খাদ্য সুরক্ষা আইনে খাদ্যের নিরাপত্তা জনগণের অধিকার। কিন্তু জনগণকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ঘোষণার সময় দায়িত্বপ্রাপ্তদের কথায় যে অহঙ্কার ঝরে পড়ে, তাতে মনে হয়, এঁরা আমাদের অন্নদাতাই বটে (‘অন্নদাতা’, পৃ ১, ১-৭)। আশা ছিল, দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে কেন্দ্র এবং রাজ্য মিলিত ভাবে জনগণের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তারা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফ্রি রেশন দেওয়ার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা বাড়িয়ে দিলেন পরের বছর জুন পর্যন্ত। এই অশুভ প্রতিযোগিতা জনগণকে তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত, কিসান সম্মান নিধি প্রভৃতি প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ গ্ৰহণ না করার জন্য এখানকার মানুষ এই প্রকল্পগুলির সুবিধা পাননি। এর বদলে এই রাজ্যের কিছু মানুষ পেয়েছেন স্বাস্থ্যসাথী এবং কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধা। কেন্দ্র এবং রাজ্য— দুই সরকারই জনগণের করের টাকা থেকে উন্নয়নের জন্য খরচ করে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের মানুষের উন্নয়ন, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য যাতে বাড়বে, সে রকম কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ না নিয়ে, রাজ্যের নিজ কোষাগারের টাকা থেকে সেই একই প্রকল্প চালানো মানে রাজ্যের আর্থিক ক্ষতি। আয়ুষ্মান ভারত গ্রহণ করে স্বাস্থ্যসাথীর টাকাটা যদি সার্বিক চিকিৎসার উন্নতির জন্য খরচ করা হত, তা হলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হত। ঠিক তেমনই কিসান সম্মাননিধি গ্রহণ করে, কৃষকবন্ধু খাতে খরচের টাকাটা কৃষি উন্নয়নের অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করা যেত। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প এখনও বহু মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্মীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার প্রাপ্য টাকাটাই আদায় করতে হিমশিম খাচ্ছে। কেন্দ্রের বিভিন্ন আর্থিক প্যাকেজ থেকেও এ রাজ্য বঞ্চিত। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলির সুবিধা নেওয়া দরকার। কেন্দ্র-রাজ্যের মিলিত প্রচেষ্টাতেই একমাত্র প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।
গৌতম পতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
টিপসইয়ের জন্য
কিছু দিন আগে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, খাটিয়ার উপর শুয়ে থাকা এক নব্বই বছরের অক্ষম বৃদ্ধাকে খাটিয়া-সমেত টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন আর এক জন মহিলা। এই দৃশ্য সমাজমাধ্যমে মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রামের ব্যাঙ্কে। খাটিয়া টেনে নিয়ে যাওয়া ওই মহিলার মায়ের নামে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় ব্যাঙ্কের পাসবইয়ে টাকা ঢুকেছিল। সেই টাকা তোলার জন্যই এমন কাণ্ড। অনেকেই এই ঘটনায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কের ওই শাখায় এক জন মাত্র অফিসার। একা হাতে যাবতীয় দায়িত্ব তাঁকে পালন করতে হয়। এখন গ্রামের দিকে ব্যাঙ্কগুলো এই রকম ভাবেই চলে। এক জন ম্যানেজার আর এক জন ক্যাশিয়ার নিয়ে অনেক শাখা কাজ করে চলেছে।
সাধারণ ভাবে ব্যাঙ্ক থেকে দু’ভাবে টাকা তোলা যায়। চেকে সই করে নিজে অথবা অপর কাউকে পাঠিয়ে। আবার টাকা তোলার সাধারণ ফর্ম ভর্তি করে সই করেও টাকা তোলা যায়। কিন্তু টিপসই দিলে সরাসরি ব্যাঙ্কে এসে ম্যানেজারের সামনে টিপসই দিতে হয়। বাড়ি থেকে টিপসই দিয়ে নিয়ে আসা যায় না বা অপর কাউকে দেওয়া যায় না। অবশ্য মানবিকতার খাতিরে অনেক সময় ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার কাছাকাছি বাড়ি হলে নিজে গিয়ে টিপসই নিয়ে আসেন। এমন বহু উদাহরণ আছে, বাড়ির লোককে বিশ্বাস করে টাকা দেওয়ার পর দেখা গিয়েছে, সই জাল করে সেই টাকা তোলা হয়েছে। অনেক সময় আবার সেই ব্যক্তিই উল্টে ব্যাঙ্কের ঘাড়ে দোষ চাপায়। এর পুরো দায়িত্ব ব্যাঙ্কের অফিসারের উপরই পড়ে।
