করোনা আতঙ্কে সুনসান ইংল্যান্ডের রাস্তাঘাট।
প্রায় দেড় বছর হল চাকরি সূত্রে ইউকে (ব্রিটেন)-র ব্র্যাডফোর্ড শহরে আছি। কিন্তু এমন পরিস্থিতি সত্যি সত্যিই আগে কখনও দেখিনি। খুবই প্রাণোচ্ছল এই শহর। কিন্তু এ বার মার্চের মাঝামাঝি থেকেই অন্য রকম বোধ করছিলাম। রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে শুরু করেছিল দু’-তিন সপ্তাহ আগে থেকেই। যদিও তখনও ইউকে-তে পুরোপুরি লকডাউন হয়নি। এখন তো পুরোপুরি লকডাউন চলছে। আর সকলকে বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ করতে বলা হয়েছে। তাই রাস্তাঘাট মোটামুটি জনমানবহীন। খুব একটা দরকার ছাড়া লোকজন পাবলিক প্লেসগুলোতে ভিড় করছেন না।
আমার জেনারেশনে এই ধরনের পরিস্থিতি এই প্রথম। তিন সপ্তাহ আগে ইউকে-তে প্যানিক বাই শুরু হওয়ায় সুপারমার্কেটগুলোতে গিয়ে দেখি, জিনিসপত্র প্রায় শেষ। আগামী কয়েক সপ্তাহ চলার মতো খাবার অনেক কষ্টে জোগাড় করে ঘরে ফিরি। তার পর গত তিন সপ্তাহ ধরে নিজেকে ঘরবন্দি রেখেছি।
দু’সপ্তাহ আগে থেকেই ইউকে-তে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। রোজই খবরে দেখতাম, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে সেন্ট্রাল লন্ডনের পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইউকে সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৪ এপ্রিল সকাল ৯ টা পর্যন্ত ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ১৯০ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪১ হাজার ৯০৩ জনের পজিটিভ হয়েছে। আর তাঁদের মধ্যে ৪ হাজার ৩১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এর মধ্যে ইউকে-র ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসের (এনএইচএস) চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যে ভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়।
কয়েক সপ্তাহ আগে ঘরে মজুত করে রাখা খাবারদাবার এবং দরকারি জিনিসপত্র প্রায় শেষ হয়ে আসায় বাধ্য হয়েই যেতে হল সুপারমার্কেটে। প্রায় তিন সপ্তাহ পর বাইরে বেরলাম। আর পরিস্থিতি যে ঠিক কতটা ভয়াবহ, তা ফাঁকা রাস্তাঘাট দেখেই বুঝতে পারলাম। রাস্তায় হাতে গোনা কয়েকটা গাড়ি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না। লোকজনের স্বাভাবিক ভিড়টাও মিসিং। বিশেষ করে, যখন ‘ইস্টার’ আসছে। তবে একটা আশার কথা, তিন সপ্তাহ আগে দেখা সুপারমার্কেটগুলোর ফাঁকা তাকগুলোয় আবার ‘রি-স্টক’ হয়েছে। হয়তো প্যানিক বাই শেষ হয়ে যাওয়ায় রিটেল স্টোরগুলো আবার ফিলআপ করতে পেরেছে। আর লোকজন ‘সোশ্যাল ডিসটেন্স’ বজায় রেখেই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। কিছু স্টোর তো আবার দোকানের ভেতরে ঢোকা লোকজনের সর্বাধিক সংখ্যা বেঁধে দিয়েছে। তাই সহজেই আগামী কয়েক সপ্তাহ চলে যাওয়ার মতো জিনিসপত্র পেয়ে গেছি।
সুনসান ব্রিটেনের ব্র্যাডফোর্ড সিটি।
আমি ব্রাডফোর্ড সিটিতে একা থাকি। কলকাতার বাড়িতে আমার ফ্যামিলি রয়েছে। যদিও ‘ভিডিও কলে’ রোজই কথা হচ্ছে, তবুও সকলের জন্য খুবই চিন্তায় আছি। এরই মধ্যে ভারতে দেশ জুড়ে লকডাউনের ঘোষণা শুনে খুব ভাল লেগেছিল। দিল্লি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একদম ঠিক সময়ে নিয়েছে। এখনও আশা, ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ইউরোপের মতো এত ভয়াবহ হয়ে উঠবে না। গত ৫ এপ্রিল ভারতীয় সময় রাত ৯টায় আমার কলকাতার বাড়িতে সকলে যখন মোমবাতি জ্বালিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকারকে সমর্থন জানিয়েছিলেন, তখন তাঁদের সঙ্গে ‘ভিডিও কলে’ আমিও যোগ দিয়েছিলাম। এই সব পদক্ষেপ আমাদের সকলকে একত্রে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করবে। এখন শুধু অপেক্ষা করে আছি, কবে আবার সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে? কবে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব?
পল্লব দাশগুপ্ত, ব্র্যাডফোর্ড, ব্রিটেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)