখে তাহারাও ভারত-চিত্তকে নিজের চিত্তের মধ্যে উপলব্ধি করতে পারে না।” (শিক্ষা)। যাঁরা তাঁর এই রাজনৈতিক ও শিক্ষা দর্শনের মর্মার্থ উপলব্ধি করতে অক্ষম, তাঁদের হাতেই রবীন্দ্রনাথ আজ বন্দি— এটা রবীন্দ্র দর্শনের ট্র্যাজেডি।

সাইদুর রহমান

বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

লোকে কী বলবে

সায়েন্স নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছি। বাংলা বড্ড ভাল লাগে, তবু অনার্সটা নিতে পারলাম না। ওই যে, লোকে কী বলবে! জীবনে চলার পথে, নিজ স্বপ্নপূরণে, এমনকি পছন্দ-অপছন্দ, পোশাক-পরিচ্ছদ, প্রিয় খাবার খেতে গিয়েও যেন কানে ভেসে আসে, লোকে কিছু বলবে নাকি। মন চায়, ওই লোকগুলোকে অবহেলা করে সামনে এগিয়ে যাই। পারি না। নিজের অজান্তেই কি সকলে কিছু কিছু বিষ ছড়িয়ে একটা অসুস্থ সমাজ গড়ার কারিগর হয়ে যাচ্ছি?

সেখ সামিরুল ইসলাম

মঙ্গলকোট, পূর্ব বর্ধমান

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement