‘শান্তি? পাকিস্তানের সঙ্গে?’ (১৪-১২) শীর্ষক নিবন্ধের জন্য জয়ন্ত কুমার রায়কে সাধুবাদ জানাই। ভারতের দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার উষালগ্ন থেকে দেশ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ১৭ বছর, ভারতের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি, জাতীয় স্বার্থ দ্বারা চালিত না হয়ে, আন্তর্জাতিক শান্তি, সৌভ্রাত্র, মৈত্রী দ্বারা চালিত হয়েছে। ভারতের দরিদ্র মানুষের মঙ্গলচিন্তা না করে, সমগ্র এশিয়া, আফ্রিকার নিপীড়িত মানুষের মুক্তির চিন্তা করতে গিয়ে, কল্পনাবিলাসী ও বক্তৃতাসর্বস্ব ভ্রান্ত নীতি তৈরি করা হয়েছে।
নেহরু সমাজতন্ত্রের নামে পৃথিবীর একমাত্র নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকারকে অন্যায় ভাবে বরখাস্ত করলেন। রাশিয়ার অনুসরণে ভারতে যে ‘কম্যান্ড ইকনমি’ চালু করলেন, তার ফল হল বিষময়। ‘পারমিট রাজ’— লাইসেন্স রাজ জন্ম দিল দুর্নীতিগ্রস্ত আমলারাজ। প্রশাসনে ও কর-ব্যবস্থায় কিছু কাঠামোগত ‘কসমেটিক’ সংস্কার করার জন্য ডেকে আনলেন মার্কিন ও ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের। যে নেহরু স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বার বার বলেছেন ও লিখেছেন যে আইসিএস এবং আইপি ব্রিটিশ কলোনিয়াল অত্যাচারের প্রতীক, ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় পটেল বিশেষ প্রয়োজনে নতুন নামকরণে দু’টি কৃত্যক রেখে দিলেও, তার পর নেহরু কাঠামো, পদ্ধতি ও আচরণে সেই পুরনো ধারাকে আরও শক্তিশালী করে তুললেন। আমলাতন্ত্র ও জনগণ দু’টি বিপরীত মেরুতে প্রতিষ্ঠা পেল। দুর্নীতিগ্রস্তদের ও খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারীদের নিকটস্থ ‘ল্যাম্পপোস্টে ফাঁসি দেওয়ার’ পরিবর্তে, রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতা তাদের হাতেই তুলে দিতে সাহায্য করলেন। গাঁধীবাদী মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষ তাঁর ধীরে চলার পরামর্শ পশ্চিমবঙ্গে মেনে চলতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে পদত্যাগ করালেন।
দেশীয় শিল্পপতিদের শক্তিশালী না করে, নানা আইন ও প্রতিষ্ঠানের নিগড়ে তাঁদের বেঁধে ফেলে ভারতের মাথায় বিদেশি ঋণের বোঝা চাপিয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ-এর সাহায্যে এ দেশে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ সৃষ্টি হল। সমাজতন্ত্রবাদের নামে দেশের জনগণের অর্থ আত্মসাতের যে শক্ত ভিত তৈরি হল, তা আরও দৃঢ় হল ইন্দিরা গাঁধীর রাজত্বকালে। ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের ফলে শুরু হল কোটি কোটি টাকা লোপাট করা— যার পোশাকি নাম ব্যাড লোন ও নন-পারফর্মিং অ্যাসেটস। সত্তরের দশকের সেই পাপ আজ মহীরুহে পরিণত হয়ে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। কালো টাকার শক্তি তখন থেকে বাড়তে বাড়তে ধীরে ধীরে সাদা টাকাকে গ্রাস করে ফেলল। ভারত হয়ে উঠল এশিয়ার ‘ব্রাজিল’ বা ‘আর্জেন্টিনা’। জিডিপি বাড়ছে, দ্বিগুণ হারে বাড়ছে দরিদ্রের সংখ্যা।
‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নেহরু ধারার আর একটি অসাধারণ আবিষ্কার। যে কোনও আধুনিক রাষ্ট্র বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ধর্মনিরপেক্ষ হতে বাধ্য। ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ ধর্মনিরপেক্ষতার ও গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত। ড. অম্বেডকর ও রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ বিষয়টিকে সে ভাবেই দেখেছিলেন। নেহরু পদত্যাগের ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্রপতিকে হিন্দু কোড বিলে সই করতে বাধ্য করলেন। তাঁরই পৌত্র ‘শাহবানু মামলা’র পর সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ভারতে এই ভাবে যা আসলে ব্যক্তি ও সমাজের পালনীয়, তা রাজনৈতিক পরিসরে চলে এল। রাজনৈতিক দলগুলি সানন্দে ধর্মনিরপেক্ষতার নাম করে ধর্মীয় তাস খেলে চলল।
