Akhil Giri

সম্পাদক সমীপেষু: নিঃশর্ত ক্ষমা চান

মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এখনই তাঁকে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দেওয়া। না হলে সেটা দলের পক্ষে ক্ষতিকর হবে। আর তিনি যদি দলের ও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ না মানেন তো তাঁকে অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৬:১৮
Share:

সংবাদে প্রকাশ, রাজ্যের প্রাক্তন কারামন্ত্রী অখিল গিরি ক’দিন আগে বন আধিকারিক মনীষা সাউকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেন, হুমকিও দেন (আধিকারিককে কুকথা কারামন্ত্রীর, ৪-৮)। এই কাজ সম্পূর্ণ অনৈতিক, নিন্দনীয়। তাঁর জন্য তৃণমূল দল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অস্বস্তিতে পড়েন। এর আগেও অখিল গিরি কয়েক বার উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তিদের কুকথা বলে বিতর্কে জড়িয়েছেন! কোনও বারই তিনি তাঁর অসদাচরণের জন্য ক্ষমা চাননি বা দুঃখ প্রকাশ করেননি। দল ও মুখ্যমন্ত্রীই তাঁকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। ফলে দিন দিন তাঁর ঔদ্ধত্যের মাত্রা বেড়েছে। এ বারে মুখ্যমন্ত্রী ও দল তাঁকে পদত্যাগ করতে ও ক্ষমা চাইতে বলায় অখিল গিরি অনতিবিলম্বে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত মনীষা দেবীর কাছে ক্ষমা চাননি, বা দুঃখপ্রকাশ করেননি, যা চূড়ান্ত ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এখনই তাঁকে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দেওয়া। না হলে সেটা দলের পক্ষে ক্ষতিকর হবে। আর তিনি যদি দলের ও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ না মানেন তো তাঁকে অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। মনীষা দেবী ও তাঁর কর্মী সংগঠনের উচিত এ ব্যাপারে কারামন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানো, সঙ্গে কলকাতা উচ্চ আদালতে মানহানির মামলা দায়ের করা। ‌এবং শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়া যাতে হয় মন্ত্রী নিঃশর্ত ক্ষমা চান ও দুঃখপ্রকাশ করেন, অথবা আদালত-কর্তৃক মন্ত্রীর জেল বা হাজতবাস হয়! এ ব্যাপারে রাজ্যের সব বিরোধী দল ও মহিলা কমিশনের উচিত মনীষা সাউয়ের জন্য লড়াই করা।

পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

Advertisement

কর্মীর সম্মান

‘আধিকারিককে কুকথা কারামন্ত্রীর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, তা খুবই ভয়ানক ঘটনা। বন দফতরের জমি দখলমুক্ত করতে গিয়ে এক জন কর্তব্যরত মহিলা রেঞ্জ অফিসারকে যে ভাবে মন্ত্রীর রোষানলে পড়তে হল, তা দেখিয়ে দিল, এই রাজ্যে সরকারি আধিকারিকরা কতটা অসহায় এবং প্রতিনিয়ত তাঁদের কতটা ভয়, অসম্মানের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। এক জন মহিলা আধিকারিককে হুমকি দেওয়ার অপরাধে চার দিকে সমালোচনার ঝড় উঠল। দলের চাপে অবশেষে মন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন বটে, কিন্তু ভাঙলেও তিনি মচকালেন না। কেন তিনি কৃত অপরাধের জন্য সেই আধিকারিকের কাছে ক্ষমা চাইবেন না? এত ঔদ্ধত্য তিনি পান কোথা থেকে? অবিলম্বে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। তাতে আখেরে দলের ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল হবে।

মুখ্যমন্ত্রী তো ক’দিন আগেই বলেছিলেন, তিনি দলে ‘বিবেকবান’ লোকেদের চান। অথচ, ইতিপূর্বেও অখিল গিরি মাননীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু প্রসঙ্গে কুৎসিত মন্তব্য করে পার পেয়ে গিয়েছিলেন। সে বার দল দুঃখ প্রকাশ করে, এবং মন্ত্রীর বক্তব্য দল অনুমোদন করে না, জানিয়ে ইতি টানা হয়েছিল। দুঃখ প্রকাশ আর দল অনুমোদন করে না বললেই কি সাত খুন মাফ হয়ে যায়? কেন তখন কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হয়নি? বার বার অপরাধ করেও পার পেয়ে গেলে এই ধরনের অনৈতিক কাজ তো করতেই থাকবেন‌ তিনি।

আশঙ্কা হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বিভিন্ন জেলায় সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে, বা অন্য সময়ে, যে ভাবে সরাসরি ধমক দিয়ে থাকেন, তাঁদের বকাঝকা করেন, তাই দেখে হয়তো নীচের তলার মন্ত্রী, নেতারা ভ্রান্ত বার্তা পাচ্ছেন। কোনও আধিকারিক ভুল করলে তাঁকে সতর্ক করার একটা পদ্ধতি আছে। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁকে অপমান করা যায় কি? তাঁদেরও তো পরিবার, পরিজন, ঘনিষ্ঠ মহল আছে। এই ভাবে প্রকাশ্যে অপমানিত হতে হলে তাঁদের কাছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সম্মান থাকে কি?

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

সুবীরের গান

‘এত সুর আর’ (কলকাতার কড়চা, ২০-৭) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— বাংলা ও হিন্দি ছবির গানে সুবীর সেন আজও এক দ্যুতিময় কণ্ঠের উজ্জ্বল স্মৃতি।

বাস্তব হল, বাংলা ছবিতে সুবীর সেনের উল্লেখ করার মতো তত গান নেই বললেই চলে। হিন্দি ছবিতে তিনি যত উজ্জ্বল ছিলেন, ততটা ছিলেন না বাংলা ছবির গানে। তাই অল্প কয়েকটি ছবির গানে তাঁকে পাওয়া যায়।

উদাহরণে আসি। ১৯৬৪ সালে উত্তমকুমার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত মোমের আলো ছায়াছবিতে শান্তনু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবীর সেন। নিজের অভিনীত চরিত্রে স্বকণ্ঠে গেয়েছিলেন খালি গলায় ‘মায়াবন বিহারিণী হরিণী...’, রবীন্দ্র সঙ্গীতের শুধু মুখরা। ছবিতে রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে নিজের জন্য স্বকণ্ঠে গেয়েছিলেন ‘ওগো কাজল নয়না বল’ (কথা: প্রণব রায়) এবং খালি গলায় আংশিক ‘প্রভাতে উঠিয়া ও মুখ’। ১৯৬৯ সালে অপরিচিত ছায়াছবিতে রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে গেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘ফাগুনের ডাক এলো’। এই গানের প্রথম দু’টি লাইন তিনি ইংরেজি ভাষাতে গেয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে কায়াহীনের কাহিনী ছবিতে মুকুল রায়ের সুরে গেয়েছিলেন আশা ভোঁসলের সঙ্গে ‘আমি যে তোমার, তুমি যে আমার’। গানের শেষ একটি লাইন পর্দায় ছিল উত্তমকুমারের লিপে। উত্তমের হয়ে এই প্লেব্যাক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

বাংলা ছবির প্লেব্যাকে সুবীর সেন কিন্তু নিজের প্রতিও সুবিচার করেননি। ১৯৬৭ সালে আজাদ রহমানের সঙ্গে যৌথ ভাবে মিস প্রিয়ংবদা ছবিটি সুরারোপ করেন তিনি। ছবিতে আরতি মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন তাঁদের সুরে, অথচ নিজের সুরে কোনও গান গাননি সেখানে সুবীর।

তবে আজও বাঙালির কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে বম্বেবাসী বাঙালি পরিচালক বাসু ভট্টাচার্যের হিন্দি ছবি অনুভব-এ (১৯৭১) সুবীর সেনের রবীন্দ্রগান: ‘সেদিন দু’জনে দুলেছিনু বনে’। দৃশ্যটিতে সশরীরে স্বনামে উপস্থিত ছিলেন সুবীর... সঞ্জীবকুমার অভিনীত চরিত্রটি তাঁকে সকলের সঙ্গে পরিচিত করানোর সময় বলেন: হি ইজ় ওয়ান অব দ্য ফাইনেস্ট সিঙ্গার্স হিয়ার।

বিশ্বনাথ বিশ্বাস, বিধান নগর, কলকাতা

সাদামাঠা

সদ্যপ্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রসঙ্গে বিমান বসু বলেছেন— বাড়ি-গাড়ির জন্য রাজনীতিটা নয়, দেখিয়ে গেল বুদ্ধ (৯-৮)। তিনি ঠিক কথাই বলেছেন। এর সঙ্গে যোগ করতে চাই, বুদ্ধদেববাবুর তিন জন পূর্বসূরি এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কেও এই কথাগুলি খাটে। প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ। রসায়নে গবেষণা করে ডক্টরেট। কলকাতা টাঁকশালের প্রথম ভারতীয় মিন্টমাস্টার। মোটা বেতন। দেশের কাজে যোগ দিতে তা ছাড়লেন। দু’দফায় অল্প সময়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী। বাড়ি-গাড়ি করেননি। দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। মেধাবী ছাত্র। উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিলেত যাবেন। জাহাজের টিকিট কাটা। কিন্তু দেশের কাজ করতে তা বাতিল করে হুগলির এক গণ্ডগ্রামে গেলেন। অনেক বার মন্ত্রী এবং এক বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু বাড়ি-গাড়ি করেননি।

তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়। তিনিও বাড়ি-গাড়ি করেননি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আদত বাসস্থান সম্পর্কে অনেকের ধারণা আছে। আমি শুধু একটা ঘটনা জানাব। মমতা তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি কলকাতায় আছেন। মন্ত্রকের এক অফিসার কোনও একটা কাজে এসেছেন। মন্ত্রীর বাসস্থান দেখে তিনিও অবাক। বিদায় নেওয়ার আগে তিনি আমাকে বলেছিলেন, মন্ত্রীর এই বাড়ি দেখে গান্ধীজি খুশি হতেন।

মিহির গঙ্গোপাধ্যায়, কোন্নগর, হুগলি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement