সম্পাদক সমীপেষু: ভোটের অন্য দৃশ্য

পরের দিন ভোট চলছে। এমন সময় আমার বেগ এসে গেল। কী হবে? সেখানেই যেতে হবে? কিছু করারও তো নেই। গিয়ে দেখি, বেশ বড় লাইন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share:

ঘটনা ১: ভোটের ডিউটি পড়েছে চাঁপদানি, শ্রীরামপুর বিধানসভা। ২০০৯ সাল। আগের দিন বিকেলে পৌঁছলাম বুথে। ঘিঞ্জি এলাকা। হাঁটছি তো হাঁটছি। একটু পরে একটা দোতলা বাড়ির কাছে পৌঁছলাম। দেখলাম, ঠিক বাড়ি নয়, মাছ-বাজার। সকালে বসে। এখন অবশ্য ফাঁকা। কিন্তু প্রচণ্ড গন্ধ। ভনভন করে মাছি উড়ছে। পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলাম। এটাই বুথ! আঁতকে উঠলাম সবাই। বলে কী! কিছু ক্ষণ সময় লাগল ধাতস্থ হতে। বাথরুম কোথায়? এক জন বলল, আসুন। আবার চললাম নীচে। হাঁটছি পাশের গলি দিয়ে। সে যেটা দেখাল, সেটা হল ফ্রি পাবলিক টয়লেট। সব সময় লাইন লেগেই আছে। পাঁচটা টয়লেট। তার মধ্যে তিনটে অকেজো। তা ছাড়া, জল নেই। পাশের কল থেকে জল আনতে হবে। চারিদিকে দুর্গন্ধ। বিড়ির ধোঁয়া। ওইখানেই প্রাকৃতিক কাজ সেরে, কলে স্নান করে, উপরে উঠে এলাম।

Advertisement

ঘটনা ২: পরের দিন ভোট চলছে। এমন সময় আমার বেগ এসে গেল। কী হবে? সেখানেই যেতে হবে? কিছু করারও তো নেই। গিয়ে দেখি, বেশ বড় লাইন। এত ক্ষণ অপেক্ষা করতে পারব না। বেরিয়ে পড়লাম ‘পে অ্যান্ড ইউজ’ টয়লেট খুঁজতে। এ দিকে ভোট পড়ে রইল যে? ধুর, ভোটের নিকুচি করেছে। একটু এগিয়ে এক জনকে জিজ্ঞেস করায় একটা ঠিকানা বললেন। তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে দেখি, ওটা আর নেই। বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ বার? মরিয়া আমি। আর একটি ঠিকানা পেলাম। ছুটলাম। গিয়ে দেখি, একটা উঁচু জায়গায় সরকার থেকে টয়লেট বানিয়ে দিয়েছে। পর পর ছোট ছোট ঘর। কোনও দরজা নেই। সবাই ওতেই বসছেন। আমিও বসলাম। নীচে ড্রেন। জল যাচ্ছে। সেখানেই বর্জ্য পড়ছে। আরও লোক আসছে। আমারটায় ঢুকতে যাবে, দেখে বলছে, ‘আরে, এটাতে আছে।’ চলে যাচ্ছে পরেরটায়। আমি বসে আছি প্রায় চোখ বন্ধ করে। তার পর জলের দরকার। বেরিয়ে দেখি, দারুণ ব্যাপার। এক জায়গায় টাইম কলের মতো জল পড়ছে। ওখানেই সবাই বসে পরিষ্কার হয়ে নিচ্ছে। প্রকাশ্যে। আমিও তা-ই করলাম। তত ক্ষণে ভয়, লজ্জা সব কেটে গিয়েছে। হেঁটে হেঁটে চলে এলাম বুথে। ভোট ঠিকঠাক চলছে। চুপচাপ এসে বসলাম নিজের চেয়ারে।

রামকৃষ্ণ পাল

Advertisement

ব্যান্ডেল, হুগলি

গণতন্ত্রের মৃত্যু

দেবাশিস ভট্টাচার্য (‘আসুন আজ পণ করি’, ১৫-৪) লিখেছেন, “সন্ত্রাস বন্ধ হোক, সম্প্রীতি ফিরুক, গণতন্ত্র বাঁচুক।” গণতন্ত্র সত্যি এক মজার জিনিস। দিল্লি-কা-লাড্ডু বুঝি-বা। বিরোধীরা শাসকের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হত্যার আওয়াজ তোলেন, আবার শাসক বলেন বিরোধীরা অগণতান্ত্রিক পথে চলেছেন। গণতন্ত্রের ঢক্কানিনাদের মধ্যেই নাভিশ্বাস উঠছে গণতন্ত্রের।

