কাঠ কয়লার পর এবার শিল নোড়া
গুজব ছড়াতে বাঙালি প্রথম। করোনা জ্বরে কাঁপছে সারা বিশ্ব। দেরিতে হলেও ভারতেও তার আঁচ পড়েছে। আর এই করোনা ভাইরাসকে কাবু করতে নানা কুসংস্কার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যেই। লকডাউনের প্রথম দিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে সারা রাজ্যে রটে যায়, মাটি খুঁড়ে কয়লা বার করে গায়ে মাখলেই নাকি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রবিবার রাতে প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালিয়েছে গোটা দেশ। প্রদীপ জ্বালানোর জন্য ৫ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে ৯মিনিট সময়ই কেন বেছে নিলেন নরেন্দ্র মোদী, তা নিয়েও গুজব ছড়িয়েছে। বলা হচ্ছে, ৫ এপ্রিল পৃথিবীতে এমন এক চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হবে যাতে রান্নাঘরে শিলের উপর নোড়া ধরলেই, তা নাকি আপনা আপনি দাঁডডিয়ে যাবে। লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষ তা পরীক্ষা করে দেখতেও নেমে পড়েন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শিল-নোড়ার ছবিও পোস্ট করেন অনেক। গুজব ছড়ানোর এই ঐতিহ্য থেকে বাঙালি যে পিছপা হবে না, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।
নরসিংহ দাস।
রবীন্দ্রনগর, মেদিনীপুর শহর
মানুষ খাবে কী, প্রশাসন কি আদৌ ভাবছে?
যে ঘটনাটি আজ আমার সামনে ঘটল তা আপাতদৃষ্টি তে অতি সাধারন হলেও খুব সত্যি এবং জ্বলন্ত একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে গেল। রাস্তার ধারে প্লাস্টিকের টুলে বসে থার্মোফ্লাস্কে করে চা নিয়ে বিক্রি করছিলেন মধ্যবয়সী এক মহিলা। তাঁর ভোগা চেহারায় দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। রাস্তার মোড়ে কর্তব্যরত পুলিশ এবং কিছু পথচলা ম্যনুষ সেই চা কিনছিলেনও। তবে ভিড় বা জটলা ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের একটি ভ্যান সেখানে পৌঁছয় এবং মহিলার হাত থেকে থার্মোফ্লাস্কটি নিয়ে চলে যায়। পুলিশের দাবি ছিল, চা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয়। অথচ লকডাউন অমান্য করে প্রতিদিনই বাজারে অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন পণ্য কিনতে ভিড় উপচে পড়ছে। পুলিশের সামনে ওই মহিলা কিছু বলতে না পারলেও, তাঁর চোখেমুখে তখন একটাই প্রশ্ন, ‘আমরা খাব কি?’ প্রশাসন কি ওঁদের ব্যাপারে একটুও চিন্তিত?
পার্থ চক্রবর্তী
উল্টাডাঙ্গা
বিশ্বে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ছুঁইছুঁই, মৃত প্রায় ৭০ হাজার
আতঙ্কের আবহে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগটা অন্তত বেড়েছে
কর্মসূত্রে গত ৬ মাস ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম শহরে আছি। স্ত্রী এবং সাত বছরের মেয়েও এখানেই রয়েছে। সন্ডনের পরেই বার্মিংহাম ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এখানেও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে লকডাউন চলছে। তবে খাবার ও ওষুধের দোকান খোলা রয়েছে। শরীরচর্চার জন্য দিনে একবার বাইরে বেরনো যায়। এখানে খাবার জিনিস সবই পাওয়া যাচ্ছে। আগে থেকে যাঁরা বেশি করে জিনিস কিনে মজুত করেছিলেন, তাঁদের খাবার ফেলা যাচ্ছে এখন। দোকান ও সুপারস্টোরগুলিতে একসঙ্গে বেশি লোক ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরে ১ মিটার অন্তর দাগ কাটা রয়েছে। সেভাবেই লাইনে দাঁড়িয়ে দোকানে ঢোকার অপেক্ষা করছেন সাধারণ মানুষ। কোনও বিরক্তি বা নিয়ম ভাঙার মনোভাব নেই কারও মধ্যে। এটাই হয়ত প্রথম বিশ্বের সভ্যতার উদাহরণ।
এখানে স্কুল, কলেজে, অফিসে বেশিরভাগই বন্ধ। শুধুমাত্র 8 টি জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষ বাইরে বেরোচ্ছেন, যেমন ডাক্তার, নার্স, পরিবহণ, পুলিশ ইত্যাদি। আমি একজন সফটওয়্যার কর্মী। বাড়ি থেকে কাজ করে চলেছি পুরোদমে। বাড়িতে অনেকটা সময় কাটাচ্ছি, মেয়ের সঙ্গে খেলছি, নানারকম রান্না করছি। রাত ৮ টার সময় জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উদ্দেশে হাততালিও দিই আমরা। এই নিয়ে কাউকে কোনও বিরূপ মন্তব্য করতে শুনিনি। তবে দেশে মা, বাবা, দাদা, দিদি, আত্মীয়দের জন্য চিন্তা হচ্ছে। ভিডিয়ো কল করে কথা বলছি ওদের সঙ্গে। স্কুলের পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে রোজ কথা হচ্ছে। করোনা নিয়ে আতঙ্কের আবহে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ অন্তত বেড়েছে। তবে যত তাড়াতাড়ি করোনার প্রকোপ কেটে যায়, ততই মঙ্গল।
