সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪-০ গোলে জয়ী হয়। অথচ, দায়সারা ভাবে ডিডি ভারতী চ্যানেলে ও ফ্যানকোড অ্যাপ-এ ম্যাচটা দেখানো হল। এটা যদি ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ হত? কয়েকশো কোটি টাকায় সেরা চ্যানেলে বিক্রি হয়ে যেত স্বত্ব। এআইএফএফ কর্মকর্তাদের এই ধরনের উদ্যোগহীনতার কারণে বিশ্বকাপ তো দূর অস্ত্, এশিয়া সেরা হতেও কয়েক শতক লাগবে আমাদের। এমন নয় যে, ম্যাচটা দেখালেই বিরাট কিছু পরিবর্তন হয়ে যেত। কিন্তু ফুটবল খেলে বড় হতে চাওয়া, ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেরা এতে উৎসাহিত হত। শুধু তা-ই নয়, পুরস্কার বিতরণের প্রক্রিয়াটিও ছিল একই রকম পরিকল্পনাবিহীন। তুলনায় পাড়ার টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ অনেক গোছানো হয়।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মতো এমন একটা টুর্নামেন্ট, যেখানে ভারত ১৩ বার ফাইনালে উঠে ৯ বার চ্যাম্পিয়ন, তার এত অবহেলা কেন? দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ফুটবলে ভারত পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়। ক্রীড়াপ্রেমীদের উৎসাহও ছিল তুঙ্গে। অথচ, এমন একটা টুর্নামেন্টের বিপণন করা গেল না? তাতে কোষাগারটা একটু শক্তিশালী হত। যেটা ভবিষ্যতে ফুটবলের কাজেই ব্যয় করা যেত। এর পরও আমরা আশা করি, স্বপ্ন দেখি, ভারত বিশ্বকাপ খেলবে। ফুটবল দলের জন্য এমন অবহেলা কখনও কাম্য হতে পারে না। প্রাক্তন ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার কিন্তু কবেই বলে গিয়েছেন, ভারত ফুটবলের ঘুমন্ত দৈত্য। সেই ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ করুক ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। না হলে ফুটবলপ্রেমীরা কিন্তু আপনাদের ক্ষমা করবেন না।
রমাপ্রসাদ মণ্ডল, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান
অনুপ্রেরণা
ভারতীয় ফুটবল বলতে যাঁর কথা সর্বপ্রথম মনে আসে, তিনি হলেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। এই ৩৮ বছর বয়সেও তিনি যে ভাবে খেলে চলেছেন, গোল করছেন, আবার গোলও করাচ্ছেন, তাতে ক্রীড়াপ্রেমী হিসাবে সকলেই চমৎকৃত। ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে এ পর্যন্ত তাঁর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৯৩টি গোল করা হয়ে গেল। আজ তিনি নিজেকে এক অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। অথচ, এই জায়গায় পৌঁছতে তাঁকে যে কত ঘাম ঝরাতে হয়েছে, দিনের পর দিন কত কঠিন পরিশ্রম ও অনুশীলন করতে হয়েছে, তার খবর ক’জনই বা রাখেন? সুনীল ছেত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন তাঁর অবসর নিয়ে। উত্তরে তিনি বলেছেন, তত দিন খেলা চালিয়ে যাবেন, যত দিন খেলাটাকে ভাল লাগবে, তরুণ ফুটবলারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলতে পারবেন। কতটা আত্মবিশ্বাস থাকলে এ কথা বলা যায়। সুনীল ছেত্রীর কাছে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষণীয়— তাঁর ফিটনেস, শৃঙ্খলা, পরিশ্রম, খেলার প্রতি ভালবাসা ও দেশপ্রেম। তাঁর ভারতীয় ফুটবলে অসাধারণ অবদানের জন্য ফিফা তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র করেছে। এই অসাধারণ ফুটবলারকে অবিলম্বে ভারতরত্ন সম্মানে সম্মানিত করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করব। পাশাপাশি এই সব ভাল খেলোয়াড়কে ক্রীড়া প্রশাসনে নিয়ে এসে ভারতীয় ফুটবল তথা ভারতীয় ক্রীড়াজগৎকে উন্নত করার দাবি জানাই।
অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
লজ্জার কথা
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই বাড়বাড়ন্তের যুগে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল হলেও, দেশের ফুটবল খেলায় যে জনগণ ক্রিকেটের মতো উন্মাদনা নিয়ে চর্চা করে না, সেটা সর্বজনবিদিত। একটা ক্রিকেট ম্যাচ জিতলেই টিভিতে, সংবাদপত্রে যে রকম ফলাও করে খবর প্রচারিত হয়, সেখানে ফুটবল অনেকটাই অবহেলিত। সত্যি বলতে, ক্রিকেটে চার-পাঁচটা শক্তিশালী টিম ছাড়া বাকিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতোই নয়। অন্য দিকে, ফুটবল তার সব রকম উন্মাদনা নিয়ে হাজির এশিয়ান গেমসে, অলিম্পিক্সে। এই খেলার অপেক্ষাকৃত সহজ সরল নিয়মকানুন, টসের মতো একটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুপস্থিতি, বৃষ্টি হলেই খেলা বন্ধ না হওয়া, তুলনায় অনেক কম ব্যয়বহুল— এমন অনেক কারণে সব মহাদেশে এই খেলা সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই খেলাতে আমাদের অতীত সাফল্যও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে যে ভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে তৈরি হওয়ার দরকার ছিল, সে ব্যাপারে আমাদের দেশের সরকার কোনও দিনই ভাবেনি। এ বারের সাফ গেমসে কুয়েতকে ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। এই কুয়েত ফুটবল-বিশ্বকাপ খেলা দেশ। ইদানীং তাদের র্যাঙ্কিং যে একটু পিছিয়ে গিয়েছে, তার পিছনে অন্যতম কারণ— সেই দেশ প্রশাসনিক কারণে তিন বার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ায় বেশ কিছু দিন কোনও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু তাদের সহজাত প্রতিভা এখনও যথেষ্ট। তাই ভারতীয় ফুটবলের এই সাফল্য সত্যি আশার আলো জাগাচ্ছে। কয়েক বছর আগে এই টিমই আমাদের নয় গোলে হারিয়েছিল। সেই টিমকে গ্রুপ ম্যাচে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলাম। শেষ মুহূর্তের আত্মঘাতী গোলে ম্যাচ ড্র হয়ে যায়। আর ফাইনালে তাদের হারিয়েই আমরা ট্রফি জিতে নিয়েছি। আমরা অলিম্পিক্স চলাকালীন খুব লাফালাফি করি। তার পরে আর নীরজ চোপড়া, হকি দল বা কুস্তিগিরদের খবর রাখি না। রাস্তায় আন্দোলন করেন তাঁরা, তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে। আমরা ক্রিকেট জুয়ায় মত্ত হই আইপিএল-এ। হাস্যকর রকমের নিয়মকানুন বানিয়ে পুরোপুরি ব্যাটারদের খেলা হয়ে যাওয়া টি-টোয়েন্টিতে বুঁদ হয়ে থাকি। আর অন্য দিকে বাকি পৃথিবী অলিম্পিক্সে, ফুটবলে নতুন নতুন প্রতিভা তুলে আনে। এই সাফল্য তখনই ধরে রাখা যাবে যদি ফুটবলেও দেশব্যাপী প্রতিভা তুলে আনার মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। ফুটবলে আকর্ষণীয় উপার্জনের ব্যবস্থা করা হয়, ক্রীড়াবিজ্ঞান অনুযায়ী শিশুপ্রতিভার বিকাশের ব্যবস্থা করা হয়।
এত বড় একটা দেশ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ করে নিতে পারে না, এ বড় লজ্জার। দরকার সঠিক সরকারি পদক্ষেপ।
সন্দীপ চক্রবর্তী, মকদমপুর, মালদহ
বাঙালি কই
সাফ ফুটবল ফাইনালে ভারতের পারফরম্যান্স দেখে মন ভরে গেল। ফুটবল যে এখন স্কিলের থেকে শারীরিক শক্তি ও স্নায়ুর উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, ১২০ মিনিটের দুর্দান্ত লড়াই তারই প্রমাণ। কোচ ইগর স্তিমাচ সেই সাহসটা কিন্তু খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরি করে দিয়েছেন, যার ফলে এক গোলে পিছিয়ে পড়েও তাঁরা ঝিমিয়ে পড়েননি। ব্লু টাইগাররা বাঘের মতোই লড়াই করেছেন ও সাডেন ডেথ-এ জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু খেলার মান যতটা ভাল ছিল, দূরদর্শনের সম্প্রচার ছিল ততটাই খারাপ। বিশ্বকাপ ফুটবলের সম্প্রচার দেখে একটু পাঠ নিলে ভাল হত। কিন্তু ফুটবলের মক্কা থেকে ফুটবলার ছিলেন কই? ইগর যখন ৪১ জনকে নিয়ে সাফ-এর কোচিং আরম্ভ করেন, সেখানে বাঙালি ফুটবলার ছিলেন তিন থেকে চার জন। কয়েক জন মূল খেলাতে ভালই খেলেছেন। প্রশ্ন হল, আমরা কেন ২২ বছরের একটা সুনীল তৈরি করতে পারছি না? চ্যানেলে চ্যানেলে রাজনীতির আলোচনার বন্যা বয়ে যায়। সেখানে কেন বাংলার ফুটবল নিয়ে আলোচনা হবে না? কিসের অভাব? টাকা, উদ্যোগ না সদিচ্ছার? যিনি যে রাজনীতিই করুন না কেন, বাংলার ফুটবলের উন্নতির জন্য সবাইকে এক হতে হবে। জেলায় প্রচুর প্রতিভা অপেক্ষায় আছেন হাত ধরার। তাঁদের সঠিক পথ দেখাতে পারলে আমরা আবার গাইতে পারব ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’।
রজত মুখোপাধ্যায়, মুড়াগাছা, নদিয়া