Coronavirus

সামুরাইদের শহরে এখন শুধুই নিস্তব্ধতা

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌রনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌রনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ১৯:২১
Share:

আমি জাপানের সেন্দাই শহরে থাকি ২০১৮ সাল থেকে। সেন্দাই, জাপান এর রাজাধানী টোকিয়ো থেকে প্রায় চারশো কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত, মিয়াগি প্রদেশের প্রধান শহর।

Advertisement

বলা বাহুল্য, জাপান খুবই উন্নত একটি দেশ। এই দেশ এর জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি, যা আমাদের রাজ্যের সঙ্গে তুলনীয়। জাপানের আনেক কিছুই আমার মতো বাঙ্গালীর কাছে নতুন আভিজ্ঞতা। এদের মতো নিয়মনিষ্ঠ, সৎ এবং বিনয়ী স্বভাবের মানুষ আজকের দিনে সারা বিশ্বে খুবই বিরল।

বাকি জাপানের মত সেন্দাই শহরটিও অত্যন্ত পরিস্কার-পরিছন্ন ও সাজানো-গোছানো। এই শহর ছিল সামুরাইদের প্রাচীন বাসস্থান, এখনও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্থাপত্যকর্ম তার স্মৃতি বহন করে।

Advertisement

আরও পড়ুন: আটকে পড়েছি, খাওয়ার টাকাও নেই, আমাদের ফেরান​

সমুদ্রের উপকণ্ঠে অবস্থিত এই শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সকলকেই মুগ্ধ করবে। শীতের পাতাহীন গাছগুলি, বসন্ত কাল এলেই চেরি ব্লসমে সেজে ওঠে। আগের বছরগুলিতে দেখেছি, বছরের এই সময়টা (এপ্রিল মাস) সারা শহর কী ভাবে উৎসবের আবহে মেতে ওঠে।

এই সব নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বেশ ভালই কাটছিল। কিন্তু তাল কাটল জানুয়ারির শুরুতে, যখন করোনা মহামারির খবর ছড়িয়ে পড়ল। সেই সময় আমার চিনের এক সহকর্মীর কাছ থেকে সে দেশের ভয়াবহতা শুনে শিউরে উঠেছিলাম। কিন্তু তখনও ভাবিনি যে এই মহামারি আমাদের দোরগোড়ায় হাজির হবে একদিন।

আজ গোটা বিশ্বের জনজীবন যেখানে থমকে গিয়েছে, জাপানও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে করোনা জাপানে পা রাখে, তবুও

কুখ্যাত ‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস: প্রমোদতরী ইয়োকোহামা বন্দরে আসার পরই এই সংক্রামক রোগের সঙ্গে জাপানবাসীর ব্যাপক ভাবে পরিচিতি ঘটে। এই প্রমোদতরীর এক যাত্রীর হাত ধরেই, সেন্দাই-তে করোনা প্রথম নথিভুক্ত হয়। এর পর থেকেই সতর্কতা বাড়তে থাকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। শপিং মল, সুপার মার্কেট এবং যে কোনও জনবহুল এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। জাপান সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও নাগরিকদের সচেতন ব্যবহারের জন্যই জানুয়ারির শুরুতে আবির্ভাব হলেও মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মোটের উপর নিয়ন্ত্রণেই ছিল কোভিড-১৯। কিন্তু এপ্রিলের শুরু থেকে দ্রুত বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। লিখতে বসার আগে পর্যন্ত নথিভুক্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: হো চি মিন সিটি আজ সম্পূর্ণ নিশ্চুপ, নিঃশব্দ​

স্বাভাবিক ভাবেই সরকারি নির্দেশিকাও উত্তরোত্তর কড়া হতে থাকে। ৯ এপ্রিল বাড়ি থেকে কাজ করতে অনুরোধ জানায় আমাদের ইউনিভার্সিটি এবং দিন দুয়েকের মধ্যেই অনুরোধ নির্দেশে পরিণত হয়। ১৬ এপ্রিল দেশ জুড়ে জারি হয় ‘ন্যাশনাল ইমারজেন্সী’। এর জেরে বর্তমানে আমরা কার্যত গৃহবন্দি।

এ সবের মধ্যেও মনের মাঝে উঁকি দেয় কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকা আমার দেশ, আমার বাংলার পরিস্থিতি। দুশিন্তা হয় পরিজনদের জন্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ২৫ এপ্রিল বর্ধমানের বাড়িতে ফিরতাম স্ত্রীকে নিয়ে, যা বাতিল হয়ে গিয়েছে। সেটা যে মানাসিক পীড়ার যথেষ্ট কারণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যাই হোক আশা রাখি, খুব দ্রুত বিশ্বব্যপী জনজীবন স্বাভাবিক হবে এবং প্রিয় দুর্গাপুজো সকলের সঙ্গে আনন্দে কাটাব।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

তুফান রায়

তোহোকু ইউনিভার্সিটি, জাপান

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement