সেমন্তী ঘোষের ‘শুধুই ভোটপ্রচারের অস্ত্র?’ (৪-১২) অত্যন্ত সময়োপযোগী নিবন্ধ। এই প্রসঙ্গে বলতে চাই, অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনে হিংসার প্রবেশ ঘটায় গাঁধীজি এই আন্দোলন বন্ধের ডাক দেন। এতে জনসমাজের মনোবল ও ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিলে, জনসমাজকে মূলপথে পুনরায় চালিত করার লক্ষ্যে চিত্তরঞ্জন দাশ ‘স্বরাজ্য দল’ গঠন করেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পিতৃসম রাজনৈতিক গুরু ও পরামর্শদাতা, এবং কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ‘দেশবন্ধু’ ১৯২৫ সালে দার্জিলিঙে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করায় বাংলা তথা ভারতের রাজনীতিতে এক মহাশূন্যতার সৃষ্টি হয়। তাঁর অন্তিম যাত্রায় মহাত্মা গাঁধী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন “দেশবন্ধুর একমাত্র স্বপ্ন ছিল ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ভারতের স্বাধীনতা।” যে একতার ধারাকে আদর্শ করে দেশবন্ধু স্বাধীনতার জন্য অগ্রসর হন, তাঁর অকালপ্রয়াণ না হলে হয়তো অবিভক্ত ও ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন ভারত উপহার পেতেন ভারতবাসী।
অরবিন্দ ঘোষের রাজনৈতিক দর্শন আধ্যাত্মিক জাতীয়তাবাদের ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। তিনি বলেছিলেন, “জাতীয়তাবাদ নিছকই এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, জাতীয়তাবাদ হল একটি ধর্ম যার উৎস ঈশ্বর।” তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যতীত অগ্রগতি সম্ভব নয় এবং দেশভক্তির আদর্শ অগ্রসর হবে ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধের উপর ভিত্তি করে। তিনি আরও বলেন যে, শক্তিহীন ভারতীয়রা স্বপ্নরাজ্যে বিরাজ করা মানুষের মতো, যাঁদের হাত থাকলেও তাঁরা ধরতে বা আঘাত হানতে পারেন না, পা থাকলেও দৌড়তে পারেন না। সুতরাং, ভারতের একমাত্র প্রয়োজন হল শক্তি অর্জন। ভারত নবজন্ম লাভ করবে, যদি তার অন্তরের শক্তি প্রকৃত শক্তির উৎস হিসেবে অনুভূত হয়। ধর্মের উৎস থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ভারতবাসী সমগ্র জাতির উন্নতির জন্য যথার্থ ভাবে পশ্চিমি জ্ঞান ও বিজ্ঞান প্রয়োগে সক্ষম হবে। তিনি আধ্যাত্মিক-নৈতিকতার সঙ্গে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ে এক নতুন স্বাধীন ভারত গড়তে চান।
সৌপ্তিক অধিকারী
সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কেবল ছলনা
‘শুধুই ভোট প্রচারের অস্ত্র?’ নিবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ঋষি অরবিন্দের প্রসঙ্গ এসেছে। ভোটযুদ্ধ জেতার প্রস্তুতিতে মনীষীদের বাণী-আদর্শকে সম্বল করে ভোট বৈতরণি পার হওয়ার চেষ্টা কোনও নতুন ঘটনা নয়। এখন প্রশ্ন হল, এই মনীষীদের মুখ নিঃসৃত কথাগুলি নিজের মতো ‘এডিট’ করে রাজনৈতিক দলগুলি জনসাধারণকে আকৃষ্ট করতে চায়, না কি সত্যিই এই মহান সন্তানদের বাণী এবং দেখানো পথ অবলম্বন করে রাজনীতির কারবারিরা আগামী দিনে এক সুগঠিত দেশের স্বপ্ন দেখেন! দেখে-শুনে তো মনে হয় এ কেবলই ছলনার আশ্রয়।
প্রধানমন্ত্রী ৫ ডিসেম্বর অরবিন্দের মৃত্যুবার্ষিকীর প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন যে, অরবিন্দের লেখা যত বেশি পড়া যাবে, ততই অন্তর্দৃষ্টি খুলে যাবে। অরবিন্দের মতাদর্শকে নিজেদের পছন্দমতো উদ্ধৃত করে দেশের শাসক দল যে নিজের করে নেবে, এ সম্বন্ধে কোনও বিস্ময়ের অবকাশ নেই। কিন্তু অরবিন্দের মতামত খানিক নাড়াচাড়া করলে সত্যিটা বেরিয়ে আসে। ১৯০৮ সালে বম্বেয় (অধুনা মুম্বই) এক বক্তৃতা সভায় অরবিন্দ বলেছিলেন, জাতীয়তাবাদ একটি ধর্ম, যা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত। এই ঈশ্বর এবং ধর্মের আড়ালে তিনি বোধ হয় ‘রাম রাজ্য’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেননি। তিনি এক মহৎ অর্থে ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দটিকে দেখেছিলেন। তিনি ওই সভাতেই বলেছিলেন, “রাজনৈতিক স্বাধীনতা একটি জাতির প্রাণবায়ু। রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য না করে সমাজ শিক্ষায় সংস্কার, শিল্পের প্রসার বা নৈতিক উন্নতির চেষ্টা চূড়ান্ত অজ্ঞতার ফল।”
অরবিন্দের বক্তব্যের একটু বিশদে গেলে বোঝা যায়, তিনি জাতীয়তাবাদ, স্বদেশ চেতনা, রাজনৈতিক স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলিকে মহৎ অর্থে দেখেছিলেন। স্বদেশচেতনা সম্বন্ধেও তিনি ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধের বীজ বপন করে মানবিকতাকেই প্রাধান্য দেন। কিন্তু জাতিভেদ প্রথা, সাম্প্রদায়িক হানাহানির এই ভারতকে দেখে কি মনে হয়, আমরা অরবিন্দের দেখানো পথে চলেছি?
সঞ্জয় রায়
দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
মনীষীপ্রীতি
সেমন্তী ঘোষ নির্ভুল বলেছেন যে, এ বারের ভোটে বাঙালির শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানগম্যির পরীক্ষা হবে। এটা দীর্ঘ কাল ধরেই লক্ষ করা গিয়েছে যে, ভোট (বা জন্মদিন) এলেই রাজনৈতিক দলগুলোর মনীষীপ্রীতি বাড়ে। এই মরসুমি আদিখ্যেতা আমাদের এত দিনে গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। সারা বছর নিজ গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া যারা আর তেমন কিছুই করে না, তারাই আবার ভোট প্রারম্ভে মনীষীপ্রীতির প্রচার করে জনমনকে বিমোহিত করার চেষ্টা করে। আর সারা বছর ঘরকন্না, পরচর্চা আর হুজুগে মেতে থাকা অলস জনগণ নেতাদের মুখে হঠাৎ মনীষীদের অপার মহিমা-কীর্তন শুনে অভিভূত হয়। এ বারেও তা-ই হবে।
তবে, এত দিন মোটামুটি আদর্শ নিরপেক্ষ ভাবে সকল মনীষীই সেই মরসুমি ফুল নিবেদনের দাক্ষিণ্য পেতেন। সচেতন বিস্মরণ ছিল না। এখন বিজেপি ‘লুপ্ত ইতিহাস’ উদ্ধারের খেলায় সুচতুর ভাবে নেমেছে। এত কাল মনীষীপ্রীতিতে শিক্ষার অভাব আর ভোটধান্দা প্রকট ছিল। এখন আবার তার সঙ্গে এক ভয়ঙ্কর চাতুরিও পরিলক্ষিত হয়। ইতিহাস দিয়ে বর্তমান শাসনের অপচেষ্টা (যা বিজেপির জাতীয় অ্যাজেন্ডাও বটে) সেই রাজনৈতিক কর্মসূচির অঙ্গ।
আমাদের বাঙালির আধুনিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নবজাগরণ ও তার পর স্বাধীনতা আন্দোলন আমাদের জাতীয় চেতনা গঠন করছে। তার পর বিভিন্ন কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র আন্দোলন, বিজ্ঞান, মানবাধিকার আন্দোলন হয়ে কিছু দিন আগে পর্যন্ত বাঙালি সমাজমানস, মহৎ ছিল না বটে, কিন্তু খুব সঙ্কীর্ণও ছিল না। অন্তত সে নিজেকে এত দিন সাম্প্রদায়িক বলতে গর্ব বোধ করত না! কিন্তু, আজ যেন মনে হচ্ছে শুরু হয়েছে ‘এক বিরাট বিপরীত যাত্রা’। সমাজমানস ভুগছে বিজ্ঞানচেতনা আর যুক্তিবোধের অভাবে, ইতিহাস চেতনার অভাবে তো বটেই! ইতিহাস সে দেখছে ধর্মের দৃষ্টিতে, যা তার স্বভাববিরুদ্ধ ছিল। আর, নবজাগরণ থেকে এই গোটা পর্যায় জুড়ে যে দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় রাজনীতির কোনও ভূমিকা ছিল না, থাকলেও নেতিবাচক ছিল, আজ তারাই মনীষীদের আদর্শ পুনরুদ্ধারের কাজে নেমেছে। অথচ, সেই আদর্শ থেকে এই দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় রাজনীতির দূরত্ব সহস্র মাইল!
অনিন্দ্য ঘোষ
কলকাতা-৩৩
সাক্ষাৎ সংবাদ?
‘অধিকারীরা কেউ নেই, সভায় ২৩ বিধায়ক’ (৮-১২) নামক সংবাদ উপস্থাপনায় একটি লাইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উক্ত লাইনে বলা হয়েছে, “সূত্রের খবর, রাতে কোলাঘাটে এক অতিথিশালায় ‘বেসুরো’ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে।” জানি না, কোন সূত্র মারফত আপনারা খবর পেলেন এবং কী ভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা না করে এই সংবাদ প্রকাশ করলেন। গত কাল সারা দিন আমি দৈনন্দিন কাজ নিয়ে শহরেই ছিলাম। সুতরাং তাঁর (শুভেন্দু) সঙ্গে সাক্ষাতের কোনও প্রশ্নই ওঠে না এবং এই খবর সর্বৈব মিথ্যা।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা
প্রতিবেদকের জবাব: সোমবার রাতে কোলাঘাটের ওই বৈঠকের খবরটি যে সূত্রে এসেছিল, তাকে নির্ভরযোগ্য বলেই মনে করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদপত্র আসার পরেও সেই সংবাদসূত্র সোমবারের ওই বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতির কথা জানিয়েছে।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।