লকডাউনে প্রায় ফাঁকা স্টোর।
স্বামীর কাজের সূত্রে আমরা গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার বে এলাকায় চলে আসি। প্রথম কয়েক মাস বেশ ভালই লাগছিল নতুন পরিবেশ, নতুন জীবনযাত্রা। তারপর করোনার জেরে সব কেমন স্তব্ধ হয়ে গেল।
করোনার কথা আমরা প্রথম জানতে পারি ডিসেম্বরে। সকালে উঠে আনন্দবাজার পড়াটা আমাদের বরাবরের অভ্যাস। তাই বিদেশে আমি ও আমার স্বামী ল্যাপটপে আনন্দবাজার খুলে বসি। সেখানেই চিনে অতিমারীর আকার নেওয়া করোনার আপডেট পাচ্ছিলাম। কিন্তু সুদূর চিন থেকে তা যে আমেরিকাতেও ঢুকে পড়বে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।
আর এখন আমেরিকায় করোনা যে শুধু ঢুকে পড়েছে তাই নয়, আক্রান্তের সংখ্যায় অনেক দেশকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার বে-তে প্রথম দিকে প্রচুর করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যায়। তারপরই সরকারের তৎপরতায় পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে স্যানটা কলারা কাউন্টিতে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫১ জনের।
আরও পড়ুন: লকডাউনে একের পর এক আসছে চিকেন বিরিয়ানি, মিষ্টি, গরম সিঙাড়ার আবদার
আমেরিকার অন্য জায়গার তুলনায় বে-তে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই লকডাউন চালু হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেই ১৬ মার্চ থেকেই গৃহবন্দি। এখানকার মেয়র বলে দিয়েছেন, কোনও দরকারে বাড়ির বাইরে বেরলে মাস্ক পরতেই হবে।
আরও পড়ুন: বাইরে বেরনো বন্ধ তো কী হয়েছে! বাড়ির পিছনেই তৈরি করে নিলেন সমুদ্র সৈকত
আমরাও খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরচ্ছি না। মুদিখানার জিনসপত্রের জন্য দু’ সপ্তাহে একবার গিয়ে যতটা সম্ভব নিয়ে আসছি। এ দিন দোকানে গিয়ে দেখলাম পরিবার পিছু দু’টির বেশি মাংস, ডিমের প্যাকেট নেওয়া যাবে না। তাই দিয়ে চালাতে হচ্ছে। আর বাড়িতে ফিরে স্টোর থেকে আনা সব জিনিস ভাল করে মুছে, পরিষ্কার করে ফ্রিজে রাখছি।
সমস্যা হচ্ছে আমাদের দু’ বছরের মেয়েকে নিয়ে। এত দিন ধরে সে আর বাড়ির মধ্যে থাকতে চাইছে না। অন্য সময় তাকে রোজ বিকেলে বাড়ির সামনে পার্কে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হত, এক মাস ধরে সেটাও বন্ধ।
আমার শ্বশুর, শাশুড়ি মাস দুয়েক আগে আমাদের এখানে ঘুরতে এসেছিলেন। এপ্রিলে প্রথম দিকে ওনাদের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে ওনারা এখানে আটকে গিয়েছেন। অন্য সময় হলে বাংলা নববর্ষে এখানকার বাঙালি আ্যসোসিয়েশনে খাওয়াদাওয়া, হইচই, অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হত। কিন্তু করোনার জেরে সব পরিকল্পনা বাতিল।
এখন ঈশ্বরের কাছে একমাত্র প্রার্থনা বাংলা নববর্ষে যেন আমরা খুব তাড়াতাড়ি এই বিপদ থেকে মুক্তি পাই। সবাই যেন আবার আগের মতো নিজের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে পারি।
সুদর্শনা দালাল, সানিভ্যালি, ক্যালিফর্নিয়া
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)