মাত্র এক দিনে কমিশনকে ভোট করতে হল। করতে গিয়ে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হল। আমাদের করের টাকায় পালিত ভোট উৎসবে আমরাই নির্ভয়ে যোগদান করতে পারলাম না। যেখানে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এত উন্নয়নের জোয়ার এনেছেন, সেখানে মাত্র সাত বছরের শাসনে তাঁর দলের কর্মীরা মানুষের রায় নিতে ভয় পাচ্ছেন কেন? সবচেয়ে মজার বিষয়, যে দল এক নেত্রীর আদর্শে পরিচালিত হয়, সেখানে গোষ্ঠীর লড়াইয়ের বলি হয় কী ভাবে? আসলে নেতা-কর্মীরা এখন উন্নয়নের জোয়ারে অনেক কামানোর সুযোগ পাচ্ছেন, কেউ এই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয়। যিনি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও বাক্স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে বাংলার সিংহাসনে বসেছিলেন, তাঁর আমলে এ রক্তস্নাত পঞ্চায়েত ভোট শোভা পায়?
চিত্তরঞ্জন মান্না চন্দ্রকোনা রোড, পশ্চিম মেদিনীপুর
মরছে মানুষ
কর্নাটকের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিবেশের তফাত বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসীরা হিংসায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এখন নয়, বেশ কয়েক বছর ধরেই। কাজেই ক্ষমতায় আসা দলটি যদি পাল্টে যায়, তাতেও সুরাহা হবে না। হিংসায় যে দল অন্যদের ছাপিয়ে যাবে সে-ই বিজয়ী হবে। আমরা হিসেব করছি, ক’জন মরছে দিনে। ক’টা সিপিএম ক’টা তৃণমূল ক’টা বিজেপি ক’টা কংগ্রেস। কতকগুলো চেনা মুখ চ্যানেলে বসে একে অন্যকে গালাগালি করছে আর অন্য বছরের মৃত্যুর খতিয়ান পেশ করে প্রমাণ করতে চাইছে, যা ঘটছে তা স্বাভাবিক। কেউ হিসেব করছে না, মরছে মানুষ, মারছে মানুষ। তিল তিল করে বাবা-মায়ের যত্নে ভ্রূণ থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা একটি সম্পূর্ণ জলজ্যান্ত মানুষ মুহূর্তে চলে যাচ্ছে না-ফেরার দেশে।
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত কলকাতা-৪০
সেই ট্র্যাডিশন
সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা ও মৃত্যু নিয়ে যাঁরা ‘গেল গেল’ রব তুলছেন, মনে হচ্ছে তাঁরা এ রাজ্যের নির্বাচন-সংস্কৃতি সম্বন্ধে আদৌ ওয়াকিবহাল নন। নির্বাচন কমিশন যখন ধৃতরাষ্ট্র, তখন ‘জোর যার মুলুক তার’ ফর্মুলাই তো শেষ কথা। আর পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতাশীল সরকার যেন তেন প্রকারেণ তার গদি কায়েম রাখবে— সেটা ডান-বাম-রাম যে যখন ক্ষমতায় থাকে, তারই নিয়ম। আবার বিরোধীদের যেখানে জোর বেশি, সেখানে দেখলাম তারাও শাসক দলের কর্মীদের পেটাল। আসলে দল পরিবর্তন হলেও, হিংসা-সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় থেকেই গিয়েছে এ রাজ্যে। তাই জ্ঞান দিয়ে বা নাটক করে কোনও লাভ হবে না। পুলিশকে গাল দিয়েই বা কী হবে? তাদের কবে আর মেরুদণ্ড ছিল? ৪৫ বছর আগেও পুলিশের হাতে থাকত বন্দুক, ট্রিগার থাকত সিদ্ধার্থ রায়ের হাতে। তাই সন্ধেবেলায় যাঁরা চ্যানেলে চ্যানেলে হুক্কাহুয়া করছেন তাঁরা চশমা খুলে বাস্তবের মাটিতে নামুন, দেখবেন ‘গণতন্ত্র বিপন্ন’, ‘এ রকম হিংসা কখনও দেখেনি এ রাজ্য’— এ সব বড় বড় কথা ফানুস ছাড়া কিছুই নয়। যে-ই থাকুক সরকারে, ক্ষমতার প্রয়োগ-অপ্রয়োগই শেষ কথা। আজকের বিরোধীরা গদিতে গেলেও, এটাই হবে। শুধু এই হিংসা- ডামাডোলের মধ্যেও যদি কোনও সরকার জনকল্যাণে কিছু সদর্থক কাজ করে, সেটাই মানুুষের কাছে আশীর্বাদ। ২০১৪-র মোদীজি আর ২০১৮-র মোদীজিকে দেখে বাস্তব-অবাস্তব বুঝতে পারছেন না?
