কয়েক দিনের তফাতে দু’টি বাঘিনি হত্যা (মহারাষ্ট্রের যবতমলে ও উত্তরপ্রদেশের দুধওয়ায়) খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় ক্রমাগত বৃক্ষছেদনের ফলে জঙ্গলের আয়তন কমে আসা ও খাদ্যের জোগান হ্রাস পাওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল বাঘিনি দু’টি। তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, সংরক্ষিত বনভূমির এত কাছে মানুষের বাসস্থান বন্ধ করা যায় না? কিছু জায়গা পশুপাখিদের জন্য সংরক্ষিত থাক, যেখানে বা যার আশেপাশে মানুষের বসতি নিষিদ্ধ করা হোক। বৃক্ষ ছেদন বন্ধ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ রকম ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে।
তীর্থ মজুমদার
কলকাতা-৫১
একটি প্রশ্ন
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে ‘অবনী’ নামক যে বাঘিনিকে গুলি করে মারার সিদ্ধান্ত সরকার নিল তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এমনিতেই ভারতে বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, তার ওপর যদি এ ভাবে পিটিয়ে, গুলি করে মেরে ফেলা হয়, তা হলে তো অচিরেই এরা বিলুপ্ত হবে। কয়েক মাস আগে আমাদের রাজ্যের লালগড়ের ঘটনাও বুঝিয়ে দেয় সাধারণ মানুষ ও সরকারের কাছে বন্যপ্রাণীর জীবনের মূল্য কতটা।
বন ও বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত বড় বড় আইন পাশ করানোর পরেও এই ধরনের ঘটনাগুলো বার বার ঘটছে। সরকারের কাছে প্রশ্ন হল: এটাই কি একমাত্র উপায় ছিল? বাঘিনিকে গুলি না করে আর কি কোনও ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যেত না?
মৌমিতা দাস
বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বৈচিত্রের কারণ
‘পদবি বৈচিত্র’ (১-১১) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে এই চিঠি। অনেক দিন জঙ্গিপুরে চাকরি ও একটি পত্রিকা করার সুবাদে বহু বার মির্জাপুর গ্রামে গিয়েছি। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সূত্রে জানি গ্রামটি রেশম কাপড় বোনার জন্য বিখ্যাত। ওখানকার কোড়িয়াল শাড়ি জগৎবিখ্যাত ছিল। এক সময় মুর্শিদাবাদ মালদহ বীরভূমের বিস্তৃত অঞ্চলে চলত রেশম গুটির চাষ, রেশম সুতো উৎপাদন ও রেশম কাপড় বোনার কাজ। শত শত গ্রাম ও সেখানকার মানুষ এই বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে সরকারি নীতি বৈগুণ্যে সেই শিল্প ক্রমশ রুগ্ণ হয়ে আসে। তখন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ দু’তিনটি গ্রামে কেন্দ্রীভূত হন। তার মধ্যে ইসলামপুর ও মির্জাপুর অন্যতম। বৃত্তি বাঁচানোর তাগিদেই বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ একদা এখানে উঠে এসেছিলেন। পুকুরে বেড়াজাল দিলে সব মাছ যেমন এক জায়গায় আটকা পড়ে সেই রকম। ফলে রেশমশিল্পের সঙ্গে যুক্ত নানা অঞ্চলের মানুষ পরিত্রাণের আশায় নানা রকম উপাধি ও গ্রামচিহ্ন নিয়ে এক জায়গায় এসে জড়ো হন। মির্জাপুরের উপাধি বৈচিত্রের এটাই ঐতিহাসিক কারণ বলে মনে হয়।
শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৬১
হেনস্থা
আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, সহায়িকাদের বর্তমানে রাজনৈতিক দলের সমাবেশে ভিড় বাড়ানো, কোনও নেতার আমন্ত্রণে পুষ্পবর্ষণ করা থেকে আয়োজিত বিভিন্ন উৎসবে ফাইফরমাস খাটা প্রভৃতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে, নিচুতলার অস্থায়ী কর্মীদের এই ভাবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ব্যবহার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রতি মুহূর্তে এঁরা চেয়ারম্যান, পঞ্চায়েত সদস্য, গ্রামপ্রধান এমনকি রাজনৈতিক দলের নেতাদের খামখেয়ালিপনার শিকারও হচ্ছেন। সামান্য (দুই বা তিন হাজার টাকা) ভাতা প্রাপ্ত এই মহিলা কর্মচারীদের হেনস্থা বন্ধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা আশু প্রয়োজন।
রুদ্রকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
হাওড়া
শ্যামাপোকা
প্রায় দশ বছর যাবৎ পশ্চিমবঙ্গের জীবজগৎ হতে কার্তিক-অঘ্রান মাসের এক অবিচ্ছেদ্য কীট বা পতঙ্গ শ্যামাপোকা উধাও হয়ে গিয়েছে। তার রং ছিল এক অদ্ভূত ধরনের গাঢ় আর হালকা সবুজের মিশ্রণ। আকৃতিতে ছিল এক ইঞ্চির দশ ভাগের এক ভাগ। দু’টি ডানায় ছিল ক্ষদ্র কালো গোলাকার দাগ। সন্ধ্যায় কৃত্রিম বিশেষত হলুদ আলো জ্বললেই শত শত শ্যামাপোকা ঝাঁকে ঝাঁকে আলোর চারিদিকে ঘুরত। যেখানেই আলো, সেখানেই প্রায় অন্ধকার করে ঘিরে রাখত। সঙ্গে ছিল বিরক্তিকর কামড়। দোকানদার গাছের ডাল ভেঙে আলোর পাশে সেই ডাল বেঁধে খদ্দেরদের সেই বিরক্তি থেকে অব্যাহতি দিতে বৃথা চেষ্টা করতেন। ঘরেও রেহাই ছিল না। আলো নিভিয়ে সেই পোকা তাড়ানোর চেষ্টা চলত। পরের দিন সকালে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকত শীতঘুমে যাওয়ার আগে পিঁপড়ের খাদ্য হিসেবে হাজার শ্যামাপোকার মৃতদেহ। এ ঘটনা ছিল মাত্র দশ থেকে বারো দিনের। বছরের এই সময়টায় নিজেদের এ ভাবেই অভ্যস্ত করে নিয়েছিলাম। কিন্তু এদের এই অদ্ভুত জীবনচক্রের ইতিহাস কোনও দিন জানতে চাইনি। আজ তারা প্রায় বিলুপ্ত। তাদের অনুপস্থিতি সামাল দিতে এসেছে একই মাপের ধূসর রঙের এক পতঙ্গ, তবে সংখ্যায় কম। কোনও পাঠক যদি এই অবলুপ্তির প্রতি এবং তাদের জীবনচক্রের প্রতি আলোকপাত করেন, বাধিত হব।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৫৭
বকরি ইদ
‘কালীপুজো ও বলিদান’ (৪-১১) শীর্ষক চিঠি এবং ‘বন্ধ হোক এই হত্যা’ (৬-১১) শীর্ষক চিঠি দু’খানির সঙ্গে ১০০% সহমত পোষণ করেই বলছি যে, ঈশ্বর/ দেবদেবীর নামে নিরীহ পশুগুলি নির্বিচারে হত্যা করা নিঃসন্দেহে অপরাধ। এগুলো আইন করেই বন্ধ করা উচিত। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, উপরোক্ত লেখা দু’টিতে বকরি ইদে কুরবানির কথার উল্লেখ নেই। উভয় ক্ষেত্রেই পশুবলি বন্ধ হওয়া উচিত নয় কি?
নিতাই মণ্ডল
সাউথ গড়িয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
পশুবলি
খ্যদ্য হিসেবে পশুর মাংস খাওয়া যদি অন্যায় না হয়, তা হলে উপাসনালয়ের পশুবলি অন্যায় কেন হবে— দু’টি বিষয়কে এক করার চেষ্টা করা হলেও, দু’টি বিষয় কিন্তু ভিন্ন। একটি প্রকৃতিসৃষ্ট ক্ষুধা নিবারণের উপায় হিসেবে গণ্য, কিন্তু অন্যটি হল নিজের আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে নিরীহ পশুর হত্যা। যেটাকে আমরা বলি মানত করা, অর্থাৎ চাকরির বিনিময়ে, সন্তান লাভের বিনিময়ে, বিশেষত পুত্রসন্তান লাভের বিনিময়ে মানত। এখানে মুখ্য উদ্দেশ্যই হল কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, মাংস ভোজন হল গৌণ বিষয়। কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক প্রথা সাহসের অভাবে বন্ধ করতে না পারার কারণেও টিকে রয়েছে। কিছু চাওয়াপাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় পশুবলি করাটাকে আমরা ঘুষের সঙ্গেও তুলনা করতে পারি। পশুবলির সমর্থনে যাঁরা, তাঁদের উদ্দেশে কিছু প্রশ্ন:
১) পশুর রক্তের বিনিময়ে ধর্মীয় স্থানের বা ধর্মের গৌরব বৃদ্ধি হতে পারে কি?
২) শিশুর সামনে বলি দেওয়া কি যুক্তিযুক্ত!
৩) গ্রামের প্রচুর মানুষ চড়া দামে ভক্তি ও ভয়ে পশু কিনতে বাধ্য হয় এটাও কি যুক্তিযুক্ত!
৪) সরল মনের ভেতর অলৌকিক ভাবনা গেঁথে যায় তাতে কিছু কি লাভ হয়! চাকরি, পুত্রসন্তানের মানত যদিও বাস্তবায়িত হয় না, তবুও এই সব উদ্ভট চিন্তা জিইয়ে রাখতে পশুবলি সাহায্য করে এটাকে কি বলবেন!
পশুবলি বন্ধ হোক। এক দিকে চলুক পশুবলির বিরোধিতায় জনমত তৈরির প্রচেষ্টা, আর এক দিকে শুরু হোক আইনের কঠোর প্রয়োগ।
রামকৃষ্ণ মণ্ডল
সিরজাম, নূতনগ্রাম, পুরুলিয়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।