ভারতের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার জনগণ। আর সবচেয়ে বড় বিপদ রাজনৈতিক দলগুলি। তারা জনতাকে বড়ই বোকা ভাবে। মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা যদি দলগুলির প্রচারের ও নীতির সম্পূর্ণ উল্টো হয় এবং তাঁরা যদি নির্বাচনে নির্ভয়ে ও নিরাপদে ভোট দিতে পারেন, তবে দলগুলি নির্বাচনের ফল দেখে চমক খাবে।
শ্যামল কুমার রায়
কলকাতা-৫০
গল্পের লোক
আরামবাগ শিশু-উদ্যানে দুই মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছি। সেখানে দু’জন স্কুল শিক্ষক নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। এক জন বলছেন, ‘মাস্টারদের অবস্থা আর কী বলব! নিজেদের জল তুলে খেতে হচ্ছে। সামান্য কলের ট্যাপ ঘুরিয়ে বোতলে জল ভরে টেবিলে দিয়ে যাবে, গ্রুপ-ডি বাবুরা সেটুকুও করবে না।’ কথাটা কানে আসতেই মনটা একটু কেমন করে উঠল। জানি না টেবিলে টেবিলে জল তুলে রাখাটা গ্রুপ-ডি কর্মীদের কাজ কি না? মনে পড়ে গেল এক মহামানবকে নিয়ে এক কিংবদন্তি।
জনৈক ডাক্তারবাবু রেল গাড়ি থেকে স্টেশনে নেমে ‘কুলি’ ‘কুলি’ বলে চিৎকার করতে লাগলেন। পরনে ধুতি, গায়ে মোটা চাদর, পায়ে সামান্য চটি পরিহিত এক জন লোক হাঁকডাক শুনে এগিয়ে এলেন সাহায্য করতে। ডাক্তার তাঁর হাতে ব্যাগ তুলে দিলেন। লোকটাও ডাক্তারের পিছু পিছু ব্যাগ বয়ে নিয়ে স্টেশনের বাইরে দাঁড়ানো পাল্কিতে পৌঁছে দিলেন।
ডাক্তার কুলিভাড়া হিসেবে দু’টি পয়সা দিতে হাত বাড়ালেন। লোকটা বললেন, ‘‘না না, পয়সা দিতে হবে না। আপনি এত ছোট ব্যাগ নিয়ে এত বড় বিপদে পড়েছিলেন দেখে আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছি।’’
ডাক্তার বললেন, ‘পয়সা দিতে হবে না! তুমি কেমন কুলি হে?
— আমি ঠিক কুলি নই।
— তা হলে তুমি কে?
আমি ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা। লোকে অবশ্য বিদ্যাসাগর বলেও ডাকেন।
এই কথা শুনে ভীষণ লজ্জায় পড়েন ডাক্তারবাবু। পায়ে পড়ে বলেন, এর পর থেকে আমি নিজের কাজ নিজেই করব।
দ্বিশতজন্মবর্ষ পরেও বিদ্যাসাগরের চিন্তা-ভাবনা শিক্ষক সমাজের কাছেও কী প্রাসঙ্গিক, তা মনে হতে লাগল।
সৈকত রায়
আরামবাগ, হুগলি
আর এক বার
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে সিএএ ও এনআরসি বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন অনভিপ্রেত কিছু ঘটনার দরুন রাজ্য সরকারের নির্দেশে মুর্শিদাবাদ জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা ১৫-১২ তারিখ থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশেষে ছ’দিন পর ২০-১২ তারিখের রাত থেকে আবার তা চালু করা হয়। ইতিমধ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশন দ্বারা প্রকাশিত, জেনারেল ডিগ্রি কলেজ-এ বিভিন্ন বিষয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদের vacancy-র বিজ্ঞপ্তির (বিজ্ঞাপন নং ২৯/২০১৯) পরিপ্রেক্ষিতে, আবেদনের সময়সীমা ১৯-১২ তারিখে উত্তীর্ণ হয়ে যায়। আমার মতো বহু প্রার্থী এর ফলে উক্ত চাকরির জন্য আবেদন করতে সক্ষম হয়নি। আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, ওই পদের জন্য আবেদনের সুযোগ আর এক বার দেওয়া হোক।
সৌরভ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
লাইফ জ্যাকেট
শ্রীরামপুর থেকে হুগলি নদী পেরিয়ে ব্যারাকপুর যাওয়ার ভুটভুটি নৌকায় যাত্রী নিরাপত্তায় আবার শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। কোনও যাত্রীকে লাইফ সেভিং জ্যাকেট পরতে বাধ্য করা হচ্ছে না। জলযানে ওঠার আগে শুধু মাইক্রোফোনে নিরাপত্তাবর্মটি পরার অনুরোধ জানিয়েই কর্তব্য শেষ। অথচ দুই পারেই ওই জীবনদায়ী উপাদানগুলো ডাঁই করে রাখা। যদিও ব্যারাকপুরের দিকে অপেক্ষমাণ জ্যাকেটের সংখ্যা খুবই কম। পোশাকগুলো পরিষ্কার রাখাও জরুরি। নোংরা জ্যাকেট পরতে অনেকেই ইতস্তত করবেন।
২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুরে ধোবিঘাট থেকে শ্রীরামপুর ঘাটে যাওয়ার ফেরিযাত্রায় আমিই একমাত্র যাত্রী, যিনি লাইফ সেভিং জ্যাকেটে ভূষিতা। নৌকার অন্য যাত্রীরা আমাকে ভিন্গ্রহের জীব ভাবছিলেন। আমিও সংখ্যালঘুর বিপন্নতা নিয়ে নৌকাবিহার করলাম। আবার একটা দুর্ঘটনা ঘটলে হয়তো কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসবেন। সিসিটিভিতে কি এ সব দৃশ্য ধরা পড়ে না?
শিপ্রা ভৌমিক
চন্দননগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।