সুদর্শন নন্দী রাঙামাটি, মেদিনীপুর
অন্য মাত্রা
বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেই হয়ে থাকে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে সময়ের বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই সময় বোরো ধান ওঠে, বাংলার তাঁতিদের পুজোর কাপড় বোনার কাজও শুরু হয়। কৃষি অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের এই সমাপতন গ্রামবাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন বিন্যাসের পটভূমি তৈরি করে। যেমন, কোনও সম্পন্ন কৃষক প্রার্থী হলে, গ্রামের অপেক্ষাকৃত ছোট কৃষকেরা তাঁর কাছ থেকে বিনা পয়সায় সেচের জল পান। কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যত তীব্র হয়, প্রার্থীদের বদান্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি হয়। গ্রামের প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র জমির মালিক, খেতমজুর, পাঁচ বছরে এই এক বার যোগ্য নাগরিকের সম্মান পান। সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পান গ্রামের এ যাবৎ অবহেলিত কোনও এক তফসিলি জাতি বা জনজাতির মানুষ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জাদুদণ্ডের ছোঁয়ায় যাঁর জীবন আমূল পাল্টে যায়। পরিত্যক্ত বাড়িতে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়, সরকারি আধিকারিকরা সম্মান দেন, পার্টির বড় নেতাদের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়। গ্রামের এক-দুই বিঘা জমির মালিক ক্ষুদ্র কৃষক, আত্মগ্লানি ভুলে গ্রামেরই পঞ্চাশ বিঘা জমির মালিক বর্ধিষ্ণু চাষির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে পড়েন ভোট পরিচালনায়। দরিদ্র ঘরের কোনও মহিলা সচ্ছল শ্বশুরবাড়িতে ক্রমাগত লাঞ্ছিত হতে হতে, যখন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত গ্রাম পঞ্চায়েত আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান, তিনি শুধু সমাজে নয়, নিজের পরিবারেও হৃত মর্যাদা ফিরে পান ।
তাই সুষ্ঠু পঞ্চায়েত নির্বাচন শুধু গণতন্ত্রের জন্য নয়, গ্রামবাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসের জন্যও একান্ত কাম্য ।
সোমনাথ গোস্বামী বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
ভোটকর্মী
সেই ২০০৪ সাল থেকে ভোট করিয়ে আসছি। ভোটকর্মীদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হল না। ১) বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটকর্মীদের প্রাতঃকৃত্য করার ব্যবস্থাটুকুও ছিল না। আলো ফোটার আগে বনেবাদাড়ে ছুটতে হয়েছে। ২) এমন বহু জায়গায় ভোটকেন্দ্র করা হয়েছিল, যেখানে ভোট করা কোনও মতেই সম্ভব নয়। ৩) পঞ্চায়েত সমিতির জন্য যে ‘গোদরেজ টাইপ’ বাক্সটি দেওয়া হয়েছিল, সেটা খুলতে গিয়েই বহু ভোটকর্মী আহত হয়েছেন। ৪) এ বারে রেকর্ড সংখ্যক ভোটকর্মী ভোট ট্রেনিং নিয়েও অনুপস্থিত থেকেছেন (ঠিকই করেছেন)। ফলে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা বেনজির বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছেন। ভোটের আগের দিন বহু ভোটকর্মী ডিসিআরসি-তে সন্ধে গড়িয়ে যাওয়ার পরেও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। কারও প্রিসাইডিং অফিসার আসেননি। কারও বা অন্য পোলিং অফিসার নেই। রিজ়ার্ভ বেঞ্চেও হাহাকার। ভোটের আগের দিনই বিধ্বস্ত এই মানুষগুলো পরের দিনের মোকাবিলা কী ভাবে করবেন? ৫) বহু জায়গায় ঠিক মূল্যে খাবার পাওয়া যায়নি। ডিম-ভাতের রেটই ছিল ১০০ টাকা। ৬) একটা টিমে পাঁচ জন ভোটকর্মী থাকেন। সঙ্গে এক জন পুলিশ। ভোটের আগের দিন সন্ধের টিফিন, রাতের খাবার, পরের দিন ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চ— সব মিলিয়ে খাওয়াদাওয়া এবং অন্যান্য খরচের জন্য প্রিসাইডিং অফিসারের হাতে দেওয়া হয় মাত্র ৩০০ টাকা। ৭) এর পরেও গণতান্ত্রিক দেশের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ভোটকর্মীরা ভোট করাতে গিয়েছেন। তার পরেও যদি সন্ত্রাসের মধ্যে পড়তে হয়, তা হলে কিসের ভরসায় তাঁরা ভোট করাতে যাবেন? তাঁরাও তো মানুষ। তাঁদের বাড়িতেও বালবাচ্চা আছে!
সুদীপ বসু শান্তিনগর, রহড়া
ভ্রম সংশোধন
• ‘ভাবাচ্ছেন মোদীর ঘনিষ্ঠ ভাজুভাই’ শিরোনামের খবরে (১৬-৫, পৃ ৮) লেখা হয়েছে, সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে। তিনি আসলে প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল।
• ‘সাত দশকের বহুরূপী’ লেখায় (২৯-৪, রবিবাসরীয়) একটি ছবি-পরিচিতিতে আছে ‘চার অধ্যায়’ নাটকের দৃশ্য। সেটি আসলে ‘বিসর্জন’ নাটকের দৃশ্য।
অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়