অর্ণব সরকার
বার্মিংহাম (ইংল্যান্ড)
ইউরোপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাকেই ধ্বংস করে দিল করোনা
আমি হেইডেনহাইমে থাকি, যা বুদেন ওটেনবার্গ রাজ্যের একটি ছোট শহর। একটি আইটি প্রকল্পের জন্য ২০১৯ সালের এপ্রিলে এখানে আসি আমি। প্রকল্পটি এখন শেষ হয়েছে। এ বার আমাকে মুনস্টার নামে একটি অন্য শহরে চলে যেতে হবে, যা রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যে অবস্থিত। ওই শহরটিই এখন জার্মানির উহান।
করোনার প্রকোপ না কাটা পর্যন্ত আমার সংস্থা আমাদে হেইডেনহাইমেই থাকতে বলেছে, বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে। অন্যা রাজ্যগুলির মতো এখানেও লকডাউন ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার। তবে যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। বাড়ির ব্যালকনি থেকে প্রতিদিন খালি বাস-ট্রেন দেখি আমি। শপিং মল এবং সুপারমার্কেট ছাড়া সমস্ত দোকান বন্ধ রয়েছে।
শুরুতে বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি কেউ। অফিস-কাছারি, দোকানপাট সবই খোলা ছিল। নিয়মিত বিমান ওঠানামাও করছিল। এখন তারই মূল্য চোকাতে হচ্ছে জার্মানিকে। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত জার্মানিতে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথম দিকে মৃত্যু অনুপাত কম ছিল, এখন তা-ও বাড়তে শুরু করেছে। জানি না এর শেষ কোথায়। বহুমানুষ নিজের প্রিয়জনকে হারাচ্ছেন। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। ইউরোপ এত সুন্দর জায়গা। কিন্তু কোভিড-১৯ সব ধ্বংস করে দিচ্ছে।
সৌভিক বসু
হেইডেনহাইম, জার্মানি
ভুবনেশ্বরে শাটডাউন চলছে
ভুবনেশ্বর এর বমিখাল এলাকায় রয়েছি।এখানে এক বাড়ির ৩ ভাই করোনায় আক্রান্ত। লকডাউন ছেড়ে শাটডাউনে এসেছে ভুবনেশ্বর। দু’একডা ওষুধের দোকান ছাড়া কোথাও কিছু খোলা নেই। বমিখাল পুরো সিল করে দেওয়া হয়েছে। কেউ এলাকায় ঢুকতে বা বেরোতে পারবে না। দমকলবাহিনীর গাড়ি এসে রাস্তা জীবাণুমুক্ত করে গিয়েছে। আশা কর্মীরা এসে সবাইকে পরীক্ষা করবেন। সকলে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলছেন। সরকারও পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে।
মানস মন্ডল
ভুবনেশ্বর (ওড়িশা)
মানুষকে বোঝাতে হবে কোয়রান্টিন কী
কাল সন্ধ্যায় কলেজস্ট্রিট বাজারে গিয়েছিলাম। এক মাছবিক্রেতার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ওঁদের ধারণা, কোয়রান্টিন আসলে জেলবন্দি থাকার মতোই। আমি ওঁদের বোঝালাম, কোয়রান্টিনে কেউ লাঠি দিয়ে মারতে আসবে না, উল্টে সকলের খেয়াল রাখা হবে।কিন্তু আমার মনে হয়, ওঁদের বিষয়টি ভাল করে বোঝানো উচিত।
সাত্যকি চক্রবর্তী
জরুরি অবস্থার তোড়জোড় জাপানে, মৃত্যুসংখ্যা ১০০ ছুঁইছুঁই
দিল্লিতে এতগুলো মানুষকে জমায়েতের অধিকার কে দিল?
নোভেল করোনার প্রকোপ ঠেকাতে লকডাউন যে উপযুক্ত পদক্ষেপ, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু মানুষ অনেক আর্থিক ক্ষতি বুক পেতে সইছেন। এমন পরিস্থিতিতেও দিল্লিতে এতগুলো লোককে জমায়েতের অধিকার কোন সরকার দিল? শুনছি ১৫ এপ্রিল থেকে নাকি ফের ট্রেনের রিজার্ভেশন শুরু হচ্ছে। দূরপাল্লার ট্রেনের চলাচল শুরু হলে বাংলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না। আসুন নিজে বাঁচি এবং অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করি। আসুন প্রতিজ্ঞা করি, আগামি ছ’মাস ট্রেন বা বিমানে চড়ে রাজ্যের বাইরে যাব না। সকলে নিরাপদে থাকুন।
সর্বাণী ঘোষ
শশীভূষণ সরণি, পোস্ট গড়িয়া, কলকাতা ৭০০০ ০৮৪
অবাধে আড্ডা চলছে
আমার শহর কাঁথিতে যেন লকডাউন উঠে গিয়েছে। রাস্তায়, চায়ের দোকানে, পাড়ার মোড়ে লোকজন অবাধে আড্ডা দিচ্ছেন, জটলা করছেন, বিকেল হলে ঘুরতে বেরোচ্ছেন। এ সব আটকাতে কোনওরকম পুলিশি সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না। আপনারা যদি কোনওভাবে এখানকার এই অবস্থার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে কোনও সংবাদ প্রকাশ করে তা প্রশাসনের নজরে আনেন, তা হলে তা খুব ভাল হয়।
প্রতীপ জানা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)