লকডাউন চলছে কানাডায়। ছবি: লেখকের নিজস্ব।
জন্মসূত্রে কলকাতার বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে গত চার বছর ধরে আমাদের দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। কখনও তা আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি হোক বা বর্তমানে কানাডার বৃহত্তম শহর টরন্টো। গত এক বছর হল আমরা অর্থাৎ আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে টরন্টোতে আছি।
যখন সবে মাত্র চরম ঠাণ্ডার খানিক গৃহবন্দির দিনগুলো কাটিয়ে প্রায় পাঁচ মাস পর বসন্ত ও আসন্ন গ্রীষ্মকালের জন্য কানাডাবাসী তৈরি হছিল, ঠিক তখনই সারা পৃথিবী জুড়ে শুরু হল অতিমারি কোভিড-১৯ এর প্রকোপ। আর আমরা আবারও স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে গেলাম বেশ কয়েক মাসের জন্য।
মনে পড়ে শেষ আমরা ১ মার্চ সপরিবাররে বেড়াতে গিয়েছিলাম কাছেপিঠে। তার পর থেকে সম্পূর্ণ ঘরেই বন্দি। আমার ছেলের বয়স এক বছর হওয়ায় সাবধানতা একটু বেশি নিতে হচ্ছে।
৪ এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী, শুধু মাত্র টরন্টোতেই ১০২৬ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে এই মারণ রোগ। কানাডার সরকার অনেক আগে থেকেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রায় প্রত্যেক দিনই সাংবাদিক সম্মেলন করে দেশের হাল বয়ান করছে। অন্যান্য দেশের মতো এখানেও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান ছাড়া প্রায় সবই বন্ধ। এমনকি পার্ক ও বিনোদনের জায়গাগুলোও।
পাঁচ জনের বেশি জমায়েত দণ্ডনীয় অপরাধ বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে। রাস্তাঘাটে একে অপরের সঙ্গে ২ মিটার দূরত্ব রাখা এবং তা অমান্য করলে কানাডিয়ান ডলারে ১০০০ থেকে ৫০০০ অবধি জরিমানা করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। আশ্চর্য ভাবে অধিকাংশ মানুষ এখানে নিজের ভাল নিজে বোঝে এবং অনেকটা দায়িত্বশীল।
কিছু দিন আগে অবশ্য ‘প্যানিক বায়িং’- এর হিড়িকে প্রায় সব দোকানেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আর খাদ্যবস্তুর অভাব হলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক এবং প্রায় সব ধরনের খাদ্যসামগ্রী মজুত আছে দোকানগুলোতে। যদিও অনলাইন অর্ডার ব্যবস্থার আচমকা বাড়তি চাহিদার ফলে আমাদের ন্যূনতম ৭ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে, তবে দোকান খোলা থাকার দরুণ আমি প্রায় প্রতি ২ থেকে ৩ সপ্তাহে এক বার নিজে গিয়ে কিনে আনছি দরকারি জিনিস। দোকানেও যথেষ্ট সতর্কতামূলকব্যবস্থা নেওয়া হছে যেমন স্যানিটাইজ করা, ১০ জন এর বেশি এক সঙ্গে ঢুকতে না দেওয়া এবং দূরে দূরে দাঁড়ানো। বয়স্কদের কেনাকাটার জন্য দোকান খোলার প্রথম ১ ঘণ্টা বরাদ্দ করে রাখার মধ্যে দিয়ে সরকার বার বার প্রমাণ করে দিয়েছে তারা কতটা ওয়াকিবহাল নাগরিকদের জন্য। সর্বোপরি একটা গোছানো ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছি আমরা।
অর্থনৈতিক মন্দা এখন গ্রাস করতে শুরু করেছে সারা পৃথিবীকে। কানাডাও তার বাইরে নয়। বিভিন্ন দোকান ও ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষ যে ভাবে পেশাহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদের সাহায্যের জন্য সরকার যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মা বাবা এবং আত্মীয় বন্ধুদের জন্যও চিন্তা হচ্ছে। জানিনা কবে সব স্বাভাবিক হবে। আবার দেশে যেতে পারব। সবার সঙ্গে দেখা করতে পারব, ঘুরতে পারব। শুধু সেই অপেক্ষায় দিন গুনছি। তবে যতদিন এ রকম চলবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং আর ফোনের ভরসাতেই দিন কাটানোর পাশাপাশি সকলের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে। সকলে ভাল থাকুন, ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, যত দিন না একটা ভাল খবর পাওয়া যায়।
বোধিসত্ত্ব পাল (টরন্টো, কানাডা)
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন,feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)