২০০৯ সালে জন কিন তাঁর দ্য লাইফ অ্যান্ড ডেথ অব ডেমোক্রেসি বইতে বলেছিলেন, গণতন্ত্রের শত্রুরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এক জার্মান গবেষণা সংস্থা তাদের প্রতিবেদন ‘ডেমোক্রেসি আন্ডার প্রেশার: পোলারাইজেশন অ্যান্ড রিপ্রেশন ইনক্রিজিং ওয়ার্ল্ডওয়াইড’-এ বলেছে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি ও শাসনব্যবস্থার মান গত ১২ বছরে তলানিতে ঠেকেছে।
তারা ১২৯টি দেশে সমীক্ষা করে দেখেছে, ৫৮টি দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও ৭১টি দেশে গণতান্ত্রিক শাসন আছে। কিন্তু যে সব দেশে গণতান্ত্রিক শাসন আছে সেখানে নানা ছলছুতোয় আইনের শাসন কাটছাঁট করা হচ্ছে। আর এক সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্রের যাত্রা ঠিক থাকলেও এর পর থেকে তার ক্রমঅবনতি শুরু হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি চরম অসহিষ্ণুতা, নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা, নিজেদের সুবিধামতো নির্বাচনী আইন বদলে নেওয়া, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবাধ লুণ্ঠন— এ সব লক্ষণের নিরিখে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু নির্ণয় করা হয়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক স্টিভেন লেভিটস্কি ও ড্যানিয়েল জিবলাট-এর একটি বই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে: হাউ ডেমোক্রেসিজ ডাই। লেখকরা বলেছেন যে খোলামেলা একনায়কতন্ত্র পৃথিবীতে বেশি নেই, সামরিক অভ্যুত্থানও এখন হ্রাস পেয়েছে, অধিকাংশ দেশে মোটামুটি ঠিক সময়ে নির্বাচন হয়। আর তার মধ্যেই ধীরে ধীরে মৃত্যু হয় গণতন্ত্রের। গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে জর্জিয়া, রাশিয়া, পোল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ইউক্রেন প্রভৃতি দেশে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চিলিতে একনায়কতন্ত্রীরা গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেছিল। কিন্তু নির্বাচিত জননেতাদের হাতেও মৃত্যু হয় গণতন্ত্রের। যে প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আসেন তাঁরা, সেই প্রক্রিয়ায় হত্যা করেন গণতন্ত্রকে। ভেনেজুয়েলায় আইনসিদ্ধ পথে হত্যা করা হয়েছিল গণতন্ত্রকে। যে দেশকে গণতন্ত্রের পরীক্ষাগার বলা হয়, সেই আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে সে দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

লেভিটস্কি ও জিবলাটের মতে, ‘ডেমাগগি’ ট্রাম্পের প্রধান শক্তি। তাঁর মতো আরও ডেমাগগ আছেন। (‘ডেমাগগ’ হচ্ছেন এমন এক রাজনীতিক, যিনি জনসমর্থন চান যুক্তিসম্মত কথাবার্তার মাধ্যমে নয়, বরং জনতার পূর্ব ধারণা, পক্ষপাত ও আবেগসর্বস্ব আকাঙ্ক্ষাকে তোষণ করে। তিনি বক্তৃতায় এইগুলিকে উস্কে দিয়ে, লোককে খেপিয়ে তোলেন)। যেমন তুরস্কের এর্দোয়ান, মিশরের সিসি, হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান।

এই সব ডেমাগগদের ঠেকানোর জন্য ১৯৭৮ সালে দ্য ব্রেকডাউন অব ডেমোক্রেটিক রেজিমস: ক্রাইসিস, ব্রেকডাউন অ্যান্ড রিইকুইলিব্রেশন বইতে একটা চেকলিস্ট তৈরি করেছিলেন স্প্যানিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হুয়ান লিঞ্জ। সেই চেকলিস্টের কিছু পরিবর্তন করে লেভিটস্কি ও জিবলাট কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে জনগণকে সজাগ থাকতে বলেছেন।

আমরা আমাদের দেশকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে গর্ব করলেও আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলতে শুরু করেছে। আসুন ওঁদের বলা সূত্রগুলি ধরে আমরা এই বিষয়গুলি সম্বন্ধে সতর্ক হই: ১) কথায় ও কাজে শাসকদল গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বর্জন ও উপেক্ষা করছে কি না। ২) শাসকরা তাঁদের প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদের সঙ্গে কী রকম আচরণ করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে জল-অচল নীতি প্রয়োগ করছেন কি না। ৩) শাসকরা ক্ষমতা অব্যাহত রাখার জন্য হিংসার আশ্রয় নিচ্ছেন কি না। ৪) শাসকরা নাগরিক অধিকার অস্বীকার করছেন কি না। ৫) সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত আছে কি না।

দিলীপ মজুমদার

কলকাতা-৬০

অবসরের পরেও

ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি অফিসগুলোতে অবসর নেওয়ার পরেও কেউ কেউ নতুন করে ওই চাকরিতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন। এর প্রধান কারণ নাকি ওঁরা সংশ্লিষ্ট পদে অপরিহার্য! ওঁদেরই তোষামোদকারী কোনও কোনও সহকর্মী এ ব্যাপারে সুযোগ পেলেই প্রচার করে থাকেন যে, ওই সব ব্যক্তি নাকি অফিসের ‘অ্যাসেট’। অর্থাৎ, ওই কাজে ওঁরা ছাড়া অফিস প্রায় অচল। তা-ই যদি হয়, ওঁরা অবসর নেওয়ার আগে থেকে কেন অন্য কর্মীদের ওই পদের উপযুক্ত করে তোলা হয় না? এবং প্রশ্ন, সেই সব কর্মচারী পেনশন নেবেন, আবার চুক্তিভিত্তিক চাকরি থেকেও অর্থ রোজগার করবেন, এ কেমন প্রহসন?

আরও লজ্জার কথা, ওঁদের কেউ কেউ বলতে ভালবাসেন, ‘‘আসলে কাজের মধ্যে থাকলে শরীর-মন ভাল থাকে, তাই চাকরিটা করছি।’’ কাজের মধ্যে থাকতে চাইছেন থাকুন, কিন্তু নতুন করে বেতনের জন্য হাত পাতছেন কোন যুক্তিতে? তা ছাড়া সমাজে কত রকমের তো কাজ আছে, সেবামূলক বহু কাজই সকলের জন্য অপেক্ষা করছে। সে সব দিকে একটু নজর দিলে হয় না? তাঁরা কি এক বারও ভেবে দেখেছেন, তাঁদের এই স্বার্থপর মানসিকতা কত অভুক্ত বেকারের চোখের জল কত গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে?

শক্তিশঙ্কর সামন্ত

ধাড়সা, হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement