রাজ্য জুড়ে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে হাতির হানা অব্যাহত। জঙ্গল সংলগ্ন ব্লকগুলোতে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা এবং বনবিভাগের সক্রিয়তা থাকা দরকার। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর এবং সোনামুখীর জঙ্গল সংলগ্ন রাস্তায় হাতির হানায় মানুষের মৃত্যু এবং ফসলের ক্ষতির খবর নিত্যদিন খবরের কাগজে পড়তে হচ্ছে। প্রকৃতির এক ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্যই এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে চলেছে। অতীতে বাঁকুড়া- ঝাড়গ্রামের জঙ্গল ছিল খুবই ঘন অরণ্যে ঢাকা। কিন্তু সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের লোভ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। জঙ্গলের ভিতরেও মানুষের লোভের থাবা পড়েছে। আর সেই কারণেই হাতিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ছেদ পড়েছে। জঙ্গলের ভিতরে খাবার নেই বলেই তারা দল বেঁধে শস্যক্ষেত্রে চলে আসছে। বাঁকুড়া জেলায় চাষিরা নিজেদের উদ্যোগে জঙ্গলের মাঝে কৃষিজমিতে মাচা বেঁধে নিজেরা পাহারা দেন। নিজেরাই হাতি তাড়ানোর জন্য তৈরি করে নিয়েছেন ‘হুলা পার্টি’। এই দলের লোকেরা তির, বর্শা, বল্লম, এই ধরনের অস্ত্র নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সারা রাত হাতির হানা থেকে গ্রাম, কৃষিজমি পাহারা দেন। কিন্তু এই দলের অধিকাংশ লোকই অনভিজ্ঞ। ফলে নিজেরাও হাতি তাড়াতে গিয়ে বিপদের মধ্যে পড়েন। বনবিভাগ এঁদের সামান্য কিছু হয়তো সাহায্য করে, তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই এই মুহূর্তে অন্তত বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর-সোনামুখী-ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন জনপদে হাতির হানা নিয়ে উচ্চ প্রশাসনিক স্তরে চিন্তাভাবনা করা দরকার।
শঙ্খ অধিকারী
সাবড়াকোন, বাঁকুড়া
ঘরের আশায়
‘কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা’ প্রকল্প আসার পর আমাদের রাজ্যে বহু মানুষ তাঁদের মাথার উপর ছাদ পেয়েছেন। আরও অনেককে এই প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। দিনের পর দিন একটার পর একটা দুর্নীতি সামনে আসছে। কিন্তু এর বিরাট প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের উপরে। এমন কিছু পরিবার আছে, যারা হয়তো প্রায় এক-দু’বছর ধরে ত্রিপল খাটিয়ে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে। কেউ বা নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ভাড়া বাড়িতে থাকছেন শুধুমাত্র এই আশায় যে, এক দিন তাঁদের আশ্রয়টা পাকাপোক্ত হবে। উলুবেড়িয়া মহকুমার অধীনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ঠিক এ রকমই হচ্ছে। গত দু’বছর ধরে একটা মানুষ তাঁর নিজস্ব বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না, কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে। অর্ধেক কাজ শুরুর জন্যই হয়তো এক বছর সময় লাগবে, এই ভয় তাঁদের ক্রমেই বাড়ছে। কেন এই মানুষগুলোর বাড়ির কাজ শুরু হতে এত দেরি হচ্ছে? কেন সাধারণ মানুষ এই দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন? প্রশ্নগুলো আজ তাঁদের মনে। সরকারের কাছে অনুরোধ, যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের বাড়ি তৈরির কাজগুলো শুরু করা হোক।
তিথি দাস
চেঙ্গাইল, হাওড়া
ওঝাদের কবলে
সাপে কাটা মানুষকে ওঝা-গুনিন বাঁচাতে পারেন না। উন্নততর বিজ্ঞান বা রোবোটিক্স-এর যুগের মানুষকে আজও এই নির্মম সত্যটা বোঝানো যাচ্ছে না। অথচ, এই নিয়ে নানা কর্মসূচিতে সচেতনতার পাঠ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে বিভিন্ন যুক্তিবাদী সংস্থা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েও তারা কাজ করছে। প্রসঙ্গত, সাপ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা বাড়াতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর কিছু দিন আগে একটি ‘স্নেকবাইট অ্যান্ড প্রিভেনশনস’ নামে অ্যাপ চালু করেছে, যা খুব সময়োপযোগী। ওই অ্যাপটিতে ক্লিক করলেই মোবাইলের স্ক্রিনে সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠবে বিভিন্ন বিষধর বা অ-বিষধর সাপের ছবি। এ ছাড়াও কাছেপিঠে কোনও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এভিএস আছে কি না, সে তথ্যও পাওয়া যাবে। আর মিলবে ২৩টি জেলার সর্পবন্ধুর নাম ও তাঁদের যোগাযোগ নম্বর। তবুও কোথাও যেন একটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তা না হলে প্রায় দিনই সংবাদপত্রের পাতায় চোখে পড়ে ওঝার কবলে পড়ে সাপের কামড় খাওয়া রোগীর মৃত্যুর ঘটনা। যেমন, অগস্ট মাসেই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থানার কালুপুর এলাকায় ৭৫ বছরের সতীবালা বৈরাগী নামে এক মহিলাকে সাপে কামড়ালে তাঁর বাড়ির লোকজন পাশে ওঝার বাড়িতে নিয়ে যান। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। মূলত, ওঝার কেরামতির কারণে দেরিতে চিকিৎসা হওয়ায় ওই মহিলার মৃত্যু হয়।
ঠিক একই ভাবে গত জুলাই মাসে পুরাতন বনগাঁর বাসিন্দা সুষমা রায় ও তার কিছু দিন আগে বাগদার আর এক মহিলার সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়। সে ক্ষেত্রেও ওঝা-গুনিন ঝাড়ফুঁক করেছিলেন বলে খবর। প্রতিটি ক্ষেত্রে একই ঘটনা বার বার ঘটছে। তা হলে বিভিন্ন এলাকায় এত ঘটা করে সচেতনতার প্রচারে কি কোনও খামতি থেকে যাচ্ছে? এ বিষয়ে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সংশ্লিষ্ট যুক্তিবাদী সংস্থাকে উদ্যোগী হতে হবে। শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে সচেতনতার পাঠ দিয়ে থেমে থাকলে চলবে না। বিজ্ঞানের যুগেও গ্রামগঞ্জে ওঝা-গুনিন রয়েছেন। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ সেখানে যাবেনই। সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা কোনও ভাবে যাতে ওঝা-গুনিন না করেন, সে বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই মাসে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার তৎকালীন আইসি এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ করেছিলেন। সেই সময় ওই এলাকায় ওঝার কেরামতির কারণে পর পর কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে ওই এলাকার ওঝা-গুনিনদের থানায় ডেকে তিনি নির্দেশ দেন যে, সাপে কাটা রোগী তাঁদের কাছে গেলে তাঁরা যেন সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অন্যথায় ব্যবস্থা করা হবে। রোগীকে তাঁরা যেন চিকিৎসা না করেন, সে বিষয়ে মুচলেকাও লিখিয়ে নেওয়া হয়।
এক বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার আইসির ওই কঠোর নির্দেশ ও মুচলেকার পরেও ঘটনাচক্রে ঠিক একই ঘটনা ঘটে চলেছে। কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে এ ভাবে যাতে আর অকালে কোনও মানুষের প্রাণ না যায়, সে বিষয়ে আরও বেশি করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আধুনিক ও সময়োপযোগী উদ্যোগ করতে হবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে ওঝা-গুনিনদের বিরুদ্ধে কড়া সতর্কতা জারি করে জেলার প্রতিটি থানাকেই কঠোর ভাবে পদক্ষেপ করতে হবে।
মঙ্গল কুমার দাস
রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বিরল কচ্ছপ
হাওড়া আমতার জয়ন্তী গ্ৰামের রথতলার কাছে উদ্ধার হয় একটি ১০ কিলোগ্রাম ওজনের বিরল প্রজাতির ময়ূরখোল কচ্ছপ। কচ্ছপটি উদ্ধার করেন স্থানীয় এক বন্যপ্রাণপ্রেমী। গত ৩১ অগস্ট সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তি দেখতে পান, তাঁদের বাড়ির কাছের এক ডোবা থেকে একটা বড় কচ্ছপ মাঠের দিকে চলে যাচ্ছে। ছুটে গিয়ে ওই ব্যক্তি কচ্ছপটি উদ্ধার করেন। রটে যায় খবর। অনেকে দেখতে চান, কেউ আবার কেড়েও নিতে চান। কিন্তু ওই ব্যক্তি কচ্ছপটিকে সযত্নে ঘরে রেখে দেন আর, খবর দেন বন দফতরে। পরের দিন উলুবেড়িয়া বন দফতরের কর্মীরা তাঁর বাড়ি থেকে কচ্ছপটি উদ্ধার করে গড়চুমুক প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।
গত বছর জুন মাসেও আমতার খসনান গ্ৰামে এক সঙ্গে ১০টি ময়ূরখোল কচ্ছপের বাচ্চা দেখা যায়। সেই কচ্ছপের বাচ্চাগুলো উদ্ধার করে স্থানীয় ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র। সুস্থ করে কচ্ছপগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের বাস্তুতন্ত্রে। ময়ূরখোল কচ্ছপ বা ‘ইন্ডিয়ান পিকক সফটশেল টার্টল’ বিরল ও বিলুপ্তপ্রায়। অনুমান করা যায়, আমতা এলাকায় বিরল ময়ূরখোল কচ্ছপের বাস আছে। এটা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। তাই আমাদের দায়িত্ব এদের বাঁচিয়ে রাখা। এদের বাস্তুতন্ত্র ঠিক রাখা। মানুষকে সচেতন করা। বর্তমানে সব ধরনের কচ্ছপ ধরা, মারা ও খাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।
দীপংকর মান্না
আমতা, হাওড়া