আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই দিন অনেক সেমিনার হয়, অনেক বই প্রকাশিত হয়, পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকার নেওয়া হয়, আর পরের বছর পরিবেশ দিবসে দেখা যায়, আরও কিছু প্রাণী পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে গেছে। যেমন এই ২০১৯ থেকে ২০২০-র মধ্যে চিনের প্যাডেল ফিশ আর ব্রাজিলের ট্রি-হান্টার পাখি অবলুপ্ত হয়ে গেছে। আসলে পরিবেশ ধ্বংস করলে তার সুদূরপ্রসারী ফল কী হতে পারে, তার সম্যক উপলব্ধি মানুষের হয়নি।
এই প্রসঙ্গেই ৫ জুনের আর একটি বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য স্মরণ করা উচিত। ১৯৮১ সালে এই দিনেই আমেরিকার সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক রিপোর্টে প্রথম এইচআইভি অসুখের কেস নথিবদ্ধ হয়েছিল। তখনও এইচআইভি নাম দেওয়া হয়নি অবশ্য। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেস-এর তিন হাসপাতালে পাঁচ জন মানুষের এক বিরল রোগ, নিউমোসিসটিস নিউমোনিয়া সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছিল এই রিপোর্টে।
এইচআইভি মানুষের দেহে এসেছে শিম্পাঞ্জি থেকে। কিন্তু কেন এল? প্রত্যেক প্রাণীর দেহেই বহু রকম ভাইরাস থাকে। কিন্তু তাই বলে প্রত্যেক দিন মানুষের দেহে সেই ভাইরাস ঢুকে পড়ে না। বা এক জনের দেহে ভাইরাস ঢুকলেই পৃথিবী জুড়ে মহামারি হয় না। এইচআইভি-মহামারির পেছনে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের পরিবেশ ধ্বংসের নারকীয় তাণ্ডব: উনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে আফ্রিকায় সম্পদ আহরণের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলির প্রতিযোগিতা। ১৮৮৪ সালের বিসমার্ক আয়োজিত বার্লিন সভার পর থেকেই আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন ইউরোপে আইনসিদ্ধ হয়। সেই যুগের জঙ্গল ধ্বংসের পর দুটো বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেছে, আফ্রিকার সব দেশ স্বাধীন হয়েছে, মানুষ চাঁদে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু সেই আদিম জঙ্গলের ঘুম ভাঙানোর অভিশাপ একশো বছর পরে মানুষের ঘরে হানা দিয়ে সভ্যতাকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিল।
ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, হল্যান্ড... কেউ এই মহাযজ্ঞে বাদ পড়েনি। জার্মানি প্রথম দিকে একটু পিছিয়ে ছিল। ১৮৯০ নাগাদ জার্মানির কাছে খবর এল, দক্ষিণ-পূর্ব ক্যামেরুনে এক বিশাল রত্নের ভান্ডার অনাবিষ্কৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এই ভান্ডারের সম্পদ হল হাতির দাঁত এবং রবার। জার্মান সরকার ঠিক করল, এখানকার অধিবাসীদের পদানত করে, এই সম্পদ দখল করতে হবে।
এই এলাকার সব অধিবাসীকে বাধ্য করা হয়েছিল জঙ্গলে ঢুকে কুলির কাজ করতে। কুলির কাজ মানে, গভীর জঙ্গলে ঢুকে সিংহ বা সাপের সঙ্গে লড়াই করে রবার গাছের রস সংগ্রহ করা এবং হাতির পালের পিছু ধাওয়া করে, তাদের শিকার করে, দাঁত সংগ্রহ করা। এ ছাড়া কাঠের ব্যবসা তো ছিলই। এর পর সেগুলি বয়ে এনে সাঙ্ঘা নদীতে স্টিমার চালিয়ে কিনশাসায় পৌঁছে দেওয়া ছিল এই কুলিদের কাজ।
এর আগে হাজার হাজার বছর ধরে আফ্রিকানরা জঙ্গলের ধারে বা আশেপাশে থাকত। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক আমলেই প্রথম বার এই মানুষদের গভীর জঙ্গলের আদিম পরিবেশে ঠেলে দেওয়া হয় এবং বন্দুকের নলের সামনে সেই জঙ্গল ধ্বংস করতে বাধ্য করা হয়। মনে করা হয়, এর ফলেই, কোনও এক সময়ে শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের মধ্যে এই মারণ ভাইরাস প্রবেশ করে।
হয়তো কয়েক জন গভীর জঙ্গলে ঢুকে শিম্পাঞ্জি শিকার করতে বাধ্য হয়েছিল। এবং আহত শিম্পাঞ্জি শিকারিকে আঁচড়ে-কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। সেই সময়েই হয়তো মানুষের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করে। কিন্তু এর পরেও এই মহামারি হত না। এর পর সেই সংক্রমিত মানুষেরা চলে আসে কিনশাসায়। বেলজিয়ান শাসকের তৈরি কিনশাসা বা লিয়োপোল্ডভিল ছিল একুশে আইনের দেশ। ব্যবসার লাভ ঠিক থাকলেই হল। বাকি নৈরাজ্য নিয়ে বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিয়োপোল্ডের মাথাব্যথা ছিল না।
কিনশাসায় ১৯১০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ে। নৈরাজ্যের পরিবেশ না থাকলে হয়তো এইচআইভি একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেই এক সময় মুছে যেত। কিন্তু দ্বিতীয় লিয়োপোল্ডের রাজত্বে আফ্রিকানদের শাস্তি দেওয়ার অন্যতম পন্থা ছিল ধর্ষণ। এর ফলেও এইচআইভি ছড়িয়ে পড়েছিল। রবারের কোটা পূর্ণ না হলে বেলজিয়ান পুলিশ আফ্রিকান কুলিদের হাত কেটে দিত। সেই ভয়ে সেখানকার মানুষ আরও তাড়াতাড়ি বনজঙ্গল ধ্বংস করেছিল।
এ ছাড়াও ছিল জার্মান এবং অন্যান্য ইউরোপীয় শাসকদের প্ল্যানটেশন, যার জন্য হাজার হাজার মাইল বনভূমি ধ্বংস করে রবার, কোকো বা কফি চাষ করা হয়েছিল। আর এর পরে, ১৯৪০ সালে, ম্যানহাটান প্রোজেক্টের ইউরেনিয়াম পুরোটাই এসেছিল কঙ্গো থেকে, এই ইউরেনিয়াম খনির জন্যও রেন ফরেস্ট ধ্বংস করা হয়েছিল।
এর পর এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে। ঠিক এক ভাবে উনবিংশ শতকের শুরুতে নীল চাষের জন্য পরিবেশ ধ্বংস করার ফলেই যশোর থেকে কলেরার মহামারি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। বা তার পর ব্রিটিশ রেল লাইন তৈরির জন্য নদীর গতিপথ পাল্টে বাঁধ দেওয়ার ফলেই ম্যালেরিয়ার মহামারি বঙ্গদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
আজ পণ্ডিতরা যখন সেই ১৮৮০ বা ১৮৯০ সালের আফ্রিকার ইউরোপীয় বাণিজ্যের বর্ণনা দেন, সেই সময়ের লোকের জন্য বরাদ্দ থাকে নিরবচ্ছিন্ন নিন্দা। আজ ব্রাজিল বা অস্ট্রেলিয়ার বনভূমি ধ্বংসের ফলে যে ভাইরাস জন্ম নিল, সে হয়ত মহামারি করবে ৫০ বছর পরে। ২০৭০ সালে যে ইতিহাসবিদ আমাদের আজকের সময়ের বিশ্লেষণ করবেন, তাঁরা কি আমাদের সেই উনবিংশ শতকের অত্যাচারী, লোভী, নারকীয় ঔপনিবেশিক শাসকের থেকে কিছু আলাদা ভাববেন?
রুদ্রজিৎ পাল
কলকাতা-৩৯
সেই শিল্পী
চিত্রশিল্পী অতুল বসু সম্পর্কে লেখা প্রবন্ধটি (‘অতুল বসু ১২৫তম জন্মবর্ষে ফিরে দেখা’, পত্রিকা, ২৩-৫) পড়ে এই চিঠি।
অতুল বসু ছিলেন আমার দাদু চারুচন্দ্র চৌধুরীর (কৃষ্ণা বসুর পিতা) বন্ধু। ঘটনাচক্রে দু’জনেরই আদি বাড়ি পূর্ববাংলার ময়মনসিংহ। দাদুর জন্মও ১৮৯৫ সালে।
বন্ডেল রোডের বাড়ি থেকে অতুলবাবু দাদুর রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে নিয়মিত আসতেন। চল্লিশের দশকের সেই আড্ডায় যোগ দিতেন প্রদোষ দাশগুপ্ত, গোপাল ঘোষ।
পঞ্চাশের দশকে দাদু দীর্ঘ দিন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সচিব ছিলেন। সেই সময় দাদু ঠিক করেন, বিধানসভা ভবনের লবি ও করিডরে বাংলার মনীষীদের প্রতিকৃতি স্থাপন করবেন। প্রথমেই টাঙানো হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সুভাষচন্দ্র বসুর অয়েল পেন্টিং। দুটিই অতুল বসুর কাজ।
১৯৫৫-ঃর ডিসেম্বরে কৃষ্ণা চৌধুরীর বিবাহ হয় ডা. শিশির বসুর সঙ্গে। অতুলবাবু নবদম্পতিকে উপহার দেন যামিনী রায়ের আঁকা একটি ছবি। কিন্তু তার আগেই অতুলবাবু কৃষ্ণার একটি অপূর্ব পোর্ট্রেট এঁকে দিয়েছিলেন।
মা সম্প্রতি চলে গিয়েছেন। অতুল বসুর করা সেই মুখচ্ছবিটি আমাদের শরৎ বসু রোডের ‘বসুন্ধরা’ গৃহে শোভা পাচ্ছে।
সুমন্ত্র বসু
কলকাতা-২৬
গাড়ির ব্যবস্থা?
দূরের জেলা থেকেও প্রতি দিন বহু বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী কলকাতায় পাড়ি দেন। এখন সব অফিস খোলার সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গিয়েছে বটে, কিন্তু পরিবহণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে নামমাত্র। লোকাল ট্রেনও বন্ধ। কিছু কোম্পানি কর্মীদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করলেও, বেশির ভাগই করেনি। এমনিতেই কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন অনেকটা কেটে, অনেকের বেতন সম্পূর্ণ বন্ধ। তাই অফিস খুললেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে যেতে না পারার জন্য অনেকেই ভয় পাচ্ছেন, চাকরি আদৌ থাকবে তো?
তাপস দাস
সিঙ্গুর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।