তাই আইনের দিক দিয়ে ওড়িশার ওই অফিসার ঠিক কাজই করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, পুরো দায়িত্ব শুধু এক জন কেন বহন করবেন? সরকারের তো দেখার কথা, যাতে ব্যাঙ্কগুলোতে অন্তত দু’জন অফিসার রাখা যায়।
দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
বহরমপুর
‘কে’ আবশ্যক
সুজাতা গোস্বামী চিঠিতে (‘ভাষার ক্ষতি’, ২-৭) লিখেছেন, ‘আমাদেরকে’ ‘তোমাদেরকে’ ইত্যাদি সর্বনাম পদ ব্যবহার করলে বাংলা ভাষার চরম ক্ষতি হবে। কথাটা একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি। সাধুভাষায় লেখা হত ‘আমাদিগকে’, ‘তোমাদিগকে’ ইত্যাদি। সাধুভাষা কোনও কৃত্রিম ভাষা তো নয়, কোনও সময়ের কোনও রকমের কথ্য ভাষারই রূপ। তাতে এই ‘কে’ ছিল, যেটাকে চিঠিতে ‘অনাবশ্যক’ বলা হয়েছে। ভাষার বিবর্তন হয়, এই ‘কে’ খসে পড়তেই পারে। কিন্তু এর ফলে যা হল, আগে যেখানে দুটি শব্দ ছিল, ‘আমাদিগের’ আর ‘আমাদিগকে’, দুটোই হয়ে গেল ‘আমাদের।’ একই কথা অন্যান্য পক্ষের সর্বনাম সম্পর্কেও। এর ফলে যা দাঁড়াল, তার বর্ণনা শুনুন বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিজ্ঞানীর মুখে— ‘‘‘আমাকে তোমার খাওয়াতে হবে’ বাক্যটা স্পষ্ট। গোল বাধে বহুবচনের বেলায়। কেননা বহুবচনে সম্বন্ধপদের ‘দের’ আর কর্মকারকের ‘দের’ একই চেহারার। এর একমাত্র উপায় ‘কে’ বিভক্তি দ্বারা কর্মকারককে নিঃসংশয় করা। ‘আমাদেরকে তোমাদের খাওয়াতে হবে’ বললে নিশ্চিন্ত মনে নিমন্ত্রণে যাওয়া যায়। সম্বন্ধকারকের চিহ্নে কর্মকারকের কাজ চালিয়ে নেওয়া ভাষার অমার্জনীয় ঢিলেমি।’’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘‘বাংলাভাষা-পরিচয়’’, ১৪ নং পরিচ্ছেদ)। অতএব দয়া করে এই ‘কে’ বিভক্তির ব্যবহার ‘‘অনাবশ্যক’’ বলবেন না, কেননা এর অব্যবহারে সংশয় হয়। বরং আমার অনুরোধ, সবাই এই জায়গায় ‘কে’ ব্যবহার করুন।।
পলাশ বরন পাল
কলকাতা-৬৪
কোনটা ঠিক?
রাজীবাক্ষ রক্ষিত (‘নব বিধান’, রবিবাসরীয়, ৫-৭) বিধানচন্দ্র সম্পর্কে জানিয়েছেন, ‘‘১৯২৫ সালে তাঁর সগর্ব প্রবেশ রাজনীতিতে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি হারালেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। (যদিও ২৪ পরগনা বিভক্ত হয় ১৯৮৬-তে)। একই প্রসঙ্গে সুদেব রায়চৌধুরী তাঁর ‘‘বিধানচন্দ্র: অন্য এক সন্ন্যাসী’’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে (দেশ, ৪৮ বর্ষ ৩০ সংখ্যায়) জানিয়েছেন ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এই তরুণ চিকিৎসক ১৯২৩ সনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ্য পার্টির সমর্থনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে, প্রবীণ নেতা যিনি বাংলার মন্ত্রী রূপে ব্রিটিশের সঙ্গে সহযোগিতার পথ বেছে নিয়েছিলেন সেই স্যার সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়কে নির্বাচনে নাটকীয় ভাবে পরাজিত করেন।’’ এ ক্ষেত্রে কোন সালটি ইতিহাসসম্মত— ১৯২৩ না ১৯২৫?
কুমার ভট্টাচার্য
সিউড়ি, বীরভূম
প্রতিবেদকের উত্তর: সালটি ১৯২৩। ফল প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৩ সালের ৩০ নভেম্বর। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
বিশ্বনাথ
ক্রিকেট জীবনে মাত্র দু’বার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ (‘বাতিলের যন্ত্রণা ভোলেননি ভিসি’, ২৮-৬)। তার একটি মুম্বইতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জুবিলি টেস্ট (১৯৮০)। আম্পায়ার বব টেলর-কে আউট ঘোষণা করলেও ভিসি-র মনে হয়েছিল টেলর আউট হননি। তিনি আম্পায়ারকে বলেন, আউটের আবেদন তিনি ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বব টেলর আবার ব্যাট করেন এবং ৪৩ রান করেন। সেই টেস্টে ভারতের হার হয় ১০ উইকেটে!
চৈতালী বিশ্বাস
কলকাতা-২৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।