এ বারের বাজেটে কৃষকদের বঞ্চনা করা হয়েছে। সম্প্রতি কৃষি বিল নিয়ে দেশ জুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকেরা। এর মধ্যেই কৃষি বাজেটে গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণবণ্টন ব্যবস্থা বজায় রাখতে কৃষকদের থেকে ধান, গম কেনা হয়। শস্য কেনার বরাদ্দ এক ধাক্কায় কমিয়ে করা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এতে সরকারের কাছে শস্য বিক্রির সুযোগ কমবে।
দেশ জুড়ে কৃষি পরিকাঠামো তৈরি করতে ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল গঠন করার ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। সেই তহবিল গঠন করতে পেট্রল, ডিজ়েলের উপর সেস বসানোর কথা বলা হয়েছে। এই দুই জ্বালানির দাম ইতিমধ্যেই আকাশ ছুঁয়েছে। এর পর ডিজ়েলের দাম বাড়লে জলসেচের খরচও বাড়বে। অর্থাৎ, কৃষকদের ভোগান্তি চরমে উঠবে।
সারের উপরও ভর্তুকি ৯৮৫৭ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। উৎপাদিত শস্যের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর কোনও ঘোষণা নেই। অর্থাৎ, কৃষকদের জন্য ‘অচ্ছে দিন’ বয়ে আনছে না এই বাজেট। কেন্দ্রীয় সরকারের গর্বের পিএম কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পেও বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা পেনশন দেওয়ার প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা খরচ না করতে পারায় নতুন আর্থিক বছরে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের ৬০ বছর বয়সের পর থেকে মাসে ৩০০০ টাকা পেনশনের প্রকল্পেও বরাদ্দ ২২০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে মাত্র ৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এই বাজেটে কৃষকরা চরম অবিচারের শিকার।
অভিজিৎ ঘোষ
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
মনের কথা
শুভনীল চৌধুরীর নিবন্ধ ‘কার স্বার্থ রক্ষা করা হল?’ (৯-২) সঠিক প্রশ্ন তুলেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২১-২২ অর্থবর্ষের জন্য যে বাজেট পেশ করেছেন, তা মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাপন আরও কঠিন করে তুলবে। পিএম কিসান খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হ্রাস, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ৪২ হাজার কোটি, স্বাস্থ্য খাতে ৮ হাজার ও শিক্ষাখাতে ৬ হাজার কোটি টাকা হ্রাস নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় তীব্র আঘাত হানবে। অন্য দিকে বাড়বে বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ, এবং কয়েকটি ব্যাঙ্ক ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ হবে। এই অতিমারির আবহে গরিব, শ্রমজীবী, কৃষক এবং কাজ-হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণা লাঘবের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু বরাদ্দ হল না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির টাকায় যেমন দীর্ঘ দিন দেশ চালানো যায় না, তেমনই কর্পোরেটকে কর ছাড় দিলে তা মানুষের বাঁচার রসদ জোগায় না।
অশোক দাশ
রিষড়া, হুগলি
অপ্রধান
পশ্চিমবঙ্গে ‘কৃষক বন্ধু’ এবং অন্য রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি নামের প্রকল্প নিয়ে ব্লক স্তরে কৃষি দফতর নিরন্তর কাজ করে চলেছে। কিন্তু, এই বিশেষ সহায়তার প্রয়োজন কেন হচ্ছে, যখন কৃষকদের বার্ষিক আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে সরকার এগিয়ে চলেছে? কোথাও কি ভোট-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে কৃষক সহায়তা প্রকল্পগুলি? ব্লক স্তরে কৃষি দফতরের কর্মীরা এখন কৃষক সহায়তা প্রকল্পের জন্য কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, আর উন্নত কৃষি প্রযুক্তি কাঠামো মুখ থুবড়ে পড়ছে। ব্যতিক্রম হিসেবে এখন বেশ কিছু ব্লক ভার্চুয়াল অনলাইন প্রশিক্ষণ মাধ্যমকে বেছে নিলেও, সঠিক পরিকাঠামোর অভাবে তা গতি পাচ্ছে না। জৈবিক পদ্ধতিতে কৃষি সম্প্রসারণ থমকে আছে। পূর্বের যোজনা কমিশন যে ভাবে কৃষিকে প্রাধান্য দিয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ ফিকে হয়ে গিয়েছে। কৃষিতে বাজেট বরাদ্দ থাকলেও একটি বিশেষ স্তরে তা সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে। প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তা প্রকল্পগুলি প্রচলিত হয়েছে। কিন্তু কৃষিব্যবস্থা বা কৃষকদের সামগ্রিক কোনও উন্নতি হয়নি। বৃহত্তর কৃষক স্বার্থ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের সম্মানের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে রাজধানীর বুকে শতাধিক কৃষক মারা গিয়েছেন, যা আজ আন্তর্জাতিক স্তরেও চর্চিত হচ্ছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষি বিল নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাকে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত মিটিয়ে ফেলা প্রয়োজন।
আগামী দিনের পরিকল্পনার রূপরেখাতে পরিবেশ-বান্ধব উন্নত কৃষি প্রযুক্তিকে প্রান্তিক স্তরে প্রয়োগে প্রাধান্য দিতে হবে। ব্লক স্তরে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে, এবং প্রত্যেক কৃষককে তাঁর উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্যের ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি হবে, যা আমাদের জাতীয় আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বৃহত্তর নির্ণায়ক হবে।
পাঁচকড়ি মোদক
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
কর্মযজ্ঞ
এই বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী সীতারামন তিনটি ফ্রেট করিডরের কথা ঘোষণা করেছেন। তার মধ্যে দু’টি করিডর খড়্গপুর দিয়ে যাবে। প্রথমটি হল, বিজয়ওয়াড়া থেকে খড়্গপুর। এটি ১১০০ কিলোমিটার লম্বা। অপরটি, ভুসওয়াল-নাগপুর-খড়্গপুর-ডানকুনি। এটি ১৬৭৫ কিলোমিটার লম্বা। ‘ফ্রেট করিডর’ মানে আলাদা রেল লাইন হবে, যেখানে শুধুমাত্র মালগাড়ি চলবে। খড়্গপুরে কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। মানুষ কাজ পাবেন।
সঞ্জয় চৌধুরী
খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
কার কী হাল
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন যে, ব্যাঙ্ক ফেল করলে গ্রাহকেরা পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। কারও ১০-১৫ লক্ষ টাকা জমা থাকলে পাঁচ লক্ষের বেশি পাবেন না। বর্তমানে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারি সত্ত্বেও অনাদায়ী ঋণের বোঝা বেড়েছে। কোন ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা কী রকম, মানুষ কী ভাবে জানবেন? সরকারের উচিত প্রতিটি ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো।
তপন কুমার রায়
কলকাতা-৭৫
মডেল?
“বিজেপি শাসনে ‘সোনার’ রাজ্য” (১১-২) নিবন্ধে সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় যথার্থই বলেছেন, “অনেকগুলি মানবিক পরিষেবার ক্ষেত্রে গুজরাত ভয়াবহ ভাবে পিছিয়ে।” একটি হল স্বাস্থ্য পরিষেবা। ১৯৯৫ সালে বিজেপি ওই রাজ্যে প্রথম ক্ষমতায় আসার আগের পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয়েছিল মোট সরকারি ব্যয়ের ৪.২৫ শতাংশ। ২০০৫-১০ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ০.৭৭ শতাংশে। ২০১০ সালে স্বাস্থ্যখাতে মাথাপিছু সরকারি ব্যয়ের নিরিখে গুজরাত ছিল ১৭ নম্বরে। শিক্ষাক্ষেত্রে ওই স্থান ছিল ১৬ নম্বরে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ সালে স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকের দৈনিক মজুরির নিরিখে জাতীয় গড়ের চেয়ে গুজরাত ছিল পিছিয়ে। সামগ্রিক মানব উন্নয়ন সূচকেও ২০১১ সালে গুজরাত ছিল রাজ্য তালিকায় ১৫তম স্থানে।
চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